অষ্টম আন্তর্জাতিক লেখক দিবস-২০০৯ by মুহম্মদ নূরুল হুদা
দেখতে দেখতে আট বছর পার হয়ে গেল। আমরা প্রবেশ করলাম নবম বছরে। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯, বৃহস্পতিবার। সারা দেশে পালিত হলো বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব ঘোষিত ৮ম আন্তর্জাতিক লেখক দিবস। শান্তি, প্রগতি, সৃষ্টিশীলতা ও অব্যাহত মানবকল্যাণের বাণী নিয়ে ২০০২ সাল থেকে এই দিবসটি উদ্যাপিত হয়ে আসছে।
লেখক দিবসের প্রথম বর্ষের ঘোষণা ছিল—‘শান্তির পৃথিবী চাই, সৃষ্টিশীলতার বিনাশ নাই’। এই ঘোষণার প্রথম পঙক্তিটি স্থায়ী, দ্বিতীয় পঙক্তিটি প্রতিবছর নবায়নযোগ্য। সর্বকালের মানবসাধনার অভিন্ন লক্ষ্য বিশ্বশান্তি, যা আজও সুদূরপরাহত। হাবিল-কাবিল দুই ভাই মানব-সভ্যতার আদিতে শুরু করেছিল দ্বন্দ্বযুদ্ধ; তা আজ বিস্তৃত হতে হতে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক ও স্নায়বিক যুদ্ধে পর্যবসিত হয়েছে। একক পরাশক্তির এই দুনিয়ায় তৃতীয় বিশ্বের গণমানুষেরা চরম শঙ্কা ও শান্তিহীনতার মধ্যে কালাতিপাত করছে। পশ্চিমা ধনী দেশগুলো কয়েক শতাব্দী জুড়ে সারা বিশ্বে কায়েম করেছিল ঔপনিবেশিক আধিপত্য। এবার তারা তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে ভাতে মারছে, পানিতে মারছে; মারছে আকাশে, বাতাসে বা অন্তরীক্ষেও। তাদের সর্বশেষ মারণাস্ত্রের নাম কার্বন জ্বালানির বর্জ্যজাত গ্লোবাল ওয়ার্মিংসহ বিবিধ প্রক্রিয়ায় পরিবেশ দূষণ, যার প্রভাবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অসংখ্য উপকূলীয় ও দ্বীপরাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। আর তাদেরই বশংবদ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অধিকাংশ ক্ষমতানায়ক ও তাদের পোষ্য পারিষদবর্গ জনগণের ভোট ও ভাগ্য দুটিই লুট করে চলেছে। বিশ্বে তারা দুর্নীতির শীর্ষস্থানগুলো দখল করেও লজ্জিত হচ্ছে না। বরং সুযোগ পেলেই লুণ্ঠনের অভিনব কায়দা রপ্ত করছে। সবচেয়ে অনুন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। হতদরিদ্রের এই দেশেও মুষ্টিমেয় ভাগ্যবান সম্পদের পাহাড় গড়ছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশে কিঞ্চিদধিক তিন দশকের ইতিহাস মূলত জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, রাজনৈতিক হত্যা, গণতন্ত্রের সামরিকায়ন ও ক্ষমতাসীন কর্তৃক জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের ইতিহাস। আমরা মনে করি, মানুষকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত না করার প্রথম শর্ত তার গণতান্ত্রিক অধিকার শতকরা শতভাগ নিশ্চিত করা এবং স্বাধীন নাগরিক হিসেবে তাকে জাতীয় সম্পদের ন্যায্য হিস্সা প্রদান করা, যাতে প্রতিটি মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সাসহ বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। তাহলেই ব্যক্তিমানুষ অন্তত তার নিজের ঘরে শান্তিতে থাকবে। আর তা উদ্দীপ্ত করবে নতুন নতুন সৃষ্টিশীলতা। সভ্যতার অগ্রগতির প্রধান নিয়ামকও মানুষের সৃষ্টিশীলতা। আগেই বলেছি, প্রতিবছর স্বাদেশিক ও বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতকে বিবেচনায় রেখে লেখক দিবসের জন্য একটি সময়ানুগ প্রতিপাদ্য গ্রহণ করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য : ‘গণমানুষের গণতন্ত্র চাই’। আমরা আরও মনে করি, বিশ্বশান্তির বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন প্রতিটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্যময় মানবোন্নয়ন। এক্ষেত্রে গণতন্ত্রকেই বাংলাদেশের লেখক সম্প্রদায় বিকল্পহীন পদ্ধতি বলে মনে করে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও গণতন্ত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। আমরা মুষ্টিমেয় সৌভাগ্যবানের গণতন্ত্র চাই না, আমাদের লক্ষ্য গণমানুষের ভাগ্যবদল ও দিনবদলের জন্য সুষম বণ্টনভিত্তিক সর্বস্তরের জনগণের গণতন্ত্র। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের যে শুভ সূচনা হয়েছে, তার সুফল অবশ্যই গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।
৩১ ডিসেম্বর সকাল ১০.৩০টায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে দেশব্যাপী লেখক দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেছেন প্রবীণ লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক। লেখক দিবসের এবারের আহ্বায়ক কবি অরুণাভ সরকার। উদ্বোধনের পর লেখক দিবসের তাত্পর্য নিয়ে আলোচনা ও শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে বাংলার চিরায়ত পঙক্তিমালার আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতেই এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় সদ্যপ্রয়াত কবি সৈয়দ হায়দারের প্রতি। সত্তর দশকের এই নেপথ্যচারী কবি তার প্রগতিশীলতা, গীতিধর্মিতা ও নান্দনিক পরিশীলনের জন্য আমাদের সমকালীন কবিতার একজন উল্লেখযোগ্য কারুকৃত্। আবৃত্তির পর লেখক র্যালি জাতীয় কবি কাজী নজরুলের মাজারে এসে শেষ হয়। দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাবের সেমিনার কক্ষে আড্ডা, আলোচনা, স্বরচিত কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি চলতে থাকে। সান্ধ্য আড্ডায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের স্বনামধন্য কবি কৃষ্ণা বসু। প্রতি বছরের মতো এবারও লেখক দিবসের মূল অনুষ্ঠান ছিল ঢাকার বাইরে, টাঙ্গাইলে। ৩১ ডিসেম্বর সকালে টাঙ্গাইল শহরের মূল শহীদ মিনারে স্থানীয় লেখকরা পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন। ১ জানুয়ারি ২০১০ সকাল ১১টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রতিনিধিসহ লেখকরা টাঙ্গাইল শহরে বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। তারা বিশ্বশান্তি, গণতন্ত্র ও কলমের অধিকারের পক্ষে স্লোগান দেন। দুপুরে সাধারণ পাঠাগারে লেখক সমাবেশ, আলোচনা ও পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন টাঙ্গাইল বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি মননশীল লেখক নীহার সরকার। স্বাগত ভাষণ দেন কবি মাহমুদ কামাল। অনুষ্ঠানমালায় স্থানীয়ভাবে শতাধিক লেখক ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লেখক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। গত বছর মূল অনুষ্ঠান ছিল চট্টগ্রামে, তার আগের বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জানা গেছে, এবছর চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, দিনাজপুর, কিশোরগঞ্জ, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, গফরগাঁও, নেত্রকানা, জামালপুর, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, কমলগঞ্জ, আদমপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। উল্লেখ্য, সাহিত্যের বিকেন্দ্রীকরণের স্বার্থে লেখক দিবসের মূল অনুষ্ঠান পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। টাঙ্গাইল লেখক সমাবেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছর লেখক দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে ময়মনসিংহে।
লেখক : কবি, প্রফেসর; সভাপতি, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব
৩১ ডিসেম্বর সকাল ১০.৩০টায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে দেশব্যাপী লেখক দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেছেন প্রবীণ লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক। লেখক দিবসের এবারের আহ্বায়ক কবি অরুণাভ সরকার। উদ্বোধনের পর লেখক দিবসের তাত্পর্য নিয়ে আলোচনা ও শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে বাংলার চিরায়ত পঙক্তিমালার আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতেই এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় সদ্যপ্রয়াত কবি সৈয়দ হায়দারের প্রতি। সত্তর দশকের এই নেপথ্যচারী কবি তার প্রগতিশীলতা, গীতিধর্মিতা ও নান্দনিক পরিশীলনের জন্য আমাদের সমকালীন কবিতার একজন উল্লেখযোগ্য কারুকৃত্। আবৃত্তির পর লেখক র্যালি জাতীয় কবি কাজী নজরুলের মাজারে এসে শেষ হয়। দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাবের সেমিনার কক্ষে আড্ডা, আলোচনা, স্বরচিত কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি চলতে থাকে। সান্ধ্য আড্ডায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের স্বনামধন্য কবি কৃষ্ণা বসু। প্রতি বছরের মতো এবারও লেখক দিবসের মূল অনুষ্ঠান ছিল ঢাকার বাইরে, টাঙ্গাইলে। ৩১ ডিসেম্বর সকালে টাঙ্গাইল শহরের মূল শহীদ মিনারে স্থানীয় লেখকরা পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন। ১ জানুয়ারি ২০১০ সকাল ১১টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রতিনিধিসহ লেখকরা টাঙ্গাইল শহরে বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। তারা বিশ্বশান্তি, গণতন্ত্র ও কলমের অধিকারের পক্ষে স্লোগান দেন। দুপুরে সাধারণ পাঠাগারে লেখক সমাবেশ, আলোচনা ও পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন টাঙ্গাইল বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি মননশীল লেখক নীহার সরকার। স্বাগত ভাষণ দেন কবি মাহমুদ কামাল। অনুষ্ঠানমালায় স্থানীয়ভাবে শতাধিক লেখক ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লেখক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। গত বছর মূল অনুষ্ঠান ছিল চট্টগ্রামে, তার আগের বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জানা গেছে, এবছর চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, দিনাজপুর, কিশোরগঞ্জ, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, গফরগাঁও, নেত্রকানা, জামালপুর, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, কমলগঞ্জ, আদমপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। উল্লেখ্য, সাহিত্যের বিকেন্দ্রীকরণের স্বার্থে লেখক দিবসের মূল অনুষ্ঠান পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। টাঙ্গাইল লেখক সমাবেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছর লেখক দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে ময়মনসিংহে।
লেখক : কবি, প্রফেসর; সভাপতি, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব
No comments