ভবিষ্যত টেনিস সুপারস্টার! by সায়মা শারমীন
তাঁর একটা বাজে অভ্যাস আছে। খেলার শুরুটা বেশিরভাগ সময়ই বাজেভাবে আরম্ভ করেন। যাকে বলে ‘নার্ভাস স্টার্টিং।’ ২০১০ সালের ইউএস ওপেনে নিজের প্রথম ম্যাচে জিতে বলেছিলেন, ‘বলতে পারেন এটা আমার একটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা।
প্রায়ই খেলতে গিয়ে প্রথম সেটটা মনমতো খেলতে পারি না। সূচনাটা হয় একেবারেই বাজে। কেমন যেন নার্ভাস বোধ করি। কবে যে এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠব, কে জানে।’ এ মন্তব্যটি যাঁর, তিনি ওজনিয়াকি। ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। বয়স ২২। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘মেয়েরা কুড়িতেই হয় বুড়ি।’ কিন্তু এ প্রবাদটি মোটেও খাটানো যাবে না এ ড্যানিশ টেনিসকন্যার ক্ষেত্রে। কেননা, এই কুড়ি পেরিয়েই তিনি হয়ে উঠেছেন বিশ্ব মহিলা টেনিসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, অপার সম্ভাবনাময় এক টেনিস প্লেয়ার। ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে এই ক’দিন আগেও ছিলেন নাম্বার ওয়ান। মাঝখানে ফর্ম-ফিটনেস হারিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন (১১)। সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্যটি হলো এটিপি ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে তালিকাভুক্ত যে চার শ’ মহিলা টেনিস খেলোয়াড় আছেন, তাঁদের মধ্যে ওজনিয়াকি হচ্ছেন একমাত্র ড্যানিশ। এটা ডেনমার্কের জন্য নিঃসন্দেহে বিরল ও গর্বের ঘটনা। তাঁর যে দু’টি স্বপ্ন ছিল (এক. র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে অধিষ্ঠিত হওয়া, দুই. যে কোন একটি গ্র্যান্ডসøাম ওপেন জেতা), সেটির প্রথমটি অনেক আগেই পূরণ হয়েছে। দ্বিতীয়টি আপাতত অনেক কঠিন মনে হচ্ছে। কাজটি কঠিন, পথ কণ্টকময়, বাধা অগুণিত, তবুও পিছু হটতে নারাজ ড্যানিশ সুন্দরী ক্যারোলিন। বিভিন্ন শিরোপা জিতে তিনি বাজাতে চান সাফল্যের বীণ। সাফল্য একটি পেয়েও গেছেন তিনি। বছরের প্রথম ডব্লিউটিএ শিরোপা জিতেছেন তিনি। অনিন্দ্য সুন্দরী এ ড্যানিশ তারকা রবিবার ‘হ্যানসল কোরিয়া ওপেন’-এর ফাইনালে ৬-১, ৬-০ সেটে এস্তোনিয়ার কাইয়া কানেপিকে উড়িয়ে দিয়ে এ কৃতিত্ব দেখান। স্কোরলাইনই বলে দেয় এবার অন্তত ‘নার্ভাস স্টার্ট’ করেননি ওজনিয়াকি। আসরের শীর্ষ বাছাই তারকা ফেবারিট হিসেবেই মিশন শুরু করেছিলেন। এখন পর্যন্ত কোন গ্র্যান্ডসøাম জিততে না পারা সুন্দরী এ ললনা চলতি বছরেই হারান প্রমীলা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান। এর আগে সেমিফাইনালে ওজনিয়াকি পরাজিত করেন অষ্টম বাছাই রাশিয়ার একাতেরিনা মাকারোভাকে। কোরিয়া ওপেনের শিরোপাসহ ক্যারিয়ারের ৩০তম ডব্লিউটিএ ফাইনাল খেলা ওজনিয়াকি জিতলেন ১৮টি শিরোপা। আর হেরেছেন ১১ ফাইনালে। কানেপিকে এর আগেও ফাইনালে হারিয়েছিলেন। সেটা ৫ অক্টোবর, ২০০৮ সালে, টোকিও ওপেনে। চার বছর আগের ফাইনালের হারের প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যেই কোর্টে নেমেছিলেন ২৭ বছর বয়সী কানেপি। কিন্তু অদম্য ওজনিয়াকির সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছেন এ এস্তোনিয়ান কন্যা। শিরোপা জয়ের পর ওজনিয়াকি বলেন, ‘চলতি বছর আমার জন্য মোটেও ভাল যাচ্ছে না। চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত ট্রফি জিততে পারায় আমি খুশি।’ টেনিসে সেরা সাফল্য বলতে বোঝায় ‘গ্র্যান্ডসøাম’ শিরোপা জয়। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যাঁরা সর্বোচ্চ এ শিরোপা জয়ের স্বাদ পাননি। এঁদের মধ্যে আবার প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামে খ্যাত তারকারাও রয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রমীলা টেনিসে রাশিয়ান গ্ল্যামার কুইন আনা কুর্নিকোভা ও ক্যারোলিন ওজনিয়াকির নাম চলে আসবে সবার আগে। অমিত সম্ভাবনার সঙ্গে অপরূপ রূপ ও গ্ল্যামার নিয়ে টেনিসের বর্ণিল ময়দানে পদচারণা শুরু করেন রাশান ডার্র্লিং কুর্নিকোভা। কিন্তু খেলার চেয়ে বিজ্ঞাপন কিংবা অন্যান্য দিকে মনোযোগী হওয়ায় অকালেই শেষ হয়ে যায় তাঁর ক্যারিয়ার। আনুষ্ঠানিকভাবে খেলা না ছাড়লেও বর্তমানে পেশাদারি টেনিস খেলছেন না টেনিস ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুন্দরী কুর্নিকোভা। অনেকটা রাশান এ তারকার মতোই ক্যারিয়ার এগিয়ে যাচ্ছে ওজনিয়াকির! প্রত্যাশার ডালি নিয়ে টেনিসে নাম লেখালেও এখন পর্যন্ত দেখা পাননি কাক্সিক্ষত গ্র্যান্ডসøামের। অন্যান্য আসরে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য দেখিয়ে এক সময় র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও দখল করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি অন্যান্য আসরেও সাফল্যের জন্য তাঁকে ধুঁকতে হচ্ছে। বার বার তীরে এসে তরী ডোবানো ও গ্র্যান্ডসøাম আসরে সাফল্য না পাওয়ায় ওজনিয়াকির ক্যারিয়ার নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, তা হলে কি কুর্নিকোভার পথে হাঁটছেন ওজনিয়াকি! টেনিস ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুন্দরী ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন অমিত সম্ভাবনা জাগিয়ে। কিন্তু অনিন্দ্য রূপসী ও গ্ল্যামারকন্যা হওয়ায় তাঁকে নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো। যে কারণে অল্পসময়ের মধ্যেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। ফলও হাতেনাতে পেয়ে যান। টেনিস খেলতেই যেন ভুলে যান! ওজনিয়াকিও ক্যারিয়ার শুরু করেন আশা জাগিয়ে। টেনিসের সর্বোচ্চ আসরে শিরোপা জিততে না পারলেও অন্যান্য আসরে সাফল্য পেতে থাকেন ধারাবাহিকভাবে। কিন্তু কাক্সিক্ষত সেই গ্র্যান্ডসøাম জিততে পারেননি এখনও। এরপরও লম্বা সময় ধরে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিলেন। তবে চলতি বছরে যেন খেই হারিয়ে ফেলেন! একের পর এক আসরে ব্যর্থতা সঙ্গী হয় তাঁর। বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে থেকে শুরু করে চারটি গ্র্যান্ডসøাম আসরেই ব্যর্থ হয়েছেন। অবশেষে কোরিয়া ওপেনের শিরোপা জয় করে ২০১২ সালে শিরোপা খরা কাটালেন তিনি। ওজনিয়াকি এসেছেন একটি খেলোয়াড়ী পরিবার থেকেই। তাঁর মা আনা পোল্যান্ডের (ওজনিয়াকির বাবা-মা পোল্যান্ডের) জাতীয় মহিলা ভলিবল দলের খেলোয়াড় ছিলেন। বাবাও কম যান না। তিনি পোলিশ লীগ, জার্মান লীগ ও ডেনিশ লীগে ফুটবল খেলতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ডেনমার্কেই স্থায়ীভাবে থেকে যান ও দেশটির নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯টি ডব্লিউটিএ ও ৪টি আইটিএফ টাইটেল জেতা ড্যানিশ সুন্দরী ক্যারোলিন টেনিস খেলে এ পর্যন্ত আয় করেছেন ১ কোটি ২৮ লাখ ১৯ হাজার ১৪৭ ডলার। এককে তাঁর জয়ের-পরাজয়ের রেকর্ড হচ্ছে ৩৩৫ ম্যাচে জয়, ১২৫ ম্যাচে হার। ৫ ফুট সাড়ে ৯ ইঞ্চি ও সাড়ে ৫৮ কেজির অধিকারী ওজনিয়াকির টেনিসের বাইরে পছন্দ করেন ফুটবল, হ্যান্ডবল, সাঁতার। ভালবাসেন পিয়ানো বাজাতে। লিভারপুলের স্ট্রাইকার ফার্নান্দো তোরেসের অন্ধ ভক্ত। ভাষা বিশেষজ্ঞ বলা যেতে পারে তাঁকে। অনর্গল বলতে পারেন ড্যানিশ, পোলিশ ও ইংলিশ। রুশ ভাষা বলতে না পারলেও ভাল বুঝতে পারেন। ডানহাতি ব্যাকহ্যান্ডে খেলা ওজনিয়াকি প্রতিনিয়ত প্রদর্শন করে চলেছেন তাঁর নৈপুণ্যের উৎকর্ষতা। তাঁর খেলা দেখে ইতোমধ্যেই তাঁর বিশাল ভক্তগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। টেনিসপ্রেমীদের বদ্ধমূল ধারণা, আগামী দিনে র্যাকেট হাতে ওজনিয়াকিই শাসন করবেন টেনিস কোর্ট। বলা যায় না, এ বছরের মধ্যেই তিনি হয়ত অধরা লক্ষ্য পূরণ করে ফেলতে পারেন। কোন্টি যেন? গ্র্যান্ডসøাম জয়। পারবেন কি তিনি? তিনি কি হতে পারবেন ভবিষ্যত টেনিস সুপারস্টার? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
No comments