একটুকু ছোঁয়া লাগে - শিপন কোড়াইয়া
অনেকদিন হয় ধ্রম্নব নিশুর পিছু নিয়েছে। কিন্তু কোন দিন মুখ খুলে কিছু বলতে পারে না। দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। ধ্রম্নব বিবিএ এবং নিশু সমাজকর্ম বিভাগে পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে অমর একুশে বইমেলা শুরম্ন হয়ে গেল।
নিশু বইমেলাতে বই কিনতে যায়। ধ্রম্নব খোঁজ নিয়ে আগেই বইমেলায় উপস্থিত। ধ্রম্নব পেছন থেকে এসে এক্সকিউস মি_ বলে নিশুকে বলে একটু শুনবেন? নিশু দাঁড়িয়ে যায়। এর ফাঁকে ধ্রম্নব একটি বই নিশুর হাতে তুলে দিয়ে বলে আপনার জন্য ...। নিশু চুপ করে থেকে একটু পরে বইটা হাতে নেয়। এভাবে তাদের যাত্রা শুরম্ন। ক্যাম্পাসে প্রতিদিন দেখা হয় কথা হয়। দুজনের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ফোনে আলাপ করে। এভাবে দিন গড়িয়ে তাদের মধ্যে প্রেম শুরম্ন হয়ে যায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কথা ভাবতেই চত্বরজুড়ে বসে থাকা যুগল তরম্নণ-তরম্নণীর অসংখ্য মুখের ছবি ভেসে ওঠে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে যা দেখা গেল তা এমন_ পড়াশোনার ফাঁকে বা কাসের আগে পরে যেসব তরম্নণ-তরম্নণী ক্যাম্পাসের লনে, আইল্যান্ডে, কিংবা সুবিধামতো স্থানে বসে স্বপ্ন দেখে, ভবিষ্যত ও বর্তমানের কথা বলে, মান-অভিমান করে, নিবিড়ভাবে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করতে ভালবাসে ও প্রেমের উষ্ণতা পেতে চায়।
বন্ধুত্বের শুরম্ন : বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন এলাকার ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়। এক সঙ্গে কাস করতে করতেই এদের চেনা-জানা। আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠান, মেলা, প্রদর্শনী বা ক্যান্টিনে খেতে গিয়েও এদের পরিচয় ঘটে। প্রথম দিকে দু'জনের মধ্যে বেশ জড়তা থাকে। একে একে জড়তা কাটিয়ে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সেই বন্ধুত্বকে ধরে রাখতে দু'জনের চেষ্টার অনত্ম থাকে না। পরস্পরের প্রতি থাকে আবেগের ছড়াছড়ি। মোবাইলে কল, মিসকল, মেসেজ ইত্যাদি নিয়ে ব্যসত্ম হয়ে পড়ে। আর এভাবেই বন্ধুত্বের ধাপ পার করে যাত্রা শুরম্ন হয় প্রেমের। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেম বা ভালবাসার সম্পর্ক।
প্রেমের টানে : এরা সব সময় একে অন্যকে কাছে পেতে চায়। এক সেকেন্ডও তারা মিস করতে চায় না। প্রেমের টানে এরা সানি্নধ্যের ছায়ায় থাকতে চায়। পূর্ব পরিকল্পনানুসারে এদের দেখা-সাৰাত হয়। বিকেলে ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসের লনে বা গাছের নিচে বসে এরা সময় পার করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগলরা ক্যাম্পাস ছাড়াও