সরকারি কর্মে নিয়োগ- মেধারই প্রাধান্য দিতে হবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে
বৃহস্পতিবার পুলিশের সঙ্গে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের দফায় দফায় তীব্র সংঘর্ষ
হয়েছে। চারুকলা চত্বর থেকে যানবাহন পোড়ানো, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের
টিয়ারসেল নিক্ষেপসহ শাহবাগের তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাবে
যানজটও দুঃসহ পর্যায়ে পেঁৗছেছে গতকাল।
চাকরিতে বিদ্যমান
সব ধরনের কোটা এবং ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল বাতিলের দাবিতে
বুধবার থেকে চলা আন্দোলনের এক পর্যায়ে এই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। আরও
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। বুধবারের বিক্ষোভ ছিল
শান্তিপূর্ণ এবং সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে
ফল পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে
আসবে, এমনটিই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু কেন শাহবাগ এলাকার পরিস্থিতি অগি্নগর্ভ
হয়ে উঠল? কেনই-বা পুলিশের সঙ্গে একযোগে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা
পরীক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাল? নানা কারণেই দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এখানে-সেখানে তুচ্ছ কারণেও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটতে দেখা যায়। এ অবস্থায়
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের প্রতি পুলিশের এমন কঠোর মনোভাবের কারণ বোধগম্য নয়।
এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় না, বরং সরকারের জন্য তা অনিষ্ট ডেকে আনে।
এমন সরল সত্য উপলব্ধি করার মতো বিচক্ষণ লোক কি সরকারের ভেতরে নেই? কোটা
নাগরিক অধিকার খর্ব করে এবং মেধা ও যোগ্যতার পরিপন্থী_ এ বক্তব্য যৌক্তিক।
সরকারি প্রশাসন এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যোগ্যদের মনোনীত করার জন্য
এ বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনায় থাকা চাই। সমাজের অনগ্রসর অংশের জন্য, বিশেষ
করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও নারীদের জন্য কিছু পদ সংরক্ষণ করা যেতেই পারে।
মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও কিছু পদ থাকা সঙ্গত। তবে কিছুতেই
তা ঢালাওভাবে হওয়া উচিত নয়। প্রশাসনের উচ্চপদগুলোতে প্রায় ৪৫ শতাংশ পদ
কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়_ এ বিষয়টি অনেকেরই ক্ষোভের কারণ হয়ে আছে।
কোটার ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতির পক্ষেও হয়তো জোরালো যুক্তি দেওয়া যাবে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং অন্য যেসব সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের
সুবিধা রয়েছে, তাদের উচিত বিষয়টি নিয়ে মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করা। সরকার
অনেক ইস্যুতে গণশুনানির আয়োজন করে। কোটার সুবিধা-অসুবিধা নিয়েও আলোচনায়
সমস্যা থাকার কথা নয়। পাবলিক সার্ভিস কমিশন বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তে
৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পর্যায় থেকেই কোটা পদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত
গ্রহণের কারণেই এমন অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা আগেভাগে
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। তারা বলছে, নিয়োগ
প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ করলে কোটা পূরণ করার মতো
পর্যাপ্ত প্রার্থী পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর অনেক পদ শূন্য থেকে যায়।
কিন্তু তারা যে পথ অনুসরণ করতে চেয়েছে, তাতে তুলনামূলক কম মেধা নিয়ে
প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়মিত নিয়োগলাভ করতে
থাকবে_ এ অভিযোগ হালকা করে দেখার উপায় নেই। আমরা মধ্য আয়ের দেশ হতে চলেছি। এ
লক্ষ্যে নির্বিঘ্নে আধুুনিক ও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে
এবং তার অপরিহার্য শর্ত দক্ষ ও যোগ্যদের নিয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ
জন্য কোটা পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়নসহ যা কিছু করা দরকার, তাতে দ্বিধান্বিত
হওয়ার অবকাশ নেই। একই সঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতিও যতটা সম্ভব উন্নত করা
চাই, যাতে কেবল প্রকৃত মেধাবীরাই নির্বাচিত হতে পারে। দেশে এখন বেসরকারি
খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় বেতন ও সুবিধাদি দিয়ে তরুণদের আগ্রহী করতে
চাইছে। শাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষ ও যোগ্য কর্মী চাইলে সরকারকে কিন্তু
বেসরকারি খাতের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতে হবে।
No comments