প্রয়োজন সমঝোতা

বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিনাজপুরের জনসভায় প্রদত্ত ভাষণের ওপর পত্রিকাগুলোর সংবাদ শিরোনাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও তার বক্তব্যের সারমর্ম হলো, কোন নির্বাচিত ব্যক্তির অধীনে নয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।


বিরোধীদলীয় নেত্রীর এই বক্তব্য নতুন নয়, অনেকদিন থেকেই তিনি এবং তাঁর দলের নেতৃবৃন্দ অনুরূপ বক্তব্য প্রদান করে আসছেন। উল্লেখিত জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে এই দাবির পুনরুল্লেখের বিষয়টি মূল্যায়নের দাবি রাখে। এতদিন সর্বোচ্চ আদালতের রায় চূড়ান্তভাবে ঘোষিত না হওয়ায় আলোচনা ও দাবির ধরন যেমন ছিল, এখন সেই আলোচনা আর দাবি আপিলেট ডিভিশনের চূড়ান্ত রায়ের আলোকেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ সর্বোচ্চ আদালত কোন বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবৃন্দের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে ধারণ করে না। তাই এই আদালতের রায় কোন ব্যক্তির রায় নয়, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের রায়, একটি দেশের সুমহান মর্যাদার প্রতীক আপিলেট ডিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক রায়। রায়ে সামান্য বিভক্তি থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে রায়টি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক রায়।
সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়কের পুরনো দাবিতে মাঠ-ময়দান উত্তপ্ত করার মধ্য দিয়ে জনগণকে উত্তেজিত করা যেতে পারে, অস্থিতিশীলতা উস্কে দেয়াও সম্ভব। কিন্তু আসল কাজ কিছুই হবে না। সর্বোচ্চ আদালত চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। এখন এই রায়ের সমালোচনায় উত্তপ্ত রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করলে প্রকারান্তরে তা যে আদালতকেই অবমাননা করা হয়। সে বিষয়ে সতর্ক না থাকলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়তে পারে। সুপ্রীমকোর্টের চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হবার পর বিষয়টি যেমন পূর্ণাঙ্গ রূপ পরিগ্রহ করেছে, তেমনি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং রাজনীতিকদের আচরণও পরিবর্তিত হওয়া জরুরী। বর্তমান বাস্তবতায় রাজপথে বা রাজনীতির মাঠে বক্তৃতা করে, বিতর্কের ঝড় তুলে রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়া কারও জন্যই মঙ্গলকর হবে না। যে কোন সমস্যা বা মতানৈক্য নিরসনের জন্য সংসদই উপযুক্ত জায়গা। সেখানে বসে সরকারী ও বিরোধী দলকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করতে হবে। সরকারব্যবস্থার বর্তমান ধরন পাল্টাতে গেলেও ভরসা সেই জাতীয় সংসদ। এজন্য এককভাবে সরকারী দলের ওপর দায় চাপিয়ে সংসদের বাইরে দাবি উত্থাপন করার সঠিক সময় এখন নয়। বিরোধী দল সংসদে এসে আলোচনায় যোগ না দিলে কিংবা সরকারের সঙ্গে যৌক্তিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে আইন অনুযায়ী বর্তমান ব্যবস্থায়ই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী দল সংসদে এসে কার্যকর আলোচনার সূত্রপাত না করলে সরকারী দল এককভাবে বিরোধী দলের পছন্দমতো সবকিছু করে দেবে এটা ভাবা অবান্তর। পুরনো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় বাতিল হয়েছে। এখন সেই ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা-অভিপ্রায় বাদ দিয়ে বর্তমান রায়ের আলোকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা জরুরী। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সমঝোতায় উপনীত হবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.