শাহরি রমজান-রোজার সুন্নত আদব by মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম
রতিটি ইবাদতেরই কিছু আদবকায়দা বা
শিষ্টাচার রয়েছে। রোজা পালনের কিছু মুস্তাহাব ও সুন্নত আদব আছে, যেগুলো
পালন করলে সওয়াব বাড়ে। তা ছেড়ে দিলে রোজা ভঙ্গ হয় না বা গুনাহও হয় না, তবে
পুণ্যে ঘাটতি দেখা দেয়।
আদবকায়দাগুলো আদায় করলে সওয়াবের পরিপূর্ণতা আসে। নিচে রোজার সুন্নত আদবকায়দাগুলো উল্লেখ করা হলো।
সেহরি খাওয়া : রাসুল (সা.) বলেছেন, 'তোমরা সেহরি খাও, কারণ এতে বরকত রয়েছে। (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৯২৩; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১০৯৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, 'আমাদের (মুসলিমদের) ও ইহুদি-খৃস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।' (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১০৯৬)। আমরা রোজা পালন করি সেহরি খেয়ে, ইহুদি-খৃস্টানরা রোজা রাখে তা না খেয়ে। রাসুল (সা.) বলেন, 'মুমিনের সেহরিতে উত্তম খাবার হলো খেজুর।' (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নম্বর ২৩৪৫)। রোজার অন্য একটি সুন্নত হলো সেহরি দেরি করে খাওয়া। অর্থাৎ তা শেষ ওয়াক্তে খাওয়া উত্তম। রাতের শেষাংশে গ্রহণ করা খাবারকে সেহরি বলা হয়। প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরশ থেকে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। বান্দাদের এই বলে আহ্বান করেন, 'এখন যে ব্যক্তি আমার কাছে দোয়া করবে, আমি তা কবুল করব, যা কিছু আমার কাছে এখন চাইবে আমি তাকে তা দেব এবং যে আমার কাছে এখন মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দেব। (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ৬৩২১; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৭৫৮)। সেহরির সময় কোরআন শরিফ তিলাওয়াত, অধ্যয়ন, তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, তওবাহ-ইসতিগফার ও দোয়া কবুলের জন্য একটি উত্তম সময়। আল্লাহ বলেন, 'তারা শেষ রাতে জেগে ওঠে তওবাহ-ইসতিগফার করে।' (সুরা যারিয়াত, আয়াত ১৮)।
সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র ইফতার করা : অতিরঞ্জিত সাবধানতার নামে ইফতারে বিলম্ব করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'মানুষ যত দিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।' (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৯৫৭; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)। 'যত দিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে তত দিন দীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইহুদি ও খৃস্টানদের অভ্যাস হলো ইফাতর দেরিতে করা।' ( বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৯৫৭; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)। রাসুল (সা.) এবং সাহাবীরা সবার আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সবার চেয়ে দেরিতে সেহরি খেতেন। (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস নম্বর ৭৫৯১)।
মাগরিবের সালাতের আগে ইফতার করা এবং খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা : হজরত আনাস (রাযি.) বলেছেন, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের সালাতের আগে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।' (মুসনাদু আহমাদ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৬৪)। পেট ভর্তি করে খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খায় তার ওই পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।' (ঐ)।
ইফতারের সময় দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'ইফতারের সময় আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এ মুক্তিদানের পালা রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। সে সময় রোজা পালনকারী প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়।' (মুসনাদু আহমাদ, হাদিস নম্বর ৭৪৫০)। ইফতারের সময় আজান হওয়ার পর দোয়া কবুল হয়।
বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, সালাত আদায়, জিকর ও দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে, রোজা বলবে, 'হে রব! দিনের বেলায় আমি তাকে পানাহার ও যৌন উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর।' কোরআন বলবে, 'হে রব! (কোরআন তিলাওয়াতের কারণে) রাতের নিদ্রা থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই এ পাঠকের ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ মঞ্জুর কর।' অতঃপর উভয়েরই সুপারিশ কবুল করা হবে।" (মুসনাদু আহমাদ, হাদিস নম্বর ৬৫৮৯)।
এভাবে রমজান মাসে আল্লাহর দরবারে ইবাদতের তওফিক কামনা করা, তাঁর রহমত ও দয়া লাভের প্রার্থনা করা, এতিম, বিধবা ও গরিব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, বেশি বেশি দান-খয়রাত করা, উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা, অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকা, রুটিন করে সময় কাজে লাগানো, দুনিয়াবি ব্যস্ততা কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পরকালের চিন্তায় বেশি মনোযোগী হওয়া, খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য রক্ষা করা, ফজর উদয় হওয়ার আগেই রোজার নিয়ত করা এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আল্লাহ আমাদের রোজা ও রমজানের আদবকায়দাগুলো যথাযথভাবে পালন করার তওফিক দিন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।