যায় ভিক্টোরিয়া পার্ক, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেলস্না কিংবা বুড়িগঙ্গা নদীর পারে। ঢাকা ভার্সিটির যুগলরা ক্যাম্পাসের বাইরে হলে ধানম-ি লেক, চিড়িয়াখানা, রমনা পার্ক, ক্যাম্পাসে হলে মল চত্বর, অপরাজেয় বাংলা, টিএসসি, চারম্নকলা ইত্যাদি স্থানে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগলরা যায় ক্যাম্পাসেই কোন ঘন তরম্নলতার নিচে বড় গাছের ছায়ায়, পুকুর বা ঝিলের পাড়ে নতুন স্মৃতিসৌধে। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব যেমন_ ১ বৈশাখ, ভালবাসা দিবস, ২১ ফেব্রম্নয়ারি, ২৬ মার্চ, ও বিজয় দিবসে এক সঙ্গে মিলিত হয়। ঈদ, পূজা-পার্বন ও বড়দিন-স্টার সানডেতে পরস্পরকে দেয় অতি চমৎকার উপহার সামগ্রী।
প্রিয়-অপ্রিয় : ক্যাম্পাসের যুগলরা নিরিবিলিতে একসঙ্গে সুখের মুহূর্তে থাকতে ভালবাসে। অশানত্মি, কষ্ট, নৈরাজ্য তাদের অপ্রিয়। তারা একে অন্যের কাছে একেবারেই উন্মুক্ত। বেশিরভাগ প্রেমিক বলেছে প্রেমিকাদের সুন্দর মন, হাসি, ছেলে মানুষী, চোখ খুবই প্রিয়। অপ্রিয় হচ্ছে রাগ, অন্য বন্ধুদের বেশি সময় দেয়া ও সন্দেহ প্রবণ মন-মানসিকতা। প্রেমিকারা বলেছে_ প্রেমিকের সুন্দর মন, স্মার্টনেস, ব্যক্তিত্ব শেয়ার এবং বুঝতে পারার ৰমতা খুবই প্রিয়। অপ্রিয় হচ্ছে কৃপণতা, ফোন কম করা, সরাসরি কথা বলা বা ধমক দেয়া, ভুলো মন, জেদ করা ও দেরিতে আসা।
ভবিষ্যত ভাবনা : যখনই প্রেম-ভালবাসার কথা আসে তখনই বিয়ে, ঘর-সংসার এবং ভবিষ্যত নিয়ে তাদের কৌতূহল জাগাটা স্বাভাবিক। ক্যাম্পাসের প্রেম কি শুধুই প্রেম? নাকি এর পরিণত শেষ হয় পরিণয়ে? ক্যাম্পাসের প্রেম কি শুধুই আবেগের ফসল? আবেগে যার শুরম্ন বাসত্মবের কঠিন আঘাতে সেই আবেগ উবে গেলে প্রেম আর থাকে না। তখন সেই প্রেম হাহাকারের সমুদ্রে পরিণত হয়। পরিণত হয় শুষ্ক মরম্নভূমিতে। ক্যাম্পাসে দুই ধরনের যুগল দেখা যায়। একটা স্থায়ী অন্যটা ৰণস্থায়ী। ৰণস্থায়ীদেরই এখানে সেখানে বসে বাদাম, চানাচুর খেতে দেখা যায়। এরা জীবন নিয়ে ভাবে না। মজা করার জন্য সময় পার করার জন্য প্রেম খেলা খেলে। স্থায়ী যুগলরা চায় ঘর-সংসার বাঁধতে। এতে যতই বাধা আসুক তা তারা মানতে নারাজ। যুদ্ধের শেষে তারা দেখতে চায়। পিতা-মাতার চাপানো সিদ্ধানত্ম তারা না মেনে নিজেদের সিদ্ধানত্মে অটল থাকে। তাই তারা জীবনে ঝুঁকি নেয়। তবে হঁ্যা ৬০ ভাগ যুগলের বিয়ের চিনত্মা-ভাবনা থাকলেও পারিবারিক ও পারিপাশ্বর্িক কারণে কম সংখ্যক যুগলই শেষ পর্যনত্ম টিকে থাকতে পারে। সত্যি কথা কি, যতই সাহস ও মনোবল নিয়ে ক্যাম্পাসের যুগলরা প্রেমের সেতু নির্মাণ করম্নক না কেন, কঠিন বাসত্মবতার ভয় সব সময় তাদের তাড়া করেই। তারপরও প্রেম-ভালবাসা নিয়ে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
No comments