শখের অনশন by আনোয়ার হোসেন

ভারতের গুজরাট রাজ্যে দু'জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ শনিবার টানা তিন দিনের অনশন শুরু করেছেন। তাদের একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অন্যজন রাজ্যে বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রধান নেতা শঙ্করসিন বাঘেলা। নরেন্দ্র মোদি অনশনে বসেছেন তার ৬২তম জন্মদিনে।


তার সংকল্প, রাজ্যকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শান্তি ও উন্নয়নের রোল মডেল বানাবেন। ২০০২ সালে এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার মুসলিম নিহত হয়েছিল এবং এ জন্য তার ব্যর্থতাকে বহুলাংশে দায়ী করা হয়। তার দল বিজেপি সে সময় তাকে উগ্র হিন্দুত্ববাদের 'পোস্টার বয়' হিসেবে তুলে ধরেছিল। আবার তার দলের নেতা, সে সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি অভিযোগ করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি রাজধর্ম পালন করেননি। এখন তার মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বুলি। তার অনশন মঞ্চে সংস্কৃত শ্লোকের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে আল্লাহু আকবর। বিড়াল তপস্বী নয় তো! মনের ভেতরে কী আছে, কে জানে?
নরেন্দ্র মোদি অনশন করছেন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে। না খেয়ে থাকার এ আয়োজন উপলক্ষে ব্যয়ের বহর বিপুল_ ভারতীয় ৫০ কোটি রুপি (বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ৭৯ কোটি টাকা)। কংগ্রেসের নেতা শঙ্করসিন অনশনে বসেছেন নরেন্দ্র মোদির অনশনস্থল থেকে আট কিলোমিটার দূরে। তিনি ফুটপাতকেই এ জন্য বেছে নিয়েছেন। না খাওয়ার জন্য যে কষ্ট সে জন্য সমস্যা নেই_ জনগণের সামনে এটিই তুলে ধরতে চান তিনি। তার লক্ষ্য দুটি_ এক. নরেন্দ্র মোদির মতো নিজেকেও প্রচারে রাখা এবং দুই. আগামী বছর রাজ্যে নির্বাচন। এ জন্য নিজেকে ত্যাগী নেতা হিসেবে তুলে ধরা। নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য স্পষ্ট_ এখন তিনি রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে দিলি্লর মসনদে বসতে চান। অর্থাৎ ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চান। সাম্প্রদায়িক কলঙ্কের দাগ থাকলে এমন পদ পাওয়া কঠিন, সেটা তিনি বিলক্ষণ বোঝেন। তাই মুসলমানদের মন জয় করতে চাইছেন। এটি সম্ভব কি-না তা জানার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এ জন্য তিনি কি 'ভালো মানুষ' হয়ে যাবেন, নাকি তার ভান করবেন_ সে প্রশ্ন সঙ্গত।
ভারতের রাজনীতিতে অনশন কর্মসূচি স্বীকৃত। মহাত্মা গান্ধী জেলের ভেতরে ও বাইরে দিনের পর দিন অনশন করেছেন। আন্না হাজারের সাম্প্রতিক অনশন নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড় হয়েছে। তিনি পার্লামেন্টকে বাধ্য করেছেন দুর্নীবিরোধী আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হওয়ার জন্য। বাংলাদেশে আমরণ অনশনের খবর মাঝে মধ্যে সংবাদপত্রে দেখা যায়। প্রকাশ্য স্থানে এমন মরণপণ সংকল্প নিয়ে যারা বসেন তাদের কাউকে অবশ্য এ জন্য মরতে হয়নি। পাকিস্তান আমলে জেলখানায় শিবেন রায় নামে একজন রাজবন্দি প্রায় ৫০ দিন একটানা অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন। তার দাবি ছিল, রাজবন্দিদের মর্যাদা সংরক্ষণ। এখন রাজনৈতিক নেতারাও প্রতীকী অনশনে বসেন। তারা অনশনের সময় নির্ধারণ করেন এভাবে_ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা কিংবা ৫টা।
সাধারণত এ সময়টা অনেক লোক এমনিতেই না খেয়ে থাকে। কার্যত প্রতীকী অনশন অনেকটা কয়েক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালনের মতো। এভাবে না খেয়ে থাকায় নিজেকে কষ্ট দেওয়াও হয় না, দেশের খাদ্য ভাণ্ডারেও সাশ্রয় না। নরেন্দ্র মোদি কিংবা শঙ্করসিন বাঘেলা অনশনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করেছেন। তারা ব্যাপক প্রচার চাইছেন এবং এ জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয়ে দ্বিধা নেই। নরেন্দ্র মোদি এখন রাজ্যের ক্ষমতায় এবং এ কারণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতেও তার সমস্যা নেই। তাকে সহানুভূতি জানাতে এসেছেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিশিষ্ট নেতারা। তাদের কেউ কেউ ক্ষমতায় রয়েছেন এবং তারাও সরকারি অর্থ ব্যয় করছেন। তাদের সবার দাবি_ দেশসেবায় তারা নিয়োজিত। নিজের রাজনৈতিক সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলাই যে মূল লক্ষ্য সেটি অবশ্যই কোনোভাবে বলতে চান না। তাদের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের স্বার্থ কোথায়? তবে একটি বিষয় স্পষ্ট_ দু'চার দিন কিছু না খেয়ে থাকলেও প্রাণ যায় না।
 

No comments

Powered by Blogger.