জটিলতার কারণে কোটা পদ্ধতি বৈষম্যমূলক by মোশতাক আহমেদ
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান
কোটাব্যবস্থার ভালো-মন্দ দুই দিকই আছে। তবে এর প্রয়োগ জটিল। কোটার
অব্যবহার কারও কারও জন্য বৈষম্যমূলক হয়ে দাঁড়ায় বলেও অভিযোগ আছে।
বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ বিবেচনায় কোনো সরকারই কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে না।
পিএসসির সাবেক একজন চেয়ারম্যান ও একাধিক সাবেক সচিবের বিশ্লেষণ এবং অন্তত দুটি প্রতিবেদনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থা নিয়ে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) পক্ষে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান ও বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ যৌথভাবে কোটাব্যবস্থা সংস্কারে কিছু সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেন। তবে তা এখনো ফাইলবন্দী হয়ে আছে। সুপারিশে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে একে সহজ করার কথা বলা হয়।
সর্বশেষ ২০১১ সালে পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনেও কোটাব্যবস্থার প্রয়োগ করা জটিল উল্লেখ করে বলা হয়, প্রচলিত কোটা পদ্ধতির কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে করা সম্ভব নয়। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সরলীকরণ অপরিহার্য। অন্যথায় কোটা প্রয়োগসংশ্লিষ্ট জটিলতা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোটাব্যবস্থা একেবারে বাতিল করা যাবে না। বিদ্যমান আনুপাতিক হার কমিয়ে যৌক্তিক অবস্থায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য, চাকরিপ্রার্থীদের একটি অংশ চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার শাহবাগ এলাকায় এই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়।
জানতে চাইলে আকবর আলি খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোটাব্যবস্থা জটিল হওয়ায় প্রয়োগের সময় এর অব্যবহার হয়। কোটা হলো বিশেষ ব্যবস্থা আর মেধা কোটা হলো সাধারণ ব্যবস্থা। সাধারণ ব্যবস্থা কোনোভাবেই ৫০ শতাংশের কম হওয়া উচিত না। কোনো কোটাই চিরস্থায়ী হওয়া উচিত না। কোটাব্যবস্থা পর্যালোচনা করে নতুনভাবে করা উচিত।’
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে একেক দপ্তরে একেক রকম কোটাব্যবস্থা আছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে ৫৫ শতাংশ বিভিন্ন কোটা ও ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়। কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ ও উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা থাকলেও না পাওয়া গেলে মেধা কোটা থেকে পূরণ করা হয়।
আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা আছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। নিচের স্তরের পদগুলোতেও ভিন্ন ব্যবস্থা।
অনেকের অভিযোগ, কোটার কারণে কম মেধাবীরা বেশি চাকরি পাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোটার সুফলও পাওয়া গেছে। যেমন—প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী কোটায় শিক্ষক নিয়োগের ফলে বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের জন্য তুলনামূলক অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাঁদের মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোটা থাকা উচিত, কিন্তু এর প্রয়োগ পদ্ধতি সহজ করতে হবে।
পিএসসির সাবেক একজন চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান কোটাব্যবস্থায় বৈষম্য তৈরি হয়। যেমন—কোনো একজন প্রার্থীর বাড়ি টাঙ্গাইলে। তাঁর মেধাক্রম ১৭। কিন্তু ওই জেলায় কোটায় নেওয়া যাবে তিনজন। ১৭ পর্যন্ত যাওয়ার আগেই যদি টাঙ্গাইলের কোটায় তিনজন পাওয়া যায়, তাহলে ১৭তম হয়েও চাকরি পাবেন না। বিপরীতে ১৪২তম হয়েও মেহেরপুরের একজন প্রার্থী কোটা খালি থাকলে চাকরি পেয়ে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে আকবর আলি খান বলেন, যখন জেলা কোটা চালু হয়েছিল, তখন জেলা ছিল ১৯টি। এখন ৬৪টি। অথচ কোনো কোনো নিয়োগে ৬৪টি পদই থাকে না। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় যে জেলায় জনসংখ্যা বেশি, সেই জেলা থেকে লোক নেওয়া হয়। কিন্তু কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকার একজন প্রার্থী ভালো করলেও বাদ পড়ে যেতে পারেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, বেশির ভাগ সময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় পদ খালি থাকে। প্রার্থী পাওয়া যায় না। কিন্তু সংরক্ষিত রাখার কারণে এই পদগুলোতে অন্যদেরও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না। বিশেষ করে কারিগরি পদগুলোতে বেশি সমস্যা হয়। সম্প্রতি এ জন্য ৩২তম বিসিএসের মাধ্যমে আলাদা করে কারিগরি পদে লোক নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, কোটা নিয়ে অনেক সমস্যা থাকলেও মূলত ‘স্পর্শকাতর’ বিবেচনায় কোনো সরকার এই ব্যবস্থা সংস্কার করে না। এতে দিনে দিনে জটিলতা বাড়ছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা অবশ্যই সংস্কার হওয়া উচিত। সংবিধান অনুযায়ী, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকা উচিত। তাও সব মিলিয়ে ২০ শতাংশের বেশি থাকা উচিত নয়।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসনসচিব আবদুস সোবহান সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো সংস্কারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে ভবিষ্যতে হয়তো সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।’
