শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ-ব্যাটিংয়ে আশা ছিল বোলিংয়ে হলো না by নোমান মোহাম্মদ
ম্যাচ শুরুর আগে বাংলাদেশের লক্ষ্যটাকে অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। ১৩ বছরের অজেয় পাকিস্তানকে হারাতে হবে, নেট রান রেটের সঙ্গে যুদ্ধে জিততে হবে, ইনজুরি-অসুস্থতা আর সাবেক কোচের চোখ রাঙানিও করতে হবে উপেক্ষা। অথচ কাল পাল্লেকেলেতে প্রথম ইনিংস শেষে এর সবই মনে হচ্ছিল সম্ভব।
খুবই সম্ভব। পাকিস্তানের আতঙ্ক ছড়ানো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ১৭৫ করা গেছে, এবার কি ওদের ১৩৯ রানের মধ্যে আটকে রাখা যাবে না?
'আমরা ভেবেছিলাম, সেটি করা যাবে। শুরুতে যদি দু-তিনটি উইকেট নিতে পারতাম, তাহলে সেটি সম্ভব ছিল'- ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের হাহাকার। হাহাকার এ কারণেই যে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের প্রথম বলেই উঠেছিল ক্যাচ। সেটি ধরা কঠিন হলেও দ্বিতীয় ওভারের ক্যাচটি তো স্কুলবালকেরও ধরার কথা। বাংলাদেশের ফিল্ডারের তালুতেই কেবল জমল না তা! সুপার এইটে ওঠার জন্য পাকিস্তানকে ন্যূনতম ৩৬ রানের দূরত্বে আটকে রাখা কিংবা ন্যূনতম জয়তিলকও আর আঁকা হলো না বাংলাদেশের কপালে। শেষ হয়ে গেল টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান।
ম্যাচে হারের জন্য শুরুর দুটো ক্যাচ মিসকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করালে একটু হাস্যকর ঠেকতে পারে। বিশেষত যখন জানবেন, পাকিস্তান তাদের জয়ের বন্দরে নোঙর করেছে আগ্রাসী আধিপত্যে; ৮ উইকেট ও ১০ বল হাতে রেখেই। তবুও ওই না হওয়া ক্যাচ দুটোই আক্ষেপে পোড়াচ্ছে বাংলাদেশকে। দুটো বলে তো ম্যাচের রঙ পুরোপুরি বদলে যেতে পারত!
প্রথম ম্যাচে হারের পর অধিনায়ক মুশফিককে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল টসের সিদ্ধান্তের কারণে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচেও হয়তো হতো। কিন্তু ম্যাচের প্রথমভাগে সতীর্থরা তাঁর ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন। বিশেষত সাকিব আল হাসান। ৫৪ বলে ৮৪ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। তাতেই বাংলাদেশ পেল ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৭৫ রানের পুঁজি। ৩৬ রানের জয়ের সম্ভাবনা তখনো ক্যান্ডির পাহাড়শীর্ষে আসীন 'বুদ্ধের সাদা মূর্তি'র মতোই জ্বলজ্বলে।
সুপার এইটে যেতে হলে ঠিক কী ব্যবধানে জিততে হবে বাংলাদেশকে, এ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। অধিনায়ক মুশফিক ম্যাচের আগের দিনও বলছিলেন, সেটি ৩৬ বা ৩৭ রানের। আইসিসি থেকে শুরুতে জানানো হয়েছিল, ৩৬ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ জিতলে পাকিস্তান ও তাদের রান রেট হবে সমান। তখন অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। পরে জানানো হলো সেই 'অন্যান্য বিষয়'। সেটি মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল। তা বাংলাদেশ যদি জেতেই, তাহলে তো দ্বৈরথে পাকিস্তানের সঙ্গে এগিয়েই গেল। অর্থাৎ, বাংলাদেশকে ৩৬ রানে জিতলেই চলত। তাহলেই সুপার এইটের টিকিট! তাহলেই স্বপ্নপূরণ!
