কোটার কবলে মেধা by আশরাফুল হক রাজীব ও হোসেইন জামাল
পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন
সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের আস্থা অর্জনকারী সংস্থা বা
কমিটিগুলো কোটা পদ্ধতিতে থাকতে না চাইলেও এই কোটাতেই সরকারগুলোর অগাধ
আস্থা।
কোটা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার দীর্ঘদিনের চেষ্টা ও
সুপারিশ পায়ে ঠেলে উল্টো নতুন করে কোটা আরোপ করেছে বর্তমান সরকার। আর
পুরনো কোটার আওতাকে সম্প্রসারণ করে প্রকৃত মেধাবীদের কোণঠাসা করে রাখা
হয়েছে। উৎকৃষ্টদের ডিঙিয়ে নিম্ন মেধার লোকরা নিয়োগ পাওয়ায় জনপ্রশাসন দিন
দিনই অকার্যকর হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদসচিব আকবর আলি খান গত বুধবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোটা স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়। এটা সাংবিধানিক চেতনারও পরিপন্থী। ৪০ বছর পর এসব কোটা টিকিয়ে রাখার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার জন্য জেলা কোটার সৃষ্টি হলেও তা অকার্যকর। এসব কোটা জটিলতার সৃষ্টি করে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কমিশন, কমিটি, এমনকি পিএসসি নিজেও এসব কোটা থেকে বের হয়ে আসার সুপারিশ করেছে। সবই ফেলে রাখা হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদানের কথা বিবেচনা করে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার চার দশক পর তাঁদের সন্তানদের বেলায় এটা প্রয়োগ করার কোনো কারণ নেই। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরাও কোটা সুবিধা ভোগ করেন। কোটা রাখতে গেলেও কত দিনের জন্য থাকবে, তা নির্ধারণ করা দরকার।'
জানা যায়, মেধাবীদের একটি বড় অংশ সরকারি চাকরিতে আকর্ষণ হারিয়েছে। এর পরও যাঁরা আসতে চাইছেন, তাঁরা কোটার নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন। ৩০তম বিসিএসের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল কাওসার জানিয়েছেন, তিনি লিখিত পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশ নম্বর পেয়েও সুযোগ পাননি। কিন্তু তাঁর বন্ধু ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েই নির্বাচিত হন। কোটা প্রথার সুযোগে অযোগ্য প্রার্থীরা দখল করে নেন দেশের প্রথম শ্রেণীর চাকরিগুলো। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও প্রতিবন্ধী এবং উপজাতি কোটার সঙ্গে বিভিন্ন জেলা/বিভাগের জন্য আরোপিত সংখ্যাগত সীমারেখা সংযুক্ত হয়ে এমন একটি বহুমাত্রিক সমীকরণ কাঠামোর সৃষ্টি করেছে, যার ফলে বিসিএসে কোটা প্রথায় জটিলতা বাড়ছে। একটি বড় অংশ কোটার মধ্য দিয়ে নেওয়ার কারণে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হন।
সবার আগে কোটার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর সুপারিশ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এ টি এম শামসুল হকের নেতৃত্বে এ কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনটি ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিশন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদগুলোতে মেধা কোটা ১০ ভাগ বাড়িয়ে ৫৫ করার সুপারিশ করে। ২০০৮ সালে পিএসসির উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় 'কোটা সিস্টেম ফর সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট ইন বাংলাদেশ' সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষা পরিচালনা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আকবর আলি খান ও সাবেক শিক্ষাসচিব কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। ওই সমীক্ষায় পিএসসি শিক্ষাবিদ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, উপজাতি, নারীনেত্রী ও ছাত্রদের মতামত নেয়। এসব মতামতের ভিত্তিতে পিএসসি সরকারের কাছে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশ করে। পিএসসি সূত্র জানায়, ওই সুপারিশে বিদ্যমান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমিয়ে ১৫ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ এবং উপজাতি ৫ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে পিএসসি জেলা কোটা তুলে দেওয়া এবং বাকি ৭০ শতাংশ মেধাবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করে। ২০০৮ সালের মার্চে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি পিএসসি চেয়ারম্যান ড. সা'দত হুসাইনের কাছে জমা দেওয়া হয়। ওই বছরই পিএসসি তাদের রিপোর্ট ও সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয়।