বাংলার হাতির পিঠে মার্কিন সার্কাসের যাত্রা শুরু by মাহবুব আলম
কয়েক বছর হলো ব্রিটেনের কাছ থেকে আমেরিকা
স্বাধীন হয়েছে। নতুন বিশ্বের নতুন স্বাধীন দেশ গড়ার প্রেরণায় মার্কিন জনগণ ও
উদ্যোক্তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নতুন শিল্পোদ্যোগ নিয়ে তাঁদের অনেকেই এগিয়ে
এসেছেন।
অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে আমেরিকার ‘শো বিজনেস’ বা
জীবজন্তুর প্রদর্শনী তথা সার্কাসেরও প্রাথমিক সূচনা হয়। এমন সময়ে অনেকেই
জানেন না যে মার্কিন প্রদর্শনী ব্যবসার বিকাশ ও উত্থান ঘটে বাংলাদেশের একটি
ছোট্ট হাতির পিঠে চেপেই—আজ থেকে ২৩০ বছর আগে। অবিশ্বাস্য শোনালেও কথাটা
সত্যি। হাতিটি এনেছিলেন সফল মার্কিন জাহাজি বণিক ও সমুদ্রগামী জাহাজের
ক্যাপ্টেন জ্যাকব ক্রাউন শিল্ড; আমেরিকা নামের জাহাজে করে ১৭৭৬ সালের
এপ্রিলে বাংলার কলকাতা বন্দর থেকে।
জ্যাকব ক্রাউন শিল্ডরা পাঁচ ভাই। সবাই ছিলেন কলকাতা তথা বাংলা-মার্কিন বাণিজ্যে জড়িত। সমসময়ের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে থাকা ক্যাপ্টেন জ্যাকবের কলকাতায় বসে হঠাৎ মনে হলো—মসলিন, মোটা কাপড়, ঘি, সোবা, মহিষের শিং—অনেক কিছুই তো কলকাতা থেকে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে—এবার একটি জ্যান্ত হাতি নিয়ে গেলে কেমন হয়! হাতির মতো বড় জীবিত স্থলচর প্রাণী আমেরিকানরা স্বচক্ষে আগে কখনো দেখেনি। অনেকেই তো বাঘ, সিংহ, উট, ময়ূর প্রভৃতি পশুপাখি প্রদর্শনী করে পয়সার মুখ দেখেছে। হাতির মতো বৃহৎ ও বিচিত্র প্রাণী এর চেয়ে বেশি মুনাফা ঘরে তুলবে। জ্যাকবের পরিকল্পনা তাঁর ভাইরা পাগলামির চূড়ান্ত বলে নাকচ করে দিলেন। কারণ, দীর্ঘ চার মাস সাগরের বুকে হাতিটি বাঁচিয়ে রাখতে কমপক্ষে দৈনিক ৬০০ পাউন্ড খরচ ও ১০০ লিটার মিঠা পানির খরচ জোগাতে হাতির ব্যবসা গোড়াতেই লাটে উঠবে। জ্যাকবের কলকাতার এজেন্ট দুর্গা প্রসাদ ও জ্যাকবের বাবা বিখ্যাত সমুদ্র বণিক বেনজামিন ক্রাউন শিল্ডও ঘোরতর আপত্তি জানালেন। এর আগেও অনেকে বিচিত্র জীবজন্তু আমদানি করেছেন আমেরিকায়, কিন্তু তাঁরা কেউ পয়সার মুখ দেখেননি এই ব্যবসায়। জ্যাকবের কপালেও তা-ই ঘটবে। জ্যাকব দমে না গিয়ে অনেক ভেবেচিন্তে একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির বদলে দুই বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে হাতি কিনে ব্যবসায়ের পুঁজি, জাহাজের নিরাপত্তা, ব্যবসায়িক ঝুঁকি সব সামাল দিলেন। ভাই জর্জ আজর্নকে চিঠি লিখে সংকল্পে অনড় থাকার কথা জানালেন এমনি ভাষায়, ‘দুই বছরের একটি বাচ্চা হাতি নিয়ে দেশে ফিরছি। দাম পড়েছে সব মিলিয়ে ৪৫০ ডলার। আকারে হাতিটি প্রায় একটি বড় ষাঁড়ের মতো। যদি ভালোয় ভালোয় একে নিয়ে দেশে ফিরতে পারি, তবে কমপক্ষে পাঁচ হাজার ডলার তো হাতে পাবই। ...জানি আমার এই ব্যবসা নিয়ে তোমরা হাসাহাসি করছ। কিন্তু আমি এতে কিছু মনে করি না। দেশে ফেরার পথে কেপ ও সেন্ট হেলেনা দ্বীপে জাহাজ নোঙর করবে, সেখান থেকে হাতির জন্য মিঠা পানি তুলে নেব। ...যদি সফল হই, তবে এ ব্যবসার পুরো কৃতিত্ব আমার একার। তা ছাড়া আমেরিকায় প্রথম জ্যান্ত হাতি নিয়ে আসা হবে আমার জন্য এক গৌরবের ব্যাপার।’ বাচ্চা হাতিটি নিয়ে জ্যাকব ক্রাউন শিল্ড শীত শেষ হওয়ার আগেই ‘আমেরিকা’ নামের জাহাজে চেপে কলকাতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
