ইতিউতি-এবার কি দুর্নীতি-রাক্ষস মারা পড়বে by আতাউস সামাদ
২০০৫ সালে ভারতে এক জরিপ চালিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, দেশটির জনগণের ৪৫ শতাংশকে কোনো না কোনো সেবা পেতে কখনো না কখনো ঘুষ দিতে হয়েছে (সূত্র : উইকিপিডিয়া)। গত ১৭ আগস্ট আন্না হাজারেকে গ্রেপ্তার করার পর বিক্ষোভ শুরু হলে বিবিসি টেলিভিশন সে খবর প্রচার করার পাশাপাশি দেশটির দুর্নীতি পরিস্থিতি জানতে কিছু সাক্ষাৎকার নেয় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শরৎকালটা খুবই উপভোগ্য।
তখন গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ সরে যেতে থাকে। গরম ও শুষ্ক লু হাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তার জায়গা নেয় মৃদুমন্দ বাতাস। মাঝেমধ্যে সামান্য বৃষ্টিও হয়। সেখানকার লোকজন এই সময়টায় উৎসব-আনন্দে মেতে ওঠে। চমৎকার আবহাওয়ার ওই কয়েকটা দিনের পরই তো এসে পড়বে কনকনে শীত। তখন কুয়াশা আর ঠাণ্ডার উৎপাত প্রবল হয়।
১৯৭৩ সালে দিল্লিতে এক শরৎ বিকেলে আমার স্ত্রী ও আমি তিন সন্তানকে নিয়ে হাঁটছি এক জনসমাগমের দিকে। ছোট মেয়ে স্ত্রীর কোলে। ছেলে আর বড় মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি। বাহন ছেড়ে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে অল্প কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পরই যা দেখতে এসেছি তার চূড়াটা চোখে পড়ল। সবাই ওটার দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করছে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এসেছি বলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকেই জায়গা করে দিলেন, কিন্তু এত ভিড় ছিল যে খুব বেশি দূর যেতে পারিনি। প্রায় তিনতলা সমান উঁচু রাক্ষস-মূর্তিটির বুক পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি এ রকম জায়গায় পেঁৗছানোর পর থামতে হলো। সামনে জমাট ভিড়। একটু ভয়ও করছিল যে এই জনতা যদি হঠাৎ করে ছোটাছুটি শুরু করে তাহলে শিশুদের নিয়ে খুবই বিপদে পড়তে হবে। বেলা পড়ছে আর ভিড় বাড়ছে। সবাই অপেক্ষায় সূর্য কখন অস্ত যাবে। যেই মাত্র সূর্যের আলো ডুবে যাবে তখনই দানব-মূর্তিটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। খড়, কাগজ, কঞ্চি আর সোলা দিয়ে তৈরি বিশাল মূর্তিটি সব দুষ্কর্মের প্রতীক রাবণের।
আমাদের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ সে দেশটির পূর্বাঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য শারদীয় দুর্গাপূজা যেমন সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, তেমনি উত্তর ভারতে সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে 'দসেরা'। এ দিনটিতে রাবণকে বধ করেছিলেন রাম। দিনটি রাম-রাবণ যুদ্ধের দশম দিন। ভারত সরকার দিনটিতে রাষ্ট্রীয় ছুটি পালন করে। দাক্ষিণাত্যের অনেক দ্রাবিড় আবার এতে আপত্তি করে। তাদের অভিমত হলো, রাম-রাবণ যুদ্ধ হলো আসলে আর্য-অনার্য সংঘাতের রূপক। আর্যরা আগ্রাসী। তারা শান্তিকামী ও নিরীহ অনার্যদের সমরাস্ত্রবলে পদানত করেছে, কিন্তু সেটাকে ন্যায়সংগত করতে গিয়ে সীতা-হরণ ও রাম-রাবণ যুদ্ধের কল্পকাহিনী ফেঁদেছে, যাতে তারা মহান ও পবিত্র রাম চরিত্রকে দেখিয়েছে আর্যদের প্রতিভূ হিসেবে, আর নষ্টভ্রষ্ট নারী লোলুপ রাক্ষস রাজা রাবণকে দেখিয়েছে অনার্যদের প্রতীক হিসেবে। তবে ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ করুণানিধির ডিএমকে দল এই প্রতবাদী অবস্থান নিলেও ভারত সরকার দসেরার দিন জাতীয় ছুটিই দেয় এবং উত্তর ভারতজুড়ে দসেরা পালন করা হয় খুব আনন্দ-ফুর্তি ও ধুমধামের সঙ্গে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দসেরার দিন রাক্ষস রাজা রাবণের একটা বিশাল খড়ের মূর্তিকে আগুনে পোড়ানো সেখানে সে দিনটির উৎসবের শীর্ষ মুহূর্ত হিসেবে ধরা হয়। যাতে লোকজন রাক্ষস তথা ভয়ংকর অনিষ্টকারীর গায়ের আগুন দূর থেকে ও দেখতে পায় সে জন্য দিল্লির এই ময়দানে রাবণ-মূর্তি বানানো হয় খুব লম্বাটে করে, আর তাতে আগুন ধরানো হয় সন্ধ্যাবেলা। আগুনটা নিচ থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকে, আর মূর্তিটির গায়ে বসানো পটকাগুলো ফাটতে থাকে। সেই সঙ্গে আগত আনন্দমুখর জনতা উল্লাসে তালি দিতে থাকে।
নয়াদিল্লির যে মাঠ বা পার্কে রাবণ-বধ করা হয় সেটির নামই রামলীলা গ্রাউন্ড। ভারতে এখন সর্বাধিক আলোচিত ও প্রশংসিত ৭৪ বছর বয়সী সমাজসেবক আন্না হাজারে। তিনি চাইছেন যে ভারতের পার্লামেন্ট একটা খুব শক্ত 'লোকপাল' আইন পাস করুক দেশটির ব্যাপক দুর্নীতি দূর করতে। সরকার তাঁর দাবি মানছে না বলে তিনি হাজার হাজার সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রামলীলা গ্রাউন্ডে বসে লাগাতার অনশন করবেন ১৪ দিন। তিনি নয়াদিল্লির প্রশাসনিক কেন্দ্রের কাছাকাছি বসে এই দুর্নীতিবিরোধী অনশন ধর্মঘট করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সরকার তাঁকে অনুমতি দেয়নি। এমনকি তিনি অনশনের জন্য বাড়ি থেকে বেরোতে গেলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এতে ভারতজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হতে থাকে। আন্না হাজারে নিজে কারাগারেই অনশন ধর্মঘট শুরু করে দেন। শেষ পর্যন্ত রফা হয়েছে, হাজারে মুক্ত হয়ে রামলীলা ময়দানে বসে অনশন করবেন। ভারতের জনগণ আশা করছে যে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন সফল হবে। অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং মনে করেন না যে তাঁর দেশ থেকে দুর্নীতি উৎপাটন করা সহজ হবে। আন্না হাজারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ ও তাঁকে গ্রেপ্তার করায় ড. মনমোহন সিংকে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ভারতে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক দিনের। তথাকথিত সভ্য ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে তাদের ঔপনিবেশিক রাজ দুই শতাব্দী ধরে টিকিয়ে রাখতে এবং ওই সময়জুড়ে এই এলাকার সম্পদ আক্ষরিক অর্থেই লুণ্ঠন করে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিলিটারি, পুলিশ, কামান, বন্দুক ব্যবহারের পাশাপাশি সব রকম দুর্নীতি ব্যবহার করে। এই এলাকার বণিক ও আমলাতন্ত্র সবাইকেই তারা দুর্নীতি শেখায় ও তাদের দিয়ে দুর্নীতি করায়। ফলে তারা ১৯৪৭ সালে ভারত ছেড়ে গেলেও দুর্নীতির বিষবৃক্ষটি থেকে যায়। ২০০৫ সালে ভারতে একটা জরিপ চালিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানায় যে দেশটির জনগণের ৪৫ শতাংশকে কোনো না কোনো সেবা পেতে কাউকে না কাউকে ঘুষ দিতে হয়েছে। