ম্যান্ডেলা পরিবারের দ্বন্দ্ব by মাহফুজার রহমান
দক্ষিণ আফ্রিকার জীবন্ত কিংবদন্তি নেলসন
ম্যান্ডেলা গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে। তাঁর
সুস্থতা কামনা করে সারা দক্ষিণ আফ্রিকায় তো বটেই, বিশ্বজুড়েই কম-বেশি
প্রার্থনা আর শুভ কামনার প্রকাশ চলছে।
কিন্তু এ রকম একটি পরিস্থিতিতে তাঁর নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিবাদ। এমনকি তা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।
চলমান বিবাদের শুরু করেছেন মূলত ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা। নেলসন ম্যান্ডেলার তিন সন্তানকে নতুন করে সমাহিত করে বিরোধের বীজ বুনেছিলেন তিনি। এখন তাঁর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন ম্যান্ডেলা পরিবারের ১৬ সদস্য। আপাতত আদালত একটি সমাধান দিলেও ম্যান্ডেলার অবর্তমানে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা বলা মুশকিল।
মান্ডলা-বৃত্তান্ত
নেলসন ম্যান্ডেলা বিয়ে করেছেন তিনবার। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বিয়ে করেন ইভলিন মেজকে। এই দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় মাকগাথো। তাঁর মৃত্যু হয় ২০০৫ সালে। এই মাকগাথোরই ছেলে মান্ডলা। বলা হচ্ছে, ৩৯ বছর বয়সী মান্ডলাই নেলসন ম্যান্ডেলার একমাত্র পুরুষ উত্তরাধিকারী।
ম্যান্ডেলা এক রকম হাতে ধরে রাজনীতিতে নামিয়েছেন নাতি মান্ডলাকে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে মান্ডলাকে নিয়ে এএনসির পক্ষে প্রচারণা চালান ম্যান্ডেলা। মান্ডলা বর্তমানে পার্লামেন্টের সদস্য। রাজনীতির মঞ্চে পাদপ্রদীপের নিচে আসেন ২০০৭ সালে। ওই বছর তাঁকে ম্যান্ডেলার জন্মস্থান এমভেজো গ্রাম পরিষদের প্রধান নিয়োগ করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার রোড্স ইউনিভার্সিটিতে রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করা মান্ডলা বলেন, ম্যান্ডেলার আদর্শের পতাকাবাহী হতে চান তিনি।
ম্যান্ডেলার পরিবার
ম্যান্ডেলা-ইভলিন দম্পতির চার সন্তান। প্রথম সন্তান থেমবি ১৯৬৯ সালে ২৪ বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। দ্বিতীয় সন্তান মাকাজিউয়ে ১৯৪৮ সালে মাত্র তিন মাস বয়সে মারা যায়। তৃতীয় সন্তান মাকগাথো, যিনি মান্ডলার বাবা। ম্যান্ডেলার এই ঘরের একমাত্র জীবিত সন্তান মাকি মাকাজিউয়ে (৫৯)। ১৯৫৮ সালে ম্যান্ডেলা-ইভলিন দম্পতির বিচ্ছেদ হয়।
১৯৫৮ সালের জুনে নেলসন ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন উইনি মাদিকিজেলাকে। এই ঘরের দুই মেয়ে। জেনানি (৪৪) ও জিন্দজি (৪৩)। উইনির সঙ্গে ম্যান্ডেলার বিচ্ছেদ হয় ১৯৯৬ সালে।
১৯৮০ সালে ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন গ্রাসা ম্যাশেলকে। গ্রাসা মোজাম্বিকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সামোরা ম্যাশেলের সাবেক স্ত্রী।
সব মিলিয়ে ম্যান্ডেলার ১৭ নাতি-নাতনি। নাতি-নাতনিদের আবার ১৪টি সন্তান রয়েছে।
বিবাদের শুরু
সার্বিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, মান্ডলাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে ঠিক মানতে পারছেন না ম্যান্ডেলার মেয়েরা। এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে প্রায় দুই বছর আগে ম্যান্ডেলার তিন সন্তানের দেহাবশেষ স্থানান্তর করা নিয়ে।
ম্যান্ডেলার পূর্বপুরুষের ভিটা ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের কুনু গ্রামে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল মান্ডলার বাবা মাকগাথো এবং ম্যান্ডেলার প্রথম স্ত্রীর অন্য দুই সন্তান থেমবি ও মাকাজিউয়েকে। মান্ডলা ২০১১ সালে এই তিনজনের দেহাবশেষ তুলে এনে কিছুদূরে নিজের গ্রাম এমভেজোয় সমাহিত করেন। মান্ডলার ভাষ্য, তাঁর দাদা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মস্থান এমভেজোয় বলে সেখানেই ম্যান্ডেলা পরিবারের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে চান তিনি।
বিরোধ গড়াল আদালতে