১৭৯৫-এর ৩ ডিসেম্বর। ভাগীরথী নদী বেয়ে জাহাজ ‘আমেরিকা’ সমুদ্রের দিকে পাড়ি দিল। গন্তব্যস্থল ম্যাসাচুসেটসের সারৈম বন্দর। জাহাজের লগবুকে ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৭৯৬ লেখা, জাহাজ সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বিঘ্নে পৌঁছেছে। এখান থেকে জাহাজের লোকজনের জন্য খাবার, পানি আর হাতির জন্য শাকসবজি, সবুজ ঘাসপাতা তোলা হলো। লগবুকে সেদিনের তারিখে বড় বড় অক্ষরে লেখা: ‘এলিফ্যান্ট অন বোর্ড’—জাহাজে হাতি রয়েছে। বাচ্চা হাতিটি সেই কালো পানিতে ভাসতে ভাসতে কীভাবে পুরো চার মাস কাটিয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য নেই লগবুকে। ঝড়ের রাতে বাতাস আর ঢেউয়ের গর্জনে ভীতসন্ত্রস্ত হাতিটি তার ফেলে আসা মাকে আকুল হয়ে খুঁজেছিল কি? লগবুকে এসব নিয়ে কোনো তথ্য নেই। থাকার কথাও নয়। জাহাজটি এপ্রিল ১৩, ১৭৯৬ হাতি এবং ক্রাউন শিল্ডকে নিয়ে নিউইয়র্কে পৌঁছাল।
ক্রাউন শিল্ড হাতিটির নাম দিয়েছিলেন বেট। আর এ নামেই বাচ্চা হাতিটি সারা মার্কিন মুলুকে আজও বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। তিনি হাতিটির প্রথম প্রদর্শনী করেন ২৩ এপ্রিল, ১৭৯৬-এ। নিউইয়র্কের বিডার স্ট্রিট ও ব্রডওয়ের কোনায়। আমেরিকার মাটিতে হাতির উপস্থিতি নিয়ে সমসময়ের প্রতিটি পত্রিকায় বিস্তারিত খবর বেরিয়েছিল। প্রথম দর্শনেই বেট আমেরিকানদের মন জয় করে নিয়েছিল। ক্রাউন শিল্ডের ভাগ্যলক্ষ্মীও এই হাতির পিঠে চেপেই তাঁর দোরগোড়ায় এসে হাজির। অতিদ্রুত হাতিটি ক্রাউন শিল্ডকে ধনে-মানে সারা দেশে খ্যাতিমান করে তুলেছিল। শুধু অর্থ-সম্পদই যে তাঁর ভাগ্যে লেখা ছিল তা নয়; তিনি ম্যাসাচুসেটস থেকে কংগ্রেস নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন আমেরিকার নেভি সচিবের পদ দিয়ে। যদিও সেই পদ তিনি গ্রহণ করেননি।
ক্রাউন শিল্ড কিছুদিন পর হাতিটি ১০ হাজার ডলারে বেচে দেন। এর পরই হাতিটির দেশজুড়ে নিয়মিত প্রদর্শনী শুরু হয়। সে সময়ের সংবাদপত্রের রিপোর্ট ও সার্কাসের বিজ্ঞাপন থেকে বেটের আমেরিকা দর্শন সম্পর্কে গবেষকেরা বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন।
নিউইয়র্কের পর বোস্টন, তারপর প্রায় নিয়মিত হাতিটি নিউ ইংল্যান্ড, পেনসিলভানিয়া এবং উত্তর-দক্ষিণ ক্যারোলাইনায় প্রদর্শনী করে বেড়িয়েছে। প্রথমে দর্শনার্থীদের ৫০ সেন্ট দিতে হতো। পরে মাথাপিছু সিকি ডলার দর্শনী স্থির হয়। তবে শিশুদের জন্য দর্শনী মাত্র নয় পেনি। খবরের কাগজের রিপোর্ট মোতাবেক মার্কিন বাবা-মায়েরা ছেলেপুলেদের হাত ধরে দূর-দূরান্ত থেকে হাতিটি দেখতে ছুটে এসেছেন। কারণ, হাতিটি বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে। অল্প সময়ের মধ্যে বেট বাচ্চাদের খুব প্রিয় হয়ে দাঁড়াল। তবে এত গুণ সত্ত্বেও হাতিটির সম্পর্কে একটি মৃদু সতর্কতা প্রদর্শনীতে প্রায়ই ঝুলতে দেখা যেত। ‘দয়া করে দর্শকেরা হাতে কোনো মূল্যবান নথিপত্র নিয়ে হাতিটির খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াবেন না।’ কারণ, ইতিমধ্যে কয়েকজন দর্শকের হাত থেকে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শুঁড় বাড়িয়ে টেনে নিয়েছে হাতিটি। মনে হয় এই মজার স্বভাবটিও হাতির আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে বেট অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছিল। কাউকে কখনো কোনো ক্ষতি করেনি।
১৮১৬ সাল। দুই বছর বয়সের সেই বাচ্চা হাতিটির বয়স এখন ২২ বছর। ২০ বছর ধরে বারনাম অ্যান্ড বেইলি সার্কাসের লক্ষ্মীর ঝাঁপি কানায় কানায় ভরে দিয়েছে এই হাতি। হাতিরা দীর্ঘজীবী প্রাণী, ২০-২২ বছর তাদের উঠতি বয়স মাত্র। কিন্তু মানুষের ভালোবাসায় এই হাতির আরেক নাম হয়েছিল ওল্ড বেট। সার্কাসের হাতিরা সাধারণত যেসব খেলা দেখাতে পটু, সেসবের কিছুই বেটের জানা ছিল না। কোনো কলাকৌশলও একে শেখানো হয়নি। কিন্তু পেটে বিদ্যে না থাকলে কী হবে, দর্শক টানতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি বেটের। এর বন্ধুসুলভ আচরণ, ছেলেপুলেদের জন্য স্নেহ আর সাধারণ দর্শকদের প্রতি কৌতূহলের কারণে সবারই মন কেড়েছিল এই বুদ্ধিমতী প্রাণীটি।
সমসময়ের পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শীতের সময় হাতিটিকে আমেরিকার উষ্ণ দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হতো। গরমের শুরুতে আবার পাঠিয়ে দেওয়া হতো উত্তরের উষ্ণ আবহাওয়ায়। কখনো দক্ষিণের ফিলাডেলফিয়া থেকে জাহাজে করে নামানো হতো পেনসিলভানিয়ায়।
সাধারণত এক শহর থেকে আরেক শহরে প্রদর্শনীর জন্য রাতের বেলা হাতিটিকে হাঁটিয়ে নেওয়া হতো কোনো দড়ি বা শেকল ছাড়াই। রাতে যাতায়াতের কারণ, যাতে কৌতূহলীদের বিনা পয়সায় হাতি দেখার সুযোগ না ঘটে। দিনের বেলা রাস্তার পাশের খামার প্রাঙ্গণে বা কোনো খামারবাড়ির চত্বরে দক্ষিণার বিনিময়ে হাতিটিকে দেখানো হতো। এত দিনেও বেটের আকর্ষণে যেন ভাটা পড়ার লক্ষণ নেই। সব জায়গায় একে দেখার জন্য ছেলে-বুড়োদের ভিড় লেগেই থাকত। এমনি করে সারা দেশে আনন্দ বিলিয়ে হয়তো বেটের বাকি জীবনটা কেটে যেত। কিন্তু নিয়তি তা হতে দেয়নি। ১৮১৬ সালের ২৬ জুলাই ভোর হওয়ার একটু আগে যখন হাতিটি আনফ্রেডের মেইন শহরে ঢোকার মুখে, তখন আততায়ীর বন্দুকের গুলিতে নিহত হয় বেট। ঘটনাটি সে সময়ের সংবাদপত্র এবং আদালতের নথিপত্রে বিশদভাবে লেখা রয়েছে। ঐতিহাসিক সিরাজুল ইসলাম মার্কিন বণিকদের বাংলা বাণিজ্য নিয়ে লিখতে গিয়ে ওল্ড বেটের মৃত্যু প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, ‘মেইন শহরের এক র্যাডিক্যাল যুবকের’ বন্দুকের গুলিতে বেটকে হত্যা করা হয়। যুবকের ক্রোধের কারণ, হাতিটি গরিব মানুষের সব টাকা পয়সা শুষে নিচ্ছে। অতএব তার বাঁচার অধিকার নেই। হাতিটির হত্যাকাণ্ডে সমস্ত আমেরিকা প্রচণ্ড মর্মাহত হয়েছিল বলে সে সময়ের মার্কিন পত্র পত্রিকা লিখে গেছে।
