থলের বিড়াল কিংবা পচা কুমড়ো by শেখ রোকন
গত ২৭ জানুয়ারি ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধের শিরোনামটি হয়তো স্বস্তিই দিতে চায়, বাস্তবে পিলে চমকে যায়_ বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই (নো নিড টু প্যানিক এবাউট গ্গ্নোবাল ওয়ার্মিং)! শিরোনামের দ্বিতীয় লাইন_ "বিশ্ব অর্থনীতিকে 'ডিকার্বোনাইজ' করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে বাধ্যতামূলক বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই।
" তার মানে, গত দুই দশক ধরে দুনিয়ার প্রায় সবাই যে বিপদ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, তা অহেতুক! এত আয়োজন, এত আলোচনা, দরকষাকষি, শত-সহস্র বিলিয়ন ডলারের হিসাব-নিকাশ, সবই কেবল বুজরুকি!
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং দৈত্যকায় এ দুর্যোগ মোকাবেলার উপায় নিয়ে নানা মুনির নানা মত নতুন নয়। কে না জানে যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গত তিনটি বিশ্ব সম্মেলন_ কোপেনহেগেন থেকে ডারবান_ কেবল বিজ্ঞানী, গবেষক, একটিভিস্ট, সংবাদকর্মীদের মিলনমেলা নয়, ছিল লড়াইয়ের ময়দানও। তবে সবই 'ফ্রেন্ডলি ফায়ার'। মোটাদাগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মেনে নিয়েই সবাই কর্মপরিকল্পনা ও সেটার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করেন।
এর বাইরে আরও কেউ কেউ রয়েছেন, যারা খোদ পরিবর্তনের বিষয়টিকেই উড়িয়ে দিতে চান। তাদের কেউ কেউ পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি স্বীকার করলেও বলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নতুন নয়। কয়েক লাখ বছর পরপর পৃথিবীতে এটা হয়ে আসছে। আবার এমনও আছেন, যারা মনে করেন, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বের প্রবৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য উন্নত বিশ্ব নতুন এ হুজুগ ছেড়েছে। কিন্তু তারা প্রায় নগণ্য। ওইসব মতের মোল্লার দৌড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ। নিদেনপক্ষে চটি বইপত্র। বিশ্বসভায় তাদের জন্য কল্কে বরাদ্দ নেই।
কিন্তু এ ধরনের মত যখন ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মতো কাগজে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়, তখন অন্যদের নড়েচড়ে বসতে হয় বৈকি। 'ট্রিটমেন্ট' দেখে বোঝা যায়, সংবাদপত্রটি আটঘাট বেঁধেই ওই নিবন্ধ ছাপিয়েছে। নিবন্ধটি যে ১৬ জন 'বিজ্ঞানী'র লেখা, সেটা জানাতে 'সম্পাদকের নোট' পর্যন্ত রয়েছে। নিবন্ধকারদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন আদতে এক বিরাট ফন্দি। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার যেমন ট্যাক্স বাড়াতে চায়, তেমনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো চায় তহবিলের বহর বাড়াতে।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মূল ফোকাস যদিও আমেরিকান অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রচারসংখ্যার দৈনিকটির প্রভাব বিশ্বব্যাপ্ত। ফলে ওই নিবন্ধ প্রকাশের পরপরই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সের ৪০ জন খ্যাতিমান জলবায়ু বিজ্ঞানী কড়া প্রতিবাদ জানান। 'জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মতামত ছাপার আগে জলবায়ু বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলুন' শিরোনামের ওই প্রতিবাদপত্রে বিজ্ঞানীরা ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের কাছে প্রশ্ন করেন, আপনারা কি হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবেন? তারা জানান, নিবন্ধটির ১৬ জন লেখকের অনেকেই জলবায়ু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা বা কাজ করেননি। যে দু'একজনের এ সংক্রান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে, তারাও হঠকারী মতামতের জন্য ইতিমধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন।
ওই নিবন্ধের পেছনে যে খোদ ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, তা প্রমাণ হয় যখন পত্রিকা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদপত্রটি ছাপতে অস্বীকার করে। থলের বিড়াল খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ১৬ লেখকের দু'জন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন। আরও ছয়জন ওই কোম্পানির আশীর্বাদপুষ্ট থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত। এটাও মনে রাখা জরুরি, ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মালিক বহুল আলোচিত রুপার্ট মারডক। ফক্স নিজউসহ তার মালিকানাধীন সব সংবাদমাধ্যম বরাবরই নিয়মনীতি না মানার পক্ষে। সাংবাদিকতার নৈতিকতা ছুড়ে ফেলতে গিয়ে কিছু দিন আগে তার মালিকানাধীন ওয়ার্ল্ড নিজউ কেবল বন্ধই হয়নি, ফৌজদারি মামলার ঘানি টানছে এখনও। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উল্টো নিবন্ধ মারডকের নতুন কীর্তি মাত্র।
