চারুশিল্প সময়ের ছাপ ছবিতে by সৈয়দ গোলাম দস্তগীর
১৯৬৯, বাঙালি মুক্তির যন্ত্রণায় ফুঁসছে,
সে সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, এমনকি একজন নিরীহ বাউলও জ্বলে
উঠেছেন সেই উত্তাল সময়ে। আগুনের লাল লেগেছে তাঁর পটে।
লিথোগ্রাফ মাধ্যমে ‘বাউল’ শিরোনামের কাজটি দেখার বিরল সৌভাগ্য হলো ঢাকা
আর্ট সেন্টারে বীরেন সোমের একক ছাপাই ছবির প্রদর্শনীতে। ইতিপূর্বে তাঁর
আটটি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে, এটি নবম। তবে এই প্রদর্শনীর প্রধান
বৈশিষ্ট্য, এটি শিল্পীর নানা সময়ে করা ছাপাইকর্মের একটি সংকলন।
এখানে যেমন উনসত্তরে করা কাজ আছে, তেমনি আছে সাম্প্রতিকতম গণজাগরণ মঞ্চ নিয়েও। বীরেন সোম শিল্পী হিসেবে একজন পরিব্রাজক। নানা সময় নানাভাবে কাজ করেছেন, একই সময়ে কাজ করেছেন বিমূর্ত ও অবয়বী প্রকাশে, এখনই গল্পের বিস্তর বর্ণনা আবার নেহাতই ব্যক্তিগত কাব্যের বিমূর্ততা। শিল্পীর ১৯৮৫ সালের প্রদর্শনীর অধিকাংশ কাজ ছিল বর্ণনাধর্মী বিমূর্ত আর মূর্তের মিশ্রণে গড়ে ওঠা। ২০১০ সালে শিল্পাঙ্গনে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে অধিকাংশ কাজ ছিল পূর্ণ বিমূর্ত, কিছু কাজে চেনা অবয়বের নারী-পুরুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
শিল্পী বীরেন সোম আমাদের প্রকাশনা জগতের একজন পরিচিত মুখ। তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন গল্প-কবিতার অলংকরণ করে। অলংকরণের দীর্ঘ রেওয়াজ প্রায়ই প্রতিফলিত হয় তাঁর কাজে। আমরা লক্ষ করেছি, নারীর মুখ আর দেহ অবয়ব তাঁর প্রিয় বিষয় হিসেবে এসেছে বারবার।
অলংকরণের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীতে সাধারণ ছাপাই বোধ থাকে, সেই বোধ এবং একাডেমিক অভিজ্ঞতা— সব মিলিয়ে ছাপাই মাধ্যম তাঁকে আকৃষ্ট করেছে।
‘ফুল হাতে রমণী’ ১৯৭৯ সালে করা একটি এচিং, অসাধারণ বর্ণবিন্যাস, যা চোখে ভালো লাগে এবং তবে এর আলংকারিক গুণ একটু বেশি বেশি। ‘তিন মুখাবয়ব’ ১৯৭৯ সালের কাজ, সবুজ-লাল ও রেখার নানা কারিগরিতে বাংলাদেশের পতাকা আর মানুষকে নিয়ে এক গল্প লেখার প্রচেষ্টা। এটিও এচিংয়ে করা। ‘শান্তি’ শীর্ষক রচনাটি বৃন্তের মধ্যে কবুতর, একটি মুখ, কিছু আলংকারিক কারুকাজ মিলিয়ে করা। ১৯৮০-এর দশকে ঠান্ডা যুদ্ধের প্রাক্কালে শিল্পীকে প্রায়ই এমন কাজ করতে দেখা যেত।
আরও একটি এচিং ১৯৭৯ সালে করা, শিরোনাম ‘লালন’, একটু ব্যতিক্রমী কাজ। ছোট্ট পটে সহজিয়া জীবনের অনুষঙ্গ বিশদ বর্ণনায় আঁকা পটকে বহু ভাগে ভাগ করে পূর্ণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, এরপর ‘ইমেজ’ শীর্ষক কিছু কাজ দর্শকদের বিশেষভাবে নজর কাড়ে। ১৯৯৭-৮১ কালপর্বে শিল্পী যখন ন্যাশনাল হারবেরিয়ামে কর্মরত ছিলেন, এই কাজগুলো সেই সময়ের। রচনা হিসেবে এগুলো আলাদা স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার। যদিও শিল্পী নিজে বলছেন, ওই কাজগুলো গণেশ পাইন দ্বারা প্রভাবিত, তবুও কাজগুলোর নির্মাণদক্ষতা, বর্ণনার গভীরতা আলাদা মাত্রা সংযোজন করেছে।
