সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন-নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সিরীয় শিশুরা

সিরিয়ার শিশুরা 'আতঙ্কজনক মাত্রায়' নির্যাতন, কারাবন্দিত্ব ও অপহরণের শিকার হচ্ছে। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। শিশু নির্যাতন-সংক্রান্ত তথ্য আরো স্পষ্টভাবে সংগ্রহ করার এবং সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।


গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশন শুরুর দিনে সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
সিরিয়ার শরণার্থী শিশুদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন। এতে দেরা শহরে শিশু নির্যাতনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। সরকারি বাহিনীর হাতে সেখানে অগণিত গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। যে কয়টি শিশুর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিবারের কোনো না কোনো সদস্যকে হারিয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন দাবি করে, 'সিরিয়ার শিশুদের ওপর পরিকল্পিতভাবে, বারবার ও আতঙ্কজনক মাত্রায় নির্যাতন চালানো হচ্ছে।'
সেভ দ্য চিলড্রেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ১৫ বছরের এক শিশু জানায়, সে যে স্কুলে যেত_সেটিকে একটি কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ওই কারাগারেই সে বন্দি ছিল। বন্দি অবস্থায় তার গায়ে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরা হতো। আরেকটি শিশু জানায়, বন্দি থাকার সময় তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। পচে যাওয়া মৃতদেহ রাখা হয়েছে এমন একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় তাকে। ওয়ায়েল নামের ১৬ বছর বয়সী এক শিশু জানায়, সে দেখেছে ছয় বছর বয়সী এক শিশুকে নির্যাতন করে ও না খাইয়ে মারার ঘটনা। সে বলল 'আমি তাকে মারা যেতে দেখেছি। আটকের পর সে মাত্র তিন দিন বেঁচে ছিল। সে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকত। তারা (আটককারীরা) তার মৃতদেহের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করেছে।'
সেভ দ্য চিলড্রেনের মুখপাত্র ক্যাট কার্টার বলেন, 'শিশুদের কাছ থেকে আমরা যা জেনেছি, তা অত্যন্ত আতঙ্কজনক। ১০ বছরের শিশুদের নির্যাতনের খবর শুনেছি। মৃতদেহ সরানোর কাজে আট বছর বয়সী শিশুদের নিযুক্ত করার তথ্য জেনেছি।' সংস্থাটি সিরিয়ার সংঘাতপূর্ণ এলাকায় জাতিসংঘের কর্মীদের উপস্থিতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। নির্যাতনকারীদের যাতে বিচারের আওতায় আনা যায়, সে জন্য আরো স্পষ্টভাবে নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করারও আহ্বান জানিয়েছে তারা।
জাতিংঘের হিসাবে, গত ১৮ মাসের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সিরিয়ায় ২০ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অবশ্য এই সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি বলে উল্লেখ করেছে। সংঘাতের কারণে প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার লোক সিরিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। দেশের ভেতরে আরো অন্তত ১২ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সিরিয়ার প্রায় ২৫ লাখ লোকের জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলেও জানায় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত লাখদার ব্রাহিমি গত সোমবার জানান, সিরিয়ার পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং দিন দিন তা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.