ফ্যাসিবাদের বিপদ চেপে বসেছে by হায়দার আকবর খান রনো
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। দু’বছরের আধা-সামরিক শাসনের পর অনেকেই আশা করেছিলেন, এবার দেশ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে। একথা নিশ্চয়ই বলা নিষ্প্রয়োজন যে, শুধু নির্বাচনই গণতন্ত্রের একমাত্র উপাদান নয়। এক বছরের মহাজোটের শাসনে গণতন্ত্র নয়, বরং ফ্যাসিবাদের লক্ষণই ফুটে উঠেছে।
সন্ত্রাস ও বাগাড়ম্বর, রাষ্ট্রের সব আইনি ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দলীয়করণ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা—এসবই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য, এগুলো এক বছর ধরে আমরা প্রত্যক্ষ করে আসছি।
ঠিক এক বছর আগে জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গেই যা শুরু হয়েছিল তা হলো, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল এবং শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস। সন্ত্রাস খুনাখুনির পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এর সঙ্গে রাজনৈতিক আধিপত্যই শুধু নয়, অর্থনৈতিক লাভালাভের বিষয়ও জড়িত ছিল। তাই সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন কেবল গায়ের জোরে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনকে তাড়িয়ে দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি, নিজেদের মধ্যেও বখরা নিয়ে সংঘর্ষ করেছে, যে সংঘর্ষ প্রায়ই সশস্ত্র রূপ নিয়েছে।
সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস, তাণ্ডব, টেন্ডারবাজি ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে গোলাগুলি ও খুনাখুনি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিমান করে ছাত্রলীগের সংগঠনিক নেতৃত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে বাধ্য হলেন। কিন্তু তাতেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর ফলে যা দাঁড়িয়েছে তা হলো, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার পরিবেশ দুটোই নষ্ট হয়েছে।
সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের আচরণে ফ্যাসিবাদী লক্ষণ আবারও পরস্ফুিট হয়ে দেখা দিয়েছে, যখন ছাত্রলীগের সমাবেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। ভিন্নমতাবলম্বী বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের হলেই যে কোনোভাবে দমন করা হবে, এমনকি খুন করা হবে—এসব কিসের ইঙ্গিত? আর যাই হোক তা যে গণতান্ত্রিক আচরণ নয়, তা বোধহয় ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। বরং এটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদ। এটা কি কোনো গণতান্ত্রিক বা সভ্য দেশে ভাবা যায়, প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যা করা হবে? এত বড় কলঙ্কজনক ঘটনা আগে কখনও ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।
সরকার যে কোনো ধরনের বিরোধী মত সহ্য করতে রাজি নয় বরং বিরোধী মত বা সমালোচনা বন্ধ করতে শুধু হুমকিই নয়, সরাসরি সন্ত্রাসই তাদের কর্মকৌশলে পরিণত হয়েছে, তা সাম্প্রতিক ঘটনা থেকেও দেখা যাচ্ছে। সরকার কীভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে তা আমার দেশ-এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি ও সাংবাদিক এম আবদুল্লাহকে সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করার ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহীকে কেন্দ্র করে একটি সংবাদ প্রকাশ করার পর সরকারদলীয় লোকজন এতটাই ক্ষেপেছেন যে, তারা আবোল-তাবোল বকতে শুরু করেছেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার এম আবদুল্লাহকে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়েছে সরকারদলীয় লোকজন। হামলাকারীরা তার গাড়ি ভেঙে দিয়েছে, তাকে ইট দিয়ে আঘাত করেছে, প্রাণনাশের চেষ্টা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা জিডি গ্রহণ করতে রাজ হয়নি। পুলিশ প্রশাসনের দলীয়করণ এ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শুধু কি তাই? গত ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে এক জামিন মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণকালে সরকারের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিক এম আবদুল্লাহর ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনাটি সরাসরি অস্বীকার করেছিলেন। অথচ আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনা প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে, কোনো কোনো পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদনও বের হয়েছে। এমনকি এ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত ও অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল যদি হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে অসত্য কথা বলেন, তখন আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না। কারণ, এ সবই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ।
আমার দেশে প্রকাশিত যে রিপোর্ট নিয়ে সরকারের এত গাত্রদাহ, সেই রিপোর্টের বিষয়বস্তু কী?
জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্তারা বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়েছে বলে পেট্রোবাংলার কর্মচারীদের পক্ষে আবু সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী বরাবরে অভিযোগ করেছেন। এটাই সংবাদ হিসেবে ছেপেছিল আমার দেশ ১৭ ডিসেম্বরের সংখ্যায়। এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে আমি কোনো কথা বলছি না। আমার দেশও তেমন কোনো কথা বলেনি। উপরন্তু আবু সিদ্দিকীর অভিযোগপত্রকে কোনো উড়ো চিঠি বলে তাত্ক্ষণিক উড়িয়ে দেয়া যেত যদি না এই অভিযোগপত্র নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার মধ্যে অফিসিয়াল চিঠি চালাচালি না হতো। আবু সিদ্দিকীর অভিযোগপত্র পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। পেট্রোবাংলা অবশ্য স্পর্শকাতর বিষয় ও উচ্চ পর্যায়ের লোক জড়িত আছে বিধায় তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেছিল। যাই হোক, যে বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার মধ্যে আনুষ্ঠানিক চিঠি চালাচালি হয়েছে, তা সংবাদপত্রের জন্য প্রকাশিত খবর হতে পারবে না কেন? আমার দেশ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে যে, প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যাদি সংক্রান্ত কাগজপত্র তাদের হাতে রয়েছে।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটি কী? হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের মধ্যবর্তী মুচাই নামক স্থানে গ্যাস সঞ্চালন লাইনে কম্প্রেসার স্টেশন স্থাপনের কাজটি বিনা টেন্ডারে দেয়া হয়েছে মার্কিন তেল কোম্পানি শেভরনকে। ঘুষের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ হলেও এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ১. মুচাইয়ে কম্প্রেসার বসানোর কোনো প্রয়োজন নেই। ২. বিনা টেন্ডারে মার্কিন কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়া অনৈতিক। ৩. এজন্য বাংলাদেশকে দিতে হবে ৩৭০ কোটি টাকা (৫২ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার), যা রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
মুচাইয়ে কম্প্রেসার বসানোর কোনো প্রয়োজন নেই, এই যুক্তিতে শেভরনকে কম্প্রেসারের কাজ দেয়ার বিরোধিতা করেছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের অনেকে। আমার দেশ-এর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পেট্রোবাংলার পরিচালক মোঃ ইউসুফ আলী তালুকদার অফিসিয়াল চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন (১৫ অক্টোবর), মুচাইতে কম্প্রেসার স্থাপনের প্রয়োজন নেই। কারণ কম্প্রেসার বসানোর পর গ্যাসের চাপ যে পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে প্রকল্প সারপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে (১০৫০ পিএসআইজি), বর্তমানে মুচাই পয়েন্টে সেই একই চাপ অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডে গ্যাস রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই চাপ অব্যাহত থাকবে।
তাহলে অপ্রয়োজনীয় কারণে ৩৭০ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেয়া, তা-ও আবার বিনা টেন্ডারে, তা কি সন্দেহের সৃষ্টি করে না? উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী শেখ হাসিনার প্রথমবারের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় (১৯৯৬-২০০১) জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তখনই নাইকো সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ ব্যাপারে মামলাও হয়েছিল। তাছাড়া তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে যে, তিনি বরাবর বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘আমার দেশ’-এ রিপোর্টের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সরকার মিথ্যা ও শঠতার আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে কোনো নগদ অর্থ প্রদান করতে হবে না অথবা বিদেশি ঋণের অর্থ গ্রহণ করতে হবে না।’ ভাবটা এমন যেন, মার্কিন কোম্পানি দয়া করে আমাদের উপকারার্থে নিজ খরচে কম্প্রেসার বসাচ্ছে। মুনাফা ছাড়া কোনো বহুজাতিক কোম্পানি নিজ খরচে কোনো কাজ করেছে বলে কী কেউ কখনও শুনেছে! সরকার কি জনগণকে বোকা বানাতে চেয়েছে? বাংলাদেশকে অবশ্যই কম্প্রেসারের দাম দিতে হবে। কস্ট রিকভারির আওতায় শেভরন পেট্রোবাংলার মাধ্যমে যে গ্যাস বিক্রি করছে সেই গ্যাস বিক্রির অর্থ নগদ প্রদান করেই শেভরনকে কম্প্রেসারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
