নতুন বছরটি কেমন যাবে by ড. তারেক শামসুর রেহমান
নতুন বছরটি কেমন যাবে, এ জিজ্ঞাসা এখন অনেকের। গেল বছরটি আমরা পার করেছি অনেকটা অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। বিশ্বের কোথাও কোনো ভালো খবর ছিল না। কোপেনহেগেন থেকে শুরু করে কাবুল—কোনো জায়গা থেকেই কোনো ভালো খবর আসেনি।
প্রশ্ন তাই সঙ্গত কারণেই—চলতি বছরটিও এমনি যাবে কিনা? চলতি বছরও কি বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা থাকবে? শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। প্রত্যাশা ছিল, বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে তিনি একটি ভূমিকা পালন করবেন; কিন্তু যুদ্ধ আরও প্রলম্বিত করতে তিনি আফগানিস্তানে আরও ৩০ হাজার সৈন্য পাঠালেন। বিশ্ববাসীকে এক সাগর হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়ে কোপেনহেগেনে ৪টি দেশের সঙ্গে একটি ‘সমঝোতা’ করে তা চাপিয়ে দিলেন তিনি গরিব দেশগুলোর ওপর। গেল বছর তাই মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। চলতি বছর বেশকিছু বিষয়ের ওপর দৃষ্টি থাকবে সাধারণ মানুষের। এক. মেক্সিকোতে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে একটি ‘জলবায়ু চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হবে কিনা; দুই. আফগানিস্তান ও ইরাকে আত্মঘাতী বোমাবাজি বন্ধ হবে কিনা; তিন. ইরান ও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যে উত্তেজনা তা হ্রাস পাবে কিনা; চার. অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব বিরাজ করছিল তা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব কিনা; পাঁচ. লাতিন আমেরিকায় একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা; ছয়. দক্ষিণ এশিয়া কি সঙ্কটমুক্ত থাকবে? আগামী বারো মাস এসব বিষয় সংবাদপত্রে আলোচিত হতে থাকবে বার বার।
কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে কোনো চুক্তি হয়নি কোন্ দেশ কী পরিমাণ কার্বন নির্গমন হ্রাস করবে, সে ব্যাপারে। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, সে ব্যাপারে মেক্সিকোতে কোনো চুক্তি হবে কিনা, সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে বিশ্ববাসীর। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা প্রত্যাশা করে বিশ্ববাসী। ওবামার জন্যও বিষয়টি যে খুব সহজ, তা নয়। মার্কিন কংগ্রেস তাকে সমর্থন করবে, এটা বলা যায় না। আর কংগ্রেসের সমর্থন না পেলে তিনি কোনো চুক্তিতে যাবেন না। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি কার্বন-ডাইঅক্সাইড উদিগরণ করে। এর পরের অবস্থান চীনের। ভারতের অবস্থান ৫ম। সুতরাং গরিব ১৩০টি দেশ কোপেনহেগেন ‘সমঝোতা’ মানবে না। অথচ ‘সমঝোতাকারী’ দেশগুলো যতটা না বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দরিদ্র দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার অনেক বেশি। একটি পরিসংখ্যান দিলে তা বুঝতে সহজ হবে। কিয়োটো প্রটোকলে এনেক্স-১ এ উল্লিখিত উন্নত ধনী দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের হার শতকরা ৫১ ভাগ। বিশ্বের জিডিপির ৭৫ ভাগ তাদের, অথচ লোকসংখ্যা মাত্র ১৯ ভাগ। অন্যদিকে গ্রুপ-৭৭ (১৩০টি দেশ) একত্রে তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শতকরা ৪২ ভাগ। বিশ্ব জিডিপির মাত্র ১৯ ভাগ তাদের, অথচ লোকসংখ্যা ৭৬ ভাগ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর কার্বন নিঃসরণের হার মাত্র ১ ভাগ। তারা বিশ্ব জিডিপির ১ ভাগের অধিকারী ও লোকসংখ্যাও বিশ্বের মাত্র ১ ভাগ। আফ্রিকান ইউনিয়নভুক্ত ৩৯টি দেশের কার্বন নিঃসরণ হার মাত্র ৩ ভাগ। তারা বিশ্ব জনসংখ্যার ১৩ ভাগ হলেও বিশ্ব জিডিপির মাত্র ২ ভাগের অধিকারী। মাথাপিছু কার্বন নিগর্মনের পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের বেশি (বছরে ২০ বিলিয়ন মেট্রিক টন, ২০০৫)। চীনের ৬ বিলিয়ন মেট্রিক