মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি করেন কি? by জিনিয়া জাহিদ
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাগ্নি
টিউলিপ সিদ্দিকের বিয়ের অনুষ্ঠান ও বেলারুশে একটি অগুরুত্বপূর্ণ সরকারি
সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শাহজালাল
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবার
মানোন্নয়ন না হওয়া নিয়ে বেসরকারি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের
কাছে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অন্য সিনিয়র মন্ত্রী ও নেতাদের সামনে।
বিমানমন্ত্রী ‘আসলে করেন কি’- এ নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন বলে জানা যায়। সেই সঙ্গে আমরা এও জানতে পারি যে, কেবল আমতা আমতা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাব দিয়ে সেদিনের মতো পার পেয়েছেন ফারুক খান।
কিন্তু বিমানমন্ত্রীকে কেন এতদিন পর এই প্রশ্ন করা হলো, আমরা সাধারণ জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছ থেকে জানতে চাই। আমরা জানতে চাই, আপনার দীর্ঘদিন ক্ষমতার আরোহনে কি আপনি একবারও বিদেশ ভ্রমণ করেননি? যদি করে থাকেন, তাহলে একবারও কি শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে যাননি? আপনি কি কখনই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবা নেননি? যদি নিয়ে থাকেন, তখন কেন এই অনিয়ম বা সেবার ঘাটতি আপনার চোখে পড়েনি?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার আশেপাশে কি চাটুকারদের এতই ভিড় ছিল যে আপনি সেসময় অনিয়ম দেখার সময় পাননি? নাকি প্রত্যেকবার আপনি ভ্রমণ করবেন জন্য বিমান তাদের অসঙ্গতি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি আড়াল করতে বাড়তি কেয়ার নিয়েছিল? এবারের সফরে কি আপনি ভিভিআইপি সেবা না নিয়ে আমাদের মতো সাধারণদের মতো ভ্রমণ করেছিলেন? জানতে ইচ্ছে করে কেন এতদিন পর আপনি আপনার অতি গুণধর মন্ত্রীদের একজনকে এই প্রশ্ন করে বসলেন? বেচারাকে কেন খামাখা সবার সামনে অপদস্থ করলেন?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একবার ভালোভাবে যদি আমজনতার চোখে নিজের সরকারের দিকে তাকিয়ে দেখতেন, তবে দেখতে পেতেন আপনার হাতে গোনা দু’একজন মন্ত্রী ছাড়া কেউই কিছুই করেননি। শুধু হাস্যকর কথা ও জোকারের মতো অঙ্গভঙ্গি করে ‘রাবিশ’ জনগণের কাছে আপনার মন্ত্রীরা নির্মল বিনোদনের খোরাক হয়েছেন, আর টিভি চ্যানেলগুলোর টিআরপি বাড়িয়েছেন।
তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যেহেতু ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সেক্ষেত্রে আপনার মন্ত্রীরা ক্ষমতার এই সাড়ে চার বছরে দেশের জন্য কেউ কিছু না করলেও সে অভাব পূরণ করছে আপনার গুণধর ‘মাসুম ছাত্রলীগ’। এরাই আপনার পার্টির ঝাণ্ডা পিটিয়ে স্বগর্বে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ এখনো জীবিত আছে।
কোথায় নেই আপনার ছাত্রলীগ? যেখানেই টাকার গন্ধ, সেখানেই ছাত্রলীগ। ভাবখানা এমন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যত টাকা ছাপাবে, দেশের যেখানেই যত টাকার লেনদেন হবে, সব টাকার একচ্ছত্র মালিক ছাত্রলীগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যেহেতু তাদের অভিভাবক, তারাই তো আপনার উত্তরসূরি। দেশের সকল সম্পদে তো ‘মাসুম’ ছাত্রলীগের অধিকার রয়েছেই। এ কথা আমরা মেনেই নিয়েছি।
যেখানেই সরকারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদের জন্য মুখ খুলেছে, যেখানেই ন্যায্য দাবির জন্য কেউ প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করছে, সেখানেই আপনার ছাত্রলীগ লগি-বৈঠা, চাপাতি ও লেটেস্ট ডিজাইনের পিস্তল নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছে। খুন করার লাইভ টেলিকাস্টের রেকর্ড গড়ে আপনার ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে!
