শতভাগ ব্যক্তিস্বাধীনতা by ওয়াহিদ নবি
বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ
দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত তাঁর বই 'অন লিবার্টি'তে
লিখেছিলেন যে ব্যক্তিস্বাধীনতা ছাড়া একটি জাতি বিজ্ঞান, আইন, সাহিত্য বা
অন্য কোনো বিষয়ে উন্নত হতে পারে না।
মানুষের তাই
আত্মপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিত বলে তিনি মনে করতেন। তিনি মনে
করতেন যে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে শুধু তখনই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, যখন কেউ নিজের
কথা বা কাজের দ্বারা অন্যের ক্ষতি সাধন করে। তাঁর এই বিশেষ মতকে 'হার্ম
প্রিন্সিপল' (harm principle) বলা হয়। জোয়েল ফিন্সবার্গ ১৯৮৫ সালে একটি
মতবাদ সৃষ্টি করেন যেটি 'অফেন্স প্রিন্সিপল' (offence principle) বলে
পরিচিত। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বিষয়গুলো আলোচিত হওয়া উচিত।
সরকার 'আমার দেশ' পত্রিকার মালিক-সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে আমার দেশ পত্রিকায় ধর্মের নামে একদল মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, পত্রিকাটিতে কাবা শরিফের একটি ঘটনার ছবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে প্রচার করা হয়েছে বাংলাদেশের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত করে। বাংলাদেশে তাঁর গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। ১৫টি পত্রিকার সম্পাদক তাঁর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন। ১ জুলাই সংখ্যা 'ডেইলি স্টার' পত্রিকার একটি সংবাদ অনুযায়ী, আমার দেশ পত্রিকা ছবিটি প্রকাশের ছয় মাস পরে স্বীকার করেছে যে ছবিটি কাবা শরিফের ঘটনাসম্পর্কিত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে এই ছবির কোনো সম্পর্ক নেই।
জানুয়ারি মাসে খালেদা জিয়ার নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায়। প্রবন্ধটিতে জাতির স্বার্থবিরোধী কিছু বক্তব্য ছিল বলে সরকার মনে করে। খালেদা জিয়া সংসদে বলেন, তিনি ওই নিবন্ধ লেখেননি। তাঁর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, প্রবন্ধটির বিষয়বস্তু জাতির স্বার্থবিরোধী। প্রশ্নটা হচ্ছে, এত দিন পর তিনি কেন বলছেন যে লেখাটি তাঁর নয়। এ লেখাটি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তখন কেন তিনি বলেননি যে লেখাটি তাঁর নয়। এ লেখাটির ভিত্তিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অনেক কথা বলেছেন সরকারকে দোষারূপ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে বিডিনিউজ২৪ডটকমের ভাষ্য অনুযায়ী মওদুদ আহমদ অস্বীকার করেছেন যে তিনি বলেছিলেন যে লেখাটি খালেদা জিয়ার। ১ ফেব্রুয়ারি মওদুদ যা বলেছিলেন অনলাইন পত্রিকাটি তা উদ্ধৃত করেছে। পত্রিকাটির ভাষ্য অনুযায়ী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৬ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন যে প্রবন্ধটি খালেদা জিয়ার।
ইদানীং কয়েকজন মহিলা সংসদ সদস্য সংসদে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। আরেকটু তলিয়ে দেখা যাক। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের ভাষা অশালীন ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের বিষয়বস্তুকে সমালোচনা করা হয়েছে এ জন্য যে তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। সংসদে বক্তব্যের বিষয়বস্তুর জন্য কোনে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কেউ নিতে পারবেন না; কারণ সংসদে বক্তব্যের জন্য তাঁদের দায়মুক্তি রয়েছে (immunity)। সংবিধানের ৭৮ ধারায় দায়মুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন কাজের প্রতিবাদে বিরোধী দলগুলো হরতাল পালন করে আসছে কয়েক বছর ধরে। হরতাল মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। হরতালের আগের দিন গাড়ি পোড়ানোসহ অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কাণ্ডগুলো ব্যক্তিস্বাধীনতার অংশ কি?