কিন্তু ম্যান্ডেলার পরিবারের অন্য সদস্যরা মান্ডলার এই কথায় ভরসা পাননি। তাঁদের অভিযোগ, মান্ডলা ঐতিহ্য রক্ষার নামে মূলত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলবেন, যা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহূত হবে। ওই কেন্দ্র দেখতে দলে দলে পর্যটক আসবে আর পকেট ভারী হবে মান্ডলার। বিষয়টি মানতে না পেরে পরিবারের ১৬ জন সদস্য মান্ডলার বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হন। আর এতে নেতৃত্ব দেন ম্যান্ডেলার প্রথম স্ত্রীর একমাত্র জীবিত সন্তান মাকাজিউয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী উইনির বড় মেয়ে জেনানিরও সমর্থন পান তিনি। সপ্তাহ খানেক আগে আদালত মান্ডলার বিরুদ্ধে রায় দিয়ে ম্যান্ডেলা পরিবারের তিন সদস্যের দেহাবশেষ আবারও কুনু গ্রামে সমাহিত করার নির্দেশ দেন। কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর তা করাও হয়েছে ইতিমধ্যে।
পরিবারের সদস্যদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ মান্ডলা ম্যান্ডেলা। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে যখন তখন যে কেউ এসে বলবে, ‘আমিও ম্যান্ডেলা’। তাঁরা এই পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে চাইবে। মান্ডলা অভিযোগ করেন, গণমাধ্যমের মনোযোগ পেতে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে লেগেছে।
ম্যান্ডেলার অবর্তমানে
নেলসন ম্যান্ডেলার অবর্তমানে তাঁর উত্তরাধিকারীদের এ বিরোধ আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কোন্দলে যোগ দিতে পারেন ম্যান্ডেলার ভাই এনদাবাও। কারণ, তাঁকে সরিয়েই মান্ডলাকে এমভেজোর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি এনদাবা। পরিবারের অন্যদের দেখাদেখি তিনিও মুখ খুলেছেন। এনদাবা বলেছেন, মান্ডলা এমভেজো গ্রামের প্রধান হতে পারেন না। কারণ, এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক শর্তই পূরণ করতে পারেননি মান্ডলা। সেই প্রাথমিক শর্ত হলো এমভেজো গ্রামে জন্মগ্রহণ করা।
ম্যান্ডেলার তৃতীয় স্ত্রী গ্রাসা ম্যাশেল অবশ্য শুরু থেকেই পারিবারিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না। তবে মান্ডলার বিরুদ্ধে পরিবারের লড়াইয়ে মাকাজির পক্ষে গ্রাসা। ম্যান্ডেলার অবর্তমানে এ বিরোধে গ্রাসা ম্যাশেলের অবস্থান কী হবে সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। পরে তিনিও বিরোধের একটি সক্রিয় পক্ষ হতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী নেলসন ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক উত্তরসূরি সেই অর্থে কেবল নাতি মান্ডলাই। কিন্তু মান্ডলা এরই মধ্যে তিক্ত পারিবারিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। ব্যক্তি মান্ডলারও দুর্নাম আছে। এরই মধ্যে গণমাধ্যম তাঁর সম্পদের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সম্প্রতি আদালতে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে মান্ডলা যা উল্লেখ করেছেন প্রকৃত সম্পদ তার চেয়ে অনেক বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে গণমাধ্যমে। ত্যাগী নেলসন ম্যান্ডেলাকে দেশবাসী যে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে, তার তুলনায় মান্ডলা কিছু নন। তাই জাতীয় রাজনীতিতে তিনি কত দূর অগ্রসর হতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
রোডস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পিটার ভেল বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি ভারতীয় উপমহাদেশের মতো নয়। ভারতে নেহরু-গান্ধী পরিবারের সদস্যদের মতো করে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকায় সম্ভব হবে না। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ
স্থানীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী নেলসন ম্যান্ডেলা মারা গেলে তাঁকে সমাহিত করার আগেই পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা করতে হবে। তাই এ বিষয়ে ম্যান্ডোলার খোসা সম্প্রদায়ের মুরব্বিরা এ পারিবারিক বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ৮ জুলাই বিরোধ মেটাতে কুনুতে বৈঠক হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। তবে সেখানে ঠিক কারা কারা উপস্থিত ছিলেন এবং কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
ম্যান্ডেলার ব্যক্তিগত জীবনের একটি আক্ষেপ হতে পারে তিনি তাঁর পরিবারের দিকে নজর দিতে পারেননি। কারণ, রাজনীতির জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। এ কারণেই আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন তোলাই যায়।
