ভোট গ্রহণ হোক সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ-কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

কদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের শেষ নির্বাচন, অন্যদিকে নতুন গঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন—দুটি মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জানুয়ারির এই নির্বাচন। এ ছাড়া প্রায় সব প্রার্থীর ভাবমূর্তির সমস্যা, কালোটাকা ছড়ানোর অভিযোগ, সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী—এসব বিষয়ও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


স্থানীয় সরকার পর্যায়ের এই নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে সরকারি দলের সমর্থিত প্রার্থী যেমন রয়েছেন, তেমনি সরকারি দলের সঙ্গে জড়িত আরও তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচনে না থাকলেও তাদের একজন নির্বাচন করছেন সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে। মেয়র পদে যে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে খুন, জবরদখল, সন্ত্রাসী তৎপরতা, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, সে কারণে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করতে হচ্ছে।
সাধারণভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ না উঠলেও নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কালোটাকার ছড়াছড়ি বেড়ে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী চক্র। নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের প্রবণতা বেড়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারা বা কোন চক্র এর সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম বা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হলেও এই প্রথম কোনো নির্বাচন পুরোটাই এই পদ্ধতিতে হতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহূত হবে কি না বা এই পদ্ধতির কোনো ত্রুটি রয়েছে কি না, তার একটি পরীক্ষা হয়ে যাবে এই নির্বাচনে। এই পদ্ধতি নিয়ে কোনো কোনো মহলে সংশয় রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এর বিরোধিতা করে আসছে। এই নির্বাচনে এর যথাযথ ও সুষ্ঠু ব্যবহারের ওপর তাই অনেক কিছু নির্ভর করছে। ভোটাররা যাতে এই মেশিন সঠিকভাবে ব্যবহার করে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হোক, সেটাই প্রত্যাশা। মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনো প্রার্থী না থাকার বিষয়টি নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। তবে আশা করছি, ভোটাররা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে এমন একজনকে নির্বাচন করবেন, যিনি ভবিষ্যতে জনগণের এই রায়ের প্রতি সম্মান জানাবেন। নির্বাচন কমিশন তাদের সর্বশেষ নির্বাচনটি সাফল্যের সঙ্গে শেষ করুক, সেই প্রত্যাশাও রইল।

No comments

Powered by Blogger.