ইদানীং একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে লাখো মানুষের সমাবেশ হয় প্রজন্ম চত্বরে। তাদের নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করে তাদের বিরোধীরা। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়। পরে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠন প্রধানত নাস্তিক বিরোধিতার নামে ঢাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে। এই সমাবেশ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কোরআন শরিফ পোড়ানো, দোকানপাট পোড়ানো ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলো ব্যক্তিস্বাধীনতার অংশ হতে পারে না। কমিউনিস্ট দলের কার্যালয় আক্রমণকে তারা ধর্ম রক্ষার অংশ মনে করেছে এটা লক্ষ করার মতো।
সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে ২৬ থেকে ৪৭ ধারা পর্যন্ত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর পটভূমিকায় এবং এ-সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত মহান ব্যক্তিদের চিন্তাধারা নিয়ে আমরা কিছু আলোচনা করতে চাই।
'আমার দেশের' বিভিন্ন প্রকাশনা 'হার্ম প্রিন্সিপলের' আওতায় আসে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ ও সরল। ভিন্ন রাজনৈতিক মতের মানুষদের ধর্মবিরোধী বলে প্রচার করলে তাদের নিরাপত্তা বিঘি্নত হতে পারে। প্রজন্ম চত্বরের লাখ লাখ মানুষকে নেতৃত্ব দিয়েছে ব্লগ লেখক নাস্তিকরা এ-জাতীয় ঘৃণা প্রচার করে 'আমার দেশ' সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অপব্যবহার করেছে। সংবাদপত্রের সম্পাদকদের উচিত ভবিষ্যতে মিলিতভাবে নিজেদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা। অন্য দেশের লাশের স্তূপকে বাংলাদেশের লাশের স্তূপ বলে প্রচার করছিল যখন 'আমার দেশ' তখন সম্পাদকদের কিছু করা উচিত ছিল।
পত্রিকায় লেখার অধিকার অবশ্যই বিরোধী দলের নেতার রয়েছে; কিন্তু এমন কিছু লেখা তাঁর উচিত নয় যে লেখাকে পরে নিজের নয় বলতে হয় তাতে। তিনিও হার্ম প্রিন্সিপলের আওতায় পড়েন। তাঁর লেখা দেশের ক্ষতি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
সংসদের ভেতরে অশ্লীল কথা বলার জন্য অবশ্য নারী সংসদ সদস্যরা আইনের আওতায় আসবেন না তাঁদের দায়মুক্তির কারণে। কিন্তু শালীনতার একটা ব্যাপার আছে। তাঁরা 'টক শো'তে অংশগ্রহণ করেন এবং এ-জাতীয় ভাষাই ব্যবহার করেন। টেলিভিশনে টক শো দেখলে মনে হয় বাংলাদেশে ১০০ শতাংশ বাকস্বাধীনতা আছে। অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ যা ইচ্ছা তাই বলেন। জোয়েল ফিন্সবার্গ আলোচনা করেছেন কি অবস্থায় 'অফেন্স প্রিন্সিপল' লঙ্ঘিত হয়। কেউ তাঁর কথা বা কাজের দ্বারা মানুষের মনে আঘাত দিলে তাকে 'অফেন্স প্রিন্সিপল' বলে। টক শোর অনেকেই 'অফেন্স প্রিন্সিপল'-এর আওতায় আসতে পারতেন কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে। ডেভিড সুমেকার অশ্লীল শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন বাকস্বাধীনতার কথা আলোচনা করার সময়। আমাদের নারীর সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ কবিদের কোনো কোনো কবিতার অংশ উদ্ধৃত করেছেন যেখানে অশ্লীল শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করায় কবিতার বিষয়বস্তু অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে, এমনটা যদি আমরা মনে করি তবে সংসদ সদস্যদের ভাষার ব্যবহারে আমাদের আপত্তি যৌক্তিক হবে না। দেশ-বিদেশে অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে বিচারব্যবস্থা সুষ্ঠু না হলে সে দেশে ব্যক্তিস্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না। আমাদের বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ। একদল বিচারব্যবস্থা গ্রহণ করলে আরেক দল করে না। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতির বিষয়টি ভেবে দেখার মতো। উদার রাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা ফলপ্রসূ হয়। জন রাউলস (John Rawls) রাজনৈতিক উদারতা সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা করেছেন। বাহাত্তরের সংবিধানে সেনানায়করা হস্তক্ষেপ করার আগে আমরা উদার জাতি ছিলাম। ভাবালুতার আশ্রয় না নিয়ে আমাদের ভেবে দেখতে হবে আমরা কি উদার রাষ্ট্রে বসবাস করছি?