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য ২০১১ সালের মার্চে পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনেও সুপারিশ করা হয়। দুই বছর পার হওয়ার পরও সেই সুপারিশ আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান কোটাব্যবস্থায় 'শতভাগ নিখুঁতভাবে' উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এ কারণে 'সরল' একটি কোটা পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। পিএসসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে কোটাসংক্রান্ত যে নীতিমালা চালু আছে, তার প্রয়োগ 'অত্যন্ত জটিল, দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ'। প্রচলিত কোটা পদ্ধতির জটিলতার কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে পিএসসির সুপারিশ হলো- মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও উপজাতি প্রাধিকার কোটায় নিয়োগ হবে জাতীয় পর্যায়ে প্রার্থী বণ্টনের ভিত্তিতে। এর ভেতর আবার জেলা বা বিভাগভিত্তিক কোটা বা জনসংখ্যার ভিত্তিতে নিয়োগের হিসাব আনলেই জটিলতা বেড়ে যাবে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ ধরনের পদগুলো জাতীয়ভিত্তিক নিজস্ব মেধানুক্রম অনুযায়ী ওই কোটায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা যেতে পারে।
এসব কোনো সুপারিশই আমলে নেয়নি সরকার। উল্টো দলীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পর তাঁদের নাতি-নাতনিদেরও কোটা সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ জন্য নামকাওয়াস্তে একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করে তার সুপারিশ নেওয়া হয়েছিল। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
চাকরিরত একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যেখানে সব সংস্থা বা কমিশন মেধা কোটা সংকুচিত করার সুপারিশ করছে সেখানে সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা সম্প্রসারণ করে বিষয়টিকে আরো বিতর্কিত করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এই সরকারই প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেছে। যদিও এই কোটা অন্যান্য কোটা থেকে সংরক্ষণ করা হবে।'
এদিকে মন্ত্রিসভা প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকতর সুযোগ দেওয়ার জন্য ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে ৩২তম বিসিএসের খালি পদগুলো পূরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ৩২তম বিসিএসে যোগ্য প্রার্থীর অভাবে বিভিন্ন কোটার অধীনে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে খালি থাকা পদগুলো ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পূরণ করা হবে। মন্ত্রিসভা এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেছেন, যোগ্য প্রার্থীর অভাবে ৩২তম বিসিএস পরীক্ষায় কারিগরি ও শিক্ষাসহ বিশেষ কোটায় এক হাজার ১২৫টি পদ খালি রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে এসব খালি পদ এখন পূরণ করা যাবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মিনার বৈদ্য বলেন, ৩২তম বিসিএসের খালি থাকা পদ ৩৩তম থেকে পূরণের বিষয়টি ইতিবাচক। এতে মেধাবীদের সুযোগ আরো বেড়ে গেল। তবে যেহেতু প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রায়ই অনেক পদ খালি থাকে, তাই পিএসসির কাছে আমাদের আবেদন, কোটার পরিমাণ কমিয়ে পরীক্ষিত মেধাবীদের সুযোগ আরো বাড়ানো হোক।'
এ অবস্থায় গত কয়েক বছর ধরেই প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তাঁদের এ আন্দোলন সরকার আমলে নেয়নি। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনও বেগবান ছিল না। গত বুধবার শাহবাগ অবরোধ করার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জাতীয় রূপ পায়। গতকাল বৃহস্পতিবার তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায়ও সরকার কোটা কমানোর পক্ষে নয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোটা কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে এ বিষয়ে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কথা আমি জানি না।' তিনি বলেন, 'জেলা কোটা তুলে দিলে সরকারি চাকরিতে বৈষম্য বাড়বে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় শিক্ষার হার কম। সেসব জেলায় প্রথম শ্রেণীর চাকরিজীবীর সংখ্যা কমে যাবে। মহিলা কোটা কমালে তাঁরা পিছিয়ে পড়বেন।' পিএসসির কোটা সংস্কার পদ্ধতি কেন মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, 'এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আর আমি মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর পিএসসি এমন কোনো প্রস্তাব পাঠায়নি।'
পিএসসির সূত্রে জানা গেছে, কোটা পদ্ধতিতে সব শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না। টেকনিক্যাল ক্যাডারে অপূরণকৃত পদ পূরণের লক্ষ্যে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২৩তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ওই পরীক্ষায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় ৭০৯টি পদের বিপরীতে কমিশন মাত্র ৭৯ জন প্রার্থীর বিষয়ে সুপারিশ করতে পেরেছিল। ২৮তম বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে মোট ৬৫৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ৩৪৭ জনই নিয়োগ পান বিভিন্ন কোটায়। ২৯তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারের ৪১২ জনের মধ্যে ২১১ জন কোটায় আর ২০১ জন মেধা পরীক্ষায় নিয়োগ পান। পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসন্ধানে দেখা যায়, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে কোটায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি পদ খালি থাকে। ৩০তম বিসিএসে প্রাধিকার কোটায় ৭৮৪টি, ৩১তমতে ৭৭৩টি পদ খালি রাখা হয়েছে। ৩০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬১৩, মহিলা ৩২ এবং উপজাতীয় কোটায় ১৩৯টি পদ খালি ছিল। সর্বশেষ ৩১তম বিসিএসে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় প্রাধিকার কোটার ৭৭৩টি পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ৫৫০, মহিলা ৫৪ জন ও উপজাতি ১২৯টি। এসব পদ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