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)। গত ১৭ আগস্ট আন্না হাজারেকে গ্রেপ্তার করার পর বিক্ষোভ শুরু হলে বিবিসি টেলিভিশন সে খবর প্রচার করার পাশাপাশি দেশটির দুর্নীতি পরিস্থিতি জানতে কিছু সাক্ষাৎকার নেয়। এ সময় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিঙ্ েকর্মরতা এক ভারতীয় গবেষককে প্রশ্ন করা হয় তিনি নিজে কাউকে ঘুষ দিয়েছেন কিনা। তিনি জানান, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করে পাস করেন। তখন তিনি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে যান। সেখানে ভর্তি হওয়ার সব যোগ্যতা তাঁর ছিল, কিন্তু তবু তাঁর কাছে ভর্তির জন্য উৎকোচ দাবি করা হয়। তিনি ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলো না। তিনি চিকিৎসক হতে পারলেন না। পরে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
'সত্যম' নামের ভারতীয় বিশাল আইটি কম্পানির কেলেংকারি প্রকাশ পায় ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে। তখন থেকে ভারতে দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সত্যম কম্পানির চেয়ারম্যান রামলিঙ্গা রাজু ৭ই জানুয়ারি, ২০০৯-তে এক বিবৃতিতে স্বীকার করেন, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। সত্যমের অডিটর মার্কিন হিসাবরক্ষণ কম্পানি প্রাইসওয়াটার হাউস কুপারও স্বীকার করে যে 'সত্যম'-এর হিসাবে গড়বড় আছে, যা তারা এর আগে ধরতে পারেনি। ফলে এই হিসাবরক্ষণ কম্পানিও দুর্নীতিতে সহায়তাদানের দায়ে অভিযুক্ত হয়। সুইজারল্যান্ডের বড় ব্যাংক ইউবিএস 'সত্যম'-এর ঋণ গ্যারান্টি দেওয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। 'সত্যম' কম্পানির শেয়ারের দাম প্রতিটি ভারতীয় ৫৪৪ রুপি থেকে পড়ে মাত্র সাড়ে এগারো রূপিতে ঠেকে।
আর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি আদালতে অভিযোগ করে যে 'সত্যম' নামের আইটি প্রতিষ্ঠানটিতে ৪৫০০০ কর্মচারী কাজ করে, অথচ কম্পানির চেয়ারম্যান রাজু ওই সংখ্যা এতদিন ধরে ৫৩০০০ দেখিয়ে এসেছেন এবং অস্তিত্বহীন কর্মচারীদের জন্য মাসে ২০ কোটি রুপি বেতন দেওয়া হতো, সেই অর্থ নিজের পকেটে পুরেছেন। কিন্তু বৃহৎ এই কম্পানির পতন বিশ্বে ভারতের আইটি ব্যবসার বাজার নষ্ট করবে বিধায় ভারত সরকার ঘোষণা করে যে তারা এর পুরনো মালিকদের তাড়িয়ে দিয়ে নতুন ব্যবস্থাপনায় এটাকে চালু রাখবে। তা সরকার করেছে। এখন 'সত্যম' কিনে নিয়েছে মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা।
কিন্তু সমস্যা হলো যে ভারতে একের পর এক দুর্নীতি তথ্য ফাঁস হচ্ছে, আর সরকার সেগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকার আদালতকে পর্যন্ত উপেক্ষা করার চেষ্টা করছে। যেমন_কয়েক বছর আগে মূলত পাশ্চাত্যে ব্যাংকগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কিছু আইন হলে তার চাপে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের কাছে বিদেশিদের গোপন অ্যাকাউন্টের অর্থের হিসাব প্রকাশ করতে রাজি হয়। এর ফলে জানা যায় যে সুইস ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের দ্বারা পাচার করা অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তথা এক হাজার ৪৫৬ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে রুশরা (৪৭০ বিলিয়ন ডলার), আর তৃতীয় স্থানে ব্রিটিশরা (৩৯০ বিলিয়র ডলার)। তাদের পর ইউক্রেনিয়ান ও চীনারা (সূত্র : আমার দেশ)। এদিকে জার্মান সরকার ভারত সরকারকে জানিয়েছে যে ভারতীয়রা মানি লন্ডারিং করে তাদের দেশেও অনেক টাকা জমা করেছে। এদের ১৮ জনের নামও তারা ভারত সরকারকে দিয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মনমোহন সিং সরকারকে নাম