সাক্ষাৎকার-পদ্মা সেতুর প্রতিটি পর্যায়ে চাই স্বচ্ছতা -সাক্ষাৎকার গ্রহণ : অজয় দাশগুপ্ত by ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
সমকাল : পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ বিঘি্নত হয়েছে এবং কেন এমনটি ঘটেছে সেটা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিমত প্রকাশ্যেই ব্যক্ত হয়েছে। এ ধরনের বড় প্রকল্পে ঋণ বাতিলের ঘটনা আপনার জানা আছে কি? মির্জ্জা আজিজ : ভারতে একটি বাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের অঙ্গীকার করেছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা থাকেনি। তবে এর কারণ দুর্নীতি কিংবা এ ধরনের অভিযোগ নয়, পরিবেশবাদীদের প্রবল আপত্তি। অন্য কোনো দেশে এ ধরনের ঋণ প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাওয়া এবং পরে ফিরে আসার ঘটনা ঘটেছে কি-না, সেটা জানা নেই। বিশ্বব্যাংকের বিবৃতি থেকেই আমরা জেনেছি যে স্বল্পসংখ্যক নজিরই রয়েছে। তবে এটা বলতে পারি, ঋণচুক্তি বাতিল এবং পরে পুনর্বহালের যে সীমিত সংখ্যক উদাহরণ রয়েছে তার কোনোটিই এত বড় আকারের নয়। বিশেষ করে বলতে হয় আইডিএ ক্রেডিটের কথা। এর সুদ নামমাত্র এবং পরিশোধের মেয়াদ অনেক বেশি। তাদের ঋণে পদ্মা সেতু সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
সমকাল : সব বাধা ও অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে কি?
মির্জ্জা আজিজ : এটা জোর গলায় বলার সময় সম্ভবত আসেনি। কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে ভবিষ্যতে মতপার্থক্য হতে পারে। যেমন, প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া। এ প্রকল্পে ঋণ জোগাচ্ছে বিশ্বব্যাংক, জাপানের জাইকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নও রয়েছে। তাদের তদারকির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নদীশাসন, সেতু নির্মাণ, সংযোগ সড়ক_ এসব কাজ হবে ভিন্ন ভিন্ন চুক্তির ভিত্তিতে। যমুনায় যে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে সেখানেও একই প্রক্রিয়া ছিল। সংবাদপত্রে দেখেছি, সংযোগ সড়ক নির্মাণে মালয়েশিয়ার যে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে এসেছিল, তারা নির্মাণ কাজে বিলম্ব দেখে দ্বিধায় পড়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী সেতু নির্মাণের চুক্তি সই, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং প্রকৃত কাজের বিষয়ে মোটামুটি একটি সময়সূচি দিয়েছেন। এর পদ্ধতি কী হবে, এখন পর্যন্ত জানা নেই। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং অন্য দাতাদের প্রতিনিধিরা কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকায় আসবেন। তাদের সঙ্গে আলোচনায় ঐকমত্য থাকলে এক ধরনের অগ্রগতি হবে। আর মতপার্থক্য দেখা দিলে সেটা নিরসনে সময় লাগতে পারে।
সমকাল : যদি আলোচনা সঠিক পথেই অগ্রসর হয়...
মির্জ্জা আজিজ : এ ধরনের বড় নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর দেখা যায়, যারা কাজ পায়নি তাদের তরফে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয় এবং সেটা ঋণদাতাদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমেও প্রচার পায় বিষয়টি। এমনকি কাজে যদি কোনো অনিয়ম না-ও হয় তাহলেও এমন সব অভিযোগ ওঠে, যা আপাতভাবে কারও কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। এভাবে সময়ক্ষেপণ হতে পারে। অর্থমন্ত্রী দ্রুত কাজ শুরুর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা আসবে না, সেটা বলা যায় না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক প্রকিউরমেন্ট বিষয়ে টার্মস অব রেফারেন্স এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ সংক্রান্ত যে কমিটি গঠিত হবে তাতে কোন পক্ষে কতজন প্রতিনিধি থাকবেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধি থাকবে কি-না এবং থাকলে তাদের বক্তব্য কতটা বিবেচনায় নেওয়া হবে, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পৃক্ততা কীভাবে হবে। তবে আমি মনে করি, বিশ্বব্যাংক এবং অন্য দাতারা যেহেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে নতুন করে সম্মতি দিয়েছে এবং কাজ দ্রুত শুরুর বিষয়ে সব পক্ষই একমত, সে কারণে যে কোনো সমস্যা সামনে আসুক না কেন আলোচনার মাধ্যমে তার নিষ্পত্তি সম্ভব।
সমকাল : সামনের কাজ নির্বিঘ্ন করার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন?
