‘দারুণ অগ্নিবাণে রে হূদয় তৃষ্ণায় হানে রে’ by এম এ মোমেন
রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতি-পর্বের এই গানটির
পরের দুটি পঙিক্ত: রজনী নিদ্রাহীন, দীর্ঘ দগ্ধ দিন/ আরাম নাহি যে জানে রে।
এই ঘটনাও দীর্ঘ দগ্ধ দিনের, রবীন্দ্রনাথ সে বছরই সাফল্য ও স্বীকৃতির
স্বর্ণশিখরে, ১৯১৩তে।
১০ জুলাই ১৯১৩ ভূপৃষ্ঠে,
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে সবচেয়ে তপ্ত দিন। পৃথিবীর এক অংশে যখন প্রবল
শৈত্যপ্রবাহ, অন্য অংশে গায়ে ফোস্কা-পড়া রুক্ষ্ম হাওয়া, পেঁজাতুলার মতো
তুষারসন্ধ্যা যখন গা ভিজিয়ে হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয় মরুভূমিতে তখন লু বইছে।
শতবর্ষ আগে সেদিন ডেথ ভ্যালির বাতাসের তাপমাত্রা ১৩৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট
কিংবা ৫৬.৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গত ১০০ বছরে পৃথিবীর কোথাও আবহাওয়ার উষ্ণতা
এই সীমা ডিঙিয়ে যায়নি।
মৃত্যু উপত্যকা—ডেথ ভ্যালি নামকরণ হয়েছে ১৮৪৯ সালে। ক্যালিফোর্নিয়ায় যখন স্বর্ণের সন্ধান মেলে এবং শুরু হয় ‘গোল্ড রাশ’, এই উপত্যকা পার হয়ে যাওয়ার সময় খনিশ্রমিক এবং আশপাশে বসতি স্থাপনকারীদের কারও কারও এখানকার অতিরিক্ত গরম এবং শুষ্কতার কারণে মৃত্যু ঘটেছে। এখানকার পানির পরিমাণ অতি সামান্য; মূলত উচ্চহার বাষ্পীভবনের কারণে সঞ্চিত পানি জলীয় বাষ্প হয়ে দ্রুত মেঘে বিলীন হয়ে যায়। আবার বৃষ্টির ফোঁটা ভূমিতে পড়ার আগেই অতিরিক্ত গরমে বাষ্পীভূত হয়।
ডেথ ভ্যালি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের পূর্বাংশে ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাদা অঙ্গরাজ্যের সীমান্তে। এর অবস্থান মোজেভ মরুভূমিতে। এখানকার আবহাওয়াটা প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মরুভূমির প্রচণ্ড গরম, হালকা শীত এবং সামান্য বৃষ্টি। ভূমির স্তরচ্যুতির (ফল্ট) নিরিখে ডেথ ভ্যালির দুটি ভাগ: ডেথ ভ্যালি ফল্ট এবং ফার্নেস ক্রিক ফল্ট।
প্লিসটোমিল যুগের (প্রায় ১২০০০ বছর আগে এ যুগের অবসান ঘটে) মাঝামাঝি সময়ে এখনকার ডেথ ভ্যালি ছিল সমুদ্রের অংশ। ব্যাপক ভৌগোলিক পরিবর্তনে এখানেই মরুকরণ শুরু হয়। বাষ্পীভবনের কারণে স্থানে স্থানে সোডিয়াম লবণ এবং বোরাক্স সঞ্চিত হয়। ১৮৮৩ থেকে ১৯০৭-এর মধ্যে এখান থেকে বোরাক্স এবং লবণ উত্তোলন করা হয়। অতিরিক্ত গরমে এলাকার একদা সবুজ আচ্ছাদন বিলীন হয়ে গেছে। দীর্ঘ উপত্যকার মরু অববাহিকা সমুদ্রসীমার ৮৬ মিটার নিচে; নিচ থেকে উঠে এসেছে খাড়া পর্বতগাত্র। রাতের বেলাটা কিছুটা গা-সহা, তাপমাত্রা তখন ২৮ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। দিনের বেলা অতিরিক্ত গরম বাতাস বয়ে যায়। যখন লাগাতার উষ্ণ বাত্যপ্রবাহ চলতে থাকে তাপমাত্রা তখন ৫৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি। গড়পড়তা বছরের ১৯২ দিন তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার চেয়েও বেশি থাকে। এ পর্যন্ত ডেথ ভ্যালির সবচেয়ে ভেজা মাস জানুয়ারি ১৯৯৫, এ সময় ডেথ ভ্যালিতে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি পড়েছে। ১৯২১-এর জানুয়ারিতে এখানে বিক্ষিপ্তভাবে তুষারপাত হয়েছে এবং কিছু তুষারও জমে।