টন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ৮ বিলিয়ন মেট্রিক টন ও ভারতের ২ বিলিয়ন মেট্রিক টন। ২০২০ সালে তা বেড়ে ৯ বিলিয়ন মেট্রিক টনে (চীন) উন্নীত হবে। যুক্তরাষ্ট্র তা কমিয়ে আনবে ৫ বিলিয়ন মেট্রিক টনে। এই পরিসংখ্যানই বলে, উন্নত দেশগুলোরই দায়িত্ব বেশি কার্বন হ্রাস করার ব্যাপারে কোনো বড় উদ্যোগ নেয়ার। চীন ও ভারত তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এখানে চীন তার সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে। চীন তার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। এজন্য তাকে কয়লার ওপর নির্ভর করতে হবে। আর কয়লা ব্যবহার করলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ বেশি হবে—এটাই স্বাভাবিক। ভারতের অবস্থানও অনেকটা সেরকম। অথচ এ সমস্যা নেই দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মাঝে রয়েছে। সুতরাং নিঃসরণের মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া ও আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকা জরুরি। সেটাই চেয়েছিল দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো। তাদের দাবি ছিল ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৮৫ ভাগ হ্রাস করার। গ্রুপ-৭৭ ভুক্ত দেশগুলো চেয়েছে এই মাত্রা ৪২ ভাগ হ্রাস করা। কিয়োটোতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কোন্ দেশ কতটুকু হ্রাস করবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল; কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ২০১২ সালে কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তাই চাই একটি নতুন চুক্তি। এখন আমাদের মেক্সিকো সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ১০ হাজার কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখানেও রয়ে গেছে নানা প্রশ্ন। ওবামা এই তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই তহবিল হবে। সুতরাং তাকে কংগ্রেসে জবাবদিহি করতে হবে। এজন্য ‘স্বচ্ছতা’ প্রয়োজন। আরও কথা থেকে যায়। ধনী দেশগুলো এই তহবিলে কে কত অর্থ জোগাবে—তা নির্ধারিত হয়নি। প্রস্তাবিত অর্থ নিয়েও রয়ে গেছে নানা প্রশ্ন। অর্থ বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে আদৌ কোনো সাহায্য করবে না। যা প্রয়োজন ছিল, তা হচ্ছে একটি চুক্তি করে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়া। এটা হয়নি। এটা একটা বড় ব্যর্থতা। ওই সম্মেলন আবারও প্রমাণ করল, গরিব দেশগুলোকে কোন্ দৃষ্টিতে দেখে ধনী দেশগুলো। এখন গরিব দেশগুলো নিজেরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে না দাঁড়ায়, তাহলে জলবায়ুসহ আগামীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে যায়—এমন কোনো চুক্তিও করতে দেবে না ধনী দেশগুলো।
গরিব দেশগুলোর জন্য গেল বছর কোনো ভালো সংবাদ ছিল না। ঠিক তেমনি চলতি ২০১০ সালেও কোনো ভালো সংবাদ থাকবে না। এরই মধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যাবে। ভারত যেখানে চাল রফতানি করত, এখন দেশটিকে চাল আমদানি করতে হবে। ফাও বলেছিল, ২০০৯ সালে ১ বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষুধায় আক্রান্ত, আর ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ অপুষ্টির শিকার। ২০১০ সালে অপুষ্টির সংখ্যা দাঁড়াবে ৯১৫ মিলিয়নে। ফাও হিসাব করে দেখিয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্য থেকে ৫৮টি দেশে শতকরা ২৪ ভাগ হারে (২০০৮ সালের তুলনায়) নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। ফাও বলছে, ২০৫০ সালের দিকে বর্তমানের চাহিদার চাইতে আরও শতকরা ৭০ ভাগ উত্পাদন বাড়াতে হবে। নতুবা চাহিদা মিটবে না। চলতি ২০১০ সালে খাদ্যের চাহিদা তাই বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক। আগামী ৩ বছর খাদ্যশস্য উত্পাদনে ফাও’র হিসাব অনুযায়ী ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই বিনিয়োগ ২০০৯ সালে হয়নি। ২০১০ সালে হবে—তাও আশা করা যায় না।