বেটের মনিব ও সার্কাস কোম্পানির মালিক বেইলি তাঁর এই জনপ্রিয় হাতিটির জন্য নিউইয়র্কের সোমার্সে নিজের তৈরি ‘এলিফ্যান্ট’ হোটেলের সবুজ লনে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করে দিলেন। পালিশ করা গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভের ওপর বেটের একটি কাঠের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি স্থাপন করা হলো। শত শত দর্শনার্থী এই কাঠের হাতিটি দেখতে হোটেলের সামনে আবারও ভিড় করে। বেটের মৃত্যু পর্যন্ত যে কটি হাতি আমেরিকায় শো করেছে, এদের কারোরই খেলা দেখানোর বিদ্যা জানা ছিল না। ১৮২১ সালে আমেরিকার শো বিজনেসের গুণগত মান পালটে গেল, যখন ‘লিটল বেট’ নামের আরেকটি হাতি এসে মার্কিন সার্কাসের হাল ধরে। এই হাতিটিও সম্ভবত ভারতীয়। তবে এর নানা ধরনের খেলা দেখানোর বিদ্যা আয়ত্তে ছিল। হাঁটু ভেঙে বসা, শুঁড়ের ওপর মানুষকে বসিয়ে একটু ঘুরিয়ে আনা, বোতলের ছিপি খোলা, শুঁড় দিয়ে হুইসেল বাজানো—সব মনভোলানো খেলা এর রপ্ত ছিল। এই হাতিটির মনিব একটি বড় ভুল করেছিলেন। প্রচারের সুবিধার জন্য এই ব্যবসায়ী বলে বেড়াতেন যে তাঁর হাতির চামড়া এত কঠিন ও দুর্ভেদ্য যে বন্দুকের গুলি কিছুই করতে পারে না। ৩১ জুলাই ১৮২২-এ কয়েকটি ছেলে ভাবল, হাতির চামড়া কতখানি শক্ত তা পরীক্ষা করে দেখাই যাক। তাদের ছোড়া বন্দুকের গুলি হাতিটির চোখে লাগে। এই আঘাতেই আমেরিকার প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত এই শিক্ষিত হাতিটির মৃত্যু হয়। ১৮৮২ সালে আমেরিকার সার্কাসে শুরু হয় জাম্বো নামের হাতির রাজত্ব। লন্ডন চিড়িয়াখানা থেকে ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে পিটি বারনাম সার্কাস কোম্পানি এই হাতিটি কিনে আনে। এমন বিশাল রাজকীয় হাতি আমেরিকায় আগে দেখিনি। উচ্চতায় ১০ ফুট ছয় ইঞ্চি, আট টন ওজন। শুঁড়ের ব্যাস সাড়ে ২৭ ইঞ্চি। লাখ লাখ আমেরিকান হুমড়ি খেয়ে পয়সার বিনিময়ে হাতিটি দেখেছিল। এখনকার বারনাম সার্কাস কোম্পানি অনেক সতর্ক ও বুদ্ধিমান। তারা হাতিটিকে বিশেষভাবে তৈরি গাড়িতে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেত। দুঃখের বিষয়, এই হাতিটিও কানাডায় প্রদর্শনের সময় ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায়।
‘জাম্বো’ এত জনপ্রিয় হয়েছিল, এর মরার পরও আমেরিকানরা একে ভুলতে পারেনি। স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কিছু দেখলেই তারা বলা শুরু করে ‘ও বাবা! এ যে জাম্বো।’ আজ ১০০ বছর পরও ইংরেজি ভাষার ‘জাম্বো’ শব্দটি এই অকালমৃত হাতিটিকেই মনে করিয়ে দেয়।
বিশাল জাম্বো বা সুশিক্ষিত ‘লিটল বেট’ কেউই কিন্তু বাংলার সেই সাদাসিধে, অশিক্ষিত হাতি বেটকে কখনো ডিঙিয়ে যেতে পারেনি। বাংলার হাতিটিই একমাত্র ব্যতিক্রম, যার জন্য একটি স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
