এবার সিএনজিতে গ্যাস রেশনিং, বাড়তে পারে জনদুর্ভোগ
শিল্পের পর এবার সিএনজিতে গ্যাস রেশনিং করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। চলতি সপ্তাহে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর দেশে ফেরার পর সিএনজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্ম নেয়া হবে।
সিএনজি ব্যবসায়ীরা বলছেন এতে পরিবহন খাতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। অনেকে রেশনিংকে ইসু্য করে অহেতুক ভাড়া বৃদ্ধি করবে, যাতে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পেঁৗছাবে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, উৎপাদিত গ্যাসের মধ্যে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলো ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে। রেশনিং করা হলে প্রতিদিন গড়ে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সাশ্রয় হবে। সিএনজিতে গ্যাস রেশনিং করার জন্য শিল্প মালিকদেরও চাপ রয়েছে। তবে গত ২১ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার এক বৈঠকে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন ও কনভারশন এ্যাসোসিয়েশন রেশনিংয়ের তীব্র বিরোধিতার মুখে রেশনিং সিদ্ধানত্ম নেয়া সম্ভব হয়নি। গত মঙ্গলবার একই বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর সিঙ্গাপুর এবং নিউইয়র্কে রোড শোতে যোগ দিতে দেশের বাইরে যাওয়ায় বৈঠক হয়নি। আগামীকাল বুধবার ড. হোসেন মনসুর দেশে ফেরার পর বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্ম নেয়া হবে। তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সিএনজিতে রেশনিং করার বিষয়ে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।রূপানত্মরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিঃ (আরপিজিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, দেশে তাদের অনুমোদন দেয়া ৯২৯টি সিএনজি স্টেশনের মধ্যে এখন চালু রয়েছে ৪২৫টি সিএনজি স্টেশন। তিতাসের আওতাভুক্ত এলাকায় সিএনজি স্টেশন রয়েছে ৩২৫টি। এর মধ্যে রাজধানী এবং এর আশপাশে রয়েছে ২০০ রিফুয়েলিং স্টেশন।
রাজধানীতে সিএনজিচালিত গাড়ির সংখ্যা দুই লাখের মতো। ডিজেলের চেয়ে গ্যাস সাশ্রয়ী হওয়ায় রাজধানীর অধিকাংশ গণপরিবহন সিএনজিতে রূপানত্মর করেছে। রাজধানীতে বিভিন্ন কোম্পানির যে বাস সার্ভিস রয়েছে তার অধিকাংশই সিএনজিতে চলাচল করে। এ কারণে সিএনজিতে রেশনিং হলে পরিবহন খাতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশিস্নষ্টরা মনে করছে, দিনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলে রাতে পরিবহন মালিকরা গ্যাস সংগ্রহ করবে। এতে রাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস সংগ্রহ করার ফলে পরিবহন চালকরা বাড়তি ভাড়া দাবি করবে যাতে জনদুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
সিএনজি ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, এখন রাজধানীতে শতাধিক রিফুয়েলিং স্টেশন রয়েছে যারা নির্ধারিত মাত্রায় গ্যাসের চাপ পাচ্ছে না। এতে তারা অর্থনৈতিকভাবে ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে। রেশনিং না করলেও এমনিতেই তারা রেশনিংয়ের মধ্যে রয়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। সিএনজি স্টেশনগুলোতে ১৫ পিএসআই চাপে গ্যাস সরবরাহ করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ৰেত্রে ৭ থেকে ৮ পিএসআইর বেশি চাপ পাওয়া যায় না। কিন্তু তিতাসকে বিল দিতে হয় ১৫ পিএসআই চাপের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যনত্ম সরবরাহ বন্ধ রাখা হলেও অনেক পরিবহন রাতে গ্যাস ব্যবহার করবে যাতে যে পরিমাণ সাশ্রয় হওয়ার চিনত্মা করা হচ্ছে তা আদৌ হবে না। এ জন্য হুট করে কোন সিদ্ধানত্ম না নিয়ে সরকারকে ভেবে চিনত্মে সিদ্ধানত্ম নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
সোমবার এ বিষয়ে সিএনজি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জানান, দেশে উত্তোলিত গ্যাসের মধ্যে সিএনজি স্টেশনগুলো মাত্র পাঁচ ভাগ গ্যাস ব্যবহার করে। সারাদেশে ৪০ ভাগ গ্যাস সঙ্কট রয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, সিএনজি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হলেও দেশে গ্যাস সঙ্কট নিরসন হবে না। তিতাস গ্যাস ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট সাশ্রয়ের কথা বললেও তিনি বলেন, আমাদের হিসাবে সর্বোচ্চ ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হবে। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে সেখানে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় করে কতটা সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব হবে তিনি এমন প্রশ্ন রাখেন। তিনি জানান, পেট্রোবাংলা সিএনজিতে রেশনিং করার বিষয়ে অনাগ্রহী হলেও তিতাস এবং আরপিজিসিএল সিএনজিতে রেশনিং করার বিষয়ে বেশি আগ্রহী।
No comments