উত্তেজনা ছিল গেল বছর। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, চীনের উইঘর বিদ্রোহ, শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ, ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের সম্প্রসারণ, নেপালে মাওবাদীদের নতুন করে সংগঠিত হওয়া, পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমাবাজদের তত্পরতা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে গেল বছর উত্তেজনা ছিল। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও কিছুটা উত্তেজনা থাকবে। ইরানে উত্তেজনার মাত্রা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। একদিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম প্রার্থী মীর হোসাইন মুসাভির পরাজয়কে কেন্দ্র করে সেখানে দীর্ঘদিন উত্তেজনা বজায় থাকে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আহমাদিনেজাদকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি ইরানের জনগোষ্ঠীর একটা অংশ। এরা দিনের পর দিন বিক্ষোভ করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। একই সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও কোনো সমঝোতা হয়নি গেল বছর। ইরানের ওপরও চলতি বছর পশ্চিমা বিশ্বের ‘চাপ’ বাড়বে। ইরানের মতো উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে জটিলতা রয়ে গিয়েছিল। চলতি বছর ইরান ও উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি বার বার আলোচিত হতে থাকবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যদি একটি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে, তাহলে তা বিশ্বে উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়েই চলবে।
চলতি বছর এশিয়ায় উত্তেজনা বজায় থাকবে। ভারতে মাওবাদীদের সশস্ত্র তত্পরতার দিকে অনেকেরই দৃষ্টি থাকবে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেল বছর মাওবাদীদের তত্পরতার ব্যাপারে একাধিকবার তার উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। ভারত বড় অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে; কিন্তু তারপরও ভারতে দারিদ্র্য বাড়ছে। শহর আর গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সেখানে বড় ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য বেশি, এ কারণেই মাওবাদীদের তত্পরতা গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে। ভারতের কোনো কোনো রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল এখন নিয়ন্ত্রণ করে মাওবাদীরা। এই মাওবাদী আন্দোলন ভারতের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। মাওবাদীরা নেপালেও অন্যতম একটি শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়ে মাওবাদীরা এখন বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। সরকারের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হচ্ছে না। এই সমঝোতা যদি না হয়, যদি বৈরিতা অব্যাহত থাকে, তাহলে নেপালের ‘নয়া গণতন্ত্র’ ঝুঁকির মুখে থাকবে। এরই মধ্যে মাওবাদীদের ডাকে খোদ কাঠমান্ডুতে হরতাল পালিত হয়েছে। চলতি বছর পাকিস্তানে ‘নানা ঘটনা’ ঘটতে পারে। একদিকে আত্মঘাতী বোমা হামলা যেমন খোদ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে একটি বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে, ঠিক তেমনি প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির ‘রাজনৈতিক অস্তিত্বও’ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ জারদারি তথা পিপিপির বেশ ক’জন মন্ত্রীর দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে যে অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন, সুপ্রিমকোর্ট সম্প্রতি তা অবৈধ ও অসাংবিধানিক হিসেবে রায় দিয়েছে। এর ফলে জারদারির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। চলতি বছর অতি ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কিয়ানির টার্ম শেষ হবে। একজন নয়া সেনাপ্রধান দায়িত্ব নেবেন এ বছরের শেষের দিকে। পর্দার অন্তরালে থেকে মুসলিম লীগ প্রধান নওয়াজ শরীফ একটি ভূমিকা পালন করছেন। জারদারি চেষ্টা করছেন নওয়াজ শরীফের সঙ্গে একটা সহাবস্থানে যেতে। জারদারি অনেক ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়েও দিয়েছেন; কিন্তু তার শেষ রক্ষা হবে কিনা, বলা মুশকিল।