বিসিএসে পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত মেধা কোটায় ৪৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনি কোটায় ৩০ শতাংশ, মহিলা কোটায় ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ এবং জেলা কোটায় ১০ শতাংশ নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আরো রয়েছে প্রতিবন্ধী কোটার ১ শতাংশ, যদিও তা ৫৫ শতাংশ কোটা হতে প্রাধিকারের ভিত্তিতে বণ্টন করা হয়। অর্ধেকের বেশি পদ কোটার মাধ্যমে পূরণ করার চিত্রটি কোটার বাইরের প্রার্থীদের জন্য হতাশাজনক বলেই গণ্য হয়ে আসছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মেধাবীদের বঞ্চিত করে কোটা পদ্ধতি বহাল রেখে কাউকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে আমি না। এটার অবশ্যই সুরাহা হওয়া দরকার। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার চার দশক পরে বিশেষ কোটার দরকার নেই। কাউকে কোটা সুবিধা দিতে হলে তা অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে এর সমাধান বের করতে হবে।'
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'পারতপক্ষে কোটা থাকা উচিত না। নারীরা অনেক এগিয়েছে। তারা অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। চাকরিতে তাদের কোটা দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। এখানে নারী-পুরুষের সমতা হতে পারে। নারীদের যেটা দরকার তা হচ্ছে চাকরি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা।'
কোটা প্রথা বাতিলে আইনি নোটিশ
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা প্রথা বাতিলের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভুঁইয়া। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোটা প্রথা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। নইলে রিট মামলা করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ডাকযোগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব, সংস্থাপনসচিব ও পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের সুযোগ নেই। কোটা প্রথার ফলে দেশের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবীরা নিয়োগ পাচ্ছেন না। ফলে দেশ সঠিকভাবে চলছে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদসচিব আকবর আলি খান গত বুধবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোটা স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়। এটা সাংবিধানিক চেতনারও পরিপন্থী। ৪০ বছর পর এসব কোটা টিকিয়ে রাখার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার জন্য জেলা কোটার সৃষ্টি হলেও তা অকার্যকর। এসব কোটা জটিলতার সৃষ্টি করে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কমিশন, কমিটি, এমনকি পিএসসি নিজেও এসব কোটা থেকে বের হয়ে আসার সুপারিশ করেছে। সবই ফেলে রাখা হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদানের কথা বিবেচনা করে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার চার দশক পর তাঁদের সন্তানদের বেলায় এটা প্রয়োগ করার কোনো কারণ নেই। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরাও কোটা সুবিধা ভোগ করেন। কোটা রাখতে গেলেও কত দিনের জন্য থাকবে, তা নির্ধারণ করা দরকার।'
জানা যায়, মেধাবীদের একটি বড় অংশ সরকারি চাকরিতে আকর্ষণ হারিয়েছে। এর পরও যাঁরা আসতে চাইছেন, তাঁরা কোটার নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন। ৩০তম বিসিএসের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল কাওসার জানিয়েছেন, তিনি লিখিত পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশ নম্বর পেয়েও সুযোগ পাননি। কিন্তু তাঁর বন্ধু ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েই নির্বাচিত হন। কোটা প্রথার সুযোগে অযোগ্য প্রার্থীরা দখল করে নেন দেশের প্রথম শ্রেণীর চাকরিগুলো। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও প্রতিবন্ধী এবং উপজাতি কোটার সঙ্গে বিভিন্ন জেলা/বিভাগের জন্য আরোপিত সংখ্যাগত সীমারেখা সংযুক্ত হয়ে এমন একটি বহুমাত্রিক সমীকরণ কাঠামোর সৃষ্টি করেছে, যার ফলে বিসিএসে কোটা প্রথায় জটিলতা বাড়ছে। একটি বড় অংশ কোটার মধ্য দিয়ে নেওয়ার কারণে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হন।