সরকারের কাজে যদি কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়ে তা তুলে ধরা মিডিয়ার কাজ। দায়িত্বশীল মিডিয়া এটাই করে থাকে। উপরে উল্লিখিত ঘটনায় অসঙ্গতি চোখে পড়ার মতো। সেটাই তুলে ধরেছে আমার দেশ। আর এই সংক্রান্ত দুর্নীতির যে অভিযোগ পেট্রোবাংলার কর্মচারীদের পক্ষ থেকে লিখিত আকারে এসেছে এবং যাকে হালকাভাবে উড়িয়ে না দিয়ে আইনের ভাষায় যাকে বলা যায় কগনিজেন্সে নিয়েছিল মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা, তার খবর পরিবেশন করেছে দৈনিক আমার দেশ। আর তাই হুমকি-ধামকি, দৈহিক আক্রমণের মতো ঘটনা শুরু হয়ে গেল। এ কিসের আলামত? এক-এক করে মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের নেতারা যে ভাষায় হুমকি শুরু করলেন তাকে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা ছাড়া আর কী বলা যায়? কোথায় থাকল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা? মন্ত্রীরা যেসব ভাষা ব্যবহার করছেন তা রুচিসম্মত নয়, গণতান্ত্রিক তো নয়ই। পত্রিকার রিপোর্টে জানতে পারলাম, মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক নাকি বলেছেন, ‘আমি আর মতিয়া আপা নাকি তাকে (আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান) হুমকি দিয়েছি। হুমকি নয়, আমরা মানুষকে জানান দিয়েছি।’ (আমার দেশ ২০ ডিসেম্বর)। এ ধরনের ভাষা উচ্চ পর্যায়ের নেতা বা মন্ত্রীর মুখে মানায় না। উচ্চ পর্যায়ের নেতা বা মন্ত্রীরা যখন এমন ভাষা ব্যবহার করেন, তখন গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না।
ফ্যাসিবাদী প্রবণতা অবশ্য বেশ আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিল। আমার দেশ-এর সম্পাদক ও সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ তার একটি নমুনা মাত্র। সরকারি ছাত্র সংগঠনের দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস-খুনাখুনি দিয়ে যার শুরু, তার পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। এরই মধ্যে ক্রসফায়ার ও রিমান্ডের ঘটনা বহুল আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়কের জরুরি সরকার ব্যাপকভাবে রিমান্ড কারবার শুরু করেছিল। তখনও আদালত সরকারের কথামত রিমান্ড মঞ্জুর করত ঢালাওভাবে। এখনও একই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। রিমান্ডে বেআইনিভাবে নির্যাতন এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। রিমান্ড মানেই যে দৈহিক নির্যাতন এবং চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, তা চোখ বুজে বলা যায়। আর ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ভয়াবহরূপে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পত্রিকায় ক্রসফায়ারের একটি ঘটনা চোখে পড়ায় হাইকোর্ট সুয়োমোটে সরকারের ওপর রুল জারি করেছিল গত ১৭ নভেম্বর। রুলের জবাব দেয়ার সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার পক্ষ এখনও কোনো জবাব দেয়নি। শুধু তাই নয়, এখনও ক্রসফায়ার অব্যাহত রয়েছে বলে হাইকোর্টের বেঞ্চ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে কিছু কুলাঙ্গার রয়েছে। এদের ধরে শাস্তি দিতে পারলেই বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, র্যাবের ডিজির সঙ্গে যোগাযোগ করুন, আর যেন কোনো ক্রসফায়ার না হয়। যারা ক্রসফায়ার করছে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন।
হাইকোর্ট জনগণের গণতান্ত্রিক সেন্টিমেন্টকেই প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু যেখানে বিচার ব্যবস্থাকেই অবজ্ঞা করা হয়, প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়, যেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর প্রকাশ্য আক্রমণ পরিচালনা করা হয়, যেখানে পুলিশকে পরিণত করা হয় দলীয় রাজনৈতিক বাহিনীতে—সেখানে হাইকোর্টের এমন সঙ্গত অথচ ব্যতিক্রমী ভূমিকা সত্ত্বেও আমরা কতটুকু ভরসা করতে পারি?