ওবামার জন্য দুটি বড় সমস্যা হচ্ছে ইরাক ও আফগানিস্তান। ২০১০ সালেই ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের ওয়াদা তিনি করেছিলেন, কিন্তু এই ওয়াদা তিনি রক্ষা করতে পারবেন বলে মনে হয় না। আর আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধের কোনো সম্ভাবনা তিনি সৃষ্টি করতে পারেননি। তার সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত সেখানে যুদ্ধকে আরও প্রলম্বিত করবে। কারজাইকে ওবামা প্রশাসন এখনও সমর্থন করে যাচ্ছে বটে; কিন্তু কারজাই’র কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি যদি দুর্নীতি বন্ধের ব্যাপারে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেন, তাহলে আফগানিস্তানের প্রশাসনে পরিবর্তন আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কোনো কোনো মহল থেকে কারজাইকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ কারণে আফগানিস্তানের ঘটনাবলির প্রতি নজর থাকবে অনেকের। ওবামার জন্য একটি বড় সমস্যা ভেনিজুয়েলার প্রসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ। শ্যাভেজের অনেক কর্মকাণ্ড ওবামা প্রশাসনের চিন্তার কারণ। এরই মধ্যে লাতিন আমেরিকার ১০টি দেশকে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন আলাদা বাণিজ্য সংস্থা ALBA ev The Bolivarian Alliance of the Americans । যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আধিপত্য কমানোই অখইঅ’র উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য কমানোর উদ্দেশে ভেনিজুয়েলার উদ্যোগে গঠিত হয়েছে আলাদা অর্থ ব্যবস্থা (SUCRE) । ALBA ও SUCRE সফলতা পেলে, তা হবে ‘ডলার সাম্রাজ্যের’ বিরুদ্ধে এক বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু তা-ই নয়, শ্যাভেজ ইরানের সঙ্গেও আলাদাভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলছেন, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের জন্য আগামীদিনে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখা দিতে পারে। সুতরাং নানা কারণে চলতি বছর আলোচিত থাকবে এবং সঙ্গত কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভূমিকা’র দিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের।
লেখক : নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক
ই-মেইল : tsrahmanbd@yahoo.com
কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে কোনো চুক্তি হয়নি কোন্ দেশ কী পরিমাণ কার্বন নির্গমন হ্রাস করবে, সে ব্যাপারে। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, সে ব্যাপারে মেক্সিকোতে কোনো চুক্তি হবে কিনা, সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে বিশ্ববাসীর। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা প্রত্যাশা করে বিশ্ববাসী। ওবামার জন্যও বিষয়টি যে খুব সহজ, তা নয়। মার্কিন কংগ্রেস তাকে সমর্থন করবে, এটা বলা যায় না। আর কংগ্রেসের সমর্থন না পেলে তিনি কোনো চুক্তিতে যাবেন না। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি কার্বন-ডাইঅক্সাইড উদিগরণ করে। এর পরের অবস্থান চীনের। ভারতের অবস্থান ৫ম। সুতরাং গরিব ১৩০টি দেশ কোপেনহেগেন ‘সমঝোতা’ মানবে না। অথচ ‘সমঝোতাকারী’ দেশগুলো যতটা না বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দরিদ্র দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার অনেক বেশি। একটি পরিসংখ্যান দিলে তা বুঝতে সহজ হবে। কিয়োটো প্রটোকলে এনেক্স-১ এ উল্লিখিত উন্নত ধনী দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের হার শতকরা ৫১ ভাগ। বিশ্বের জিডিপির ৭৫ ভাগ তাদের, অথচ লোকসংখ্যা মাত্র ১৯ ভাগ। অন্যদিকে গ্রুপ-৭৭ (১৩০টি দেশ) একত্রে তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শতকরা ৪২ ভাগ। বিশ্ব জিডিপির মাত্র ১৯ ভাগ তাদের, অথচ লোকসংখ্যা ৭৬ ভাগ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর কার্বন নিঃসরণের হার মাত্র ১ ভাগ। তারা বিশ্ব জিডিপির ১ ভাগের অধিকারী ও লোকসংখ্যাও বিশ্বের মাত্র ১ ভাগ। আফ্রিকান ইউনিয়নভুক্ত ৩৯টি দেশের কার্বন নিঃসরণ হার মাত্র ৩ ভাগ। তারা বিশ্ব জনসংখ্যার ১৩ ভাগ হলেও বিশ্ব জিডিপির মাত্র ২ ভাগের অধিকারী। মাথাপিছু কার্বন নিগর্মনের পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের বেশি (বছরে ২০ বিলিয়ন মেট্রিক টন, ২০০৫)। চীনের ৬ বিলিয়ন মেট্রিক টন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ৮ বিলিয়ন মেট্রিক টন ও ভারতের ২ বিলিয়ন মেট্রিক টন। ২০২০ সালে তা বেড়ে ৯ বিলিয়ন মেট্রিক টনে (চীন) উন্নীত হবে। যুক্তরাষ্ট্র তা কমিয়ে আনবে ৫ বিলিয়ন মেট্রিক টনে। এই পরিসংখ্যানই বলে, উন্নত দেশগুলোরই দায়িত্ব বেশি কার্বন হ্রাস করার ব্যাপারে কোনো বড় উদ্যোগ নেয়ার। চীন ও ভারত তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এখানে চীন তার সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে। চীন তার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। এজন্য তাকে কয়লার ওপর নির্ভর করতে হবে। আর কয়লা ব্যবহার করলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ বেশি হবে—এটাই স্বাভাবিক। ভারতের অবস্থানও অনেকটা সেরকম। অথচ এ সমস্যা নেই দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মাঝে রয়েছে। সুতরাং নিঃসরণের মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া ও আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকা জরুরি। সেটাই চেয়েছিল দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো। তাদের দাবি ছিল ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৮৫ ভাগ হ্রাস করার। গ্রুপ-৭৭ ভুক্ত দেশগুলো চেয়েছে এই মাত্রা ৪২ ভাগ হ্রাস করা। কিয়োটোতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কোন্ দেশ কতটুকু হ্রাস করবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল; কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ২০১২ সালে কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তাই চাই একটি নতুন চুক্তি। এখন আমাদের মেক্সিকো সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ১০ হাজার কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখানেও রয়ে গেছে নানা প্রশ্ন। ওবামা এই তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই তহবিল হবে। সুতরাং তাকে কংগ্রেসে জবাবদিহি করতে হবে। এজন্য ‘স্বচ্ছতা’ প্রয়োজন। আরও কথা থেকে যায়। ধনী দেশগুলো এই তহবিলে কে কত অর্থ জোগাবে—তা নির্ধারিত হয়নি। প্রস্তাবিত অর্থ নিয়েও রয়ে গেছে নানা প্রশ্ন। অর্থ বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে আদৌ কোনো সাহায্য করবে না। যা প্রয়োজন ছিল, তা হচ্ছে একটি চুক্তি করে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়া। এটা হয়নি। এটা একটা বড় ব্যর্থতা। ওই সম্মেলন আবারও প্রমাণ করল, গরিব দেশগুলোকে কোন্ দৃষ্টিতে দেখে ধনী দেশগুলো। এখন গরিব দেশগুলো নিজেরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে না দাঁড়ায়, তাহলে জলবায়ুসহ আগামীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে যায়—এমন কোনো চুক্তিও করতে দেবে না ধনী দেশগুলো।
