চরাচর-প্রতিটি শিশুই যেন আলোকিত শিশু by বনরূপা

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মেধা ও মননশক্তির বিকাশ। মনোজাগতিক এ বিকাশ ঘটলেই শিক্ষার প্রকৃত সুফল পাওয়া যায়। শিক্ষার অর্থ শুধু সার্টিফিকেট নয়, এর সঙ্গে রয়েছে শিশুর মনমানসিকতার বুদ্ধিদীপ্ত এক ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও চিন্তার যোগসূত্র, যার দ্বারা শিশুমনে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হবে চিন্তার বিষয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক যৌক্তিক বিশ্লেষণ।


বর্তমানে আমাদের দেশে শিশুশিক্ষার নামে গড়ে ওঠা স্কুলগুলো শিশুর মনোজাগতিক শিক্ষার পরিবর্তে পরীক্ষার ফলাফলনির্ভর এক প্যাকেজ পদ্ধতির ক্ষণস্থায়ী শিক্ষার সৃষ্টি করেছে, যার মাধ্যমে উচ্চমানের সার্টিফিকেট অর্জন করা গেলেও মানবমনের প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার প্রকৃত আলো থেকে। শিশুদের প্রকৃত শিক্ষায় গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শিশু স্কুল 'মা হাদ'। এর পরিচালক সোমা জাহিদ স্কুলটির লক্ষ্য সম্পর্কে বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি যে শিক্ষা একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রয়োজন একটি শক্ত ভিত্তি। ইন্দ্রিয় বা মস্তিষ্ক দ্বারা উপলব্ধিই শিক্ষা। শিক্ষা গ্রহণের কোনো সংক্ষিপ্ত পন্থা নেই। মা হাদের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার প্রতি অনুরাগ তৈরি করা এবং জীবনের প্রতিটি ধাপে উৎকর্ষলাভের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতে তারা যেকোনো সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে। শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের আশা, তারা শিক্ষায় ও ব্যবহারে হবে দৃষ্টান্তস্বরূপ। সাধারণত শিশুদের স্কুল নির্বাচনের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের জন্য সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বাসা থেকে স্কুলে এবং স্কুল থেকে বাসায় যাতায়াতের ব্যবস্থা, শিক্ষা কারিকুলাম, শিক্ষকদের যোগ্যতা, হোম ওয়ার্কের মাত্রা, স্কুল টিফিনের মান, স্কুল পরিবেশ ইত্যাদি। মা হাদ অভিভাবকদের এসব চিন্তা থেকে মুক্ত রাখে। স্কুলের তত্ত্বাবধানে নিজস্ব যাতায়াতের ব্যবস্থা, হোম ওয়ার্ক স্কুলেই সম্পন্ন করা, আধুনিক যুগোপযোগী সিলেবাস, অডিওভিজ্যুয়াল তথা ডিজিটাল ক্লাসরুম, মেধাবী নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষকদের তত্ত্বাবধান অভিভাবকদের রাখে চিন্তামুক্ত। ফলে শিক্ষার্থীকে সব সময় পড়াশোনার চাপে থাকতে হয় না। বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে সৃজনশীল কাজে বা খেলাধুলায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশুরা। মা হাদ স্কুলে সিলেবাস অনুযায়ী মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাসরুম পরিচালনায় শ্রেণীকক্ষের সাধারণ ব্ল্যাকবোর্ড আর চকের জগতের বাইরে শিশুদের জানা, দেখা আর শেখার এক অন্য জগৎ। এই শিক্ষাদানপদ্ধতি আর মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মা হাদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। একজন ভালো শিক্ষক তিনিই, যিনি শিক্ষার্থীকে হোম ওয়ার্কের বাইরেও চিন্তার খোরাক জোগান দেন। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন, নৈতিক ও শারীরিক ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশে সাহায্য করছেন, যাতে তারা সুচিন্তিতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখে। তারা হয়ে ওঠে জীবন-সচেতন; শুধু জীবন ধারণ করা শেখে না। তেমনি শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মা হাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রতি মাসে দেশি ও বিদেশি প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে অত্যাধুনিক শিক্ষার পদ্ধতি আয়ত্ত করছেন। বিশ্বায়ন ও সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মা হাদ উন্নত বিশ্বের মতো তাদের ছাত্রছাত্রীদের বাংলা ও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি ভাষাতাত্তি্বকদের তত্ত্বাবধানে বিদেশি ভাষা শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় চীনা, ফরাসি ও আরবি শিখিয়ে থাকে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, যেমন_চিত্রকলা, নাট্যকলা, নৃত্যকলা ইত্যাদির মাধ্যমে মা হাদের শিক্ষার্থীরা বাঙালির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান এ বিষয়ে বলেন, 'শিশুদের স্কুলে বই, স্কুল আর শিক্ষক-শিক্ষিকা যেন শিশুর ভীতির কারণ না হয়, যেন হয় তার অনুপ্রেরণার উৎস, আনন্দের স্থান আর আদরের জায়গা। তখনই শিশু মনের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সম্ভব।'

বনরূপা

No comments

Powered by Blogger.