প্রকাশ করার নির্দেশ দিলে তিনি আদালতের কাছে নামগুলো জমা দেন, কিন্তু সেগুলো প্রকাশ করতে মানা করেন এই বলে যে ভারত এ ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষার আশ্বাস দিয়েছে জার্মানিকে। এর আগে মোবাইল ফোনের টুজি লাইসেন্স প্রদান কেলেংকারি নিয়ে তথ্য দিতে টালবাহানা করেন মনমোহন। তবে শেষ পর্যন্ত উচ্চতর আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত মন্ত্রী রাজার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। শ্রী রাজা এখন শ্রীঘরে। ওই কেলেংকারিতে লাইসেন্স ফি বাবদ ভারত সরকারের অন্তত ২২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সস্তায় যাঁরা লাইসেন্স মেরে দিয়েছেন, তাদের মধ্যে আম্বানি আর টাটারাও আছেন।
এভাবে একের পর এক আরো অনেক কেলেংকারি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন, দেশে দুর্নীতি ক্যান্সারের রূপ পরিগ্রহ করেছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন যে ভারতের সরকারগুলোর কোনোটিই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চায়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং সম্ভবত নিজের গদি বাঁচানোর জন্য ভারতের স্বাধীনতা দিবসে তাঁর বক্তৃতায় ভালোমানুষটি সেজে বলেন যে ভারতের উন্নয়নের পথে দুর্নীতি প্রধান বাধা। এটা দূর করার চেষ্টা করা হবে, তবে কাজটি সহজ হবে না। তিনি বলেন, 'আমি দুঃখিত যে আমার মন্ত্রিসভার কোনো কোনো সদস্যকেও আমি দুর্নীতি করা থেকে নিরস্ত করতে পারিনি।' তবে ভারতের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য হিন্দু এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, মনমোহন সিংয়ের সরকার দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার। মনমোহন সিং বার বার দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুর্নীতির খবর ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হয়ে এখন তিনি লোকসভায় এমন একটি দুর্নীতি দমন বিল এনেছেন, যা একটা তামাশা। আন্না হাজারে সেটির জায়গায় একটি কার্যকর আইন চাইছেন এবং জনগণ তাঁকে সমর্থন করছে। হিন্দু পত্রিকাটি বলেছে যে প্রধানমন্ত্রী যদি জনগণের ভাষা না বোঝেন তবে আগামী নির্বাচনে তাদের রায় ঠিকই টের পেয়ে যাবেন। এমনকি তেমন জনরায় হয়ে যেতে পারে তার আগেও।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তবু তাঁর অবস্থান থেকে নড়তে চাইছেন না। তিনি লোকসভায় এক বিবৃতিতে বলেন, আইন করার কর্তব্য ও অধিকার হচ্ছে পার্লামেন্টের। আন্না হাজারের কিছু বলার থাকলে তিনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে এসে তাঁর মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। তারপর তা গ্রহণ করা না করা সংসদ সদস্যদের ব্যাপার। কিন্তু আন্না হাজারে অনশন করে ও লোক জড়ো করে পার্লামেন্টের ওপর তাঁর মতামত জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যাহত হবে, বলেন মনমোহন সিং। জানা গেছে, আন্না হাজারে চাচ্ছেন একজন লোকপাল (ওম্বুডসম্যান) এবং তাঁকে এমন ক্ষমতা দেওয়া, যাতে তিনি সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়াই সন্দেহভাজন মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও বিচারকদের সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে পারবেন। বর্তমান ভারতীয় সরকার তার হাতের মুঠি এতটা আলগা করতে চাইছে না। ফলে বিরোধ ও আন্দোলন।
