১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি-অপরাধী সন্ত্রাসীতে 'সমৃদ্ধ' চট্টগ্রাম যুবলীগের কমিটি by নূপুর দেব
মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর
সম্মেলন ছাড়াই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা
করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। একসময়ের হত্যা মামলার আসামি থেকে শুরু করে
চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজসহ নানা ধরনের অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের এ কমিটিতে
অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।
গত সোমবার রাতে যুবলীগ
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করা
হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটির আহ্বায়ক একসময়ের খুনের মামলার আসামি মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের আমলে গত সাড়ে চার বছরে বিলবোর্ড বাণিজ্যের মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদের বিরুদ্ধেও নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।
সিএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ৩৪ মামলার আসামি আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের সম্প্রতি রেলওয়ের টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক খোকন চন্দ্র তাঁতি, পাঁচলাইশ থানা আক্রমণের ঘটনায় অভিযুক্ত হাসান মুরাদ বিপ্লব, গার্মেন্ট-ডাকাতি ঘটনায় জড়িত শহীদুল ইসলাম শামীমসহ আরো অনেক চিহ্নিত অপরাধীকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন না করে বিলবোর্ড ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে অভিযুক্তদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে। কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক ছাত্রনেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। এদের একেকজনের নামে নগরীর বিভিন্ন থানায় পাঁচ থেকে এক ডজনের বেশি মামলা, জিডি থাকলেও তারা এখন ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় নির্বিঘ্নে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু যুবলীগের ভেঙে দেওয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত সাড়ে চার বছরে বিলবোর্ড বাণিজ্য করে এখন বিপুল অর্থসম্পদের মালিক। চট্টগ্রামের বিলবোর্ড বাণিজ্যের হোতা হিসেবে তিনি বিশেষ পরিচিত। ১৯৯৯ সালে সরকারি সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ও ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম স্বপন হত্যা মামলার চার নম্বর আসামি ছিলেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। পরে অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার আরেক আসামি মোহাম্মদ আলী হোসেনকেও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নগরীর লালখান বাজার ও আশপাশের এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বাচ্চুর মতো তাঁরও রয়েছে অবৈধ বিলবোর্ড বাণিজ্য। তাঁরা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
যুবলীগ নেতাদের বিলবোর্ড বাণিজ্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আহমেদুল হক বলেন, 'নগরীর বৈধ বিলবোর্ডের মালিকানা মহিউদ্দিন বাচ্চুর এক-তৃতীয়াংশের কম হবে না। নগরীতে আট হাজার ৪৫৬টি বৈধ বিলবোর্ড আছে। এসব বিলবোর্ডের বিপরীতে বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এ ছাড়া আরো প্রায় দুই-তিন হাজার অবৈধ বিলবোর্ড আছে। এই অবৈধ বিলবোর্ডগুলো কাদের তা আমার জানা নেই।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, অবৈধ বিলবোর্ডের বেশির ভাগই মহিউদ্দিন বাচ্চুর।
বৈধ-অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসা বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বাচ্চু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার অবৈধ বিলবোর্ড যদি থাকে তাহলে সিটি করপোরেশন শনাক্ত করে দিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নিক। এতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমার নামে অহেতুক অপবাদ দিলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ঠিক হবে না।'
গত ২৪ জুন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের টেন্ডারকে ঘিরে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার খোকন চন্দ্র তাঁতিকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কারাগারে থাকায় কমিটির তালিকায় তাঁর নাম গোপন করে সংক্ষেপে 'বি কে চন্দ্র' দেখানো হয়। এ ছাড়া রেলের টেন্ডারবাজিতে জড়িত মশিউর রহমান ভূঁইয়া দিদারের নামও গোপন করে সদস্য পদে সংক্ষেপে 'এম আর ভূঁইয়া' লেখা হয়েছে। দেড় মাস আগে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় আটক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে ওসির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়া হাসান মুরাদ বিপ্লবকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সিডিএ ও রেলের টেন্ডারবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শীর্ষ সন্ত্রাসী মাছ কাদেরের নামও গোপন করে 'এম এ কাদের' হিসেবে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে নগরীর ডবলমুরিং থানায় একটি গার্মেন্টে ডাকাতির মামলায় আসামি শহীদুল ইসলাম শামীমকেও সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া রিয়াজ ওরফে বড়দা, তৌফিক আহমদ, ওয়াসিম, হুমায়ুন কবির হাফিজ, আর কেসহ আরো অন্তত ২৫ জনকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাজনীতি করতে গেলে টুকটাক সমস্যা কিছু থাকেই। তার পরও বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে কোনো সমস্যা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বাচ্চু একজন বড় ব্যবসায়ী। তাঁর অন্তত পাঁচটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি চাঁদাবাজি করে খান না।'
তবে নগর যুবলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হলে যোগ্য ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা আসতে পারতেন। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বাইরে অনেকের নামে অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে।'
এদিকে সদ্য ঘোষিত যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সিএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদেরসহ কয়েকজন অস্ত্রধারী ক্যাডার, টেন্ডারবাজ এবং সন্ত্রাসী থাকার বিষয়ে নতুন আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেছেন, 'আহ্বায়ক কমিটিতে কোনো সন্ত্রাসী থাকলে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে অবশ্যই বাদ দেওয়া হবে।'
'আপনি নিজেই তো সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস আমিনুল ইসলাম স্বপন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত চার নম্বর আসামি ছিলেন'- এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, 'ওই মামলার অভিযোগ গঠনের সময় আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন আমি আসামি নই।'
পুরো নাম উল্লেখ না করে কিছুটা পরিবর্তন বা সংক্ষিপ্ত করে সন্ত্রাসীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ সম্পর্কে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, 'এম এ কাদের এবং মোহাম্মদ আবদুল কাদের এক ব্যক্তি নন। এম এ কাদের হলেন মহিতুল আলম কাদের। বি কে তাঁতি নামেও কেউ কমিটিতে নেই। আছে বিকাশ কুমার চন্দ্র। আর কে মল্লিক হলেন রায়হানুল কবির মল্লিক। কিন্তু এই তিনজন নগর যুবলীগের পরিচিত কোনো নেতা বা সদস্য নন।' তাহলে কেন তাঁদের কমিটিতে রাখা হলো তা জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, 'আসলে অনেক নেতা কমিটির জন্য তালিকায় নাম দিয়েছেন, সেই কারণে সবাই সব কিছু এখনই বুঝতে পারছেন না।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটির আহ্বায়ক একসময়ের খুনের মামলার আসামি মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের আমলে গত সাড়ে চার বছরে বিলবোর্ড বাণিজ্যের মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদের বিরুদ্ধেও নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।
সিএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ৩৪ মামলার আসামি আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের সম্প্রতি রেলওয়ের টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক খোকন চন্দ্র তাঁতি, পাঁচলাইশ থানা আক্রমণের ঘটনায় অভিযুক্ত হাসান মুরাদ বিপ্লব, গার্মেন্ট-ডাকাতি ঘটনায় জড়িত শহীদুল ইসলাম শামীমসহ আরো অনেক চিহ্নিত অপরাধীকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন না করে বিলবোর্ড ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে অভিযুক্তদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে। কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক ছাত্রনেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। এদের একেকজনের নামে নগরীর বিভিন্ন থানায় পাঁচ থেকে এক ডজনের বেশি মামলা, জিডি থাকলেও তারা এখন ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় নির্বিঘ্নে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু যুবলীগের ভেঙে দেওয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত সাড়ে চার বছরে বিলবোর্ড বাণিজ্য করে এখন বিপুল অর্থসম্পদের মালিক। চট্টগ্রামের বিলবোর্ড বাণিজ্যের হোতা হিসেবে তিনি বিশেষ পরিচিত। ১৯৯৯ সালে সরকারি সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ও ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম স্বপন হত্যা মামলার চার নম্বর আসামি ছিলেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। পরে অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার আরেক আসামি মোহাম্মদ আলী হোসেনকেও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নগরীর লালখান বাজার ও আশপাশের এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বাচ্চুর মতো তাঁরও রয়েছে অবৈধ বিলবোর্ড বাণিজ্য। তাঁরা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