ফ্যাসিবাদী লক্ষণ সবক’টিই পরস্ফুিট হয়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক মানুষকে এখনই সতর্ক ও সজাগ হতে হবে। গণতন্ত্রকে অর্জন ও রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি জাতীয় কর্তব্য।
ঠিক এক বছর আগে জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গেই যা শুরু হয়েছিল তা হলো, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল এবং শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস। সন্ত্রাস খুনাখুনির পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এর সঙ্গে রাজনৈতিক আধিপত্যই শুধু নয়, অর্থনৈতিক লাভালাভের বিষয়ও জড়িত ছিল। তাই সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন কেবল গায়ের জোরে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনকে তাড়িয়ে দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি, নিজেদের মধ্যেও বখরা নিয়ে সংঘর্ষ করেছে, যে সংঘর্ষ প্রায়ই সশস্ত্র রূপ নিয়েছে।
সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস, তাণ্ডব, টেন্ডারবাজি ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে গোলাগুলি ও খুনাখুনি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিমান করে ছাত্রলীগের সংগঠনিক নেতৃত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে বাধ্য হলেন। কিন্তু তাতেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর ফলে যা দাঁড়িয়েছে তা হলো, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার পরিবেশ দুটোই নষ্ট হয়েছে।
সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের আচরণে ফ্যাসিবাদী লক্ষণ আবারও পরস্ফুিট হয়ে দেখা দিয়েছে, যখন ছাত্রলীগের সমাবেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। ভিন্নমতাবলম্বী বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের হলেই যে কোনোভাবে দমন করা হবে, এমনকি খুন করা হবে—এসব কিসের ইঙ্গিত? আর যাই হোক তা যে গণতান্ত্রিক আচরণ নয়, তা বোধহয় ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। বরং এটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদ। এটা কি কোনো গণতান্ত্রিক বা সভ্য দেশে ভাবা যায়, প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যা করা হবে? এত বড় কলঙ্কজনক ঘটনা আগে কখনও ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।
সরকার যে কোনো ধরনের বিরোধী মত সহ্য করতে রাজি নয় বরং বিরোধী মত বা সমালোচনা বন্ধ করতে শুধু হুমকিই নয়, সরাসরি সন্ত্রাসই তাদের কর্মকৌশলে পরিণত হয়েছে, তা সাম্প্রতিক ঘটনা থেকেও দেখা যাচ্ছে। সরকার কীভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে তা আমার দেশ-এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি ও সাংবাদিক এম আবদুল্লাহকে সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করার ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহীকে কেন্দ্র করে একটি সংবাদ প্রকাশ করার পর সরকারদলীয় লোকজন এতটাই ক্ষেপেছেন যে, তারা আবোল-তাবোল বকতে শুরু করেছেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার এম আবদুল্লাহকে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়েছে সরকারদলীয় লোকজন। হামলাকারীরা তার গাড়ি ভেঙে দিয়েছে, তাকে ইট দিয়ে আঘাত করেছে, প্রাণনাশের চেষ্টা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা জিডি গ্রহণ করতে রাজ হয়নি। পুলিশ প্রশাসনের দলীয়করণ এ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শুধু কি তাই? গত ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে এক জামিন মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণকালে সরকারের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিক এম আবদুল্লাহর ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনাটি সরাসরি অস্বীকার করেছিলেন। অথচ আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনা প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে, কোনো কোনো পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদনও বের হয়েছে। এমনকি এ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত ও অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল যদি হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে অসত্য কথা বলেন, তখন আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না। কারণ, এ সবই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ।
আমার দেশে প্রকাশিত যে রিপোর্ট নিয়ে সরকারের এত গাত্রদাহ, সেই রিপোর্টের বিষয়বস্তু কী?
জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্তারা বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়েছে বলে পেট্রোবাংলার কর্মচারীদের পক্ষে আবু সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী বরাবরে অভিযোগ করেছেন। এটাই সংবাদ হিসেবে ছেপেছিল আমার দেশ ১৭ ডিসেম্বরের সংখ্যায়। এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে আমি কোনো কথা বলছি না। আমার দেশও তেমন কোনো কথা বলেনি। উপরন্তু আবু সিদ্দিকীর অভিযোগপত্রকে কোনো উড়ো চিঠি বলে তাত্ক্ষণিক উড়িয়ে দেয়া যেত যদি না এই অভিযোগপত্র নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার মধ্যে অফিসিয়াল চিঠি চালাচালি না হতো। আবু সিদ্দিকীর অভিযোগপত্র পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। পেট্রোবাংলা অবশ্য স্পর্শকাতর বিষয় ও উচ্চ পর্যায়ের লোক জড়িত আছে বিধায় তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেছিল। যাই হোক, যে বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার মধ্যে আনুষ্ঠানিক চিঠি চালাচালি হয়েছে, তা সংবাদপত্রের জন্য প্রকাশিত খবর হতে পারবে না কেন? আমার দেশ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে যে, প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যাদি সংক্রান্ত কাগজপত্র তাদের হাতে রয়েছে।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটি কী? হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের মধ্যবর্তী মুচাই নামক স্থানে গ্যাস সঞ্চালন লাইনে কম্প্রেসার স্টেশন স্থাপনের কাজটি বিনা টেন্ডারে দেয়া হয়েছে মার্কিন তেল কোম্পানি শেভরনকে। ঘুষের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ হলেও এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ১. মুচাইয়ে কম্প্রেসার বসানোর কোনো প্রয়োজন নেই। ২. বিনা টেন্ডারে মার্কিন কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়া অনৈতিক। ৩. এজন্য বাংলাদেশকে দিতে হবে ৩৭০ কোটি টাকা (৫২ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার), যা রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
মুচাইয়ে কম্প্রেসার বসানোর কোনো প্রয়োজন নেই, এই যুক্তিতে শেভরনকে কম্প্রেসারের কাজ দেয়ার বিরোধিতা করেছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের অনেকে। আমার দেশ-এর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পেট্রোবাংলার পরিচালক মোঃ ইউসুফ আলী তালুকদার অফিসিয়াল চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন (১৫ অক্টোবর), মুচাইতে কম্প্রেসার স্থাপনের প্রয়োজন নেই। কারণ কম্প্রেসার বসানোর পর গ্যাসের চাপ যে পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে প্রকল্প সারপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে (১০৫০ পিএসআইজি), বর্তমানে মুচাই পয়েন্টে সেই একই চাপ অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডে গ্যাস রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই চাপ অব্যাহত থাকবে।
তাহলে অপ্রয়োজনীয় কারণে ৩৭০ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেয়া, তা-ও আবার বিনা টেন্ডারে, তা কি সন্দেহের সৃষ্টি করে না? উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী শেখ হাসিনার প্রথমবারের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় (১৯৯৬-২০০১) জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তখনই নাইকো সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ ব্যাপারে মামলাও হয়েছিল। তাছাড়া তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে যে, তিনি বরাবর বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘আমার দেশ’-এ রিপোর্টের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সরকার মিথ্যা ও শঠতার আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে কোনো নগদ অর্থ প্রদান করতে হবে না অথবা বিদেশি ঋণের অর্থ গ্রহণ করতে হবে না।’ ভাবটা এমন যেন, মার্কিন কোম্পানি দয়া করে আমাদের উপকারার্থে নিজ খরচে কম্প্রেসার বসাচ্ছে। মুনাফা ছাড়া কোনো বহুজাতিক কোম্পানি নিজ খরচে কোনো কাজ করেছে বলে কী কেউ কখনও শুনেছে! সরকার কি জনগণকে বোকা বানাতে চেয়েছে? বাংলাদেশকে অবশ্যই কম্প্রেসারের দাম দিতে হবে। কস্ট রিকভারির আওতায় শেভরন পেট্রোবাংলার মাধ্যমে যে গ্যাস বিক্রি করছে সেই গ্যাস বিক্রির অর্থ নগদ প্রদান করেই শেভরনকে কম্প্রেসারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