১. মার্কিন বণিকদের বাংলা বাণিজ্য ও প্রাচ্যচর্চায় তাঁদের অবদান (১৭৮৪-১৮৪০)
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম/উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২
২. আমেরিকান মেরিটাইম অ্যাকটিটিস ইন ক্যালকাটা: কেসেস অব এলিফ্যান্ট অ্যান্ড আইস, ১৭৮৫-১৮৮০, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ: জুন ২০০৪
৩. দ্য ক্রাউন শিল্ড এলিফ্যান্ট/জর্জ জি, গডউইন।
জ্যাকব ক্রাউন শিল্ডরা পাঁচ ভাই। সবাই ছিলেন কলকাতা তথা বাংলা-মার্কিন বাণিজ্যে জড়িত। সমসময়ের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে থাকা ক্যাপ্টেন জ্যাকবের কলকাতায় বসে হঠাৎ মনে হলো—মসলিন, মোটা কাপড়, ঘি, সোবা, মহিষের শিং—অনেক কিছুই তো কলকাতা থেকে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে—এবার একটি জ্যান্ত হাতি নিয়ে গেলে কেমন হয়! হাতির মতো বড় জীবিত স্থলচর প্রাণী আমেরিকানরা স্বচক্ষে আগে কখনো দেখেনি। অনেকেই তো বাঘ, সিংহ, উট, ময়ূর প্রভৃতি পশুপাখি প্রদর্শনী করে পয়সার মুখ দেখেছে। হাতির মতো বৃহৎ ও বিচিত্র প্রাণী এর চেয়ে বেশি মুনাফা ঘরে তুলবে। জ্যাকবের পরিকল্পনা তাঁর ভাইরা পাগলামির চূড়ান্ত বলে নাকচ করে দিলেন। কারণ, দীর্ঘ চার মাস সাগরের বুকে হাতিটি বাঁচিয়ে রাখতে কমপক্ষে দৈনিক ৬০০ পাউন্ড খরচ ও ১০০ লিটার মিঠা পানির খরচ জোগাতে হাতির ব্যবসা গোড়াতেই লাটে উঠবে। জ্যাকবের কলকাতার এজেন্ট দুর্গা প্রসাদ ও জ্যাকবের বাবা বিখ্যাত সমুদ্র বণিক বেনজামিন ক্রাউন শিল্ডও ঘোরতর আপত্তি জানালেন। এর আগেও অনেকে বিচিত্র জীবজন্তু আমদানি করেছেন আমেরিকায়, কিন্তু তাঁরা কেউ পয়সার মুখ দেখেননি এই ব্যবসায়। জ্যাকবের কপালেও তা-ই ঘটবে। জ্যাকব দমে না গিয়ে অনেক ভেবেচিন্তে একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির বদলে দুই বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে হাতি কিনে ব্যবসায়ের পুঁজি, জাহাজের নিরাপত্তা, ব্যবসায়িক ঝুঁকি সব সামাল দিলেন। ভাই জর্জ আজর্নকে চিঠি লিখে সংকল্পে অনড় থাকার কথা জানালেন এমনি ভাষায়, ‘দুই বছরের একটি বাচ্চা হাতি নিয়ে দেশে ফিরছি। দাম পড়েছে সব মিলিয়ে ৪৫০ ডলার। আকারে হাতিটি প্রায় একটি বড় ষাঁড়ের মতো। যদি ভালোয় ভালোয় একে নিয়ে দেশে ফিরতে পারি, তবে কমপক্ষে পাঁচ হাজার ডলার তো হাতে পাবই। ...জানি আমার এই ব্যবসা নিয়ে তোমরা হাসাহাসি করছ। কিন্তু আমি এতে কিছু মনে করি না। দেশে ফেরার পথে কেপ ও সেন্ট হেলেনা দ্বীপে জাহাজ নোঙর করবে, সেখান থেকে হাতির জন্য মিঠা পানি তুলে নেব। ...যদি সফল হই, তবে এ ব্যবসার পুরো কৃতিত্ব আমার একার। তা ছাড়া আমেরিকায় প্রথম জ্যান্ত হাতি নিয়ে আসা হবে আমার জন্য এক গৌরবের ব্যাপার।’ বাচ্চা হাতিটি নিয়ে জ্যাকব ক্রাউন শিল্ড শীত শেষ হওয়ার আগেই ‘আমেরিকা’ নামের জাহাজে চেপে কলকাতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