দেখা যাক আন্না হাজারে রামলীলা গ্রাউন্ডে দুর্নীতির রাবণ বধ করতে পারেন কি না! তিনি কিছু করতে পারলে বাংলাদেশও তা থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। আমরা আশা করব ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং তাঁর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুর্নীতি দমন বিরোধিতা করার মতো কোনো সলা দিতে চাইলে তিনি তা কানে তুলবেন না।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
১৯৭৩ সালে দিল্লিতে এক শরৎ বিকেলে আমার স্ত্রী ও আমি তিন সন্তানকে নিয়ে হাঁটছি এক জনসমাগমের দিকে। ছোট মেয়ে স্ত্রীর কোলে। ছেলে আর বড় মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি। বাহন ছেড়ে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে অল্প কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পরই যা দেখতে এসেছি তার চূড়াটা চোখে পড়ল। সবাই ওটার দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করছে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এসেছি বলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকেই জায়গা করে দিলেন, কিন্তু এত ভিড় ছিল যে খুব বেশি দূর যেতে পারিনি। প্রায় তিনতলা সমান উঁচু রাক্ষস-মূর্তিটির বুক পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি এ রকম জায়গায় পেঁৗছানোর পর থামতে হলো। সামনে জমাট ভিড়। একটু ভয়ও করছিল যে এই জনতা যদি হঠাৎ করে ছোটাছুটি শুরু করে তাহলে শিশুদের নিয়ে খুবই বিপদে পড়তে হবে। বেলা পড়ছে আর ভিড় বাড়ছে। সবাই অপেক্ষায় সূর্য কখন অস্ত যাবে। যেই মাত্র সূর্যের আলো ডুবে যাবে তখনই দানব-মূর্তিটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। খড়, কাগজ, কঞ্চি আর সোলা দিয়ে তৈরি বিশাল মূর্তিটি সব দুষ্কর্মের প্রতীক রাবণের।
আমাদের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ সে দেশটির পূর্বাঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য শারদীয় দুর্গাপূজা যেমন সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, তেমনি উত্তর ভারতে সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে 'দসেরা'। এ দিনটিতে রাবণকে বধ করেছিলেন রাম। দিনটি রাম-রাবণ যুদ্ধের দশম দিন। ভারত সরকার দিনটিতে রাষ্ট্রীয় ছুটি পালন করে। দাক্ষিণাত্যের অনেক দ্রাবিড় আবার এতে আপত্তি করে। তাদের অভিমত হলো, রাম-রাবণ যুদ্ধ হলো আসলে আর্য-অনার্য সংঘাতের রূপক। আর্যরা আগ্রাসী। তারা শান্তিকামী ও নিরীহ অনার্যদের সমরাস্ত্রবলে পদানত করেছে, কিন্তু সেটাকে ন্যায়সংগত করতে গিয়ে সীতা-হরণ ও রাম-রাবণ যুদ্ধের কল্পকাহিনী ফেঁদেছে, যাতে তারা মহান ও পবিত্র রাম চরিত্রকে দেখিয়েছে আর্যদের প্রতিভূ হিসেবে, আর নষ্টভ্রষ্ট নারী লোলুপ রাক্ষস রাজা রাবণকে দেখিয়েছে অনার্যদের প্রতীক হিসেবে। তবে ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ করুণানিধির ডিএমকে দল এই প্রতবাদী অবস্থান নিলেও ভারত সরকার দসেরার দিন জাতীয় ছুটিই দেয় এবং উত্তর ভারতজুড়ে দসেরা পালন করা হয় খুব আনন্দ-ফুর্তি ও ধুমধামের সঙ্গে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দসেরার দিন রাক্ষস রাজা রাবণের একটা বিশাল খড়ের মূর্তিকে আগুনে পোড়ানো সেখানে সে দিনটির উৎসবের শীর্ষ মুহূর্ত হিসেবে ধরা হয়। যাতে লোকজন রাক্ষস তথা ভয়ংকর অনিষ্টকারীর গায়ের আগুন দূর থেকে ও দেখতে পায় সে জন্য দিল্লির এই ময়দানে রাবণ-মূর্তি বানানো হয় খুব লম্বাটে করে, আর তাতে আগুন ধরানো হয় সন্ধ্যাবেলা। আগুনটা নিচ থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকে, আর মূর্তিটির গায়ে বসানো পটকাগুলো ফাটতে থাকে। সেই সঙ্গে আগত আনন্দমুখর জনতা উল্লাসে তালি দিতে থাকে।