ম্যান্ডেলার সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁর পরিবারের এই বিবাদ দেখে কষ্ট পাচ্ছেন ম্যান্ডেলার ভক্ত ও ঘনিষ্ঠজনেরা। আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু এই বিবাদ বন্ধের জন্য পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এতে করে ম্যান্ডেলাকে অপমান করা হয়। তাঁর প্রতি থুতু ছিটানো হয়।’
চলমান বিবাদের শুরু করেছেন মূলত ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা। নেলসন ম্যান্ডেলার তিন সন্তানকে নতুন করে সমাহিত করে বিরোধের বীজ বুনেছিলেন তিনি। এখন তাঁর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন ম্যান্ডেলা পরিবারের ১৬ সদস্য। আপাতত আদালত একটি সমাধান দিলেও ম্যান্ডেলার অবর্তমানে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা বলা মুশকিল।
মান্ডলা-বৃত্তান্ত
নেলসন ম্যান্ডেলা বিয়ে করেছেন তিনবার। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বিয়ে করেন ইভলিন মেজকে। এই দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় মাকগাথো। তাঁর মৃত্যু হয় ২০০৫ সালে। এই মাকগাথোরই ছেলে মান্ডলা। বলা হচ্ছে, ৩৯ বছর বয়সী মান্ডলাই নেলসন ম্যান্ডেলার একমাত্র পুরুষ উত্তরাধিকারী।
ম্যান্ডেলা এক রকম হাতে ধরে রাজনীতিতে নামিয়েছেন নাতি মান্ডলাকে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে মান্ডলাকে নিয়ে এএনসির পক্ষে প্রচারণা চালান ম্যান্ডেলা। মান্ডলা বর্তমানে পার্লামেন্টের সদস্য। রাজনীতির মঞ্চে পাদপ্রদীপের নিচে আসেন ২০০৭ সালে। ওই বছর তাঁকে ম্যান্ডেলার জন্মস্থান এমভেজো গ্রাম পরিষদের প্রধান নিয়োগ করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার রোড্স ইউনিভার্সিটিতে রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করা মান্ডলা বলেন, ম্যান্ডেলার আদর্শের পতাকাবাহী হতে চান তিনি।
ম্যান্ডেলার পরিবার
ম্যান্ডেলা-ইভলিন দম্পতির চার সন্তান। প্রথম সন্তান থেমবি ১৯৬৯ সালে ২৪ বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। দ্বিতীয় সন্তান মাকাজিউয়ে ১৯৪৮ সালে মাত্র তিন মাস বয়সে মারা যায়। তৃতীয় সন্তান মাকগাথো, যিনি মান্ডলার বাবা। ম্যান্ডেলার এই ঘরের একমাত্র জীবিত সন্তান মাকি মাকাজিউয়ে (৫৯)। ১৯৫৮ সালে ম্যান্ডেলা-ইভলিন দম্পতির বিচ্ছেদ হয়।
১৯৫৮ সালের জুনে নেলসন ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন উইনি মাদিকিজেলাকে। এই ঘরের দুই মেয়ে। জেনানি (৪৪) ও জিন্দজি (৪৩)। উইনির সঙ্গে ম্যান্ডেলার বিচ্ছেদ হয় ১৯৯৬ সালে।
১৯৮০ সালে ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন গ্রাসা ম্যাশেলকে। গ্রাসা মোজাম্বিকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সামোরা ম্যাশেলের সাবেক স্ত্রী।
সব মিলিয়ে ম্যান্ডেলার ১৭ নাতি-নাতনি। নাতি-নাতনিদের আবার ১৪টি সন্তান রয়েছে।
বিবাদের শুরু
সার্বিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, মান্ডলাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে ঠিক মানতে পারছেন না ম্যান্ডেলার মেয়েরা। এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে প্রায় দুই বছর আগে ম্যান্ডেলার তিন সন্তানের দেহাবশেষ স্থানান্তর করা নিয়ে।
ম্যান্ডেলার পূর্বপুরুষের ভিটা ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের কুনু গ্রামে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল মান্ডলার বাবা মাকগাথো এবং ম্যান্ডেলার প্রথম স্ত্রীর অন্য দুই সন্তান থেমবি ও মাকাজিউয়েকে। মান্ডলা ২০১১ সালে এই তিনজনের দেহাবশেষ তুলে এনে কিছুদূরে নিজের গ্রাম এমভেজোয় সমাহিত করেন। মান্ডলার ভাষ্য, তাঁর দাদা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মস্থান এমভেজোয় বলে সেখানেই ম্যান্ডেলা পরিবারের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে চান তিনি।
বিরোধ গড়াল আদালতে
কিন্তু ম্যান্ডেলার পরিবারের অন্য সদস্যরা মান্ডলার এই কথায় ভরসা পাননি। তাঁদের অভিযোগ, মান্ডলা ঐতিহ্য রক্ষার নামে মূলত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলবেন, যা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহূত হবে। ওই কেন্দ্র দেখতে দলে দলে পর্যটক আসবে আর পকেট ভারী হবে মান্ডলার। বিষয়টি মানতে না পেরে পরিবারের ১৬ জন সদস্য মান্ডলার বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হন। আর এতে নেতৃত্ব দেন ম্যান্ডেলার প্রথম স্ত্রীর একমাত্র জীবিত সন্তান মাকাজিউয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী উইনির বড় মেয়ে জেনানিরও সমর্থন পান তিনি। সপ্তাহ খানেক আগে আদালত মান্ডলার বিরুদ্ধে রায় দিয়ে ম্যান্ডেলা পরিবারের তিন সদস্যের দেহাবশেষ আবারও কুনু গ্রামে সমাহিত করার নির্দেশ দেন। কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর তা করাও হয়েছে ইতিমধ্যে।
