বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা-আজ ছুটির দিনের ভিড় জমবে মেলায় by আশীষ-উর-রহমান

বাইরে এখনো হাতুড়ি-পেরেকের ঠোকাঠুকি চললেও ভেতরে সে পর্ব শেষ। এবার বেশ দ্রুতই বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণের স্টলগুলোর সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে তাই অমর একুশে গ্রন্থমেলার ভেতরের পরিবেশ ছিল পরিপাটি।


দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে সব স্টলেই বইপুস্তক সাজানোর কাজও সম্পন্ন। তবে নতুন বই যে খুব বেশি এসেছে, তা নয়। গ্রন্থানুরাগীদের উপস্থিতি মন্দ নয়। তবে বিক্রি জমেনি। এখন মেলায় যারা আসছে, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য বিকেল-সন্ধ্যাটি ঘোরাফেরা করে কাটিয়ে দেওয়া। হয়তো স্টলগুলোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দু-একটি বই পাতা উলটে চোখ বুলিয়ে নিলেন। কার কী বই আসছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া আর কি! চলছে মঞ্চের সামনে হাজিরা দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করা বা চায়ের আড্ডা। এর ফাঁকে পছন্দের কোনো বই নজরে এলে কিনে নেওয়া। গতকাল বেচাকেনার হালচাল ছিল এমনই।
‘যাদের টাকা নেই তারাই বই কেনে’
প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ উদ্বোধনী দিন থেকেই মেলায় আসছেন। গতকাল প্রথমার স্টলে বসেছিলেন কিছু সময়ের জন্য। মেলার পরিবেশ নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। তবে বিক্রি নিয়ে ততটা নন। তাঁর মন্তব্য হলো, ‘যাদের কাছে টাকা নেই, তারাই আমাদের এখানে বই কেনে। এই ক্রেতারা হলো ছাত্রছাত্রী, তরুণ সমাজ। নিজের উপার্জন নেই বলে মূলত হাতখরচের জন্য পাওয়া টাকা বাঁচিয়ে তারা বই কেনে। বিত্তবানেরা বইয়ের বদলে অন্য কেনাকাটায় বেশি আগ্রহী।’
সৈয়দ আবুল মকসুদ বললেন, এই তরুণেরা এখনো বই কেনা শুরু করেনি। যাচাই-বাছাই করেই তারা কিনবে। আরও নতুন বই এলে কেনাকাটার এই মন্দা থাকবে না বলেই তাঁর প্রত্যাশা। এবার মেলায় প্রথমা প্রকাশন থেকে তাঁর প্রবন্ধ রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনসহ বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট চারটি বই আসবে বলে জানালেন এই লেখক।
রবীন্দ্র ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই প্রাধান্য পাবে
এবার মেলায় তিনটি প্রধান উপলক্ষ সামনে রেখে প্রকাশনার প্রস্তুতি নিয়েছেন লেখক-প্রকাশকেরা। বিশেষ করে মননশীল গ্রন্থের ক্ষেত্রে। এর একটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী, অন্যটি স্বাধীনতার ৪০ বছর এবং তৃতীয় হলো, ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর পূর্তি। নবযুগ প্রকাশনীর প্রকাশক অশোক রায় নন্দী বললেন, প্রায় সব প্রকাশকই এই তিনটি বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ, গবেষণা বা ইতিহাসবিষয়ক বই বের করার উদ্যোগ নিয়েছেন। নবযুগ প্রভাত সূর্য নামের স্মারকগ্রন্থসহ রবীন্দ্রবিষয়ক পাঁচটি বই প্রকাশ করছে। আগামী প্রকাশনীর ওসমান গনিরও ধারণা তা-ই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চারটি বই এবং রবীন্দ্রনাথের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করছে আগামী। প্রকাশকদের ধারণা, সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে পাঠকেরা নতুন করে আগ্রহী হবেন। জানতে চাইবেন কবি সম্পর্কে নতুন মূল্যায়ন। এই তিনটি উপলক্ষ একসঙ্গে আসায় এবার মননশীল গ্রন্থের সংখ্যা ও গুণগত মান দুই-ই বাড়বে বলেই প্রকাশকেরা জানিয়েছেন।
নতুন বই
চালু হয়েছে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমীর তথ্যকেন্দ্র। বর্ধমান হাউসের উত্তর দিকের বারান্দায় তথ্যকেন্দ্র থেকে নতুন বইয়ের বিবরণী প্রচার চলছে মেলার দ্বার খোলা থেকে বন্ধ হওয়া অবধি। তবে নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচনের সূচনা হয়নি দ্বিতীয় দিনেও। হয়তো আজ শুক্রবার তা হবে। গতকাল তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়েছে নতুন আসা ৪২টি বইয়ের নাম। এর মধ্যে ছিল শুদ্ধস্বর থেকে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা তবু বেঁচে থাকা অপরূপ। আবদুল মান্নান সৈয়দের অগ্রন্থিত কবিতা ঘুমের ভিতর নিদ্রাহীন, এটি সম্পাদনা করেছেন জিনান সৈয়দ ও পিয়াস মজিদ। কথা প্রকাশ থেকে হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠপ্রবন্ধ। খুরশীদ জাহান বেগমের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস একাত্তরের যুদ্ধশিশু। প্রথমা থেকে এসেছে মুহাম্মদ লুৎফুল হকের বাঙালি পল্টন: ব্রিটিশ ভারতের বাঙালি রেজিমেন্ট। বাংলা একাডেমী থেকে দুই খণ্ডে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও সাইমন জাকারিয়া ও নাজমীন মর্তুজা সম্পাদিত গবেষণা গ্রন্থ ফোকলোর ও লিখিত জারিগানের আসরে বিষাদ-সিন্ধু আত্তীকরণ ও পরিবেশন পদ্ধতি। অন্যপ্রকাশ থেকে জ্যোতি প্রকাশ দত্তের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সময়ের অসময়ের মুক্তিযুদ্ধ। রয়েল থেকে এসেছে ইকবাল হাসানের গল্পসমগ্র। ইতি প্রকাশ থেকে এসেছে হাসান হাফিজের ছড়া ঝাঁঁকে ঝাঁকে পাখিরা উড়ুক ও সুলেখা থেকে নির্বাচিত বারোটি রূপকথা।
আজ শুক্রবার, বইমেলার মাসের প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়। প্রকাশকেরা স্টল সাজিয়ে তৈরি। আজ নিশ্চয়ই ছুটির দিনের চেনা ভিড় দেখা যাবে মেলায়।

No comments

Powered by Blogger.