নয়াদিল্লির যে মাঠ বা পার্কে রাবণ-বধ করা হয় সেটির নামই রামলীলা গ্রাউন্ড। ভারতে এখন সর্বাধিক আলোচিত ও প্রশংসিত ৭৪ বছর বয়সী সমাজসেবক আন্না হাজারে। তিনি চাইছেন যে ভারতের পার্লামেন্ট একটা খুব শক্ত 'লোকপাল' আইন পাস করুক দেশটির ব্যাপক দুর্নীতি দূর করতে। সরকার তাঁর দাবি মানছে না বলে তিনি হাজার হাজার সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রামলীলা গ্রাউন্ডে বসে লাগাতার অনশন করবেন ১৪ দিন। তিনি নয়াদিল্লির প্রশাসনিক কেন্দ্রের কাছাকাছি বসে এই দুর্নীতিবিরোধী অনশন ধর্মঘট করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সরকার তাঁকে অনুমতি দেয়নি। এমনকি তিনি অনশনের জন্য বাড়ি থেকে বেরোতে গেলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এতে ভারতজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হতে থাকে। আন্না হাজারে নিজে কারাগারেই অনশন ধর্মঘট শুরু করে দেন। শেষ পর্যন্ত রফা হয়েছে, হাজারে মুক্ত হয়ে রামলীলা ময়দানে বসে অনশন করবেন। ভারতের জনগণ আশা করছে যে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন সফল হবে। অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং মনে করেন না যে তাঁর দেশ থেকে দুর্নীতি উৎপাটন করা সহজ হবে। আন্না হাজারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ ও তাঁকে গ্রেপ্তার করায় ড. মনমোহন সিংকে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ভারতে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক দিনের। তথাকথিত সভ্য ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে তাদের ঔপনিবেশিক রাজ দুই শতাব্দী ধরে টিকিয়ে রাখতে এবং ওই সময়জুড়ে এই এলাকার সম্পদ আক্ষরিক অর্থেই লুণ্ঠন করে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিলিটারি, পুলিশ, কামান, বন্দুক ব্যবহারের পাশাপাশি সব রকম দুর্নীতি ব্যবহার করে। এই এলাকার বণিক ও আমলাতন্ত্র সবাইকেই তারা দুর্নীতি শেখায় ও তাদের দিয়ে দুর্নীতি করায়। ফলে তারা ১৯৪৭ সালে ভারত ছেড়ে গেলেও দুর্নীতির বিষবৃক্ষটি থেকে যায়। ২০০৫ সালে ভারতে একটা জরিপ চালিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানায় যে দেশটির জনগণের ৪৫ শতাংশকে কোনো না কোনো সেবা পেতে কাউকে না কাউকে ঘুষ দিতে হয়েছে। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)। গত ১৭ আগস্ট আন্না হাজারেকে গ্রেপ্তার করার পর বিক্ষোভ শুরু হলে বিবিসি টেলিভিশন সে খবর প্রচার করার পাশাপাশি দেশটির দুর্নীতি পরিস্থিতি জানতে কিছু সাক্ষাৎকার নেয়। এ সময় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিঙ্ েকর্মরতা এক ভারতীয় গবেষককে প্রশ্ন করা হয় তিনি নিজে কাউকে ঘুষ দিয়েছেন কিনা। তিনি জানান, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করে পাস করেন। তখন তিনি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে যান। সেখানে ভর্তি হওয়ার সব যোগ্যতা তাঁর ছিল, কিন্তু তবু তাঁর কাছে ভর্তির জন্য উৎকোচ দাবি করা হয়। তিনি ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলো না। তিনি চিকিৎসক হতে পারলেন না। পরে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