মির্জ্জা আজিজ : আমাদের অবস্থা কিন্তু চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখে ভয় পাওয়ার মতো। দুর্নীতি যেন কোনোভাবেই না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা চাই। অনেক লোক এ কাজে যুক্ত হবে। দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে। কন্ট্রাক্ট-সাবকন্ট্রাক্ট হবে। সবার ওপর নজরদারি সহজ নয়, কিন্তু এর বিকল্পও নেই। এখন একটাই করণীয়_ প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। আর যে কোনো সমস্যা সামনে এলে কালক্ষেপণ না করে তার সমাধানের জন্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে। বিশ্বব্যাংক যে ফিরে এসেছে তার পেছনে তাদের শর্ত পূরণ ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু পাশাপাশি সরকার আলোচনাও চালিয়ে গেছে। দাতারা নজরদারি চাইবেই। টেন্ডার চূড়ান্ত করার আগে প্রি-কোয়ালিফাই করা হবে। এখানে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। অনেকে আপত্তি উত্থাপন করবে। কাজ যারা পাবে না বলে মনে করছে তারা প্রচার চালাবে। এতে সত্যতা থাকতে পারে, না-ও পারে। কিন্তু সাবধানতার সঙ্গে এমনভাবে এগোতে হবে, যাতে এ ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টির সম্ভাবনা নূ্যনতম পর্যায়ে রাখা যায়।
সমকাল : সরকার পরিবর্তন হলে কোনো সমস্যা হবে কি-না?
মির্জ্জা আজিজ : আমি মনে করি এমনটি হবে না। যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠন এ প্রকল্পে জড়িত হয়েছে তারা বিভিন্ন দেশে কাজ করেছে এবং জানে যে সরকার পরিবর্তন হতে পারে। আর সরকার পরিবর্তন যদি জনগণের ভোটে হয় তাহলে আপত্তির কারণ থাকার কথা নয়। জনগণ সরকার বদলাতেই পারে। আর এ ধরনের বড় প্রকল্পের সুফলভোগীও জনগণ। সরকার পরিবর্তন হলেও চুক্তির শর্তগুলো ঠিক থাকবে বলেই আমি মনে করি।
সমকাল : সেতু নির্মাণে বিকল্প অর্থায়নের প্রসঙ্গ এসেছিল। শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবই গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই।
মির্জ্জা আজিজ : অনেক মূল্যবান সময় হারিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। বিকল্প অর্থায়নের চিন্তা স্বাভাবিক। তবে কস্ট-বেনিফিট বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবই বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর। এখন আমাদের কাজ হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিটি ধাপ সমাপ্ত করা। কোনো পর্যায়ে দুর্নীতি তো নয়ই, সন্দেহ করার অবকাশও যেন না থাকে। মতপার্থক্য দেখা দিলে তা দ্রুত নিরসনের পদক্ষেপ নিতে হবে। যে সময় হারিয়েছি তা ফেরত পাব না। কিন্তু পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই হবে।
সমকাল : সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছিল। বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করায় তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে?
মির্জ্জা আজিজ : বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোয় মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছিল। তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, তবে কোনো চুক্তি হয়নি। কেউ কেউ মনে করেন তাদের যুক্ত করার উদ্যোগ পরিণতি না পাওয়ায় সে দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আমি মনে করি, তাদের কাছে এ বাস্তবতা তুলে ধরা দরকার যে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণই বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের জন্য সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক। স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে ব্যয়বহুল ঋণ গ্রহণ করা কঠিন।
সমকাল : সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে কী প্রভাব পড়বে?