সাম্প্রতিক কাজ করছেন রিলিফ প্রিন্ট এবং ক্যালিগ্রাফ পদ্ধতিতে। এখানে ‘ওমেন উইথ ফ্লাওয়ার’ ও ‘ফ্লাওয়ার ভাস’ শীর্ষক কাজ দুটি দর্শকদের আলাদাভাবে নজর কাড়ে।
‘উত্তর প্রতিচ্ছায়াবাদী’ শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের সূর্যমুখীকে ঘিরে একটি বিনির্মাণের প্রচেষ্টা। এটি ভাষা বিনির্মাণের প্রচেষ্টা হিসেবে, নাকি একটি হঠাৎ ঘোরের বশে করা কোনো কাজ—তা নির্ণয় করা বোধ হয় এখনই সম্ভব নয়।
এ ছাড়া আরও অনেক রিলিফ প্রিন্ট আছে, যেগুলোতে ফুল, লতাপাতা, নারী মিলে আলংকারিক বর্ণনার প্রভাবই বেশি। ২০১০ সাল থেকে ক্যালিগ্রাফ মাধ্যমে কাজ করছেন শিল্পী। এই মাধ্যমে করা বিভিন্ন কাজ তাঁর সাম্প্রতিক ক্যানভাসে করা কাজগুলোর সমগোত্রীয় বলা যায়। নানা বুনট বর্ণের মিশ্রণে করা কাজগুলোর বেশির ভাগই পূর্ণ বিমূর্ত হলেও তাতে আমরা দেখি নানা প্রতীকের উপস্থিতি। ব্যতিক্রম হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতি দেখতে পাই একটি কাজে। কাজটির শিরোনাম ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য’। এ ছাড়া ওয়াটার কালার কোরিওগ্রাফি মাধ্যমে করা দুটি কাজ টেকনিকগত স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার।
বাড়ি ৬০, রোড ৭/এ ধানমন্ডির ঢাকা আর্ট সেন্টারে গত ২৮ জুন শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত।
এখানে যেমন উনসত্তরে করা কাজ আছে, তেমনি আছে সাম্প্রতিকতম গণজাগরণ মঞ্চ নিয়েও। বীরেন সোম শিল্পী হিসেবে একজন পরিব্রাজক। নানা সময় নানাভাবে কাজ করেছেন, একই সময়ে কাজ করেছেন বিমূর্ত ও অবয়বী প্রকাশে, এখনই গল্পের বিস্তর বর্ণনা আবার নেহাতই ব্যক্তিগত কাব্যের বিমূর্ততা। শিল্পীর ১৯৮৫ সালের প্রদর্শনীর অধিকাংশ কাজ ছিল বর্ণনাধর্মী বিমূর্ত আর মূর্তের মিশ্রণে গড়ে ওঠা। ২০১০ সালে শিল্পাঙ্গনে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে অধিকাংশ কাজ ছিল পূর্ণ বিমূর্ত, কিছু কাজে চেনা অবয়বের নারী-পুরুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
শিল্পী বীরেন সোম আমাদের প্রকাশনা জগতের একজন পরিচিত মুখ। তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন গল্প-কবিতার অলংকরণ করে। অলংকরণের দীর্ঘ রেওয়াজ প্রায়ই প্রতিফলিত হয় তাঁর কাজে। আমরা লক্ষ করেছি, নারীর মুখ আর দেহ অবয়ব তাঁর প্রিয় বিষয় হিসেবে এসেছে বারবার।