যুবলীগ নেতাদের বিলবোর্ড বাণিজ্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আহমেদুল হক বলেন, 'নগরীর বৈধ বিলবোর্ডের মালিকানা মহিউদ্দিন বাচ্চুর এক-তৃতীয়াংশের কম হবে না। নগরীতে আট হাজার ৪৫৬টি বৈধ বিলবোর্ড আছে। এসব বিলবোর্ডের বিপরীতে বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এ ছাড়া আরো প্রায় দুই-তিন হাজার অবৈধ বিলবোর্ড আছে। এই অবৈধ বিলবোর্ডগুলো কাদের তা আমার জানা নেই।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, অবৈধ বিলবোর্ডের বেশির ভাগই মহিউদ্দিন বাচ্চুর।
বৈধ-অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসা বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বাচ্চু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার অবৈধ বিলবোর্ড যদি থাকে তাহলে সিটি করপোরেশন শনাক্ত করে দিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নিক। এতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমার নামে অহেতুক অপবাদ দিলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ঠিক হবে না।'
গত ২৪ জুন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের টেন্ডারকে ঘিরে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার খোকন চন্দ্র তাঁতিকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কারাগারে থাকায় কমিটির তালিকায় তাঁর নাম গোপন করে সংক্ষেপে 'বি কে চন্দ্র' দেখানো হয়। এ ছাড়া রেলের টেন্ডারবাজিতে জড়িত মশিউর রহমান ভূঁইয়া দিদারের নামও গোপন করে সদস্য পদে সংক্ষেপে 'এম আর ভূঁইয়া' লেখা হয়েছে। দেড় মাস আগে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় আটক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে ওসির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়া হাসান মুরাদ বিপ্লবকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সিডিএ ও রেলের টেন্ডারবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শীর্ষ সন্ত্রাসী মাছ কাদেরের নামও গোপন করে 'এম এ কাদের' হিসেবে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে নগরীর ডবলমুরিং থানায় একটি গার্মেন্টে ডাকাতির মামলায় আসামি শহীদুল ইসলাম শামীমকেও সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া রিয়াজ ওরফে বড়দা, তৌফিক আহমদ, ওয়াসিম, হুমায়ুন কবির হাফিজ, আর কেসহ আরো অন্তত ২৫ জনকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাজনীতি করতে গেলে টুকটাক সমস্যা কিছু থাকেই। তার পরও বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে কোনো সমস্যা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বাচ্চু একজন বড় ব্যবসায়ী। তাঁর অন্তত পাঁচটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি চাঁদাবাজি করে খান না।'
তবে নগর যুবলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হলে যোগ্য ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা আসতে পারতেন। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বাইরে অনেকের নামে অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে।'
এদিকে সদ্য ঘোষিত যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সিএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদেরসহ কয়েকজন অস্ত্রধারী ক্যাডার, টেন্ডারবাজ এবং সন্ত্রাসী থাকার বিষয়ে নতুন আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেছেন, 'আহ্বায়ক কমিটিতে কোনো সন্ত্রাসী থাকলে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে অবশ্যই বাদ দেওয়া হবে।'
'আপনি নিজেই তো সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস আমিনুল ইসলাম স্বপন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত চার নম্বর আসামি ছিলেন'- এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, 'ওই মামলার অভিযোগ গঠনের সময় আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন আমি আসামি নই।'
পুরো নাম উল্লেখ না করে কিছুটা পরিবর্তন বা সংক্ষিপ্ত করে সন্ত্রাসীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ সম্পর্কে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, 'এম এ কাদের এবং মোহাম্মদ আবদুল কাদের এক ব্যক্তি নন। এম এ কাদের হলেন মহিতুল আলম কাদের। বি কে তাঁতি নামেও কেউ কমিটিতে নেই। আছে বিকাশ কুমার চন্দ্র। আর কে মল্লিক হলেন রায়হানুল কবির মল্লিক। কিন্তু এই তিনজন নগর যুবলীগের পরিচিত কোনো নেতা বা সদস্য নন।' তাহলে কেন তাঁদের কমিটিতে রাখা হলো তা জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, 'আসলে অনেক নেতা কমিটির জন্য তালিকায় নাম দিয়েছেন, সেই কারণে সবাই সব কিছু এখনই বুঝতে পারছেন না।'
No comments