নদীভাঙন-আর কত জনপদ বিলীন হবে?
নিজের বুকের পলি তিল তিল করে জমিয়ে গড়ে তোলা ভূখণ্ডেই নদীরা যে অবহেলা ও বৈরিতার সম্মুখীন হয়েছে, তার মাশুল বঙ্গীয় ব-দ্বীপের অধিবাসীরা কীভাবে গুনছে, বরগুনার ভাঙনপীড়িত অঞ্চল তার খণ্ডচিত্র। রোববার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, পায়রা ও বিষখালী নদীর ভাঙনে ওই জেলার ৫০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জমিজমা ও বসতবাড়ি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়েছে কমবেশি ৫০ হাজার মানুষ।
আমরা জানি, কেবল বরগুনা নয়; বর্ষাকালের সূচনা ও সমাপ্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদ এভাবে 'উদ্দাম নদীর আক্রোশের ক্রমাগত ভাঙনের রেখা'য় পরিণত হয়। অস্বীকার করা যাবে না, পার্বত্যাঞ্চলে চাপের মধ্যে থাকা স্রোতস্বিনী পলল সমভূমিতে এসে আড়মোড়া ভাঙতে চায়; কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদ এখন যে ভাঙনের মুখে পড়ে, তা নিছক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া নয়। দীর্ঘ অবহেলা ও পরিকল্পনাহীনতা কিংবা উন্নয়নের ভ্রান্ত মডেলই আমাদের গ্রাম ও শহরগুলোকে নদীর করাল গ্রাসের কাছে বিপন্ন করে তুলেছে। পলল নদীকে বশে রাখতে হলে একদিকে যেমন পাড় বাঁধতে হয়, অন্যদিকে প্রয়োজন হয় নিয়মিত ড্রেজিং। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে নদীশাসনের কাজ বরাবরই একচোখা। পাড় বাঁধার দিকে যতটা মনোযোগ দেওয়া হয়, ড্রেজিংয়ে তার সিকিভাগও নয়। আবার ভাঙন রোধে নদীতীরে যেসব স্থাপনা তৈরি করা হয়, সেগুলোর গুণগত মান, কৌশল নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই। এসব কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত বৃহত্তম সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ আক্ষরিকভাবেই 'পানিতে ফেলে' বলে রসিকতা চালু রয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বরগুনার বেতাগী বন্দর, কাকচিড়া ও আমতলী বন্দরকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও লাভ হয়নি। এমন নজির আরও রয়েছে। এটা ঠিক যে, এ ধরনের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই; কিন্তু কেবল পাড় বেঁধে নদীভাঙন রোধ করা যে কঠিন, তাও মনে রাখতে হবে। তলদেশ যদি উন্নত হয়, যত বাঁধই দেওয়া হোক না কেন, ওই নদীর পানি জনপদের দিকে ছুটবেই। আমরা জানি, ড্রেজিং নিয়ে সরকারের 'মহাপরিকল্পনা' রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। আরও জনপদ নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আগেই জরুরি কাজটি করার আহ্বান জানাই আমরা। সেটা বরগুনা অঞ্চল থেকেই সূচিত হলে ক্ষতি কি?
No comments