কুয়েটে ছাত্রলীগের হামলা-শিক্ষক ও আহত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতার মামলা!

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অমর একুশে হলে গত সোমবার দুপুরে চার শিক্ষকের নেতৃত্বে ছাত্ররা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। লুট করেছেন তাঁদের কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও টাকা।এমনটি দাবি করে গতকাল মঙ্গলবার খুলনার খানজাহান আলী থানায় মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের ছাত্রলীগের নেতা এস এম জুবায়ের সিরাজ। মামলায় চার শিক্ষক, আহত চার ছাত্রসহ ৪০ জন এবং অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি


করা হয়েছে। এ ছাড়া গত সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র বিক্ষোভের সময় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০ থেকে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে খানজাহান আলী থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন খানজাহান আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই।
ছাত্রলীগের নেতার করা মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ আরিফ (৫০), যন্ত্রকৌশল বিভাগের মুহাম্মদ মাসুদ (৪০), এ এন এম মিজানুর রহমান ও খন্দকার আফতাব আহমেদ এবং ছাত্রলীগের হামলায় আহত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শুভজিৎ বটবেল (২৩), সুজাত (২৩), অর্ণব দাস (২২) ও আলাউদ্দিন (২২)।
তাৎক্ষণিকভাবে মামলার আসামি শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত ও ছাত্রলীগ নেতার করা মামলার আসামি শুভজিৎ বটবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার দুপুরে ছাত্রলীগের নেতা এস এম জুবায়ের সিরাজ ও রাইআন তাহসিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে ও কুপিয়েছে। এখন উল্টো আমাদেরই আসামি করা হলো। ভয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
ছাত্রলীগের নেতা জুবায়ের তাঁর এজাহারে বলেন, সোমবার বেলা আনুমানিক দুইটার সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে চার শিক্ষকের নেতৃত্বে ৪০ জন এবং অজ্ঞাত বিবাদীরা দলবদ্ধ হয়ে লোহার রড, চাপাতি, রামদা, হকিস্টিক, হাতুড়ি ইত্যাদি দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অমর একুশে হলে তাঁর কক্ষসহ (২০৫) অন্যান্য কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তারা হলে অবস্থানরত ছাত্রদের এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করে।’
এজাহারে বলা হয়, বিবাদীরা জুবায়েরের কক্ষসহ হলের অন্যান্য কক্ষ থেকে ১৪-১৫টি কম্পিউটার, পাঁচটি ল্যাপটপ, সাতটি মোবাইল ফোনসেট, নগদ অর্থসহ ১৪-১৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বিবাদীদের ধাওয়া করলে যে যার মতো পালিয়ে যায়।
বিবাদীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় এজাহার করতে দেরি হলো বলে উল্লেখ করেন জুবায়ের।
এস এম জুবায়ের সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যাররা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। মারামারির সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে গিয়ে দু-একজনের গায়ে হাত তুলেছিলাম।’
ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে জুবায়ের দাবি করেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে হামলা করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সারা দেশে জামায়াত-শিবির-বিএনপি সম্মিলিতভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তারই অংশ হিসেবে কুয়েটে এই তৎপরতা চালিয়েছে।’
এদিকে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর সব শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে গেছেন। তবে গতকাল দিনভর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক শিবেন্দ্র শেখর শিকদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্যের বাসভবন ও প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা হয়নি।
যোগাযোগ করলে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, কুয়েটে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। সাইফুল্যা আল মামুন নামের একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।
হাসপাতাল ছেড়েছেন আহত ছাত্ররা: এদিকে ছাত্রলীগের হামলায় আহত ১১ জন ছাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। এ ব্যাপারে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বনানী রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার রাতের কোনো একসময় আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের বার্ষিক ভোজে নিম্নমানের খাবার দেওয়ায় গত রোববার রাতে ভোজ আয়োজক কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষিপ্ত হন আয়োজক কমিটির সদস্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী গত সোমবার দুপুরে অমর একুশে হলের ফটক ভেঙে সাধারণ ছাত্রদের বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে জখম করেন।
ছাত্রলীগের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজিত ছাত্ররা ওই দিন উপাচার্য মুহাম্মদ আলমগীরের বাসভবন ও প্রশাসনিক ভবনের কাচ ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশ সাধারণ ছাত্রদের লাঠিপেটাও করে। কর্তৃপক্ষ পরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগে বাধ্য করে।

No comments

Powered by Blogger.