অনলাইন সাংবাদিকতাঃ কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর by যোজেফ হোলানদেজ
একজন অনলাইন সাংবাদিক হিসেবে প্রায়শই আমাকে কিছু বিরক্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। প্রশ্নগুলো এমন যে, ওয়েবসাইটটি কি? এটা কোন ধরণের পত্রিকা? তবে আমার ভালো লাগে, ‘ওহ তাহলে এখন এটি পড়া যাচ্ছে না?’– এই প্রশ্নটি। ফিলিপাইনের অনলাইন সাংবাদিকরা দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে নিজেদের অবস্থানকে দেখতে পান একেবারেই তলানিতে।
এর জন্য আমরা দায়ি নই। কেননা, অধিকাংশ খবরের ওয়েবসাইটগুলোর ধারণা এসেছে সেই জুরাসিক-যুগের মিডিয়া মালিকদের মাথা থেকে। এদের ধারণা, ওয়েবসাইটগুলো যেন একেকটি সুন্দর, নতুন খেলনাবিশেষ ছাড়া অন্যকিছু নয়। এগুলো তাদের খবরগুলো বা ভিডিওচিত্রগুলো রেখে দেয় সাইবারস্পেসে।
গত তিন বছর ধরে ফিলিপাইনের একটি প্রথমসারির টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটে কাজ করতে গিয়ে আমাকে প্রায়ই আমার কর্মক্ষেত্র নিয়ে একটি প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে।
আমি এপর্যন্ত যতগুলো সাংবাদিক সম্মেলন বা অনুষ্ঠান কভার করেছি প্রায় সবগুলোতেই লোকেরা আমাকে ভুল করে টেলিভিশন সাংবাদিক ভেবে বসেছেন।
সেই একদিনের কথা বলি– তোমার ক্যামেরা কোথায়? একটি অনুষ্ঠানের গণযোগাযোগ কর্মকর্তা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন আমার দিকে। আমি আমার কেনন আইজাক্সটি দেখিয়ে বললাম, এই যে। এটি ৭.১ পিকজেল। খুবই পরিস্কার ছবি ওঠে।
প্রশ্নকর্তা যখন বুঝতে পারলেন আমি ইয়ার্কি করছি না তখন তিনি মুখটা একটু ফিরিয়ে নিলেন। আমিও নিঃশব্দে বুঝে নিলাম, যে উষ্ণতা নিয়ে তিনি এদিকে এসেছিলেন তা যেন লাল গালিচার মতো গুটিয়ে গেল। আর যেন সেই গালিচাটিই তিনি বিছিয়ে দিলেন ‘জনপ্রিয়’ সাংবাদিকদের পায়ের তলায়।
অথচ নেলসনের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ফিলিপাইনের অধিকাংশ অধিবাসিই ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করেন। তারা অধিকাংশ সময়ই খরচ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। কেউবা সময় কাটান অনলাইন গেইমে। কেউবা খেলার খবরে। আর এসবের পাশাপাশি পর্নো সাইটগুলোতেও কিন্তু বেশ হিট পড়ে।
যখন দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রতিদিনকার কাটতি ধীরে ধীরে পড়তির দিকে, তখন কিন্তু সেই পত্রিকার ওয়েবসাইটগুলোর ভিজিটরের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু তাদের কথাই বা বলব কেন, অনলাইন খবরের সাইটগুলোর পাঠকের সংখ্যাওতো দিনকে দিন বেড়েই চলছে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারকে ধন্যবাদ। কেননা, এইসব মাধ্যমে ভিজিটররা খবর চালাচালি করেন ওয়েবলিংকটা সেঁটে দিয়ে।
অনলাইন সাংবাদিকতা গত কয়েকবছর ধরে মূলধারা ও বিকল্পধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রবাহের সূত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কেননা, এই অনলাইন সাংবাদিকরাই যেকোন ঘটনার খবর দ্রুত প্রকাশ করতে পারেন।
অনলাইন সাংবাদিকদের খবর ছাড়াও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত জ্ঞান রাখতে হয়। খবর দিতে হয় বেশি বেশি। করতে হয় অতিরিক্ত পরিশ্রম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়- বেতন অল্প। অথচ এতসব প্রতিবন্ধকতার ভেতর আমাদেরই একজন অনলাইন সাংবাদিককে ফিলিপাইনের এক সংসদ কর্মকর্তার কাছ থেকে শুনতে হয়েছিল ‘হাও সিয়াও’ অর্থাৎ ভূয়া সাংবাদিক নামে তিরষ্কার।
সেই সংসদ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলছি, একজন অনলাইন সাংবাদিককে ছোট করে আপনি আমাদের সব অনলাইন সাংবাদিকেই ছোট করেছেন। আমি নিশ্চিত আপনার ঘরে কম্পিউটার আছে অথবা আপনি সেলফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন। তাহলে আমি কি বুঝে নেব, অনলাইন সাংবাদিকতা নামে যে কিছু একটা পৃথিবীর মাটিতে বিরাজ করছে, তা আপনি জানেন না?
প্রিয় পাঠক, অনলাইন সাংবাদিকতা ভবিষ্যতের বিষয় নয়। এটি আজকেরই এক বাস্তবতা। যিনি এই বাস্তবতার বাইরে অবস্থান করছেন তার ঘরেও দেখা যায় উইন্ডোজ ৯৭ জাতীয় কিছু একটা আছে!
যোজেফ হোলানদেজ উবালদি ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপিনস এর অনলাইন সাংবাদিকতার একজন সিনিয়র লেকচারার। তিনি InterAksyon.com-এ কর্মরত।
অনুবাদ: রবাব রসাঁ
No comments