সবার আগে কোটার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর সুপারিশ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এ টি এম শামসুল হকের নেতৃত্বে এ কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনটি ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিশন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদগুলোতে মেধা কোটা ১০ ভাগ বাড়িয়ে ৫৫ করার সুপারিশ করে। ২০০৮ সালে পিএসসির উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় 'কোটা সিস্টেম ফর সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট ইন বাংলাদেশ' সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষা পরিচালনা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আকবর আলি খান ও সাবেক শিক্ষাসচিব কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। ওই সমীক্ষায় পিএসসি শিক্ষাবিদ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, উপজাতি, নারীনেত্রী ও ছাত্রদের মতামত নেয়। এসব মতামতের ভিত্তিতে পিএসসি সরকারের কাছে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশ করে। পিএসসি সূত্র জানায়, ওই সুপারিশে বিদ্যমান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমিয়ে ১৫ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ এবং উপজাতি ৫ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে পিএসসি জেলা কোটা তুলে দেওয়া এবং বাকি ৭০ শতাংশ মেধাবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করে। ২০০৮ সালের মার্চে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি পিএসসি চেয়ারম্যান ড. সা'দত হুসাইনের কাছে জমা দেওয়া হয়। ওই বছরই পিএসসি তাদের রিপোর্ট ও সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয়।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য ২০১১ সালের মার্চে পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনেও সুপারিশ করা হয়। দুই বছর পার হওয়ার পরও সেই সুপারিশ আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান কোটাব্যবস্থায় 'শতভাগ নিখুঁতভাবে' উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এ কারণে 'সরল' একটি কোটা পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। পিএসসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে কোটাসংক্রান্ত যে নীতিমালা চালু আছে, তার প্রয়োগ 'অত্যন্ত জটিল, দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ'। প্রচলিত কোটা পদ্ধতির জটিলতার কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে পিএসসির সুপারিশ হলো- মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও উপজাতি প্রাধিকার কোটায় নিয়োগ হবে জাতীয় পর্যায়ে প্রার্থী বণ্টনের ভিত্তিতে। এর ভেতর আবার জেলা বা বিভাগভিত্তিক কোটা বা জনসংখ্যার ভিত্তিতে নিয়োগের হিসাব আনলেই জটিলতা বেড়ে যাবে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ ধরনের পদগুলো জাতীয়ভিত্তিক নিজস্ব মেধানুক্রম অনুযায়ী ওই কোটায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা যেতে পারে।
এসব কোনো সুপারিশই আমলে নেয়নি সরকার। উল্টো দলীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পর তাঁদের নাতি-নাতনিদেরও কোটা সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ জন্য নামকাওয়াস্তে একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করে তার সুপারিশ নেওয়া হয়েছিল। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
চাকরিরত একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যেখানে সব সংস্থা বা কমিশন মেধা কোটা সংকুচিত করার সুপারিশ করছে সেখানে সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা সম্প্রসারণ করে বিষয়টিকে আরো বিতর্কিত করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এই সরকারই প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেছে। যদিও এই কোটা অন্যান্য কোটা থেকে সংরক্ষণ করা হবে।'
এদিকে মন্ত্রিসভা প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকতর সুযোগ দেওয়ার জন্য ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে ৩২তম বিসিএসের খালি পদগুলো পূরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ৩২তম বিসিএসে যোগ্য প্রার্থীর অভাবে বিভিন্ন কোটার অধীনে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে খালি থাকা পদগুলো ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পূরণ করা হবে। মন্ত্রিসভা এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেছেন, যোগ্য প্রার্থীর অভাবে ৩২তম বিসিএস পরীক্ষায় কারিগরি ও শিক্ষাসহ বিশেষ কোটায় এক হাজার ১২৫টি পদ খালি রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে এসব খালি পদ এখন পূরণ করা যাবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মিনার বৈদ্য বলেন, ৩২তম বিসিএসের খালি থাকা পদ ৩৩তম থেকে পূরণের বিষয়টি ইতিবাচক। এতে মেধাবীদের সুযোগ আরো বেড়ে গেল। তবে যেহেতু প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রায়ই অনেক পদ খালি থাকে, তাই পিএসসির কাছে আমাদের আবেদন, কোটার পরিমাণ কমিয়ে পরীক্ষিত মেধাবীদের সুযোগ আরো বাড়ানো হোক।'
