ঢাকায় উন্নয়ন ফোরামের দু'দিনব্যাপী বৈঠক বসছে ১৫ ফেব্রুয়ারি- প্রধানমন্ত্রীকে ছয় মাসের পরিস্থিতি অবহিত করলেন অর্থমন্ত্রী
মূল্যস্ফীতি এবং এডিপি বাস্তবায়নে কর্মদৰতাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠকের পর রবিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
তিনি জানান, আগামী ১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের দু'দিনব্যাপী সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রানত্ম বৈঠকে অর্থমন্ত্রী মুহিত প্রধানমন্ত্রীকে গত ৬ মাসের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন গতি ত্বরান্বিত করতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। বিদেশী বিনিয়োগ এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য জটিলতা নিরসনের নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রশাসনের স্বচ্ছতা বজায় রাখার ওপরও প্রধানমন্ত্রী গুরম্নত্বারোপ করেন।প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ফিরে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতিরোধে চাহিদা এবং সরবরাহর মধ্যে যাতে বড় ঘাটতি সৃষ্টি না হয় সে দিকে গুরম্নত্বারোপ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সাধারণত সার, পেট্রোলিয়াম, খাদ্য আমদানি করে থাকে। আনত্মর্জাতিক বাজারে এসব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থবছরের দ্বিতীয় ৬ মাসে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পয়েছে। নিত্যপণ্য যাতে জনসাধারণের ক্রয় ৰমতার মধ্যে থাকে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলন, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাসত্মবায়ন হয়েছে শতকরা ১১ ভাগ। দ্বিতীয় ৩ মাসে এ হার বেড়ে ২৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এডিপি বাসত্মবায়নের এ হারকে সনত্মোষজনক বলে উলেস্নখ করলেও বছর শেষে শতভাগ এডিপি বাসত্মবায়ন সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি বছর শেষে ৮৬ শতাংশ এডিপি বাসত্মবায়ন হবে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ হবে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বছর এডিপি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্প পরিচালকদের কর্মদৰতার অভাবের কারণে শতভাগ এডিপি বাসত্মবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি। তবে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবার এডিপি বাসত্মবায়নের হার বেশি বলে উলেস্নখ করেন অর্থমন্ত্রী। মুহিত বলেন, আমাদের প্রকল্প পরিচালকদের কর্মদৰতার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি একজন প্রকল্প পরিচালককে কয়েকটি প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হয়।
অনেক প্রকল্প পরিচালক ঢাকায় থেকে কাজ করেন, যা এডিপি বাসত্মবায়নের পথে বড় অনত্মরায়।
বিগত তিন মাসে প্রথম ৬ মাসের তুলনায় রাজস্ব আদায়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। জমি রেজিস্ট্রেশনের ৰেত্রে রাজস্ব আদায়ের হার সনত্মোষজনক না হওয়ায় সরকারী পর্যায়ে জমির মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে।
অনুন্নয়ন ব্যয় তেমন বৃদ্ধি পায়নি। নানা ৰেত্রে উদ্দীপনা দেয়ায় কৃষি, কর্মসংস্থান এবং কৃষিতে আশানুরূপ উন্নয়ন হয়েছে। এতে লৰ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসের তুলনায় রফতানি বেড়েছে। গত ছয় মাসে মোট রফতানির পরিমাণ ৬ হাজার ৯৮ মিলিয়ন ডলার। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর প্রথম ৬ মাসের রফতানির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫৫১ ডলার।
শিল্পে বিনিয়োগের ৰেত্রে যে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তা ধীরে হলেও কেটে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। গত ছয় মাসে শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। গত বছর একই সময় শিল্পে বিনিয়োগ ছিল ঋণাত্মক সাড়ে সাত শতাংশ। মন্ত্রী বলেন, রিজার্ভের পরিমাণ ১০ হাজার ৩৪০ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে ১০ হাজার ১৩০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টিকে ইতিবাচক উলেস্নখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এতে অলস টাকা ব্যবহার হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় দ্বিতীয় ছয় মাসে কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনে একই সঙ্গে পৃথক দুটি প্রতিবেদনে ৬ মাসের আর্থিক বিবরণ উপস্থাপন করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানান, পাঁচ বছর আগামী ১৫ ও ১৬ ফেব্রম্নয়ারি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, কৃষি, পানি, খাদ্য, পরিবেশ, যোগাযোগ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) এ কে খন্দকার, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল আজিজ, মুখ্য সচিব এম এ করিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
No comments