পিএসসির সাবেক একজন চেয়ারম্যান ও একাধিক সাবেক সচিবের বিশ্লেষণ এবং অন্তত দুটি প্রতিবেদনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থা নিয়ে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) পক্ষে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান ও বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ যৌথভাবে কোটাব্যবস্থা সংস্কারে কিছু সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেন। তবে তা এখনো ফাইলবন্দী হয়ে আছে। সুপারিশে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে একে সহজ করার কথা বলা হয়।
সর্বশেষ ২০১১ সালে পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনেও কোটাব্যবস্থার প্রয়োগ করা জটিল উল্লেখ করে বলা হয়, প্রচলিত কোটা পদ্ধতির কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে করা সম্ভব নয়। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সরলীকরণ অপরিহার্য। অন্যথায় কোটা প্রয়োগসংশ্লিষ্ট জটিলতা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোটাব্যবস্থা একেবারে বাতিল করা যাবে না। বিদ্যমান আনুপাতিক হার কমিয়ে যৌক্তিক অবস্থায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য, চাকরিপ্রার্থীদের একটি অংশ চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার শাহবাগ এলাকায় এই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়।
জানতে চাইলে আকবর আলি খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোটাব্যবস্থা জটিল হওয়ায় প্রয়োগের সময় এর অব্যবহার হয়। কোটা হলো বিশেষ ব্যবস্থা আর মেধা কোটা হলো সাধারণ ব্যবস্থা। সাধারণ ব্যবস্থা কোনোভাবেই ৫০ শতাংশের কম হওয়া উচিত না। কোনো কোটাই চিরস্থায়ী হওয়া উচিত না। কোটাব্যবস্থা পর্যালোচনা করে নতুনভাবে করা উচিত।’
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে একেক দপ্তরে একেক রকম কোটাব্যবস্থা আছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে ৫৫ শতাংশ বিভিন্ন কোটা ও ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়। কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ ও উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা থাকলেও না পাওয়া গেলে মেধা কোটা থেকে পূরণ করা হয়।
আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা আছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। নিচের স্তরের পদগুলোতেও ভিন্ন ব্যবস্থা।
অনেকের অভিযোগ, কোটার কারণে কম মেধাবীরা বেশি চাকরি পাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোটার সুফলও পাওয়া গেছে। যেমন—প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী কোটায় শিক্ষক নিয়োগের ফলে বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের জন্য তুলনামূলক অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাঁদের মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোটা থাকা উচিত, কিন্তু এর প্রয়োগ পদ্ধতি সহজ করতে হবে।
পিএসসির সাবেক একজন চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান কোটাব্যবস্থায় বৈষম্য তৈরি হয়। যেমন—কোনো একজন প্রার্থীর বাড়ি টাঙ্গাইলে। তাঁর মেধাক্রম ১৭। কিন্তু ওই জেলায় কোটায় নেওয়া যাবে তিনজন। ১৭ পর্যন্ত যাওয়ার আগেই যদি টাঙ্গাইলের কোটায় তিনজন পাওয়া যায়, তাহলে ১৭তম হয়েও চাকরি পাবেন না। বিপরীতে ১৪২তম হয়েও মেহেরপুরের একজন প্রার্থী কোটা খালি থাকলে চাকরি পেয়ে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে আকবর আলি খান বলেন, যখন জেলা কোটা চালু হয়েছিল, তখন জেলা ছিল ১৯টি। এখন ৬৪টি। অথচ কোনো কোনো নিয়োগে ৬৪টি পদই থাকে না। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় যে জেলায় জনসংখ্যা বেশি, সেই জেলা থেকে লোক নেওয়া হয়। কিন্তু কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকার একজন প্রার্থী ভালো করলেও বাদ পড়ে যেতে পারেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, বেশির ভাগ সময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় পদ খালি থাকে। প্রার্থী পাওয়া যায় না। কিন্তু সংরক্ষিত রাখার কারণে এই পদগুলোতে অন্যদেরও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না। বিশেষ করে কারিগরি পদগুলোতে বেশি সমস্যা হয়। সম্প্রতি এ জন্য ৩২তম বিসিএসের মাধ্যমে আলাদা করে কারিগরি পদে লোক নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, কোটা নিয়ে অনেক সমস্যা থাকলেও মূলত ‘স্পর্শকাতর’ বিবেচনায় কোনো সরকার এই ব্যবস্থা সংস্কার করে না। এতে দিনে দিনে জটিলতা বাড়ছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা অবশ্যই সংস্কার হওয়া উচিত। সংবিধান অনুযায়ী, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকা উচিত। তাও সব মিলিয়ে ২০ শতাংশের বেশি থাকা উচিত নয়।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসনসচিব আবদুস সোবহান সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো সংস্কারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে ভবিষ্যতে হয়তো সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।’
No comments