১৭৯৫-এর ৩ ডিসেম্বর। ভাগীরথী নদী বেয়ে জাহাজ ‘আমেরিকা’ সমুদ্রের দিকে পাড়ি দিল। গন্তব্যস্থল ম্যাসাচুসেটসের সারৈম বন্দর। জাহাজের লগবুকে ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৭৯৬ লেখা, জাহাজ সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বিঘ্নে পৌঁছেছে। এখান থেকে জাহাজের লোকজনের জন্য খাবার, পানি আর হাতির জন্য শাকসবজি, সবুজ ঘাসপাতা তোলা হলো। লগবুকে সেদিনের তারিখে বড় বড় অক্ষরে লেখা: ‘এলিফ্যান্ট অন বোর্ড’—জাহাজে হাতি রয়েছে। বাচ্চা হাতিটি সেই কালো পানিতে ভাসতে ভাসতে কীভাবে পুরো চার মাস কাটিয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য নেই লগবুকে। ঝড়ের রাতে বাতাস আর ঢেউয়ের গর্জনে ভীতসন্ত্রস্ত হাতিটি তার ফেলে আসা মাকে আকুল হয়ে খুঁজেছিল কি? লগবুকে এসব নিয়ে কোনো তথ্য নেই। থাকার কথাও নয়। জাহাজটি এপ্রিল ১৩, ১৭৯৬ হাতি এবং ক্রাউন শিল্ডকে নিয়ে নিউইয়র্কে পৌঁছাল।
ক্রাউন শিল্ড হাতিটির নাম দিয়েছিলেন বেট। আর এ নামেই বাচ্চা হাতিটি সারা মার্কিন মুলুকে আজও বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। তিনি হাতিটির প্রথম প্রদর্শনী করেন ২৩ এপ্রিল, ১৭৯৬-এ। নিউইয়র্কের বিডার স্ট্রিট ও ব্রডওয়ের কোনায়। আমেরিকার মাটিতে হাতির উপস্থিতি নিয়ে সমসময়ের প্রতিটি পত্রিকায় বিস্তারিত খবর বেরিয়েছিল। প্রথম দর্শনেই বেট আমেরিকানদের মন জয় করে নিয়েছিল। ক্রাউন শিল্ডের ভাগ্যলক্ষ্মীও এই হাতির পিঠে চেপেই তাঁর দোরগোড়ায় এসে হাজির। অতিদ্রুত হাতিটি ক্রাউন শিল্ডকে ধনে-মানে সারা দেশে খ্যাতিমান করে তুলেছিল। শুধু অর্থ-সম্পদই যে তাঁর ভাগ্যে লেখা ছিল তা নয়; তিনি ম্যাসাচুসেটস থেকে কংগ্রেস নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন আমেরিকার নেভি সচিবের পদ দিয়ে। যদিও সেই পদ তিনি গ্রহণ করেননি।
ক্রাউন শিল্ড কিছুদিন পর হাতিটি ১০ হাজার ডলারে বেচে দেন। এর পরই হাতিটির দেশজুড়ে নিয়মিত প্রদর্শনী শুরু হয়। সে সময়ের সংবাদপত্রের রিপোর্ট ও সার্কাসের বিজ্ঞাপন থেকে বেটের আমেরিকা দর্শন সম্পর্কে গবেষকেরা বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন।
নিউইয়র্কের পর বোস্টন, তারপর প্রায় নিয়মিত হাতিটি নিউ ইংল্যান্ড, পেনসিলভানিয়া এবং উত্তর-দক্ষিণ ক্যারোলাইনায় প্রদর্শনী করে বেড়িয়েছে। প্রথমে দর্শনার্থীদের ৫০ সেন্ট দিতে হতো। পরে মাথাপিছু সিকি ডলার দর্শনী স্থির হয়। তবে শিশুদের জন্য দর্শনী মাত্র নয় পেনি। খবরের কাগজের রিপোর্ট মোতাবেক মার্কিন বাবা-মায়েরা ছেলেপুলেদের হাত ধরে দূর-দূরান্ত থেকে হাতিটি দেখতে ছুটে এসেছেন। কারণ, হাতিটি বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে। অল্প সময়ের মধ্যে বেট বাচ্চাদের খুব প্রিয় হয়ে দাঁড়াল। তবে এত গুণ সত্ত্বেও হাতিটির সম্পর্কে একটি মৃদু সতর্কতা প্রদর্শনীতে প্রায়ই ঝুলতে দেখা যেত। ‘দয়া করে দর্শকেরা হাতে কোনো মূল্যবান নথিপত্র নিয়ে হাতিটির খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াবেন না।’ কারণ, ইতিমধ্যে কয়েকজন দর্শকের হাত থেকে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শুঁড় বাড়িয়ে টেনে নিয়েছে হাতিটি। মনে হয় এই মজার স্বভাবটিও হাতির আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে বেট অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছিল। কাউকে কখনো কোনো ক্ষতি করেনি।