স্থানীয় আমেরিকান টিমবিশা গোত্র পায় ১০০০ বছর এই উপত্যকায় বসবাস করত। এখনো সেখানে একটি জনপদের বসবাস। এখানকার পাথর চলমান ও গতিময়। ভূতত্ত্বের অধ্যাপক রবার্ট শার্প বিভিন্ন আকারের ৩০টি পাথর বিশেষভাবে চিহ্নিত করে প্রায় সাত বছর পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখতে পান পাথর চলাফেরা করছে। বাতাসে ও বৃষ্টিতে এসব চিহ্নিত পাথর প্রায় ৬০০ মিটার দূরত্বে চলে যায়। অভিযাত্রীদের প্রিয় গন্তব্য ডেথ ভ্যালি। একসময় স্থানীয় আমেরিকান ছাড়া কেউই ডেথ ভ্যালির অবস্থান জানতে পারেনি। ১৮৪৯ সালে একটি অভিযাত্রী দল ডেথ ভ্যালি অতিক্রমের বেপরোয়া দুঃসাহস দেখিয়ে বিপদে পড়ে।
২০০৭ সালের পরিসংখ্যানে ডেথ ভ্যালির লোকসংখ্যা ৬২০ (পুরুষ ৩২৫, নারী ২৯৫)। ২০০৯ সালে খানাপ্রতি আয় ৫৭৯৫৩ মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ২৯০১৯ ডলার। জনসংখ্যা ৭৮.৮ ভাগ সাদা, এশিয়ান ১.৮ ভাগ। বেকার ৮.৮ ভাগ, বিবাহিতদের মধ্যে তালাকপ্রাপ্ত ১২.২ ভাগ।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি তপ্ততার; আলফ্রেড লর্ড টেনিসনের কবিতা ‘চার্জ অব দ্য লাইড ব্রিগেড’-এ বালাক্লাভা যুদ্ধের রণাঙ্গন ক্রিমিয়া ভ্যালি অব ডেথ; পোল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ‘ভ্যালি অব ডেথ’ নাৎসি হত্যাযজ্ঞের এবং গণকবরের; গেটিসবার্গের ‘ভ্যালি অব ডেথ’ ১৮৬৩-এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের; ভিয়েতনামের দিয়েন বিয়েন ফু ট্র্যাজেডিও রচনা করেছে ‘ভ্যালি অব ডেথ’।
মৃত্যু উপত্যকা—ডেথ ভ্যালি নামকরণ হয়েছে ১৮৪৯ সালে। ক্যালিফোর্নিয়ায় যখন স্বর্ণের সন্ধান মেলে এবং শুরু হয় ‘গোল্ড রাশ’, এই উপত্যকা পার হয়ে যাওয়ার সময় খনিশ্রমিক এবং আশপাশে বসতি স্থাপনকারীদের কারও কারও এখানকার অতিরিক্ত গরম এবং শুষ্কতার কারণে মৃত্যু ঘটেছে। এখানকার পানির পরিমাণ অতি সামান্য; মূলত উচ্চহার বাষ্পীভবনের কারণে সঞ্চিত পানি জলীয় বাষ্প হয়ে দ্রুত মেঘে বিলীন হয়ে যায়। আবার বৃষ্টির ফোঁটা ভূমিতে পড়ার আগেই অতিরিক্ত গরমে বাষ্পীভূত হয়।
ডেথ ভ্যালি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের পূর্বাংশে ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাদা অঙ্গরাজ্যের সীমান্তে। এর অবস্থান মোজেভ মরুভূমিতে। এখানকার আবহাওয়াটা প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মরুভূমির প্রচণ্ড গরম, হালকা শীত এবং সামান্য বৃষ্টি। ভূমির স্তরচ্যুতির (ফল্ট) নিরিখে ডেথ ভ্যালির দুটি ভাগ: ডেথ ভ্যালি ফল্ট এবং ফার্নেস ক্রিক ফল্ট।