'সত্যম' নামের ভারতীয় বিশাল আইটি কম্পানির কেলেংকারি প্রকাশ পায় ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে। তখন থেকে ভারতে দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সত্যম কম্পানির চেয়ারম্যান রামলিঙ্গা রাজু ৭ই জানুয়ারি, ২০০৯-তে এক বিবৃতিতে স্বীকার করেন, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। সত্যমের অডিটর মার্কিন হিসাবরক্ষণ কম্পানি প্রাইসওয়াটার হাউস কুপারও স্বীকার করে যে 'সত্যম'-এর হিসাবে গড়বড় আছে, যা তারা এর আগে ধরতে পারেনি। ফলে এই হিসাবরক্ষণ কম্পানিও দুর্নীতিতে সহায়তাদানের দায়ে অভিযুক্ত হয়। সুইজারল্যান্ডের বড় ব্যাংক ইউবিএস 'সত্যম'-এর ঋণ গ্যারান্টি দেওয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। 'সত্যম' কম্পানির শেয়ারের দাম প্রতিটি ভারতীয় ৫৪৪ রুপি থেকে পড়ে মাত্র সাড়ে এগারো রূপিতে ঠেকে।
আর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি আদালতে অভিযোগ করে যে 'সত্যম' নামের আইটি প্রতিষ্ঠানটিতে ৪৫০০০ কর্মচারী কাজ করে, অথচ কম্পানির চেয়ারম্যান রাজু ওই সংখ্যা এতদিন ধরে ৫৩০০০ দেখিয়ে এসেছেন এবং অস্তিত্বহীন কর্মচারীদের জন্য মাসে ২০ কোটি রুপি বেতন দেওয়া হতো, সেই অর্থ নিজের পকেটে পুরেছেন। কিন্তু বৃহৎ এই কম্পানির পতন বিশ্বে ভারতের আইটি ব্যবসার বাজার নষ্ট করবে বিধায় ভারত সরকার ঘোষণা করে যে তারা এর পুরনো মালিকদের তাড়িয়ে দিয়ে নতুন ব্যবস্থাপনায় এটাকে চালু রাখবে। তা সরকার করেছে। এখন 'সত্যম' কিনে নিয়েছে মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা।
কিন্তু সমস্যা হলো যে ভারতে একের পর এক দুর্নীতি তথ্য ফাঁস হচ্ছে, আর সরকার সেগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকার আদালতকে পর্যন্ত উপেক্ষা করার চেষ্টা করছে। যেমন_কয়েক বছর আগে মূলত পাশ্চাত্যে ব্যাংকগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কিছু আইন হলে তার চাপে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের কাছে বিদেশিদের গোপন অ্যাকাউন্টের অর্থের হিসাব প্রকাশ করতে রাজি হয়। এর ফলে জানা যায় যে সুইস ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের দ্বারা পাচার করা অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তথা এক হাজার ৪৫৬ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে রুশরা (৪৭০ বিলিয়ন ডলার), আর তৃতীয় স্থানে ব্রিটিশরা (৩৯০ বিলিয়র ডলার)। তাদের পর ইউক্রেনিয়ান ও চীনারা (সূত্র : আমার দেশ)। এদিকে জার্মান সরকার ভারত সরকারকে জানিয়েছে যে ভারতীয়রা মানি লন্ডারিং করে তাদের দেশেও অনেক টাকা জমা করেছে। এদের ১৮ জনের নামও তারা ভারত সরকারকে দিয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মনমোহন সিং সরকারকে নাম প্রকাশ করার নির্দেশ দিলে তিনি আদালতের কাছে নামগুলো জমা দেন, কিন্তু সেগুলো প্রকাশ করতে মানা করেন এই বলে যে ভারত এ ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষার আশ্বাস দিয়েছে জার্মানিকে। এর আগে মোবাইল ফোনের টুজি লাইসেন্স প্রদান কেলেংকারি নিয়ে তথ্য দিতে টালবাহানা করেন মনমোহন। তবে শেষ পর্যন্ত উচ্চতর আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত মন্ত্রী রাজার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। শ্রী রাজা এখন শ্রীঘরে। ওই কেলেংকারিতে লাইসেন্স ফি বাবদ ভারত সরকারের অন্তত ২২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সস্তায় যাঁরা লাইসেন্স মেরে দিয়েছেন, তাদের মধ্যে আম্বানি আর টাটারাও আছেন।