মির্জ্জা আজিজ : সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সব দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণ এবং সেজন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ হলে জলাভূমি ও কৃষি জমির একটি অংশে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে, এটা স্বাভাবিক। তবে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। সেতু হলে যাতায়াত সহজ হবে, অর্থনীতির উন্নতি ঘটবে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ উন্নত হবে এবং তার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। যারা সেতুতে ঋণ দিচ্ছে তারাও এসব বিবেচনায় নিয়েছে। এখন একটিই প্রত্যাশা, নতুন কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি সযত্নে পরিহার করতে হবে এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করতে হবে।
সমকাল : আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জ্জা আজিজ : সমকাল পাঠকদের ধন্যবাদ।
সমকাল : সব বাধা ও অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে কি?
মির্জ্জা আজিজ : এটা জোর গলায় বলার সময় সম্ভবত আসেনি। কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে ভবিষ্যতে মতপার্থক্য হতে পারে। যেমন, প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া। এ প্রকল্পে ঋণ জোগাচ্ছে বিশ্বব্যাংক, জাপানের জাইকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নও রয়েছে। তাদের তদারকির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নদীশাসন, সেতু নির্মাণ, সংযোগ সড়ক_ এসব কাজ হবে ভিন্ন ভিন্ন চুক্তির ভিত্তিতে। যমুনায় যে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে সেখানেও একই প্রক্রিয়া ছিল। সংবাদপত্রে দেখেছি, সংযোগ সড়ক নির্মাণে মালয়েশিয়ার যে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে এসেছিল, তারা নির্মাণ কাজে বিলম্ব দেখে দ্বিধায় পড়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী সেতু নির্মাণের চুক্তি সই, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং প্রকৃত কাজের বিষয়ে মোটামুটি একটি সময়সূচি দিয়েছেন। এর পদ্ধতি কী হবে, এখন পর্যন্ত জানা নেই। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং অন্য দাতাদের প্রতিনিধিরা কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকায় আসবেন। তাদের সঙ্গে আলোচনায় ঐকমত্য থাকলে এক ধরনের অগ্রগতি হবে। আর মতপার্থক্য দেখা দিলে সেটা নিরসনে সময় লাগতে পারে।
সমকাল : যদি আলোচনা সঠিক পথেই অগ্রসর হয়...
মির্জ্জা আজিজ : এ ধরনের বড় নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর দেখা যায়, যারা কাজ পায়নি তাদের তরফে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয় এবং সেটা ঋণদাতাদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমেও প্রচার পায় বিষয়টি। এমনকি কাজে যদি কোনো অনিয়ম না-ও হয় তাহলেও এমন সব অভিযোগ ওঠে, যা আপাতভাবে কারও কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। এভাবে সময়ক্ষেপণ হতে পারে। অর্থমন্ত্রী দ্রুত কাজ শুরুর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা আসবে না, সেটা বলা যায় না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক প্রকিউরমেন্ট বিষয়ে টার্মস অব রেফারেন্স এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ সংক্রান্ত যে কমিটি গঠিত হবে তাতে কোন পক্ষে কতজন প্রতিনিধি থাকবেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধি থাকবে কি-না এবং থাকলে তাদের বক্তব্য কতটা বিবেচনায় নেওয়া হবে, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পৃক্ততা কীভাবে হবে। তবে আমি মনে করি, বিশ্বব্যাংক এবং অন্য দাতারা যেহেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে নতুন করে সম্মতি দিয়েছে এবং কাজ দ্রুত শুরুর বিষয়ে সব পক্ষই একমত, সে কারণে যে কোনো সমস্যা সামনে আসুক না কেন আলোচনার মাধ্যমে তার নিষ্পত্তি সম্ভব।
সমকাল : সামনের কাজ নির্বিঘ্ন করার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন?
