বিদ্যুৎ উৎপাদন-বেসরকারি খাত অঙ্গীকার রাখুক
মহাজোট সরকার আড়াই বছরে জাতীয় গ্রিডে নতুন ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করেছে_ এ খবর স্বস্তির। এর প্রভাবেই এবারের গরমের মৌসুমে দেশবাসী লোডশেডিংয়ের নিদারুণ যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত থাকতে পেরেছে। সরকারের মেয়াদের বাকি সময়ে অর্থাৎ ২০১৩ সালের মধ্যে দেশকে লোডশেডিংমুক্ত করার সংকল্প তাদের রয়েছে।
তবে মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকার ঝুঁকি নিয়ে কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছিল। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা তিক্ত ও হতাশাব্যঞ্জক। যাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাদের মধ্যে চারটি কোম্পানি কবে চালু হবে তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। আর আটটি কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করলেও তাদের ক্ষমতার অর্ধেকও বিদ্যুৎ মিলছে না। এদের কোনো কোনোটিও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উৎপাদনে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কম। কারণ পুরনো জেনারেটর এবং ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন নয়, এসব প্রতিষ্ঠান দেশের জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আইনের দৃষ্টিতে তা গুরুতর অপরাধ। তারা সময়মতো ও পূর্ণ ক্ষমতায় চালু হলে জাতীয় গ্রিডে আরও ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হতে পারত। চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে না পারার ব্যর্থতার নানা অজুহাত দেখানো যেতেই পারে। কিন্তু সরকার ঝুঁকি নিয়ে যাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা যদি ব্যর্থতা এবং মানসম্পন্ন প্রকল্প গড়ে তুলতে না পারার কারণে শাস্তি এড়াতে পারে তা মন্দ নজির হয়ে থাকবে। এটি প্রকৃতপক্ষে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া, যা সরকার কোনোভাবেই করতে পারে না। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগও উঠেছে। রোববার সমকালে 'বিদ্যুতের ১৪ প্রকল্প নিয়ে সরকার বিপাকে' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে :কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের উদ্যোক্তা নির্ধারণে সবক্ষেত্রে যোগ্যতাকে প্রধান্য না দেওয়াতেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাজের যথাযথ মনিটরিংও করা হয়নি। এ ধরনের সমস্যার জন্য দায়দায়িত্বও নির্ধারিত হওয়া উচিত। বেসরকারি খাতের শিল্প-বাণিজ্যের চেম্বার কর্মকর্তারাও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারেন। বিদ্যুতের মারাত্মক স্বল্পতার কারণে শিল্প-বাণিজ্যের উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং তার কারণে বেসরকারি খাতের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যার সমাধানে সরকার বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ওপর নির্ভর করেছে। কিন্তু যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের কেউ কেউ তা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এতে অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না, জনজীবনেও চলছে দুর্ভোগ। এটা অবশ্যই বুঝতে হবে যে, বেসরকারি খাতের সামনে রয়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব প্রদানের কঠিন চ্যালেঞ্জ এবং তা সফল করে তুলতে বিদ্যুৎ খাতের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পূরণ করতেই হবে। এটিও আশা করব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলো এবং সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কুইক রেন্টাল ও রেন্টালের মতো ক্ষুদ্র আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি খাতে কয়েকটি বৃহৎ আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান নির্মাণ অপরিহার্য। এতে সার্বিকভাবে উৎপাদন ব্যয়ও কমে আসবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে_ এটা প্রত্যাশিত।
No comments