এভাবে একের পর এক আরো অনেক কেলেংকারি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন, দেশে দুর্নীতি ক্যান্সারের রূপ পরিগ্রহ করেছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন যে ভারতের সরকারগুলোর কোনোটিই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চায়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং সম্ভবত নিজের গদি বাঁচানোর জন্য ভারতের স্বাধীনতা দিবসে তাঁর বক্তৃতায় ভালোমানুষটি সেজে বলেন যে ভারতের উন্নয়নের পথে দুর্নীতি প্রধান বাধা। এটা দূর করার চেষ্টা করা হবে, তবে কাজটি সহজ হবে না। তিনি বলেন, 'আমি দুঃখিত যে আমার মন্ত্রিসভার কোনো কোনো সদস্যকেও আমি দুর্নীতি করা থেকে নিরস্ত করতে পারিনি।' তবে ভারতের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য হিন্দু এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, মনমোহন সিংয়ের সরকার দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার। মনমোহন সিং বার বার দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুর্নীতির খবর ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হয়ে এখন তিনি লোকসভায় এমন একটি দুর্নীতি দমন বিল এনেছেন, যা একটা তামাশা। আন্না হাজারে সেটির জায়গায় একটি কার্যকর আইন চাইছেন এবং জনগণ তাঁকে সমর্থন করছে। হিন্দু পত্রিকাটি বলেছে যে প্রধানমন্ত্রী যদি জনগণের ভাষা না বোঝেন তবে আগামী নির্বাচনে তাদের রায় ঠিকই টের পেয়ে যাবেন। এমনকি তেমন জনরায় হয়ে যেতে পারে তার আগেও।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তবু তাঁর অবস্থান থেকে নড়তে চাইছেন না। তিনি লোকসভায় এক বিবৃতিতে বলেন, আইন করার কর্তব্য ও অধিকার হচ্ছে পার্লামেন্টের। আন্না হাজারের কিছু বলার থাকলে তিনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে এসে তাঁর মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। তারপর তা গ্রহণ করা না করা সংসদ সদস্যদের ব্যাপার। কিন্তু আন্না হাজারে অনশন করে ও লোক জড়ো করে পার্লামেন্টের ওপর তাঁর মতামত জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যাহত হবে, বলেন মনমোহন সিং। জানা গেছে, আন্না হাজারে চাচ্ছেন একজন লোকপাল (ওম্বুডসম্যান) এবং তাঁকে এমন ক্ষমতা দেওয়া, যাতে তিনি সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়াই সন্দেহভাজন মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও বিচারকদের সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে পারবেন। বর্তমান ভারতীয় সরকার তার হাতের মুঠি এতটা আলগা করতে চাইছে না। ফলে বিরোধ ও আন্দোলন।
দেখা যাক আন্না হাজারে রামলীলা গ্রাউন্ডে দুর্নীতির রাবণ বধ করতে পারেন কি না! তিনি কিছু করতে পারলে বাংলাদেশও তা থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। আমরা আশা করব ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং তাঁর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুর্নীতি দমন বিরোধিতা করার মতো কোনো সলা দিতে চাইলে তিনি তা কানে তুলবেন না।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
No comments