১৮১৬ সাল। দুই বছর বয়সের সেই বাচ্চা হাতিটির বয়স এখন ২২ বছর। ২০ বছর ধরে বারনাম অ্যান্ড বেইলি সার্কাসের লক্ষ্মীর ঝাঁপি কানায় কানায় ভরে দিয়েছে এই হাতি। হাতিরা দীর্ঘজীবী প্রাণী, ২০-২২ বছর তাদের উঠতি বয়স মাত্র। কিন্তু মানুষের ভালোবাসায় এই হাতির আরেক নাম হয়েছিল ওল্ড বেট। সার্কাসের হাতিরা সাধারণত যেসব খেলা দেখাতে পটু, সেসবের কিছুই বেটের জানা ছিল না। কোনো কলাকৌশলও একে শেখানো হয়নি। কিন্তু পেটে বিদ্যে না থাকলে কী হবে, দর্শক টানতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি বেটের। এর বন্ধুসুলভ আচরণ, ছেলেপুলেদের জন্য স্নেহ আর সাধারণ দর্শকদের প্রতি কৌতূহলের কারণে সবারই মন কেড়েছিল এই বুদ্ধিমতী প্রাণীটি।
সমসময়ের পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শীতের সময় হাতিটিকে আমেরিকার উষ্ণ দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হতো। গরমের শুরুতে আবার পাঠিয়ে দেওয়া হতো উত্তরের উষ্ণ আবহাওয়ায়। কখনো দক্ষিণের ফিলাডেলফিয়া থেকে জাহাজে করে নামানো হতো পেনসিলভানিয়ায়।
সাধারণত এক শহর থেকে আরেক শহরে প্রদর্শনীর জন্য রাতের বেলা হাতিটিকে হাঁটিয়ে নেওয়া হতো কোনো দড়ি বা শেকল ছাড়াই। রাতে যাতায়াতের কারণ, যাতে কৌতূহলীদের বিনা পয়সায় হাতি দেখার সুযোগ না ঘটে। দিনের বেলা রাস্তার পাশের খামার প্রাঙ্গণে বা কোনো খামারবাড়ির চত্বরে দক্ষিণার বিনিময়ে হাতিটিকে দেখানো হতো। এত দিনেও বেটের আকর্ষণে যেন ভাটা পড়ার লক্ষণ নেই। সব জায়গায় একে দেখার জন্য ছেলে-বুড়োদের ভিড় লেগেই থাকত। এমনি করে সারা দেশে আনন্দ বিলিয়ে হয়তো বেটের বাকি জীবনটা কেটে যেত। কিন্তু নিয়তি তা হতে দেয়নি। ১৮১৬ সালের ২৬ জুলাই ভোর হওয়ার একটু আগে যখন হাতিটি আনফ্রেডের মেইন শহরে ঢোকার মুখে, তখন আততায়ীর বন্দুকের গুলিতে নিহত হয় বেট। ঘটনাটি সে সময়ের সংবাদপত্র এবং আদালতের নথিপত্রে বিশদভাবে লেখা রয়েছে। ঐতিহাসিক সিরাজুল ইসলাম মার্কিন বণিকদের বাংলা বাণিজ্য নিয়ে লিখতে গিয়ে ওল্ড বেটের মৃত্যু প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, ‘মেইন শহরের এক র্যাডিক্যাল যুবকের’ বন্দুকের গুলিতে বেটকে হত্যা করা হয়। যুবকের ক্রোধের কারণ, হাতিটি গরিব মানুষের সব টাকা পয়সা শুষে নিচ্ছে। অতএব তার বাঁচার অধিকার নেই। হাতিটির হত্যাকাণ্ডে সমস্ত আমেরিকা প্রচণ্ড মর্মাহত হয়েছিল বলে সে সময়ের মার্কিন পত্র পত্রিকা লিখে গেছে।
