কারখানা ভেঙে আবাসন-ফিরিয়ে আনতে হবে শিল্প

রকার যখন পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের দিকে নজর দিতে যাচ্ছে, তখনই রাষ্ট্রের মালিকানা আছে এমন জমিতে গড়ে উঠছে বেসরকারি আবাসন। রাষ্ট্রীয় মালিকানা আছে এমন শিল্পকারখানার জমিতে যে আবাসন গড়ে তোলা হচ্ছে, সে সম্পর্কে সরকার কিছুই জানে না। এতে বেসরকারি খাতে বা ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া শিল্পের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিষয়টি বিস্তারিত উঠে এসেছে।


মঙ্গলবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, 'রাষ্ট্রীয় মালিকানা রয়েছে এ রকম অন্তত ছয়টি শিল্পকারখানা গোপনে আবাসন প্রকল্প করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এর কোনোটিতে শপিং মল, আবার কোনোটিতে গুদাম বানিয়েও ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। তার আগে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে মিলের যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা। সরকারকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে এসব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। অথচ মিলগুলোর একটি অংশ সরকারের হাতে রেখে চালু রাখার শর্তে বাকি অংশ সাবেক মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত এসব মিলের কাছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বাংলাদেশ টেঙ্টাইল মিলস করপোরেশনের পাওনা ৪১২ কোটি টাকা। এসব পাওনা পরিশোধ তো দূরের কথা, বিটিএমসির সঙ্গে মিল কর্তৃপক্ষের কোনো যোগাযোগই নেই। অথচ তাদের সঙ্গে সরকারের সম্পাদিত চুক্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, 'মিলগুলো চালাতে হবে। বিটিএমসিসহ সরকারের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। যদি বন্ধ করা হয়, তাহলে সরকার হস্তক্ষেপ করবে।' চুক্তির ২৪ ধারায় দায় শোধ করতে না পারলেও সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ আছে।
যে সম্পত্তিতে সরকারের অংশ রয়েছে, সেই সম্পত্তি সরকারের অগোচরে কিভাবে বিক্রি হয়ে যায়? বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকারের তদারকির অভাবে এ রকম ঘটনা ঘটেছে। নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রের মালিকানা রয়েছে এমন কোনো সম্পত্তি সরকারের অনুমতি ছাড়া বিক্রি করা যায় না। রাষ্ট্রীয় মালিকানার হার যা-ই হোক, সম্পত্তি বিক্রি করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। টেঙ্টাইল মিলের এসব সম্পত্তি সাবেক মালিকদের কাছে হস্তান্তরের দলিল রয়েছে। সেখানেও স্পষ্টভাবে বলা আছে, 'মিল-কারখানা চালু রাখার জন্যই সাবেক মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হলো।' স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মালিকপক্ষ একক সিদ্ধান্তে উৎপাদন বন্ধ করে মিল বিক্রি করতে
পারে না।
চুক্তি ভঙ্গ করে রাষ্ট্রের অংশ আছে এমন সম্পত্তি বিক্রি করা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এই কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁরা যে সুযোগ নিয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ থাকবে না, তা হতে পারে না। অনেক দেরিতে হলেও সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করব, সরকার শিল্পের জায়গায় নতুন শিল্প স্থাপনে উদ্যোগী হবে। সময়োপযোগী আন্তর্জাতিক মানের শিল্প আমাদের দেশে গড়ে উঠতে পারে। দেশের উন্নয়নে সরকার সেই ভূমিকা নিতেই পারে।

No comments

Powered by Blogger.