যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা সুদূরপরাহত by রাজীব আহমেদ
পোশাক খাতে এক দশক ধরে শুল্কমুক্ত সুবিধার জন্য নানা চেষ্টা-তদবির চালিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তা পাওয়া যায়নি। কবে নাগাদ এ সুবিধা পাওয়া যাবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া প্রায় সব দেশই বাংলাদেশের পোশাকশিল্পসহ বেশির ভাগ রপ্তানিপণ্যকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। এমনকি চীন, ভারত ও মালয়েশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয়ও বাংলাদেশ বহু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। সেখানে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কিছু পণ্যকে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) সুবিধা দিয়েছে মাত্র। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্যগুলো নেই। এরই মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জিএসপি একেবারে প্রত্যাহার হয়ে যাওয়ার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কাজ যুক্তরাষ্ট্র যদি করেও, তাতে বাংলাদেশ খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু পণ্যে বাংলাদেশকে এ সুবিধাটি দেয়, যেগুলো এখান থেকে আদৌ যায় না, গেলেও তা নামেমাত্র।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য কংগ্রেসে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী লবিস্ট ব্যক্তি ও গ্রুপগুলোকেও নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। তা সত্ত্বেও আগের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি যুক্তরাষ্ট্র। সংগঠন দুটি আগামী সপ্তাহে আবারও লবিস্ট নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজিএমইএর এক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ছয় বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা শুল্ক আদায় করেছে। ডলারের দাম গড়ে ৭০ টাকা ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে আদায় করা শুল্কের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের বেশি। পোশাক খাত থেকে শুল্ক নেওয়া হয় গড়ে ১৬ শতাংশ হারে। কম্বোডিয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছ থেকেই বেশি শুল্ক আদায় করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বছরে পাঁচ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন=১০০ কোটি) ডলারের মতো আয় করে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত ২০১১-১২ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৫১০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৪৫৩ কোটি ডলার ছিল তৈরি পোশাক খাতে। তবে এই তৈরি পোশাকের জন্য কোনো জিএসপি সুবিধা দেয় না যুক্তরাষ্ট্র, যা দেশটিতে মোট রপ্তানির ৯২-৯৩ শতাংশ। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫১০ কোটি ডলার রপ্তানি মূল্যের প্রায় ৫ শতাংশ আসে হিমায়িত খাদ্য ও চিংড়ি রপ্তানি থেকে। এটিও জিএসপির আওতাভুক্ত নয়। বাকি ২-৩ শতাংশ রপ্তানি মূল্য আসে অন্য পণ্য থেকে। এর মধ্যে জিএসপি সুবিধাভুক্ত পণ্য রপ্তানি করে মাত্র ১ শতাংশেরও কম বা ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার আসে।
যে সামান্য কয়েকটি পণ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে এর মধ্যে গলফ খেলার উপকরণসহ কিছু স্পোর্টস আইটেম, স্টিলের চামচ ও সিগারেটের মতো পণ্য রয়েছে, যা বাংলাদেশ রপ্তানি করতে পারে না। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে কিছু স্লিপিং ব্যাগ রপ্তানি করে। এ পণ্যটি জিএসপিভুক্ত থাকলেও দুই বছর আগে তাও বাতিল করা হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করে তার ১ শতাংশেরও কম পণ্য জিএসপি সুবিধা ভোগ করছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকায় যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ ছয় বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩০০ কোটি ডলার শুল্ক দিয়েছে, একই পোশাক সেখানে বিনা শুল্কে রপ্তানি করছে আফ্রিকা ও সাব-সাহারান দেশগুলো। শত বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে মাত্র আধা শতাংশ শুল্ক দিতে হয় চীন ও কানাডার মতো দেশগুলোকে।
বাতিল হলে ক্ষতি নেই : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে, তা বহাল থাকলেও আমাদের যেমন লাভ নেই, আবার বাতিল হলেও ক্ষতি নেই। কারণ এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানি উল্লেখ করার মতো নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ইউরোপ, কানাডাসহ অন্য দেশগুলোর ওপরও। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যা করে, অন্যরা তাই-ই অনুসরণ করে। এ হিসাবে ইউরোপ ও কানাডার মতো বড় বাজারগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকবে।' তিনি বলেন, যারা জিএসপি বাতিলের জন্য চাপ দিচ্ছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় আমদানিকারকসহ অন্য দেশের ক্রেতাদেরও চাপ দেবে, যাতে তারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি না করে। তাই স্বল্প মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি বাতিলের তেমন প্রভাব না দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ।
যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করলেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ওপর প্রভাব পড়ার কোনো আশঙ্কা দেখছেন না বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. অনন্য রায়হান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১ শতাংশেরও কম আয় আসে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধায় রপ্তানি করা পণ্য থেকে। ফলে দেশটি জিএসপি সুবিধা বাতিল করলেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে কোনোভাবেই প্রভাব পড়বে না। তবে এর রাজনৈতিক প্রভাব বেশি। কোনো দেশ কোনো সুবিধা বাতিল করলে ধরে নেওয়া হয় সুবিধা বাতিল হওয়া দেশটির কোনো সমস্যা আছে। ফলে পরে অন্য সুবিধা পেতে অসুবিধা হয়। এটি বাতিল হলে বাংলাদেশ পোশাকের জন্য যে জিএসপি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে, তা পাওয়া কঠিন হবে। এ ছাড়া দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশ অন্য যেসব দেশে সুবিধা পায় তার ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে উল্লেখ করে অনন্য রায়হান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সব স্বল্পোন্নত দেশের জন্য। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত আলাদাভাবে চিন্তা করবে না তারা। পাশাপাশি তাদের এ উদ্যোগ সব দেশের সম্মিলিত উদ্যোগ।
স্বল্পোন্নত দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারে শুল্ক দিতে হয় বাংলাদেশকে। দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ওই দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক দেয়। ওই দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের দাবি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে কয়েকটি বিল উঠলেও কোনোটিই পাস হয়নি।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচ্যাম) সভাপতি আফতাব উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, চীন ওই দেশে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে ০.৫ শতাংশের মতো শুল্ক দেয়। কানাডা সেখানকার সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকারক। তারা শুল্ক দেয় ০.৫ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ ১৬ শতাংশ হারে বছরে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মতো শুল্ক দেয়। বাংলাদেশ শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিতে পারত। তবে এ জন্য কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সরকারের তেমন আগ্রহ নেই বলে মনে হয়।
শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয় এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারও হতে পারত বলে উল্লেখ করে আফতাব উল ইসলাম বলেন, শ্রমের অবস্থা বড় সমস্যা নয়। সরকারকে কূটনৈতিকভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র চায় সরকার টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) সই করুক। এটা হলে তাদের সঙ্গে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে আলোচনার একটি প্লাটফর্ম তৈরি হতো। বাংলাদেশ সরকারেরও টিকফা সই করা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য কংগ্রেসে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী লবিস্ট ব্যক্তি ও গ্রুপগুলোকেও নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। তা সত্ত্বেও আগের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি যুক্তরাষ্ট্র। সংগঠন দুটি আগামী সপ্তাহে আবারও লবিস্ট নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজিএমইএর এক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ছয় বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা শুল্ক আদায় করেছে। ডলারের দাম গড়ে ৭০ টাকা ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে আদায় করা শুল্কের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের বেশি। পোশাক খাত থেকে শুল্ক নেওয়া হয় গড়ে ১৬ শতাংশ হারে। কম্বোডিয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছ থেকেই বেশি শুল্ক আদায় করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বছরে পাঁচ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন=১০০ কোটি) ডলারের মতো আয় করে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত ২০১১-১২ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৫১০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৪৫৩ কোটি ডলার ছিল তৈরি পোশাক খাতে। তবে এই তৈরি পোশাকের জন্য কোনো জিএসপি সুবিধা দেয় না যুক্তরাষ্ট্র, যা দেশটিতে মোট রপ্তানির ৯২-৯৩ শতাংশ। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫১০ কোটি ডলার রপ্তানি মূল্যের প্রায় ৫ শতাংশ আসে হিমায়িত খাদ্য ও চিংড়ি রপ্তানি থেকে। এটিও জিএসপির আওতাভুক্ত নয়। বাকি ২-৩ শতাংশ রপ্তানি মূল্য আসে অন্য পণ্য থেকে। এর মধ্যে জিএসপি সুবিধাভুক্ত পণ্য রপ্তানি করে মাত্র ১ শতাংশেরও কম বা ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার আসে।