প্রথম ধাপটা সেই কক্ষপথেই ছিল। প্রথম ম্যাচের দুঃস্বপ্ন কবর দেওয়ার মতো ব্যাটিং করেছেন ব্যাটসম্যানরা। আশরাফুল সোহেল তানভিরকে স্কুপ করে পাঠান বাউন্ডারিতে। প্রথম ওভারেই গুলকে গোলমালে ফেলে তিন বাউন্ডারি হাঁকান তামিম ইকবাল। হ্যাঁ, চাইনিজ কাট হয়ে চার হয়েছে। কখনো কখনো টাইমিংটাও সড়োগড়ো হয়নি। ক্যাচ আকাশে উড়ে পড়েছে 'নো ম্যানস ল্যান্ডে', আবার লোপ্পা ক্যাচও ছেড়েছেন পাকিস্তানিরা। ভাগ্য সাহসীদের পক্ষে থাকে বলে একটি প্রবাদ আছে না! তাতে সওয়ার হয়েই কাল দেশকে সুপার এইটে ওঠানোর অভিযানে ছিলেন আশরাফুল-তামিম-সাকিবরা।
৩.১ ওভারে ৩৪ রানের ওপেনিং জুটির পর আশরাফুল (১৩ বলে ১৪) বোল্ড। সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট তামিমও (১২ বলে ২৪)। তার পরও ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৬১। অধিনায়ক মুশফিকের সঙ্গে ৮.৫ ওভারে ৬৮ রানের জুটিতে সাকিব স্বপ্নবেলুনে পুরে দেন হিলিয়াম। ৫৪ বলে ১১ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ৮৪ রান করেন বাংলাদেশের সন্দেহাতীত সেরা এই ব্যাটসম্যান। ম্যাচ শেষে যাকে দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারের মুকুট পরিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক। নাজিমুদ্দিনকে (৮১) ছাড়িয়ে এই ফরম্যাটের এক ইনিংসে দেশের সর্বোচ্চ রান এখন সাকিবের। তাঁর ওই অত্যাশ্চর্য ইনিংসে ভর করে তো শুধু জয় না, এমনকি পাকিস্তানকে ১৩৯ রানে আটকে রাখার স্বপ্নও দেখছিল বাংলাদেশ।
সেই স্বপ্নে বড় ধাক্কা শুরুর ওই দুই ক্যাচ মিসে। দুই ওপেনারকেই 'জীবন' দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিদানে 'মরণকামড়' দিয়ে মুশফিকের দলকে বিষে নীল করে দেন মোহাম্মদ হাফিজ (৪৭ বলে ৪৫) ও ইমরান নাজির (৩৬ বলে ৭২)। ওপেনিং জুটিতে ১৩.৩ ওভারে ১২৪ রান তুলে ফেলার পর ম্যাচের আর বাকি থাকেটা কী! শুধু ওই দুটো ক্যাচ না, আরো বেশ কটি সুযোগ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ দল। বিশেষত, ইমরানকে শূন্য রানে ফেলা আবুল হোসেন আরেকবার ক্যাচের জন্য না ঝাঁপানোয় রীতিমতো গালি খেয়েছেন বোলার সাকিবের কাছে। শেষ পর্যন্ত নিজের এক ওভারে দুই ওপেনারকে ফেরানো আবুল হোসেনের সান্ত্বনার উপলক্ষ হতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষতে তা প্রলেপ নয় কোনোভাবেই।
সাকিবের জন্য তো আরো নয়! অবিশ্বাস্য যে ইনিংসটি সাকিব খেলেছেন, তাতে পাল্লেকেলেকে ঘিরে রাখা পাহাড়গুলোও যেন কুর্নিশ করছিলেন তাঁকে। তার পরও যখন পরাজিত দলে থাকাটাই হলো নিয়তি, তখন নিস্তব্ধতার কাছে কান পেতে রাখা ছাড়া উপায় কি!
'আমরা ভেবেছিলাম, সেটি করা যাবে। শুরুতে যদি দু-তিনটি উইকেট নিতে পারতাম, তাহলে সেটি সম্ভব ছিল'- ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের হাহাকার। হাহাকার এ কারণেই যে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের প্রথম বলেই উঠেছিল ক্যাচ। সেটি ধরা কঠিন হলেও দ্বিতীয় ওভারের ক্যাচটি তো স্কুলবালকেরও ধরার কথা। বাংলাদেশের ফিল্ডারের তালুতেই কেবল জমল না তা! সুপার এইটে ওঠার জন্য পাকিস্তানকে ন্যূনতম ৩৬ রানের দূরত্বে আটকে রাখা কিংবা ন্যূনতম জয়তিলকও আর আঁকা হলো না বাংলাদেশের কপালে। শেষ হয়ে গেল টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান।
ম্যাচে হারের জন্য শুরুর দুটো ক্যাচ মিসকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করালে একটু হাস্যকর ঠেকতে পারে। বিশেষত যখন জানবেন, পাকিস্তান তাদের জয়ের বন্দরে নোঙর করেছে আগ্রাসী আধিপত্যে; ৮ উইকেট ও ১০ বল হাতে রেখেই। তবুও ওই না হওয়া ক্যাচ দুটোই আক্ষেপে পোড়াচ্ছে বাংলাদেশকে। দুটো বলে তো ম্যাচের রঙ পুরোপুরি বদলে যেতে পারত!
