আরো একটি সম্ভাবনা-প্রাপ্ত সম্পদ জাতীয় উন্নয়নে ব্যবহৃত হোক

আবার গ্যাসের সন্ধান মিলেছে বাংলদেশে। এবার গ্যাস পাওয়া গেল নোয়াখালীর সুন্দলপুরে। আমাদের দেশের গ্যাসসম্পদ নিয়ে যখন কিছুটা হতাশা জন্ম নিতে যাচ্ছে. তখন ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র এক হাজার ৪০০ মিটার নিচে এই গ্যাসপ্রাপ্তি দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সঙ্গে এই গ্যাসক্ষেত্র সন্ধানের মধ্য দিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠান বাপেঙ্ আবার নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করল।


যখন দেশের গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধানের জন্য আমরা কেবলই বিদেশমুখী হয়ে পড়ছি, তখন বাপেঙ্রে এই সাফল্য আমাদের নিজেদের প্রযুক্তি ও যোগ্যতাকেই দৃঢ়ভাবে তুলে ধরল সবার সামনে। দেশের ভূগর্ভস্থ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে বিদেশের দিকে তাকিয়ে না থেকে দেশের প্রতিষ্ঠানও যোগ্য হয়ে উঠেছে, সেটা আবারও বাপেঙ্রে গ্যাসপ্রাপ্তি থেকে নিশ্চিত হয়ে গেল। এর আগে সিলেটে একাধিক গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে বাপেঙ্ সাফল্য অর্জন করে।
নোয়াখালীর সুন্দলপুরে দ্বিমাত্রিক ভূতাত্তি্বক জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বাপেঙ্ ২০০৭ সালে গ্যাসাধারের সন্ধান পাওয়ার পর ওই বছর অক্টোবরে কূপ খনন শুরু করে। সুন্দলপুর প্রকল্পটি ২০০৮ সালের ২২ মে একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায়। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য ৭৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছরের নভেম্বরে কূপ খননের কাজ শুরু হয়। অপেক্ষাকৃত কম সময়ে এখানে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। কাজটা সুচারুভাবেই সম্পাদন করতে পেরেছে বাপেঙ্। তবে কতটা মজুদ আছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ গ্যাসের মজুদ নির্ধারণের জন্য আরো কয়েক দিন লাগবে। তবে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ধারণা, ২০১২ সালের মার্চ নাগাদ নতুন এই ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন এক কোটি ২০ লাখ থেকে এক কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে আট ইঞ্চি ব্যাসের ছয় কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। ভূপৃষ্ঠের এক হাজার ৩৯৯ থেকে এক হাজার ৪০৪ মিটার নিচে পাঁচ মিটার পুরুত্বজুড়ে এই গ্যাসের অবস্থান। পুরুত্বের দিক দিয়ে কম হলেও গ্যাসক্ষেত্রটি একই উপজেলার বেগমগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃত, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। তা যদি হয়, তাহলে এখান থেকে বেশ কয়েক বছর গ্যাস পাওয়া যাবে_এমনটি আশা করা যেতে পারে। ত্রিমাত্রিক ভূতাত্তি্বক জরিপ করে সুন্দলপুরে আরো উত্তোলন-কূপ খনন করা হবে বলে বাপেঙ্ থেকে জানানো হয়েছে।
আমাদের দেশে মাটির নিচে অনেক সম্পদ আছে। কিন্তু সেই সম্পদ সময়মতো খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় সম্পদের সন্ধান মিললেও সরকারি সিদ্ধান্তের অভাবে সেই সম্পদ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দেশের ভূগর্ভস্থ কয়লা ব্যবহারে এখন পর্যন্ত সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের ক্ষেত্রে আমাদের বিদেশপ্রীতিও রয়েছে। দেশের প্রতিষ্ঠানকে অর্থ ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে সক্ষম না করে আমরা বিদেশের প্রতিষ্ঠানের কাছে বাঁধা পড়ে যাই। বাপেঙ্ এবার এই গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ভেতর দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এখন প্রাপ্ত এই সম্পদ আমাদের নিজেদের প্রযুক্তি ও সক্ষমতা দিয়েই উত্তোলন ও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। দেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হোক আবিষ্কৃত নতুন গ্যাসক্ষেত্রে পাওয়া গ্যাস। একইভাবে বাপেঙ্কে ভূগর্ভস্থ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য আরো শক্তিশালী ও আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সুসজ্জিত করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.