বিদায়ের সময় সিইসি-কিছু মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব ইসিকে দিলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে

নির্বাচনের সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে ছেড়ে দেওয়া হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। অন্যথায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন। নিজেদের মেয়াদের শেষ কার্যদিবসের কাজ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কথা বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা।


গতকাল সন্ধ্যায় মেয়াদের শেষ দিনের দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশন ত্যাগ করেন সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন।
সিইসি হিসেবে পুনর্নিয়োগের প্রস্তাব পেলে আপত্তি আছে কি না, সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ‘কেউ এখনো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। অপারগতা বা আগ্রহর প্রশ্ন আসছে কেন? ...যদি আসে, তবে দেখার এবং বোঝার বিষয় আছে।’
বিদায়ের আগে ছহুল হোসাইন বলেন, তাঁদের কমিশন কখনো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে কাজ করেনি।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘অসম্ভব নয়। তবে কাজটা কঠিন। এটা করতে গেলে শর্তহীনভাবে কিছু কাজ ইসির ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এসব শর্ত না মানলে সুষ্ঠু নির্বাচন কঠিন হবে।’
বিরোধী দলের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের জবাবে শামসুল হুদা বলেন, ‘যত গালাগালি করেন, ততই আমি মহীয়ান। যত বলবে তত ভালো। বিদেশি সংস্থার জরিপে ৭০ শতাংশ লোক বলেছে, আমি ঠিক কাজ করেছি। এই ৭০ শতাংশের মধ্যে বিএনপিও আছে।’
বিদায়ের সময় অনুভূতি জানাতে গিয়ে সিইসি বলেন, ‘খুবই সুখকর। দেশের জন্য কিছু ভালো কাজ করে গেলাম, রেখে গেলাম। নবম সংসদ নির্বাচন করা ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। এ কাজ সফলভাবে করতে পেরেছি।’ শেষ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় না পাওয়া সম্পর্কে সিইসি বলেন, এতে ভালো হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে সরকারের সঙ্গে কমিশনের সে রকম যোগাযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা প্রসঙ্গে শামসুল হুদা বলেন, ‘ইসির একক কর্তৃত্ব সিইসির কাছে এবং সচিবালয়ের কর্তৃত্ব সচিবের কাছে থাকা বাঞ্ছনীয়। ভবিষ্যতে মহামতি পাঁচজন নিয়ে কমিশন হবে। সে ক্ষেত্রে একটা ফাইল নিয়ে পাঁচ টেবিলে তো দৌড়াদৌড়ি করা যাবে না। প্রশাসনিক কাজের গতি থাকতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির বিভক্তি সম্পর্কে সিইসি বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো এ বিষয়টা ভুলে যাওয়া। যাঁরা ওই সময় আরেকটি দলে গিয়েছিলেন, তাঁরা আজকে ভালো ভালো পদে আসীন।’
এর আগে বিকেলে ছহুল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেননি। সাফল্যই বেশি। তাঁর মধ্যে কোনো হতাশা নেই। কমিশন শতভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। সরকারি কোনো চাপ ছিল না।
বিএনপির একটি অংশকে চিঠি দেওয়ার ব্যাপারে ছহুল হোসাইন বলেন, ‘তখন একটি কাগজ দেখে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষ মহলের চাপেই দলটি ভাগ হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বিএনপি সঠিক ধারায় ফিরে আসায় ইসিও তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটও কিছুটা ভিন্ন ছিল।’
সংবিধান অনুযায়ী, এ টি এম শামসুল হুদা ও ছহুল হোসাইনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ ফেব্রুয়ারি। ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পেয়েছিলেন তাঁঁরা। কিন্তু আজ, কাল ও পরশু সরকারি ছুটি থাকায় এই মেয়াদে তাঁরা আর দাপ্তরিক কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। অন্য কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।
কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই কমিশন মোট ৪০২টি সভা করেছে। সভা থেকে এক হাজার ১৭টি সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ৯৯৪টি বাস্তবায়িত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.