লেখক : রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের ফেলো
সরকার 'আমার দেশ' পত্রিকার মালিক-সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে আমার দেশ পত্রিকায় ধর্মের নামে একদল মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, পত্রিকাটিতে কাবা শরিফের একটি ঘটনার ছবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে প্রচার করা হয়েছে বাংলাদেশের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত করে। বাংলাদেশে তাঁর গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। ১৫টি পত্রিকার সম্পাদক তাঁর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন। ১ জুলাই সংখ্যা 'ডেইলি স্টার' পত্রিকার একটি সংবাদ অনুযায়ী, আমার দেশ পত্রিকা ছবিটি প্রকাশের ছয় মাস পরে স্বীকার করেছে যে ছবিটি কাবা শরিফের ঘটনাসম্পর্কিত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে এই ছবির কোনো সম্পর্ক নেই।
জানুয়ারি মাসে খালেদা জিয়ার নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায়। প্রবন্ধটিতে জাতির স্বার্থবিরোধী কিছু বক্তব্য ছিল বলে সরকার মনে করে। খালেদা জিয়া সংসদে বলেন, তিনি ওই নিবন্ধ লেখেননি। তাঁর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, প্রবন্ধটির বিষয়বস্তু জাতির স্বার্থবিরোধী। প্রশ্নটা হচ্ছে, এত দিন পর তিনি কেন বলছেন যে লেখাটি তাঁর নয়। এ লেখাটি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তখন কেন তিনি বলেননি যে লেখাটি তাঁর নয়। এ লেখাটির ভিত্তিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অনেক কথা বলেছেন সরকারকে দোষারূপ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে বিডিনিউজ২৪ডটকমের ভাষ্য অনুযায়ী মওদুদ আহমদ অস্বীকার করেছেন যে তিনি বলেছিলেন যে লেখাটি খালেদা জিয়ার। ১ ফেব্রুয়ারি মওদুদ যা বলেছিলেন অনলাইন পত্রিকাটি তা উদ্ধৃত করেছে। পত্রিকাটির ভাষ্য অনুযায়ী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৬ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন যে প্রবন্ধটি খালেদা জিয়ার।
ইদানীং কয়েকজন মহিলা সংসদ সদস্য সংসদে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। আরেকটু তলিয়ে দেখা যাক। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের ভাষা অশালীন ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের বিষয়বস্তুকে সমালোচনা করা হয়েছে এ জন্য যে তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। সংসদে বক্তব্যের বিষয়বস্তুর জন্য কোনে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কেউ নিতে পারবেন না; কারণ সংসদে বক্তব্যের জন্য তাঁদের দায়মুক্তি রয়েছে (immunity)। সংবিধানের ৭৮ ধারায় দায়মুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন কাজের প্রতিবাদে বিরোধী দলগুলো হরতাল পালন করে আসছে কয়েক বছর ধরে। হরতাল মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। হরতালের আগের দিন গাড়ি পোড়ানোসহ অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কাণ্ডগুলো ব্যক্তিস্বাধীনতার অংশ কি?
