ভ্রান্ত পথ বিদআত by নুরুল্লাহ আকন্দ

মুসলমানদের সঠিকরূপে ইসলামের ওপর চলার জন্য বিদআত সম্পর্কে ধারণা রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিদআত সুস্পষ্ট একটি ভ্রান্তনীতি। আমাদের মধ্যে বিদআত সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় আমরা অনেকেই বিদআতের সঙ্গে লিপ্ত। অজ্ঞতাবশত সওয়াবের নিয়তেই অনেকে বিদআত করছে অহরহ। বিদআত সম্পূর্ণ ইসলামের বিপরীত একটি বিষয়।


বিদআতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা, কোনো কিছু অভিনবভাবে তৈরি করা, ধর্মে নতুন কিছু আবিষ্কার করা অর্থাৎ ইসলামের মধ্যে এমন কিছু বিষয় সৃষ্টি করা, যা রাসূলের (সা.) যুগে ছিল না, পরবর্তী সময়ে আবিষ্কার করা হয়েছে। ইমাম নবুবীর (র.) মতে, পূর্ববর্তী যুগে যার দৃষ্টান্ত নেই এমন কিছুই বিদআত। ইমাম শাফেঈ (র.) ভাষায়, যা কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ ও ইজমায়ে ইম্মতের বিরোধী তাই বিদআত। হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন_
সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর বাণী আর সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে রাসূলের জীবন ব্যবস্থা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হচ্ছে দীনের মধ্যে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। প্রত্যেক নতুন জিনিসেই বিদআত তথা ভ্রষ্টতা।
যারা বিদআতকে সৃষ্টি করছে তাদের মূল উদ্দেশ্য ইসলামকে ধ্বংস করা, কারণ যেখানে বিদআত সৃষ্টি হয় সেখানে ইসলাম থাকে না। যারা বিদআত সৃষ্টি করে তাদের ব্যাপারে রাসূল (সা.) হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করেছেন এবং বলেছেন_ সাবধান, তোমরা দীনের ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের সুন্নতের বাইরে নতুন কথা ও মতবাদ থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন কথাই হচ্ছে বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে গুমরাহি তথা পথ ভ্রষ্টতা। (মেশকাত) কেউ কেউ বিদআত করেছে না বোঝার কারণে, কেউবা করছে সখ্যের কারণে, আবার কেউ জেনেও করছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন_ যারা বিদআতের ভয়ানক পরিণতি জানার পরও বিদআত আবিষ্কার করবে, তার ওপর যত মানুষ আমল করবে, তার জন্য সেসব লোকের গুনাহের সমপরিমাণ গুনাহ হবে এবং তাদের গুনাহের কোনো অংশ হ্রাস করা হবে না। (মেশকাত)
আল্লাহর রাসূলের (সা.) ওয়াফাতের পর থেকে ষড়যন্ত্রকারীরা ইসলামকে পৃথিবী থেকে মিটিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। বর্তমানেও ওদের এজেন্টরা একই দুরভিসন্ধি করে যাচ্ছে। ওরা আমাদের ইমানকে ধ্বংস করতে চায়, নিয়ে যেতে চায় কঠিন জাহান্নামের দিকে। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে শুনতে হবে রাসূলে করিমের (সা.) কথা। আরাফাতের ময়দানে বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেছিলেন_ আমি তোমাদের কাছ থেকে চলে যাচ্ছি; কিন্তু রেখে যাচ্ছি দুটি জিনিস; এ দুটি জিনিস যদি তোমরা ধরে রাখতে পার তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, অন্যটি রাসূলের (সা.) সুন্নত। সমাজের প্রচলিত প্রতিটি বিদআত সম্পর্কে উলামায়ে কেরামরা যদি সোচ্চার হন তাহলে সমাজ তথা দেশ বিদআত থেকে মুক্ত হতে পারে। সমাজ সুন্দর হতে থাকে, বাঁচতে পারে সাধারণ মানুষ, গড়তে পারে সুন্দর জীবন।

No comments

Powered by Blogger.