বেটের মনিব ও সার্কাস কোম্পানির মালিক বেইলি তাঁর এই জনপ্রিয় হাতিটির জন্য নিউইয়র্কের সোমার্সে নিজের তৈরি ‘এলিফ্যান্ট’ হোটেলের সবুজ লনে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করে দিলেন। পালিশ করা গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভের ওপর বেটের একটি কাঠের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি স্থাপন করা হলো। শত শত দর্শনার্থী এই কাঠের হাতিটি দেখতে হোটেলের সামনে আবারও ভিড় করে। বেটের মৃত্যু পর্যন্ত যে কটি হাতি আমেরিকায় শো করেছে, এদের কারোরই খেলা দেখানোর বিদ্যা জানা ছিল না। ১৮২১ সালে আমেরিকার শো বিজনেসের গুণগত মান পালটে গেল, যখন ‘লিটল বেট’ নামের আরেকটি হাতি এসে মার্কিন সার্কাসের হাল ধরে। এই হাতিটিও সম্ভবত ভারতীয়। তবে এর নানা ধরনের খেলা দেখানোর বিদ্যা আয়ত্তে ছিল। হাঁটু ভেঙে বসা, শুঁড়ের ওপর মানুষকে বসিয়ে একটু ঘুরিয়ে আনা, বোতলের ছিপি খোলা, শুঁড় দিয়ে হুইসেল বাজানো—সব মনভোলানো খেলা এর রপ্ত ছিল। এই হাতিটির মনিব একটি বড় ভুল করেছিলেন। প্রচারের সুবিধার জন্য এই ব্যবসায়ী বলে বেড়াতেন যে তাঁর হাতির চামড়া এত কঠিন ও দুর্ভেদ্য যে বন্দুকের গুলি কিছুই করতে পারে না। ৩১ জুলাই ১৮২২-এ কয়েকটি ছেলে ভাবল, হাতির চামড়া কতখানি শক্ত তা পরীক্ষা করে দেখাই যাক। তাদের ছোড়া বন্দুকের গুলি হাতিটির চোখে লাগে। এই আঘাতেই আমেরিকার প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত এই শিক্ষিত হাতিটির মৃত্যু হয়। ১৮৮২ সালে আমেরিকার সার্কাসে শুরু হয় জাম্বো নামের হাতির রাজত্ব। লন্ডন চিড়িয়াখানা থেকে ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে পিটি বারনাম সার্কাস কোম্পানি এই হাতিটি কিনে আনে। এমন বিশাল রাজকীয় হাতি আমেরিকায় আগে দেখিনি। উচ্চতায় ১০ ফুট ছয় ইঞ্চি, আট টন ওজন। শুঁড়ের ব্যাস সাড়ে ২৭ ইঞ্চি। লাখ লাখ আমেরিকান হুমড়ি খেয়ে পয়সার বিনিময়ে হাতিটি দেখেছিল। এখনকার বারনাম সার্কাস কোম্পানি অনেক সতর্ক ও বুদ্ধিমান। তারা হাতিটিকে বিশেষভাবে তৈরি গাড়িতে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেত। দুঃখের বিষয়, এই হাতিটিও কানাডায় প্রদর্শনের সময় ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায়।
‘জাম্বো’ এত জনপ্রিয় হয়েছিল, এর মরার পরও আমেরিকানরা একে ভুলতে পারেনি। স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কিছু দেখলেই তারা বলা শুরু করে ‘ও বাবা! এ যে জাম্বো।’ আজ ১০০ বছর পরও ইংরেজি ভাষার ‘জাম্বো’ শব্দটি এই অকালমৃত হাতিটিকেই মনে করিয়ে দেয়।
বিশাল জাম্বো বা সুশিক্ষিত ‘লিটল বেট’ কেউই কিন্তু বাংলার সেই সাদাসিধে, অশিক্ষিত হাতি বেটকে কখনো ডিঙিয়ে যেতে পারেনি। বাংলার হাতিটিই একমাত্র ব্যতিক্রম, যার জন্য একটি স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
১. মার্কিন বণিকদের বাংলা বাণিজ্য ও প্রাচ্যচর্চায় তাঁদের অবদান (১৭৮৪-১৮৪০)
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম/উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২
২. আমেরিকান মেরিটাইম অ্যাকটিটিস ইন ক্যালকাটা: কেসেস অব এলিফ্যান্ট অ্যান্ড আইস, ১৭৮৫-১৮৮০, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ: জুন ২০০৪
৩. দ্য ক্রাউন শিল্ড এলিফ্যান্ট/জর্জ জি, গডউইন।
No comments