ইদানীং একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে লাখো মানুষের সমাবেশ হয় প্রজন্ম চত্বরে। তাদের নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করে তাদের বিরোধীরা। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়। পরে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠন প্রধানত নাস্তিক বিরোধিতার নামে ঢাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে। এই সমাবেশ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কোরআন শরিফ পোড়ানো, দোকানপাট পোড়ানো ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলো ব্যক্তিস্বাধীনতার অংশ হতে পারে না। কমিউনিস্ট দলের কার্যালয় আক্রমণকে তারা ধর্ম রক্ষার অংশ মনে করেছে এটা লক্ষ করার মতো।
সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে ২৬ থেকে ৪৭ ধারা পর্যন্ত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর পটভূমিকায় এবং এ-সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত মহান ব্যক্তিদের চিন্তাধারা নিয়ে আমরা কিছু আলোচনা করতে চাই।
'আমার দেশের' বিভিন্ন প্রকাশনা 'হার্ম প্রিন্সিপলের' আওতায় আসে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ ও সরল। ভিন্ন রাজনৈতিক মতের মানুষদের ধর্মবিরোধী বলে প্রচার করলে তাদের নিরাপত্তা বিঘি্নত হতে পারে। প্রজন্ম চত্বরের লাখ লাখ মানুষকে নেতৃত্ব দিয়েছে ব্লগ লেখক নাস্তিকরা এ-জাতীয় ঘৃণা প্রচার করে 'আমার দেশ' সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অপব্যবহার করেছে। সংবাদপত্রের সম্পাদকদের উচিত ভবিষ্যতে মিলিতভাবে নিজেদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা। অন্য দেশের লাশের স্তূপকে বাংলাদেশের লাশের স্তূপ বলে প্রচার করছিল যখন 'আমার দেশ' তখন সম্পাদকদের কিছু করা উচিত ছিল।
পত্রিকায় লেখার অধিকার অবশ্যই বিরোধী দলের নেতার রয়েছে; কিন্তু এমন কিছু লেখা তাঁর উচিত নয় যে লেখাকে পরে নিজের নয় বলতে হয় তাতে। তিনিও হার্ম প্রিন্সিপলের আওতায় পড়েন। তাঁর লেখা দেশের ক্ষতি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
সংসদের ভেতরে অশ্লীল কথা বলার জন্য অবশ্য নারী সংসদ সদস্যরা আইনের আওতায় আসবেন না তাঁদের দায়মুক্তির কারণে। কিন্তু শালীনতার একটা ব্যাপার আছে। তাঁরা 'টক শো'তে অংশগ্রহণ করেন এবং এ-জাতীয় ভাষাই ব্যবহার করেন। টেলিভিশনে টক শো দেখলে মনে হয় বাংলাদেশে ১০০ শতাংশ বাকস্বাধীনতা আছে। অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ যা ইচ্ছা তাই বলেন। জোয়েল ফিন্সবার্গ আলোচনা করেছেন কি অবস্থায় 'অফেন্স প্রিন্সিপল' লঙ্ঘিত হয়। কেউ তাঁর কথা বা কাজের দ্বারা মানুষের মনে আঘাত দিলে তাকে 'অফেন্স প্রিন্সিপল' বলে। টক শোর অনেকেই 'অফেন্স প্রিন্সিপল'-এর আওতায় আসতে পারতেন কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে। ডেভিড সুমেকার অশ্লীল শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন বাকস্বাধীনতার কথা আলোচনা করার সময়। আমাদের নারীর সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ কবিদের কোনো কোনো কবিতার অংশ উদ্ধৃত করেছেন যেখানে অশ্লীল শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করায় কবিতার বিষয়বস্তু অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে, এমনটা যদি আমরা মনে করি তবে সংসদ সদস্যদের ভাষার ব্যবহারে আমাদের আপত্তি যৌক্তিক হবে না। দেশ-বিদেশে অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে বিচারব্যবস্থা সুষ্ঠু না হলে সে দেশে ব্যক্তিস্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না। আমাদের বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ। একদল বিচারব্যবস্থা গ্রহণ করলে আরেক দল করে না। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতির বিষয়টি ভেবে দেখার মতো। উদার রাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা ফলপ্রসূ হয়। জন রাউলস (John Rawls) রাজনৈতিক উদারতা সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা করেছেন। বাহাত্তরের সংবিধানে সেনানায়করা হস্তক্ষেপ করার আগে আমরা উদার জাতি ছিলাম। ভাবালুতার আশ্রয় না নিয়ে আমাদের ভেবে দেখতে হবে আমরা কি উদার রাষ্ট্রে বসবাস করছি?
লেখক : রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের ফেলো
No comments