পশ্চিমা মুলকের এত কাণ্ড নিয়ে বাংলায় যদি এক কথা বলি_ ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল হাটে হাঁড়িই ভাঙতে চেয়েছিল। আদতে ফাটিয়েছেন পচা কুমড়ো।
skrokon@gmail.com
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং দৈত্যকায় এ দুর্যোগ মোকাবেলার উপায় নিয়ে নানা মুনির নানা মত নতুন নয়। কে না জানে যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গত তিনটি বিশ্ব সম্মেলন_ কোপেনহেগেন থেকে ডারবান_ কেবল বিজ্ঞানী, গবেষক, একটিভিস্ট, সংবাদকর্মীদের মিলনমেলা নয়, ছিল লড়াইয়ের ময়দানও। তবে সবই 'ফ্রেন্ডলি ফায়ার'। মোটাদাগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মেনে নিয়েই সবাই কর্মপরিকল্পনা ও সেটার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করেন।
এর বাইরে আরও কেউ কেউ রয়েছেন, যারা খোদ পরিবর্তনের বিষয়টিকেই উড়িয়ে দিতে চান। তাদের কেউ কেউ পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি স্বীকার করলেও বলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নতুন নয়। কয়েক লাখ বছর পরপর পৃথিবীতে এটা হয়ে আসছে। আবার এমনও আছেন, যারা মনে করেন, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বের প্রবৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য উন্নত বিশ্ব নতুন এ হুজুগ ছেড়েছে। কিন্তু তারা প্রায় নগণ্য। ওইসব মতের মোল্লার দৌড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ। নিদেনপক্ষে চটি বইপত্র। বিশ্বসভায় তাদের জন্য কল্কে বরাদ্দ নেই।
কিন্তু এ ধরনের মত যখন ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মতো কাগজে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়, তখন অন্যদের নড়েচড়ে বসতে হয় বৈকি। 'ট্রিটমেন্ট' দেখে বোঝা যায়, সংবাদপত্রটি আটঘাট বেঁধেই ওই নিবন্ধ ছাপিয়েছে। নিবন্ধটি যে ১৬ জন 'বিজ্ঞানী'র লেখা, সেটা জানাতে 'সম্পাদকের নোট' পর্যন্ত রয়েছে। নিবন্ধকারদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন আদতে এক বিরাট ফন্দি। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার যেমন ট্যাক্স বাড়াতে চায়, তেমনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো চায় তহবিলের বহর বাড়াতে।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মূল ফোকাস যদিও আমেরিকান অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রচারসংখ্যার দৈনিকটির প্রভাব বিশ্বব্যাপ্ত। ফলে ওই নিবন্ধ প্রকাশের পরপরই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সের ৪০ জন খ্যাতিমান জলবায়ু বিজ্ঞানী কড়া প্রতিবাদ জানান। 'জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মতামত ছাপার আগে জলবায়ু বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলুন' শিরোনামের ওই প্রতিবাদপত্রে বিজ্ঞানীরা ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের কাছে প্রশ্ন করেন, আপনারা কি হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবেন? তারা জানান, নিবন্ধটির ১৬ জন লেখকের অনেকেই জলবায়ু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা বা কাজ করেননি। যে দু'একজনের এ সংক্রান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে, তারাও হঠকারী মতামতের জন্য ইতিমধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন।
ওই নিবন্ধের পেছনে যে খোদ ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, তা প্রমাণ হয় যখন পত্রিকা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদপত্রটি ছাপতে অস্বীকার করে। থলের বিড়াল খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ১৬ লেখকের দু'জন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন। আরও ছয়জন ওই কোম্পানির আশীর্বাদপুষ্ট থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত। এটাও মনে রাখা জরুরি, ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মালিক বহুল আলোচিত রুপার্ট মারডক। ফক্স নিজউসহ তার মালিকানাধীন সব সংবাদমাধ্যম বরাবরই নিয়মনীতি না মানার পক্ষে। সাংবাদিকতার নৈতিকতা ছুড়ে ফেলতে গিয়ে কিছু দিন আগে তার মালিকানাধীন ওয়ার্ল্ড নিজউ কেবল বন্ধই হয়নি, ফৌজদারি মামলার ঘানি টানছে এখনও। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উল্টো নিবন্ধ মারডকের নতুন কীর্তি মাত্র।
পশ্চিমা মুলকের এত কাণ্ড নিয়ে বাংলায় যদি এক কথা বলি_ ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল হাটে হাঁড়িই ভাঙতে চেয়েছিল। আদতে ফাটিয়েছেন পচা কুমড়ো।
skrokon@gmail.com
No comments