বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলে দায়ীদের ছাড় দেয়া হবে না- নিউইয়র্কে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী by নাজনীন আখতার

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলে দায়ীদের ছাড় দেয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও আগের ঋণচুক্তি বাতিলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে সরকার তদন্ত অব্যাহত রাখবে।


সোমবার নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। জাতিসংঘের ৬৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। হায়াত হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কী করেছে, তা খুঁজে বের করতে আমরা তদন্ত করব; এ থেকে আমরা বিরত থাকব না। দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলন পূর্ব সভায় বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সেক্রেটারি সাজ্জাদুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার, সেক্রেটারি পঙ্কজ দেবনাথ, আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব নুর্জ্জামান সরদার প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
হিলারির একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বলেছি, এই ব্যাপারে আমরা পুরো তদন্ত করতে চাই। জানতে চাই, কেন আগেরবার বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করেছিল। অর্থায়ন বাতিলের পেছনের প্রকৃত সত্য জানার ব্যাপারে আমি অনড়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন ব্যক্তি কেবল একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের ব্যাপারে প্রভাবিত করেছেন। আমি নাম উল্লেখ করতে চাই না, সবাই নাম জানেন। ওই ব্যক্তির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকার বয়স নেই, কিন্তু তিনি সেই পদে থাকতে চান।
পদ্মা সেতুর ব্যাপারে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা একটি পদ্মা সেতুই বানাতে পারেনি। এখন আপনি (খালেদা) বলছেন, পদ্মায় দুটি সেতু করবেন। পাঁচ বছরের শাসনামলে যখন একটি সেতুই করতে পারলেন না, এখন দুটি কীভাবে করবেন?’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, এতিমদের অর্থ চুরি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সে মামলায় এখন তিনি হাজিরা দিতে যাচ্ছেন না। ‘চোরের মন পুলিশ পুলিশ’ বলেই তিনি কোর্টে যেতে ভয় পাচ্ছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরিলুট করেছে বিএনপির লোকজন। সে জন্যই বিএনপি নেত্রীর মহাদুর্নীতিবাজ দুই পুত্র এখন বিদেশে বিলাসী জীবন-যাপন করছেন। তারেক রহমান লন্ডনে ক’টি বাড়ি এবং রেস্টুরেন্টের মালিক বনেছেন সে খোঁজ নিতে পারেন সাংবাদিকরা।
শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের আনা দুর্নীতির অভিযোগকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমরা দুর্নীতি করেছি তার কোন প্রমাণ বিশ্বব্যাংকের কাছে থাকলে কখনই ঐ প্রকল্পে তারা ফিরত না। আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে কখনও কোন ধরনের ঘুষ ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি বলে উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তদন্ত করছে এবং তা শেষ হবে। তদন্তে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দিতে বিশ্বব্যাংককে বলা হয়েছে।
তাঁর সরকারের বিভিন্ন সাফল্য ও উন্নয়ন কর্মকা-ের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেদের ভাগ্য গড়তে নয়, জনগণের সেবার জন্য ক্ষমতায় এসেছি। তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে এবং এ বিচার শেষ করা হবে। আমাদের অবশ্যই দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে।
হিলারির অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার অঙ্গীকার
২০২১ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদে ও নেতৃত্বের সকল পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সাল নাগাদ প্রশাসন, চাকরি ও নেতৃত্বসহ বাংলাদেশের সকল কর্মক্ষেত্রের অর্ধেকই প্রতিনিধিত্ব করবে দেশের নারীরা।
তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেক হবে নারী এবং তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও গৃহে নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য আইন প্রয়োগের জন্য আরও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার নিউইয়র্কের ইন্টারকন্টিনেন্টাল বার্কলে হোটেলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আয়োজিত ‘সমঅংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা একথা বলেন।
সম্প্রীতি বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন বাড়লেও তা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি অঙ্গীকারাবদ্ধ। কারণ সমঅংশীদারিত্বই বিশ্বে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের নির্বাচন সম্পর্কে তিনি জানান , ২০০৯ সালে তাঁর সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১২ হাজার ৮৩৮ নারী নির্বাচিত হয়েছেন। আর ৬৯ নারী সংসদ সদস্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা, পাঁচজন পূর্ণ মন্ত্রী (ক্যাবিনেট মন্ত্রী), একজন সংসদ উপনেতা, একজন হুইপ রয়েছেন। এছাড়াও একজন মেয়র রয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, কূটনীতি, নিরাপত্তা বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোতে নারীরা উচ্চ পদে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারী চাকরির ৩০ ভাগ নারীদের জন্য সংরক্ষিত।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর সরকার নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় মানব পাচারবিরোধী আইন এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছে।

No comments

Powered by Blogger.