পরিবারের সদস্যদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ মান্ডলা ম্যান্ডেলা। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে যখন তখন যে কেউ এসে বলবে, ‘আমিও ম্যান্ডেলা’। তাঁরা এই পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে চাইবে। মান্ডলা অভিযোগ করেন, গণমাধ্যমের মনোযোগ পেতে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে লেগেছে।
ম্যান্ডেলার অবর্তমানে
নেলসন ম্যান্ডেলার অবর্তমানে তাঁর উত্তরাধিকারীদের এ বিরোধ আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কোন্দলে যোগ দিতে পারেন ম্যান্ডেলার ভাই এনদাবাও। কারণ, তাঁকে সরিয়েই মান্ডলাকে এমভেজোর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি এনদাবা। পরিবারের অন্যদের দেখাদেখি তিনিও মুখ খুলেছেন। এনদাবা বলেছেন, মান্ডলা এমভেজো গ্রামের প্রধান হতে পারেন না। কারণ, এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক শর্তই পূরণ করতে পারেননি মান্ডলা। সেই প্রাথমিক শর্ত হলো এমভেজো গ্রামে জন্মগ্রহণ করা।
ম্যান্ডেলার তৃতীয় স্ত্রী গ্রাসা ম্যাশেল অবশ্য শুরু থেকেই পারিবারিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না। তবে মান্ডলার বিরুদ্ধে পরিবারের লড়াইয়ে মাকাজির পক্ষে গ্রাসা। ম্যান্ডেলার অবর্তমানে এ বিরোধে গ্রাসা ম্যাশেলের অবস্থান কী হবে সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। পরে তিনিও বিরোধের একটি সক্রিয় পক্ষ হতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী নেলসন ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক উত্তরসূরি সেই অর্থে কেবল নাতি মান্ডলাই। কিন্তু মান্ডলা এরই মধ্যে তিক্ত পারিবারিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। ব্যক্তি মান্ডলারও দুর্নাম আছে। এরই মধ্যে গণমাধ্যম তাঁর সম্পদের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সম্প্রতি আদালতে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে মান্ডলা যা উল্লেখ করেছেন প্রকৃত সম্পদ তার চেয়ে অনেক বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে গণমাধ্যমে। ত্যাগী নেলসন ম্যান্ডেলাকে দেশবাসী যে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে, তার তুলনায় মান্ডলা কিছু নন। তাই জাতীয় রাজনীতিতে তিনি কত দূর অগ্রসর হতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
রোডস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পিটার ভেল বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি ভারতীয় উপমহাদেশের মতো নয়। ভারতে নেহরু-গান্ধী পরিবারের সদস্যদের মতো করে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকায় সম্ভব হবে না। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ
স্থানীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী নেলসন ম্যান্ডেলা মারা গেলে তাঁকে সমাহিত করার আগেই পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা করতে হবে। তাই এ বিষয়ে ম্যান্ডোলার খোসা সম্প্রদায়ের মুরব্বিরা এ পারিবারিক বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ৮ জুলাই বিরোধ মেটাতে কুনুতে বৈঠক হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। তবে সেখানে ঠিক কারা কারা উপস্থিত ছিলেন এবং কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
ম্যান্ডেলার ব্যক্তিগত জীবনের একটি আক্ষেপ হতে পারে তিনি তাঁর পরিবারের দিকে নজর দিতে পারেননি। কারণ, রাজনীতির জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। এ কারণেই আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন তোলাই যায়।
ম্যান্ডেলার সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁর পরিবারের এই বিবাদ দেখে কষ্ট পাচ্ছেন ম্যান্ডেলার ভক্ত ও ঘনিষ্ঠজনেরা। আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু এই বিবাদ বন্ধের জন্য পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এতে করে ম্যান্ডেলাকে অপমান করা হয়। তাঁর প্রতি থুতু ছিটানো হয়।’
No comments