দুর্নীতি দমন-কঠোর অবস্থানই কাম্য

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তার মন্ত্রিত্ব খারিজ করা হবে। সরকারের নির্বাহী প্রধান হিসেবে তার এই বক্তব্য দুর্নীতিবাজদের শুধু সতর্ক করবে না, সমাজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে তৎপরতা আছে তাকেও বেগবান করবে।


বাংলাদেশে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অতীতে বহুবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শুধু বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের কোনো দেশই এর ব্যতিক্রম নয়। পাশ্চাত্যের বহু দেশেও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রতিক অতীতে। ভারতে দুর্নীতির কারণে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। গ্রেফতারকৃত অবস্থায় তাদের বিচারও চলছে। এ প্রেক্ষাপটেই দেশটিতে নাগরিক আন্দোলনের তীব্র জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে আপামর মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন অবস্থায় সে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, মামলা এবং বিচারের নজির প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু জনমনে দৃঢ়মূল ধারণা হলো, ক্ষমতাহীন অবস্থায় নয়, ক্ষমতাসীন অবস্থাতেই দুর্নীতি করেন মন্ত্রী-এমপিরা। এ দেশে দুর্নীতির কারণে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যকে পদচ্যুত করে বিচারের আওতায় আনা হলে তা হবে ব্যতিক্রম ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের প্রত্যয় তাতে জোরালো হবে এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারাও বেগবান হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মন্ত্রিসভার সদস্য কিংবা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি প্রমাণের দায়িত্ব কার? দুর্নীতিবাজরা প্রমাণ রেখে অপকর্ম করেন না। উপরন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে যারা দুর্নীতি করেন তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা কঠিন। কোনো নাগরিক কিংবা নাগরিকদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা কঠিন। এমনকি গণমাধ্যমের পক্ষেও দুর্নীতির শক্ত প্রমাণ তুলে ধরা আয়াসসাধ্য কাজ। ভারতসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা, দুর্নীতিবিরোধী শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করে। গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি রোধে সেটিই বাঞ্ছনীয় পদ্ধতি। কেননা, দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে যে ক্ষমতা, লোকবল ও তৎপরতা থাকতে হয়, তা নাগরিকদের বা গণমাধ্যমের থাকার কথা নয়। আমাদের দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন এ দায়িত্বটি পালন করতে পারত। কিন্তু নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখন নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। একটি নিরপেক্ষ ও তৎপর দুর্নীতি দমন কমিশন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন মন্ত্রী ও সরকার-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে পারত। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন সে কাজ করা দূরে থাক, নতুন সংশোধনীতে বিদ্যমান ক্ষমতা খর্ব করে প্রতিষ্ঠানটিকে অকার্যকর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে। অতীতের দুর্নীতির তদন্ত যেমন সে প্রতিষ্ঠানটি করবে, তেমনি ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও তদন্ত করতে পারবে। সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হলে এর বিকল্প নেই।
 

No comments

Powered by Blogger.