অলংকরণের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীতে সাধারণ ছাপাই বোধ থাকে, সেই বোধ এবং একাডেমিক অভিজ্ঞতা— সব মিলিয়ে ছাপাই মাধ্যম তাঁকে আকৃষ্ট করেছে।
‘ফুল হাতে রমণী’ ১৯৭৯ সালে করা একটি এচিং, অসাধারণ বর্ণবিন্যাস, যা চোখে ভালো লাগে এবং তবে এর আলংকারিক গুণ একটু বেশি বেশি। ‘তিন মুখাবয়ব’ ১৯৭৯ সালের কাজ, সবুজ-লাল ও রেখার নানা কারিগরিতে বাংলাদেশের পতাকা আর মানুষকে নিয়ে এক গল্প লেখার প্রচেষ্টা। এটিও এচিংয়ে করা। ‘শান্তি’ শীর্ষক রচনাটি বৃন্তের মধ্যে কবুতর, একটি মুখ, কিছু আলংকারিক কারুকাজ মিলিয়ে করা। ১৯৮০-এর দশকে ঠান্ডা যুদ্ধের প্রাক্কালে শিল্পীকে প্রায়ই এমন কাজ করতে দেখা যেত।
আরও একটি এচিং ১৯৭৯ সালে করা, শিরোনাম ‘লালন’, একটু ব্যতিক্রমী কাজ। ছোট্ট পটে সহজিয়া জীবনের অনুষঙ্গ বিশদ বর্ণনায় আঁকা পটকে বহু ভাগে ভাগ করে পূর্ণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, এরপর ‘ইমেজ’ শীর্ষক কিছু কাজ দর্শকদের বিশেষভাবে নজর কাড়ে। ১৯৯৭-৮১ কালপর্বে শিল্পী যখন ন্যাশনাল হারবেরিয়ামে কর্মরত ছিলেন, এই কাজগুলো সেই সময়ের। রচনা হিসেবে এগুলো আলাদা স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার। যদিও শিল্পী নিজে বলছেন, ওই কাজগুলো গণেশ পাইন দ্বারা প্রভাবিত, তবুও কাজগুলোর নির্মাণদক্ষতা, বর্ণনার গভীরতা আলাদা মাত্রা সংযোজন করেছে।
সাম্প্রতিক কাজ করছেন রিলিফ প্রিন্ট এবং ক্যালিগ্রাফ পদ্ধতিতে। এখানে ‘ওমেন উইথ ফ্লাওয়ার’ ও ‘ফ্লাওয়ার ভাস’ শীর্ষক কাজ দুটি দর্শকদের আলাদাভাবে নজর কাড়ে।
‘উত্তর প্রতিচ্ছায়াবাদী’ শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের সূর্যমুখীকে ঘিরে একটি বিনির্মাণের প্রচেষ্টা। এটি ভাষা বিনির্মাণের প্রচেষ্টা হিসেবে, নাকি একটি হঠাৎ ঘোরের বশে করা কোনো কাজ—তা নির্ণয় করা বোধ হয় এখনই সম্ভব নয়।
এ ছাড়া আরও অনেক রিলিফ প্রিন্ট আছে, যেগুলোতে ফুল, লতাপাতা, নারী মিলে আলংকারিক বর্ণনার প্রভাবই বেশি। ২০১০ সাল থেকে ক্যালিগ্রাফ মাধ্যমে কাজ করছেন শিল্পী। এই মাধ্যমে করা বিভিন্ন কাজ তাঁর সাম্প্রতিক ক্যানভাসে করা কাজগুলোর সমগোত্রীয় বলা যায়। নানা বুনট বর্ণের মিশ্রণে করা কাজগুলোর বেশির ভাগই পূর্ণ বিমূর্ত হলেও তাতে আমরা দেখি নানা প্রতীকের উপস্থিতি। ব্যতিক্রম হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতি দেখতে পাই একটি কাজে। কাজটির শিরোনাম ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য’। এ ছাড়া ওয়াটার কালার কোরিওগ্রাফি মাধ্যমে করা দুটি কাজ টেকনিকগত স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার।
বাড়ি ৬০, রোড ৭/এ ধানমন্ডির ঢাকা আর্ট সেন্টারে গত ২৮ জুন শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত।
No comments