প্রথম ম্যাচে হারের পর অধিনায়ক মুশফিককে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল টসের সিদ্ধান্তের কারণে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচেও হয়তো হতো। কিন্তু ম্যাচের প্রথমভাগে সতীর্থরা তাঁর ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন। বিশেষত সাকিব আল হাসান। ৫৪ বলে ৮৪ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। তাতেই বাংলাদেশ পেল ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৭৫ রানের পুঁজি। ৩৬ রানের জয়ের সম্ভাবনা তখনো ক্যান্ডির পাহাড়শীর্ষে আসীন 'বুদ্ধের সাদা মূর্তি'র মতোই জ্বলজ্বলে।
সুপার এইটে যেতে হলে ঠিক কী ব্যবধানে জিততে হবে বাংলাদেশকে, এ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। অধিনায়ক মুশফিক ম্যাচের আগের দিনও বলছিলেন, সেটি ৩৬ বা ৩৭ রানের। আইসিসি থেকে শুরুতে জানানো হয়েছিল, ৩৬ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ জিতলে পাকিস্তান ও তাদের রান রেট হবে সমান। তখন অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। পরে জানানো হলো সেই 'অন্যান্য বিষয়'। সেটি মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল। তা বাংলাদেশ যদি জেতেই, তাহলে তো দ্বৈরথে পাকিস্তানের সঙ্গে এগিয়েই গেল। অর্থাৎ, বাংলাদেশকে ৩৬ রানে জিতলেই চলত। তাহলেই সুপার এইটের টিকিট! তাহলেই স্বপ্নপূরণ!
প্রথম ধাপটা সেই কক্ষপথেই ছিল। প্রথম ম্যাচের দুঃস্বপ্ন কবর দেওয়ার মতো ব্যাটিং করেছেন ব্যাটসম্যানরা। আশরাফুল সোহেল তানভিরকে স্কুপ করে পাঠান বাউন্ডারিতে। প্রথম ওভারেই গুলকে গোলমালে ফেলে তিন বাউন্ডারি হাঁকান তামিম ইকবাল। হ্যাঁ, চাইনিজ কাট হয়ে চার হয়েছে। কখনো কখনো টাইমিংটাও সড়োগড়ো হয়নি। ক্যাচ আকাশে উড়ে পড়েছে 'নো ম্যানস ল্যান্ডে', আবার লোপ্পা ক্যাচও ছেড়েছেন পাকিস্তানিরা। ভাগ্য সাহসীদের পক্ষে থাকে বলে একটি প্রবাদ আছে না! তাতে সওয়ার হয়েই কাল দেশকে সুপার এইটে ওঠানোর অভিযানে ছিলেন আশরাফুল-তামিম-সাকিবরা।
৩.১ ওভারে ৩৪ রানের ওপেনিং জুটির পর আশরাফুল (১৩ বলে ১৪) বোল্ড। সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট তামিমও (১২ বলে ২৪)। তার পরও ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৬১। অধিনায়ক মুশফিকের সঙ্গে ৮.৫ ওভারে ৬৮ রানের জুটিতে সাকিব স্বপ্নবেলুনে পুরে দেন হিলিয়াম। ৫৪ বলে ১১ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ৮৪ রান করেন বাংলাদেশের সন্দেহাতীত সেরা এই ব্যাটসম্যান। ম্যাচ শেষে যাকে দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারের মুকুট পরিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক। নাজিমুদ্দিনকে (৮১) ছাড়িয়ে এই ফরম্যাটের এক ইনিংসে দেশের সর্বোচ্চ রান এখন সাকিবের। তাঁর ওই অত্যাশ্চর্য ইনিংসে ভর করে তো শুধু জয় না, এমনকি পাকিস্তানকে ১৩৯ রানে আটকে রাখার স্বপ্নও দেখছিল বাংলাদেশ।
সেই স্বপ্নে বড় ধাক্কা শুরুর ওই দুই ক্যাচ মিসে। দুই ওপেনারকেই 'জীবন' দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিদানে 'মরণকামড়' দিয়ে মুশফিকের দলকে বিষে নীল করে দেন মোহাম্মদ হাফিজ (৪৭ বলে ৪৫) ও ইমরান নাজির (৩৬ বলে ৭২)। ওপেনিং জুটিতে ১৩.৩ ওভারে ১২৪ রান তুলে ফেলার পর ম্যাচের আর বাকি থাকেটা কী! শুধু ওই দুটো ক্যাচ না, আরো বেশ কটি সুযোগ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ দল। বিশেষত, ইমরানকে শূন্য রানে ফেলা আবুল হোসেন আরেকবার ক্যাচের জন্য না ঝাঁপানোয় রীতিমতো গালি খেয়েছেন বোলার সাকিবের কাছে। শেষ পর্যন্ত নিজের এক ওভারে দুই ওপেনারকে ফেরানো আবুল হোসেনের সান্ত্বনার উপলক্ষ হতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষতে তা প্রলেপ নয় কোনোভাবেই।
সাকিবের জন্য তো আরো নয়! অবিশ্বাস্য যে ইনিংসটি সাকিব খেলেছেন, তাতে পাল্লেকেলেকে ঘিরে রাখা পাহাড়গুলোও যেন কুর্নিশ করছিলেন তাঁকে। তার পরও যখন পরাজিত দলে থাকাটাই হলো নিয়তি, তখন নিস্তব্ধতার কাছে কান পেতে রাখা ছাড়া উপায় কি!
No comments