গরিব দেশগুলোর জন্য গেল বছর কোনো ভালো সংবাদ ছিল না। ঠিক তেমনি চলতি ২০১০ সালেও কোনো ভালো সংবাদ থাকবে না। এরই মধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যাবে। ভারত যেখানে চাল রফতানি করত, এখন দেশটিকে চাল আমদানি করতে হবে। ফাও বলেছিল, ২০০৯ সালে ১ বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষুধায় আক্রান্ত, আর ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ অপুষ্টির শিকার। ২০১০ সালে অপুষ্টির সংখ্যা দাঁড়াবে ৯১৫ মিলিয়নে। ফাও হিসাব করে দেখিয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্য থেকে ৫৮টি দেশে শতকরা ২৪ ভাগ হারে (২০০৮ সালের তুলনায়) নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। ফাও বলছে, ২০৫০ সালের দিকে বর্তমানের চাহিদার চাইতে আরও শতকরা ৭০ ভাগ উত্পাদন বাড়াতে হবে। নতুবা চাহিদা মিটবে না। চলতি ২০১০ সালে খাদ্যের চাহিদা তাই বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক। আগামী ৩ বছর খাদ্যশস্য উত্পাদনে ফাও’র হিসাব অনুযায়ী ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই বিনিয়োগ ২০০৯ সালে হয়নি। ২০১০ সালে হবে—তাও আশা করা যায় না।
উত্তেজনা ছিল গেল বছর। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, চীনের উইঘর বিদ্রোহ, শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ, ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের সম্প্রসারণ, নেপালে মাওবাদীদের নতুন করে সংগঠিত হওয়া, পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমাবাজদের তত্পরতা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে গেল বছর উত্তেজনা ছিল। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও কিছুটা উত্তেজনা থাকবে। ইরানে উত্তেজনার মাত্রা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। একদিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম প্রার্থী মীর হোসাইন মুসাভির পরাজয়কে কেন্দ্র করে সেখানে দীর্ঘদিন উত্তেজনা বজায় থাকে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আহমাদিনেজাদকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি ইরানের জনগোষ্ঠীর একটা অংশ। এরা দিনের পর দিন বিক্ষোভ করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। একই সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও কোনো সমঝোতা হয়নি গেল বছর। ইরানের ওপরও চলতি বছর পশ্চিমা বিশ্বের ‘চাপ’ বাড়বে। ইরানের মতো উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে জটিলতা রয়ে গিয়েছিল। চলতি বছর ইরান ও উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি বার বার আলোচিত হতে থাকবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যদি একটি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে, তাহলে তা বিশ্বে উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়েই চলবে।
চলতি বছর এশিয়ায় উত্তেজনা বজায় থাকবে। ভারতে মাওবাদীদের সশস্ত্র তত্পরতার দিকে অনেকেরই দৃষ্টি থাকবে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেল বছর মাওবাদীদের তত্পরতার ব্যাপারে একাধিকবার তার উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। ভারত বড় অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে; কিন্তু তারপরও ভারতে দারিদ্র্য বাড়ছে। শহর আর গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সেখানে বড় ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য বেশি, এ কারণেই মাওবাদীদের তত্পরতা গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে। ভারতের কোনো কোনো রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল এখন নিয়ন্ত্রণ করে মাওবাদীরা। এই মাওবাদী আন্দোলন ভারতের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। মাওবাদীরা নেপালেও অন্যতম একটি শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়ে মাওবাদীরা এখন বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। সরকারের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হচ্ছে না। এই সমঝোতা যদি না হয়, যদি বৈরিতা অব্যাহত থাকে, তাহলে নেপালের ‘নয়া গণতন্ত্র’ ঝুঁকির মুখে থাকবে। এরই মধ্যে মাওবাদীদের ডাকে খোদ কাঠমান্ডুতে হরতাল পালিত হয়েছে। চলতি বছর পাকিস্তানে ‘নানা ঘটনা’ ঘটতে পারে। একদিকে আত্মঘাতী বোমা হামলা যেমন খোদ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে একটি বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে, ঠিক তেমনি প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির ‘রাজনৈতিক অস্তিত্বও’ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ জারদারি তথা পিপিপির বেশ ক’জন মন্ত্রীর দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে যে অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন, সুপ্রিমকোর্ট সম্প্রতি তা অবৈধ ও অসাংবিধানিক হিসেবে রায় দিয়েছে। এর ফলে জারদারির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। চলতি বছর অতি ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কিয়ানির টার্ম শেষ হবে। একজন নয়া সেনাপ্রধান দায়িত্ব নেবেন এ বছরের শেষের দিকে। পর্দার অন্তরালে থেকে মুসলিম লীগ প্রধান নওয়াজ শরীফ একটি ভূমিকা পালন করছেন। জারদারি চেষ্টা করছেন নওয়াজ শরীফের সঙ্গে একটা সহাবস্থানে যেতে। জারদারি অনেক ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়েও দিয়েছেন; কিন্তু তার শেষ রক্ষা হবে কিনা, বলা মুশকিল।
ওবামার জন্য দুটি বড় সমস্যা হচ্ছে ইরাক ও আফগানিস্তান। ২০১০ সালেই ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের ওয়াদা তিনি করেছিলেন, কিন্তু এই ওয়াদা তিনি রক্ষা করতে পারবেন বলে মনে হয় না। আর আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধের কোনো সম্ভাবনা তিনি সৃষ্টি করতে পারেননি। তার সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত সেখানে যুদ্ধকে আরও প্রলম্বিত করবে। কারজাইকে ওবামা প্রশাসন এখনও সমর্থন করে যাচ্ছে বটে; কিন্তু কারজাই’র কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি যদি দুর্নীতি বন্ধের ব্যাপারে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেন, তাহলে আফগানিস্তানের প্রশাসনে পরিবর্তন আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কোনো কোনো মহল থেকে কারজাইকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ কারণে আফগানিস্তানের ঘটনাবলির প্রতি নজর থাকবে অনেকের। ওবামার জন্য একটি বড় সমস্যা ভেনিজুয়েলার প্রসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ। শ্যাভেজের অনেক কর্মকাণ্ড ওবামা প্রশাসনের চিন্তার কারণ। এরই মধ্যে লাতিন আমেরিকার ১০টি দেশকে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন আলাদা বাণিজ্য সংস্থা ALBA ev The Bolivarian Alliance of the Americans । যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আধিপত্য কমানোই অখইঅ’র উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য কমানোর উদ্দেশে ভেনিজুয়েলার উদ্যোগে গঠিত হয়েছে আলাদা অর্থ ব্যবস্থা (SUCRE) । ALBA ও SUCRE সফলতা পেলে, তা হবে ‘ডলার সাম্রাজ্যের’ বিরুদ্ধে এক বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু তা-ই নয়, শ্যাভেজ ইরানের সঙ্গেও আলাদাভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলছেন, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের জন্য আগামীদিনে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখা দিতে পারে। সুতরাং নানা কারণে চলতি বছর আলোচিত থাকবে এবং সঙ্গত কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভূমিকা’র দিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের।
লেখক : নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক
ই-মেইল : tsrahmanbd@yahoo.com
No comments