এ অবস্থায় গত কয়েক বছর ধরেই প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তাঁদের এ আন্দোলন সরকার আমলে নেয়নি। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনও বেগবান ছিল না। গত বুধবার শাহবাগ অবরোধ করার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জাতীয় রূপ পায়। গতকাল বৃহস্পতিবার তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায়ও সরকার কোটা কমানোর পক্ষে নয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোটা কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে এ বিষয়ে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কথা আমি জানি না।' তিনি বলেন, 'জেলা কোটা তুলে দিলে সরকারি চাকরিতে বৈষম্য বাড়বে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় শিক্ষার হার কম। সেসব জেলায় প্রথম শ্রেণীর চাকরিজীবীর সংখ্যা কমে যাবে। মহিলা কোটা কমালে তাঁরা পিছিয়ে পড়বেন।' পিএসসির কোটা সংস্কার পদ্ধতি কেন মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, 'এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আর আমি মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর পিএসসি এমন কোনো প্রস্তাব পাঠায়নি।'
পিএসসির সূত্রে জানা গেছে, কোটা পদ্ধতিতে সব শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না। টেকনিক্যাল ক্যাডারে অপূরণকৃত পদ পূরণের লক্ষ্যে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২৩তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ওই পরীক্ষায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় ৭০৯টি পদের বিপরীতে কমিশন মাত্র ৭৯ জন প্রার্থীর বিষয়ে সুপারিশ করতে পেরেছিল। ২৮তম বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে মোট ৬৫৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ৩৪৭ জনই নিয়োগ পান বিভিন্ন কোটায়। ২৯তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারের ৪১২ জনের মধ্যে ২১১ জন কোটায় আর ২০১ জন মেধা পরীক্ষায় নিয়োগ পান। পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসন্ধানে দেখা যায়, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে কোটায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি পদ খালি থাকে। ৩০তম বিসিএসে প্রাধিকার কোটায় ৭৮৪টি, ৩১তমতে ৭৭৩টি পদ খালি রাখা হয়েছে। ৩০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬১৩, মহিলা ৩২ এবং উপজাতীয় কোটায় ১৩৯টি পদ খালি ছিল। সর্বশেষ ৩১তম বিসিএসে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় প্রাধিকার কোটার ৭৭৩টি পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ৫৫০, মহিলা ৫৪ জন ও উপজাতি ১২৯টি। এসব পদ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
বিসিএসে পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত মেধা কোটায় ৪৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনি কোটায় ৩০ শতাংশ, মহিলা কোটায় ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ এবং জেলা কোটায় ১০ শতাংশ নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আরো রয়েছে প্রতিবন্ধী কোটার ১ শতাংশ, যদিও তা ৫৫ শতাংশ কোটা হতে প্রাধিকারের ভিত্তিতে বণ্টন করা হয়। অর্ধেকের বেশি পদ কোটার মাধ্যমে পূরণ করার চিত্রটি কোটার বাইরের প্রার্থীদের জন্য হতাশাজনক বলেই গণ্য হয়ে আসছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মেধাবীদের বঞ্চিত করে কোটা পদ্ধতি বহাল রেখে কাউকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে আমি না। এটার অবশ্যই সুরাহা হওয়া দরকার। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার চার দশক পরে বিশেষ কোটার দরকার নেই। কাউকে কোটা সুবিধা দিতে হলে তা অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে এর সমাধান বের করতে হবে।'
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'পারতপক্ষে কোটা থাকা উচিত না। নারীরা অনেক এগিয়েছে। তারা অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। চাকরিতে তাদের কোটা দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। এখানে নারী-পুরুষের সমতা হতে পারে। নারীদের যেটা দরকার তা হচ্ছে চাকরি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা।'
কোটা প্রথা বাতিলে আইনি নোটিশ
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা প্রথা বাতিলের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভুঁইয়া। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোটা প্রথা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। নইলে রিট মামলা করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ডাকযোগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব, সংস্থাপনসচিব ও পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের সুযোগ নেই। কোটা প্রথার ফলে দেশের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবীরা নিয়োগ পাচ্ছেন না। ফলে দেশ সঠিকভাবে চলছে না।
No comments