একা আপনার ছাত্রলীগ যা করছে, যেভাবে আপনার আওয়ামী লীগের জন্য জান-প্রাণ কবুল করে দিচ্ছে তা আপনার আবুল, ফারুক, দীপু, ইনু, মাল-মুহিত কিংবা সুরঞ্জিতেরও করার ক্ষমতা নেই!
অতি তৎপর গুণধর বেপরোয়া ছাত্রলীগ কিংবা অতি অলস মন্ত্রিদের কর্মকাণ্ডের কথা না হয় আপাতত কিছুটা দূরেই রাখলাম, একজন সাধারণ জনগণ হয়ে জানতে ইচ্ছে করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি করেন কি?
এসব অনিয়ম-দুর্নীতি কি দেখার দায়িত্ব আপনার নয়? কারো বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয় জানি, কিন্তু প্রকাশ্যে টিভি ক্যামেরার সামনে খুন হওয়া থেকে তো কাউকে রক্ষা করা যেত! অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তো অন্যায় রোধ করা যেত।
জিএসপি বাতিল হওয়ার আগে, বাণিজ্যমন্ত্রী কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোথায় কি করছিলেন সে তো অভিভাবক হিসেবে আপনি খোঁজ নিতেই পারতেন। বিরোধীনেত্রীর লেখা আর্টিকেলের পিছনে যে সময় ও ধৈর্য আপনি ব্যয় করেছেন, তার অর্ধেকেরও কম সময়ে আপনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতেন, এর সমাধান কি হতে পারে তা নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে পারতেন।
হেফাজতের পিছনে যে সময় ও শক্তি আপনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যয় করছে, তার থেকে অনেক কম লোকবল দিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, ও খাদ্য বাজারে ভেজাল নির্মূল করা যেত।
ড. ইউনুসের পিছনে আপনার যে পরিমাণ গবেষণা করতে হয়েছে, তার থেকে অনেক কম গবেষণা করে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, হলমার্ক জালিয়াতি, শেয়ার বাজার ধস সমস্যার সমাধান করা যেত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা জনগণ আপনাকে ভোট দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি বানিয়েছি। কাজেই আমাদের জনগণের কাছে আপনার সরকারের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেওয়ার দায় দায়িত্ব কিন্তু শুধু আপনারই। তাই আবার বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করছি, ক্ষমতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের জন্য আপনি করেছেন কি?
জিনিয়া জাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
বিমানমন্ত্রী ‘আসলে করেন কি’- এ নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন বলে জানা যায়। সেই সঙ্গে আমরা এও জানতে পারি যে, কেবল আমতা আমতা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাব দিয়ে সেদিনের মতো পার পেয়েছেন ফারুক খান।
কিন্তু বিমানমন্ত্রীকে কেন এতদিন পর এই প্রশ্ন করা হলো, আমরা সাধারণ জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছ থেকে জানতে চাই। আমরা জানতে চাই, আপনার দীর্ঘদিন ক্ষমতার আরোহনে কি আপনি একবারও বিদেশ ভ্রমণ করেননি? যদি করে থাকেন, তাহলে একবারও কি শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে যাননি? আপনি কি কখনই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবা নেননি? যদি নিয়ে থাকেন, তখন কেন এই অনিয়ম বা সেবার ঘাটতি আপনার চোখে পড়েনি?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার আশেপাশে কি চাটুকারদের এতই ভিড় ছিল যে আপনি সেসময় অনিয়ম দেখার সময় পাননি? নাকি প্রত্যেকবার আপনি ভ্রমণ করবেন জন্য বিমান তাদের অসঙ্গতি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি আড়াল করতে বাড়তি কেয়ার নিয়েছিল? এবারের সফরে কি আপনি ভিভিআইপি সেবা না নিয়ে আমাদের মতো সাধারণদের মতো ভ্রমণ করেছিলেন? জানতে ইচ্ছে করে কেন এতদিন পর আপনি আপনার অতি গুণধর মন্ত্রীদের একজনকে এই প্রশ্ন করে বসলেন? বেচারাকে কেন খামাখা সবার সামনে অপদস্থ করলেন?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একবার ভালোভাবে যদি আমজনতার চোখে নিজের সরকারের দিকে তাকিয়ে দেখতেন, তবে দেখতে পেতেন আপনার হাতে গোনা দু’একজন মন্ত্রী ছাড়া কেউই কিছুই করেননি। শুধু হাস্যকর কথা ও জোকারের মতো অঙ্গভঙ্গি করে ‘রাবিশ’ জনগণের কাছে আপনার মন্ত্রীরা নির্মল বিনোদনের খোরাক হয়েছেন, আর টিভি চ্যানেলগুলোর টিআরপি বাড়িয়েছেন।
তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যেহেতু ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সেক্ষেত্রে আপনার মন্ত্রীরা ক্ষমতার এই সাড়ে চার বছরে দেশের জন্য কেউ কিছু না করলেও সে অভাব পূরণ করছে আপনার গুণধর ‘মাসুম ছাত্রলীগ’। এরাই আপনার পার্টির ঝাণ্ডা পিটিয়ে স্বগর্বে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ এখনো জীবিত আছে।
কোথায় নেই আপনার ছাত্রলীগ? যেখানেই টাকার গন্ধ, সেখানেই ছাত্রলীগ। ভাবখানা এমন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যত টাকা ছাপাবে, দেশের যেখানেই যত টাকার লেনদেন হবে, সব টাকার একচ্ছত্র মালিক ছাত্রলীগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যেহেতু তাদের অভিভাবক, তারাই তো আপনার উত্তরসূরি। দেশের সকল সম্পদে তো ‘মাসুম’ ছাত্রলীগের অধিকার রয়েছেই। এ কথা আমরা মেনেই নিয়েছি।
যেখানেই সরকারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদের জন্য মুখ খুলেছে, যেখানেই ন্যায্য দাবির জন্য কেউ প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করছে, সেখানেই আপনার ছাত্রলীগ লগি-বৈঠা, চাপাতি ও লেটেস্ট ডিজাইনের পিস্তল নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছে। খুন করার লাইভ টেলিকাস্টের রেকর্ড গড়ে আপনার ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে!
একা আপনার ছাত্রলীগ যা করছে, যেভাবে আপনার আওয়ামী লীগের জন্য জান-প্রাণ কবুল করে দিচ্ছে তা আপনার আবুল, ফারুক, দীপু, ইনু, মাল-মুহিত কিংবা সুরঞ্জিতেরও করার ক্ষমতা নেই!
অতি তৎপর গুণধর বেপরোয়া ছাত্রলীগ কিংবা অতি অলস মন্ত্রিদের কর্মকাণ্ডের কথা না হয় আপাতত কিছুটা দূরেই রাখলাম, একজন সাধারণ জনগণ হয়ে জানতে ইচ্ছে করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি করেন কি?
এসব অনিয়ম-দুর্নীতি কি দেখার দায়িত্ব আপনার নয়? কারো বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয় জানি, কিন্তু প্রকাশ্যে টিভি ক্যামেরার সামনে খুন হওয়া থেকে তো কাউকে রক্ষা করা যেত! অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তো অন্যায় রোধ করা যেত।
জিএসপি বাতিল হওয়ার আগে, বাণিজ্যমন্ত্রী কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোথায় কি করছিলেন সে তো অভিভাবক হিসেবে আপনি খোঁজ নিতেই পারতেন। বিরোধীনেত্রীর লেখা আর্টিকেলের পিছনে যে সময় ও ধৈর্য আপনি ব্যয় করেছেন, তার অর্ধেকেরও কম সময়ে আপনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতেন, এর সমাধান কি হতে পারে তা নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে পারতেন।
হেফাজতের পিছনে যে সময় ও শক্তি আপনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যয় করছে, তার থেকে অনেক কম লোকবল দিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, ও খাদ্য বাজারে ভেজাল নির্মূল করা যেত।
ড. ইউনুসের পিছনে আপনার যে পরিমাণ গবেষণা করতে হয়েছে, তার থেকে অনেক কম গবেষণা করে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, হলমার্ক জালিয়াতি, শেয়ার বাজার ধস সমস্যার সমাধান করা যেত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা জনগণ আপনাকে ভোট দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি বানিয়েছি। কাজেই আমাদের জনগণের কাছে আপনার সরকারের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেওয়ার দায় দায়িত্ব কিন্তু শুধু আপনারই। তাই আবার বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করছি, ক্ষমতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের জন্য আপনি করেছেন কি?
জিনিয়া জাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
No comments