প্লিসটোমিল যুগের (প্রায় ১২০০০ বছর আগে এ যুগের অবসান ঘটে) মাঝামাঝি সময়ে এখনকার ডেথ ভ্যালি ছিল সমুদ্রের অংশ। ব্যাপক ভৌগোলিক পরিবর্তনে এখানেই মরুকরণ শুরু হয়। বাষ্পীভবনের কারণে স্থানে স্থানে সোডিয়াম লবণ এবং বোরাক্স সঞ্চিত হয়। ১৮৮৩ থেকে ১৯০৭-এর মধ্যে এখান থেকে বোরাক্স এবং লবণ উত্তোলন করা হয়। অতিরিক্ত গরমে এলাকার একদা সবুজ আচ্ছাদন বিলীন হয়ে গেছে। দীর্ঘ উপত্যকার মরু অববাহিকা সমুদ্রসীমার ৮৬ মিটার নিচে; নিচ থেকে উঠে এসেছে খাড়া পর্বতগাত্র। রাতের বেলাটা কিছুটা গা-সহা, তাপমাত্রা তখন ২৮ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। দিনের বেলা অতিরিক্ত গরম বাতাস বয়ে যায়। যখন লাগাতার উষ্ণ বাত্যপ্রবাহ চলতে থাকে তাপমাত্রা তখন ৫৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি। গড়পড়তা বছরের ১৯২ দিন তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার চেয়েও বেশি থাকে। এ পর্যন্ত ডেথ ভ্যালির সবচেয়ে ভেজা মাস জানুয়ারি ১৯৯৫, এ সময় ডেথ ভ্যালিতে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি পড়েছে। ১৯২১-এর জানুয়ারিতে এখানে বিক্ষিপ্তভাবে তুষারপাত হয়েছে এবং কিছু তুষারও জমে।
স্থানীয় আমেরিকান টিমবিশা গোত্র পায় ১০০০ বছর এই উপত্যকায় বসবাস করত। এখনো সেখানে একটি জনপদের বসবাস। এখানকার পাথর চলমান ও গতিময়। ভূতত্ত্বের অধ্যাপক রবার্ট শার্প বিভিন্ন আকারের ৩০টি পাথর বিশেষভাবে চিহ্নিত করে প্রায় সাত বছর পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখতে পান পাথর চলাফেরা করছে। বাতাসে ও বৃষ্টিতে এসব চিহ্নিত পাথর প্রায় ৬০০ মিটার দূরত্বে চলে যায়। অভিযাত্রীদের প্রিয় গন্তব্য ডেথ ভ্যালি। একসময় স্থানীয় আমেরিকান ছাড়া কেউই ডেথ ভ্যালির অবস্থান জানতে পারেনি। ১৮৪৯ সালে একটি অভিযাত্রী দল ডেথ ভ্যালি অতিক্রমের বেপরোয়া দুঃসাহস দেখিয়ে বিপদে পড়ে।
২০০৭ সালের পরিসংখ্যানে ডেথ ভ্যালির লোকসংখ্যা ৬২০ (পুরুষ ৩২৫, নারী ২৯৫)। ২০০৯ সালে খানাপ্রতি আয় ৫৭৯৫৩ মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ২৯০১৯ ডলার। জনসংখ্যা ৭৮.৮ ভাগ সাদা, এশিয়ান ১.৮ ভাগ। বেকার ৮.৮ ভাগ, বিবাহিতদের মধ্যে তালাকপ্রাপ্ত ১২.২ ভাগ।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি তপ্ততার; আলফ্রেড লর্ড টেনিসনের কবিতা ‘চার্জ অব দ্য লাইড ব্রিগেড’-এ বালাক্লাভা যুদ্ধের রণাঙ্গন ক্রিমিয়া ভ্যালি অব ডেথ; পোল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ‘ভ্যালি অব ডেথ’ নাৎসি হত্যাযজ্ঞের এবং গণকবরের; গেটিসবার্গের ‘ভ্যালি অব ডেথ’ ১৮৬৩-এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের; ভিয়েতনামের দিয়েন বিয়েন ফু ট্র্যাজেডিও রচনা করেছে ‘ভ্যালি অব ডেথ’।
No comments