সেহরি খাওয়া : রাসুল (সা.) বলেছেন, 'তোমরা সেহরি খাও, কারণ এতে বরকত রয়েছে। (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৯২৩; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১০৯৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, 'আমাদের (মুসলিমদের) ও ইহুদি-খৃস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।' (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১০৯৬)। আমরা রোজা পালন করি সেহরি খেয়ে, ইহুদি-খৃস্টানরা রোজা রাখে তা না খেয়ে। রাসুল (সা.) বলেন, 'মুমিনের সেহরিতে উত্তম খাবার হলো খেজুর।' (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নম্বর ২৩৪৫)। রোজার অন্য একটি সুন্নত হলো সেহরি দেরি করে খাওয়া। অর্থাৎ তা শেষ ওয়াক্তে খাওয়া উত্তম। রাতের শেষাংশে গ্রহণ করা খাবারকে সেহরি বলা হয়। প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরশ থেকে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। বান্দাদের এই বলে আহ্বান করেন, 'এখন যে ব্যক্তি আমার কাছে দোয়া করবে, আমি তা কবুল করব, যা কিছু আমার কাছে এখন চাইবে আমি তাকে তা দেব এবং যে আমার কাছে এখন মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দেব। (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ৬৩২১; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৭৫৮)। সেহরির সময় কোরআন শরিফ তিলাওয়াত, অধ্যয়ন, তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, তওবাহ-ইসতিগফার ও দোয়া কবুলের জন্য একটি উত্তম সময়। আল্লাহ বলেন, 'তারা শেষ রাতে জেগে ওঠে তওবাহ-ইসতিগফার করে।' (সুরা যারিয়াত, আয়াত ১৮)।
সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র ইফতার করা : অতিরঞ্জিত সাবধানতার নামে ইফতারে বিলম্ব করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'মানুষ যত দিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।' (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৯৫৭; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)। 'যত দিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে তত দিন দীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইহুদি ও খৃস্টানদের অভ্যাস হলো ইফাতর দেরিতে করা।' ( বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৯৫৭; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)। রাসুল (সা.) এবং সাহাবীরা সবার আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সবার চেয়ে দেরিতে সেহরি খেতেন। (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস নম্বর ৭৫৯১)।
মাগরিবের সালাতের আগে ইফতার করা এবং খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা : হজরত আনাস (রাযি.) বলেছেন, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের সালাতের আগে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।' (মুসনাদু আহমাদ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৬৪)। পেট ভর্তি করে খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খায় তার ওই পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।' (ঐ)।
ইফতারের সময় দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'ইফতারের সময় আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এ মুক্তিদানের পালা রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। সে সময় রোজা পালনকারী প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়।' (মুসনাদু আহমাদ, হাদিস নম্বর ৭৪৫০)। ইফতারের সময় আজান হওয়ার পর দোয়া কবুল হয়।
বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, সালাত আদায়, জিকর ও দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে, রোজা বলবে, 'হে রব! দিনের বেলায় আমি তাকে পানাহার ও যৌন উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর।' কোরআন বলবে, 'হে রব! (কোরআন তিলাওয়াতের কারণে) রাতের নিদ্রা থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই এ পাঠকের ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ মঞ্জুর কর।' অতঃপর উভয়েরই সুপারিশ কবুল করা হবে।" (মুসনাদু আহমাদ, হাদিস নম্বর ৬৫৮৯)।
এভাবে রমজান মাসে আল্লাহর দরবারে ইবাদতের তওফিক কামনা করা, তাঁর রহমত ও দয়া লাভের প্রার্থনা করা, এতিম, বিধবা ও গরিব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, বেশি বেশি দান-খয়রাত করা, উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা, অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকা, রুটিন করে সময় কাজে লাগানো, দুনিয়াবি ব্যস্ততা কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পরকালের চিন্তায় বেশি মনোযোগী হওয়া, খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য রক্ষা করা, ফজর উদয় হওয়ার আগেই রোজার নিয়ত করা এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আল্লাহ আমাদের রোজা ও রমজানের আদবকায়দাগুলো যথাযথভাবে পালন করার তওফিক দিন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।
No comments