মির্জ্জা আজিজ : আমাদের অবস্থা কিন্তু চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখে ভয় পাওয়ার মতো। দুর্নীতি যেন কোনোভাবেই না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা চাই। অনেক লোক এ কাজে যুক্ত হবে। দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে। কন্ট্রাক্ট-সাবকন্ট্রাক্ট হবে। সবার ওপর নজরদারি সহজ নয়, কিন্তু এর বিকল্পও নেই। এখন একটাই করণীয়_ প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। আর যে কোনো সমস্যা সামনে এলে কালক্ষেপণ না করে তার সমাধানের জন্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে। বিশ্বব্যাংক যে ফিরে এসেছে তার পেছনে তাদের শর্ত পূরণ ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু পাশাপাশি সরকার আলোচনাও চালিয়ে গেছে। দাতারা নজরদারি চাইবেই। টেন্ডার চূড়ান্ত করার আগে প্রি-কোয়ালিফাই করা হবে। এখানে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। অনেকে আপত্তি উত্থাপন করবে। কাজ যারা পাবে না বলে মনে করছে তারা প্রচার চালাবে। এতে সত্যতা থাকতে পারে, না-ও পারে। কিন্তু সাবধানতার সঙ্গে এমনভাবে এগোতে হবে, যাতে এ ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টির সম্ভাবনা নূ্যনতম পর্যায়ে রাখা যায়।
সমকাল : সরকার পরিবর্তন হলে কোনো সমস্যা হবে কি-না?
মির্জ্জা আজিজ : আমি মনে করি এমনটি হবে না। যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠন এ প্রকল্পে জড়িত হয়েছে তারা বিভিন্ন দেশে কাজ করেছে এবং জানে যে সরকার পরিবর্তন হতে পারে। আর সরকার পরিবর্তন যদি জনগণের ভোটে হয় তাহলে আপত্তির কারণ থাকার কথা নয়। জনগণ সরকার বদলাতেই পারে। আর এ ধরনের বড় প্রকল্পের সুফলভোগীও জনগণ। সরকার পরিবর্তন হলেও চুক্তির শর্তগুলো ঠিক থাকবে বলেই আমি মনে করি।
সমকাল : সেতু নির্মাণে বিকল্প অর্থায়নের প্রসঙ্গ এসেছিল। শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবই গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই।
মির্জ্জা আজিজ : অনেক মূল্যবান সময় হারিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। বিকল্প অর্থায়নের চিন্তা স্বাভাবিক। তবে কস্ট-বেনিফিট বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবই বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর। এখন আমাদের কাজ হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিটি ধাপ সমাপ্ত করা। কোনো পর্যায়ে দুর্নীতি তো নয়ই, সন্দেহ করার অবকাশও যেন না থাকে। মতপার্থক্য দেখা দিলে তা দ্রুত নিরসনের পদক্ষেপ নিতে হবে। যে সময় হারিয়েছি তা ফেরত পাব না। কিন্তু পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই হবে।
সমকাল : সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছিল। বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করায় তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে?
মির্জ্জা আজিজ : বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোয় মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছিল। তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, তবে কোনো চুক্তি হয়নি। কেউ কেউ মনে করেন তাদের যুক্ত করার উদ্যোগ পরিণতি না পাওয়ায় সে দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আমি মনে করি, তাদের কাছে এ বাস্তবতা তুলে ধরা দরকার যে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণই বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের জন্য সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক। স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে ব্যয়বহুল ঋণ গ্রহণ করা কঠিন।
সমকাল : সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে কী প্রভাব পড়বে?
মির্জ্জা আজিজ : সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সব দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণ এবং সেজন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ হলে জলাভূমি ও কৃষি জমির একটি অংশে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে, এটা স্বাভাবিক। তবে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। সেতু হলে যাতায়াত সহজ হবে, অর্থনীতির উন্নতি ঘটবে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ উন্নত হবে এবং তার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। যারা সেতুতে ঋণ দিচ্ছে তারাও এসব বিবেচনায় নিয়েছে। এখন একটিই প্রত্যাশা, নতুন কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি সযত্নে পরিহার করতে হবে এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করতে হবে।
সমকাল : আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জ্জা আজিজ : সমকাল পাঠকদের ধন্যবাদ।
No comments