যে সামান্য কয়েকটি পণ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে এর মধ্যে গলফ খেলার উপকরণসহ কিছু স্পোর্টস আইটেম, স্টিলের চামচ ও সিগারেটের মতো পণ্য রয়েছে, যা বাংলাদেশ রপ্তানি করতে পারে না। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে কিছু স্লিপিং ব্যাগ রপ্তানি করে। এ পণ্যটি জিএসপিভুক্ত থাকলেও দুই বছর আগে তাও বাতিল করা হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করে তার ১ শতাংশেরও কম পণ্য জিএসপি সুবিধা ভোগ করছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকায় যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ ছয় বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩০০ কোটি ডলার শুল্ক দিয়েছে, একই পোশাক সেখানে বিনা শুল্কে রপ্তানি করছে আফ্রিকা ও সাব-সাহারান দেশগুলো। শত বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে মাত্র আধা শতাংশ শুল্ক দিতে হয় চীন ও কানাডার মতো দেশগুলোকে।
বাতিল হলে ক্ষতি নেই : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে, তা বহাল থাকলেও আমাদের যেমন লাভ নেই, আবার বাতিল হলেও ক্ষতি নেই। কারণ এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানি উল্লেখ করার মতো নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ইউরোপ, কানাডাসহ অন্য দেশগুলোর ওপরও। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যা করে, অন্যরা তাই-ই অনুসরণ করে। এ হিসাবে ইউরোপ ও কানাডার মতো বড় বাজারগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকবে।' তিনি বলেন, যারা জিএসপি বাতিলের জন্য চাপ দিচ্ছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় আমদানিকারকসহ অন্য দেশের ক্রেতাদেরও চাপ দেবে, যাতে তারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি না করে। তাই স্বল্প মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি বাতিলের তেমন প্রভাব না দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ।
যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করলেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ওপর প্রভাব পড়ার কোনো আশঙ্কা দেখছেন না বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. অনন্য রায়হান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১ শতাংশেরও কম আয় আসে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধায় রপ্তানি করা পণ্য থেকে। ফলে দেশটি জিএসপি সুবিধা বাতিল করলেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে কোনোভাবেই প্রভাব পড়বে না। তবে এর রাজনৈতিক প্রভাব বেশি। কোনো দেশ কোনো সুবিধা বাতিল করলে ধরে নেওয়া হয় সুবিধা বাতিল হওয়া দেশটির কোনো সমস্যা আছে। ফলে পরে অন্য সুবিধা পেতে অসুবিধা হয়। এটি বাতিল হলে বাংলাদেশ পোশাকের জন্য যে জিএসপি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে, তা পাওয়া কঠিন হবে। এ ছাড়া দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশ অন্য যেসব দেশে সুবিধা পায় তার ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে উল্লেখ করে অনন্য রায়হান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সব স্বল্পোন্নত দেশের জন্য। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত আলাদাভাবে চিন্তা করবে না তারা। পাশাপাশি তাদের এ উদ্যোগ সব দেশের সম্মিলিত উদ্যোগ।
স্বল্পোন্নত দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারে শুল্ক দিতে হয় বাংলাদেশকে। দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ওই দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক দেয়। ওই দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের দাবি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে কয়েকটি বিল উঠলেও কোনোটিই পাস হয়নি।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচ্যাম) সভাপতি আফতাব উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, চীন ওই দেশে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে ০.৫ শতাংশের মতো শুল্ক দেয়। কানাডা সেখানকার সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকারক। তারা শুল্ক দেয় ০.৫ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ ১৬ শতাংশ হারে বছরে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মতো শুল্ক দেয়। বাংলাদেশ শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিতে পারত। তবে এ জন্য কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সরকারের তেমন আগ্রহ নেই বলে মনে হয়।
শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয় এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারও হতে পারত বলে উল্লেখ করে আফতাব উল ইসলাম বলেন, শ্রমের অবস্থা বড় সমস্যা নয়। সরকারকে কূটনৈতিকভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র চায় সরকার টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) সই করুক। এটা হলে তাদের সঙ্গে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে আলোচনার একটি প্লাটফর্ম তৈরি হতো। বাংলাদেশ সরকারেরও টিকফা সই করা উচিত।
No comments