সরকারের কাজে যদি কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়ে তা তুলে ধরা মিডিয়ার কাজ। দায়িত্বশীল মিডিয়া এটাই করে থাকে। উপরে উল্লিখিত ঘটনায় অসঙ্গতি চোখে পড়ার মতো। সেটাই তুলে ধরেছে আমার দেশ। আর এই সংক্রান্ত দুর্নীতির যে অভিযোগ পেট্রোবাংলার কর্মচারীদের পক্ষ থেকে লিখিত আকারে এসেছে এবং যাকে হালকাভাবে উড়িয়ে না দিয়ে আইনের ভাষায় যাকে বলা যায় কগনিজেন্সে নিয়েছিল মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা, তার খবর পরিবেশন করেছে দৈনিক আমার দেশ। আর তাই হুমকি-ধামকি, দৈহিক আক্রমণের মতো ঘটনা শুরু হয়ে গেল। এ কিসের আলামত? এক-এক করে মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের নেতারা যে ভাষায় হুমকি শুরু করলেন তাকে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা ছাড়া আর কী বলা যায়? কোথায় থাকল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা? মন্ত্রীরা যেসব ভাষা ব্যবহার করছেন তা রুচিসম্মত নয়, গণতান্ত্রিক তো নয়ই। পত্রিকার রিপোর্টে জানতে পারলাম, মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক নাকি বলেছেন, ‘আমি আর মতিয়া আপা নাকি তাকে (আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান) হুমকি দিয়েছি। হুমকি নয়, আমরা মানুষকে জানান দিয়েছি।’ (আমার দেশ ২০ ডিসেম্বর)। এ ধরনের ভাষা উচ্চ পর্যায়ের নেতা বা মন্ত্রীর মুখে মানায় না। উচ্চ পর্যায়ের নেতা বা মন্ত্রীরা যখন এমন ভাষা ব্যবহার করেন, তখন গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না।
ফ্যাসিবাদী প্রবণতা অবশ্য বেশ আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিল। আমার দেশ-এর সম্পাদক ও সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ তার একটি নমুনা মাত্র। সরকারি ছাত্র সংগঠনের দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস-খুনাখুনি দিয়ে যার শুরু, তার পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। এরই মধ্যে ক্রসফায়ার ও রিমান্ডের ঘটনা বহুল আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়কের জরুরি সরকার ব্যাপকভাবে রিমান্ড কারবার শুরু করেছিল। তখনও আদালত সরকারের কথামত রিমান্ড মঞ্জুর করত ঢালাওভাবে। এখনও একই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। রিমান্ডে বেআইনিভাবে নির্যাতন এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। রিমান্ড মানেই যে দৈহিক নির্যাতন এবং চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, তা চোখ বুজে বলা যায়। আর ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ভয়াবহরূপে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পত্রিকায় ক্রসফায়ারের একটি ঘটনা চোখে পড়ায় হাইকোর্ট সুয়োমোটে সরকারের ওপর রুল জারি করেছিল গত ১৭ নভেম্বর। রুলের জবাব দেয়ার সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার পক্ষ এখনও কোনো জবাব দেয়নি। শুধু তাই নয়, এখনও ক্রসফায়ার অব্যাহত রয়েছে বলে হাইকোর্টের বেঞ্চ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে কিছু কুলাঙ্গার রয়েছে। এদের ধরে শাস্তি দিতে পারলেই বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, র্যাবের ডিজির সঙ্গে যোগাযোগ করুন, আর যেন কোনো ক্রসফায়ার না হয়। যারা ক্রসফায়ার করছে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন।
হাইকোর্ট জনগণের গণতান্ত্রিক সেন্টিমেন্টকেই প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু যেখানে বিচার ব্যবস্থাকেই অবজ্ঞা করা হয়, প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়, যেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর প্রকাশ্য আক্রমণ পরিচালনা করা হয়, যেখানে পুলিশকে পরিণত করা হয় দলীয় রাজনৈতিক বাহিনীতে—সেখানে হাইকোর্টের এমন সঙ্গত অথচ ব্যতিক্রমী ভূমিকা সত্ত্বেও আমরা কতটুকু ভরসা করতে পারি?
ফ্যাসিবাদী লক্ষণ সবক’টিই পরস্ফুিট হয়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক মানুষকে এখনই সতর্ক ও সজাগ হতে হবে। গণতন্ত্রকে অর্জন ও রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি জাতীয় কর্তব্য।
No comments