বগুড়ার তিন হাসপাতাল-সংকীর্ণ রাজনীতির শিকার!

বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ ও আদমদীঘিতে তিনটি সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু উদ্বোধন হয়নি। কেন হয়নি, তার পেছনে রাজনীতি অন্যতম কারণ। ঠিকাদারদের অসততাও কম দায়ী নয়। তারাও সুযোগ নিয়েছে রাজনীতির।


আর এ রাজনীতিতেও রয়েছে অসততা। মঙ্গলবার সমকালে 'বগুড়ার তিন হাসপাতাল এখন পোকা-মাকড়ের বাসা' শিরোনামের খবরে বলা হয়, তৃণমূল মানুষের কাছে চিকিৎসাসেবা পেঁৗছে দেওয়ার লক্ষ্যেই নির্মাণ করা হয় এ তিনটি হাসপাতাল। প্রতিটি ২০ শয্যার। ২০০৬ সালে নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হতেই এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না করেই তড়িঘড়ি হাসপাতাল তিনটি উদ্বোধন করা হয়। এর পেছনে চিকিৎসাসেবা দ্রুত শুরু করার তাগিদের চেয়েও ঢের বেশি কাজ করেছে সম্ভবত নির্বাচনী স্বার্থ। তখন বিএনপি ক্ষমতায় এবং তারা ২০০৭ সালের প্রথমদিকে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনের আগে জনগণকে 'সাফল্য' দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু ডাক্তার-নার্সবিহীন চিকিৎসাসেবা তো সম্ভব নয়। ২০০৭-০৮
সালে বিশেষ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কেন হাসপাতাল তিনটি চালু হলো না_ সে প্রশ্ন স্বাভাবিক। সে সময়ে অনেক দুর্নীতি-অনিয়মের মূলোৎপাটনের চেষ্টা হয়েছে। এ তিনটি হাসপাতাল নির্মাণে
যে অনিয়ম হয়েছে, তার প্রতিকারের চেষ্টা কি হয়েছিল?
গত সাড়ে তিন বছরে কেন হাসপাতাল তিনটি চালু হয়নি_ তার কারণ হিসেবে অনেকেই চোখ বন্ধ করে দায়ী করবেন রাজনীতিকে। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এবং 'বগুড়া বিএনপির এলাকা' হিসেবে চিহ্নিত। যদি এ কারণে হাসপাতাল তিনটিতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না করা হয়ে থাকে, সেটা গুরুতর অন্যায়_ তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এতে অনেকেই বিস্মিত হবেন না। কারণ এটাই আমাদের 'রাজনৈতিক সংস্কৃতি'। জনগণের স্বার্থ এখানে মুখ্য নয়। সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থবোধ দ্বারা পরিচালিত হতে অনেক রাজনীতিকই পছন্দ করেন এবং এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়তো ঘটেছে। এতে দেশের সম্পদের ক্ষতি হয়। জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় কিংবা দুর্গতির মাত্রা বাড়ে। কিন্তু মানুষ যাদের কাছে মুখ্য নয়, তাদের এ নিয়ে ভাববার সময় কোথায়! আর এ কারণেই বগুড়ার তিনটি উপজেলায় নির্মিত তিনটি হাসপাতালে বছরের পর বছর রোগীদের চিকিৎসা হয় না। বরং পরিত্যক্ত ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামোতে নিশ্চিন্তে বাসা বেঁধেছে সাপ, পোকা-মাকড় ও বনবিড়াল। প্রাণীদের উপযুক্ত অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে বটে!
 

No comments

Powered by Blogger.