দুই গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষণ, একজনকে হত্যার দায়ে ॥ গার্মেন্টসের মালিকসহ দু’জনের ফাঁসি
দুই গার্মেন্টস কর্মীকে রাতভর ধর্ষণ ও পরে একজনকে হত্যা করে লাশ সাত টুকরো করার অভিযোগে দায়ের করা একটি চাঞ্চল্যকর মামলায় গার্মেন্টসের মালিকসহ দু’জনকে মৃত্যুদ- দিয়েছে আদালত।
একই সঙ্গে আসামিদের রায়ের অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার এই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। আসামিরা হলেন, গার্মেন্টস মালিক নজরুল ইসলাম (৪২) ও দালাল মোস্তফা (২২)। তারা দু’জনই পলাতক আছে। নজরুলের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার রামদেব গ্রামে। তার বাবার নাম আজিজার রহমান। অপর আসামি মোস্তফার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার পাটুরিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুর রব মাতবর। আসামি নজরুল দীর্ঘদিন জেলে আটক ছিলেন। পরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। পরে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে হাইকোর্ট তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু নজরুল আত্মসমর্পণ না করে পলাতক হন। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিচারক বলেন, ভিকটিম দুজনই অল্প বয়স্কা। রোজার মাসে ঈদ উপলক্ষে কিছু কিনে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দালাল মোস্তফা দুই ভিকটিমকে আসামি নজরুলের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা তাদের রাতভর ধর্ষণ করে। ভিকটিমদের একজন ঘটনা পুলিশকে বলে দেবে জানালে তাকে হত্যার পর তার লাশ ৭ টুকরো করে। অপর ভিকটিম না বলার শর্তে আসামিদের হাত-পা ধরে মুক্তি পান। ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক তাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়াই উচিত। বিচারক বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার মামলায় আসামিরা কি করে জামিন পায় তা আমার বোধগম্য নয়।’ এদিকে মামলাটি ২ বছর ২৯ দিন আগে রায়ের জন্য ধার্য হলেও এত দিনে মামলাটির রায় ঘোষণা না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এভাবে রায়ের জন্য ঝুলে থাকলে বিচার প্রার্থীরা আদালতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর আশুলিয়ার নাহার গার্মেন্টসের দুই নারী শ্রমিক বিউটি ও অপর এক নারী শ্রমিককে ঈদের শপিং করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আসামি মোস্তফা তাদের ঢাকার মিরপুরে নিয়ে আসে। এরপর তারা মিরপুর ১ নম্বর সেক্টরের আসামি গার্মেন্টস মালিক নজরুলের ভাড়া বাড়িতে ওঠে। ওইদিন রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত আসামিরা ওই দুই নারী শ্রমিককে ধর্ষণ করে। ভিকটিম বিউটি ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করে দেয়ার কথা জানালে আসামিরা তাকে হত্যা করে। পরে তার লাশ ৭ টুকরো করে ফেলা হয়। এ ঘটনা অপর ভিকটিম দেখে ফেললে তাকেও হত্যা করতে উদ্যত হলে এ ঘটনা তিনি প্রকাশ করবেন না বলে আসামিদের হাতে-পায়ে ধরে জীবনে রক্ষা পান। পরবর্তীতে এ ঘটনায় মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।
ঘটনাটি তদন্ত করে মিরপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক পারুল খাতুন ২০০৭ সালের ১৯ মে আসামি নজরুল ও মোস্তফাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। নিহত নারী শ্রমিকের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার পাটুরিয়া গ্রামে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আলী আজগর স্বপন। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান।
No comments