অধিকার আর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চোখে ২০০৯- দিন বদলে গেছে খারাপের দিকে
মহাজোট সরকারের বহুলালোচিত দিন বদলের পালা নিয়ে যারা হাসি-তামাশা করে থাকেন, তাদের উদাসীনতার ফাঁক দিয়ে দিন যে আসলেই বদলে গেছে এ তথ্য পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৯ সাল সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে।
অবশ্য ১ জানুয়ারি শুক্রবার ঢাকায় আলাদা আলাদাভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন দুটি থেকে জানা যায়, দিন বদল হয়েছে বটে, তবে সেই বদলে যাওয়া দিন আমাদের মঙ্গলের বৃন্ত থেকে চ্যুত করে নিয়ে গেছে অমঙ্গলের আবর্তে। অধিকার-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৫৪ জন। এর মধ্যে ১২৯ জন নিহত হয়েছেন ক্রসফায়ারে। সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ও নির্যাতনে মারা গেছেন ৯৬, আহত হয়েছেন ৭৯ ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৫ জন। এছাড়া সীমান্তে আরও ৯২ জন নানান ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৬৪ জন নারী ও ৩৩ জন মেয়ে শিশু। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ‘মানবাধিকার বাংলাদেশ-২০০৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২২৯ জন। এ সময় ১৭৫ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এর মধ্যে খুন হয়েছেন ৩ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৩৯ জন, এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ১৫৫ জন। ৬২ জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
অধিকার এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র অরাজনৈতিক সংগঠন। তাই সংগঠন দুটি যখন মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে প্রণীত বার্ষিক প্রতিবেদনে একটা সার্বিক চিত্র তুলে ধরে, তখন ব্যাপারটাকে ফুত্কারে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে না। উভয় প্রতিবেদনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে সংখ্যাগত তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। তথ্য সংগ্রহে লজিস্টিক সীমাবদ্ধতার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। তবে প্রতিবেদন দুটিতে যে অতিরঞ্জন নেই তার প্রমাণ হচ্ছে, ঘটনাগুলোর স্থানকালপাত্রসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রতিবেদনে রয়েছে। অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও আইন ও সালিশ কেন্দ্র আওয়ামী রাজনীতির প্রতি খানিকটা নমনীয় বলে জনশ্রুতি আছে। তাদের রিপোর্টেই বলা হয়েছে, গত ১৪ বছরের মধ্যে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০০৯ সালে ক্রসফায়ার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক সহিংসতা, সাংবাদিক ও নারী নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা বেশি ঘটেছে। মত প্রকাশ, সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার নিরপেক্ষ আচরণ করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে রিপোর্টে গত বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৩বার ১৪৪ ধারা জারি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দুর্নীতি বন্ধ করতে ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এক বছরে তা পূরণ হয়নি। ক্রসফায়ার চলছে নতুন নামে; আর দুদক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অকার্যকর হয়ে রয়েছে।
অভিযোগগুলো সরাসরি এবং গুরুতর। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত থাকায় এসব অভিযোগ এড়ানো যাবে না। আমরা যদি আমাদের সমাজকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করি, তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি ঘটনা ঘটলেও সরকার তার জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য। গত বছর সরকারের হাতে এবং সরকারের আওতাবহির্ভূতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভূরি ভূরি ঘটনা ঘটেছে। চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি ঘটনায় পদে পদে লঙ্ঘিত হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঘটনা উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। গত এক বছরে ভারতের বিএসএফ ‘শত্রুরাষ্ট্র’ পাকিস্তানের তুলনায় ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ বাংলাদেশের সীমান্তে যে অনেক বেশি রক্তপিপাসু ছিল, এটাই বাস্তবতা। পাকিস্তান যদি বিএসএফের শত্রুতামূলক হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে পেরে থাকে তবে বাংলাদেশ কেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ খুনোখুনি থামাতে পারছে না, এর উত্তর দেয়ার দায় সরকারের। অন্যথায় সরকারকে স্বীকার করে নিতে হবে নিজেদের ব্যর্থতা। আলোচ্য প্রতিবেদনে অনেক তথ্য থাকলেও এগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার দলিত হওয়ার পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। বাস্তব পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে অনিশ্চিত এবং ভয়াবহ। আসলেই চলে যাওয়া ২০০৯ সালের সঙ্গে তার পূর্ববর্তী দিনগুলোর তেমন কোনো মিল নেই। কিন্তু এমন দিনবদল তো এদেশের মানুষ চায়নি।
অধিকার এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র অরাজনৈতিক সংগঠন। তাই সংগঠন দুটি যখন মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে প্রণীত বার্ষিক প্রতিবেদনে একটা সার্বিক চিত্র তুলে ধরে, তখন ব্যাপারটাকে ফুত্কারে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে না। উভয় প্রতিবেদনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে সংখ্যাগত তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। তথ্য সংগ্রহে লজিস্টিক সীমাবদ্ধতার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। তবে প্রতিবেদন দুটিতে যে অতিরঞ্জন নেই তার প্রমাণ হচ্ছে, ঘটনাগুলোর স্থানকালপাত্রসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রতিবেদনে রয়েছে। অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও আইন ও সালিশ কেন্দ্র আওয়ামী রাজনীতির প্রতি খানিকটা নমনীয় বলে জনশ্রুতি আছে। তাদের রিপোর্টেই বলা হয়েছে, গত ১৪ বছরের মধ্যে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০০৯ সালে ক্রসফায়ার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক সহিংসতা, সাংবাদিক ও নারী নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা বেশি ঘটেছে। মত প্রকাশ, সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার নিরপেক্ষ আচরণ করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে রিপোর্টে গত বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৩বার ১৪৪ ধারা জারি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দুর্নীতি বন্ধ করতে ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এক বছরে তা পূরণ হয়নি। ক্রসফায়ার চলছে নতুন নামে; আর দুদক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অকার্যকর হয়ে রয়েছে।
অভিযোগগুলো সরাসরি এবং গুরুতর। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত থাকায় এসব অভিযোগ এড়ানো যাবে না। আমরা যদি আমাদের সমাজকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করি, তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি ঘটনা ঘটলেও সরকার তার জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য। গত বছর সরকারের হাতে এবং সরকারের আওতাবহির্ভূতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভূরি ভূরি ঘটনা ঘটেছে। চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি ঘটনায় পদে পদে লঙ্ঘিত হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঘটনা উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। গত এক বছরে ভারতের বিএসএফ ‘শত্রুরাষ্ট্র’ পাকিস্তানের তুলনায় ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ বাংলাদেশের সীমান্তে যে অনেক বেশি রক্তপিপাসু ছিল, এটাই বাস্তবতা। পাকিস্তান যদি বিএসএফের শত্রুতামূলক হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে পেরে থাকে তবে বাংলাদেশ কেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ খুনোখুনি থামাতে পারছে না, এর উত্তর দেয়ার দায় সরকারের। অন্যথায় সরকারকে স্বীকার করে নিতে হবে নিজেদের ব্যর্থতা। আলোচ্য প্রতিবেদনে অনেক তথ্য থাকলেও এগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার দলিত হওয়ার পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। বাস্তব পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে অনিশ্চিত এবং ভয়াবহ। আসলেই চলে যাওয়া ২০০৯ সালের সঙ্গে তার পূর্ববর্তী দিনগুলোর তেমন কোনো মিল নেই। কিন্তু এমন দিনবদল তো এদেশের মানুষ চায়নি।
No comments