খেলার মাঠে এ কী কাণ্ড!

ড় দু-একটা দলের হাতেগোনা কিছু দর্শকের অশ্লীল গালাগাল প্রায় প্রতি ম্যাচেই বিষিয়ে তুলছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পরিবেশ। তবে কাল আর দর্শকদের ‘কষ্ট’ করতে হয়নি। ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করতে এগিয়ে এসেছেন খেলোয়াড়-কর্মকর্তারাই! বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে পরশু ২৩ ওভারে ১৩৪ রান করেছিল ভিক্টোরিয়া। কাল রিজার্ভ ডেতে ব্যাটিং করে ওল্ড ডিওএইচএস অলআউট ১১৩ রানে। তবে ইনিংসের দশম ওভার পর্যন্ত ওল্ড ডিওএইচএসের


অবস্থা ভালোই ছিল। দলের রান ১ উইকেটে ৬৪ তখন। এই ওভারের চতুর্থ বলে ভিক্টোরিয়ার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান নাসির জামশেদ। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে আউট নিয়ে মৃদু অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। সাকিবের পরের বলেই এলবিডব্লু হয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ওল্ড ডিওএইচএসের আরেক ব্যাটসম্যান ফয়সাল হোসেন। ম্যাচ কলঙ্কিত এরই সূত্র ধরে। ভিক্টোরিয়ার ২১ রানের জয় বা সাকিবের ৪ উইকেটের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে ওই ঘটনাই।
আউট হওয়ার পর একটু সময় নিয়ে উইকেট ছাড়ছিলেন ফয়সাল। সেটা দেখে তাঁকে উদ্দেশ করে ভিক্টোরিয়ার ড্রেসিংরুম থেকে চিৎকার করতে থাকেন ক্লাবটির গভর্নিং বডির নতুন চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান। নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা আশরাফুল তখন আম্পায়ার আনিসুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। ব্যাপারটা কোনো কারণে সহ্য হয়নি ভিক্টোরিয়ার তামিম ইকবালের। শর্ট মিড উইকেট থেকে একরকম মারমুখী ভঙ্গিতে তেড়েই যান আশরাফুলের দিকে। দুই আম্পায়ারের সঙ্গে তখন ভিক্টোরিয়ার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং আরও দু-একজন খেলোয়াড় তামিমকে নিবৃত্ত করেন। খেলা বন্ধ থাকে মিনিট চারেক।
তামিমের অভিযোগ, আশরাফুলই নাকি তাঁকে আগে গালি দিয়েছেন, ‘আশরাফুল ভাই আম্পায়ারের কাছে বাদল (লুৎফর রহমান) ভাইয়ের ব্যাপারে উল্টাপাল্টা বলছিলেন। আমি তখন কাছে গিয়ে বলি, আপনি এ রকম করছেন কেন। খেলার মাঠে এ রকম হয়ই। তখন উনি (আশরাফুল) আমাকে গালি দেন, আমিও গালি দিই।’ আশরাফুলসহ ওই সময়ে আশপাশে থাকা অন্যদের দাবি, গালাগালের পর্বটা শুরু করেছিলেন তামিমই। ‘ও (তামিম) এসে আমাকে বলে, আপনি এ নিয়ে কথা বলার কে? আমি বলি, আমি বলব না তো কে বলবে? তখন ও আমাকে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল শুরু করে। আমাকে নাকি মেরে ফেলবে...। সাকিব এসে সরি বললেও তামিম বলছিল, সরি বলার কী আছে? কেউ সরি বলবি না’—ঘটনার বর্ণনায় বলেছেন আশরাফুল।
তামিম-আশরাফুলের দ্বন্দ্ব ওল্ড ডিওএইচএস কোচ খালেদ মাহমুদ ও খেলোয়াড় ফয়সাল হোসেনের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের পুরোনো রেষারেষিরই জের হয়তো। মোহামেডান থেকে যেসব ক্রিকেটার নিয়ে লুৎফর রহমান ভিক্টোরিয়ায় পাড়ি জমান, তাঁদের সঙ্গে আসার কথা ছিল ফয়সালেরও। কিন্তু ফয়সাল যোগ দেন ওল্ড ডিওএইচএসে। এ নিয়ে লিগ শুরুর আগেই নাকি ফয়সালকে টেলিফোনে শাসান লুৎফর রহমান। তবে লুৎফর রহমানের দাবি, ‘ডিকেন্স (ফয়সাল) আমার কাছ থেকে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ওল্ড ডিওএইচএসে চলে গেছে। টাকাও ফেরত দেয়নি। আমার কাছে প্রমাণ আছে। আমি সেসব প্রমাণসহ সিসিডিএমে অভিযোগ করার পরও তারা ওকে খেলতে দিচ্ছে!’
ফয়সালকে উদ্দেশ করে কাল কোনো খারাপ কথা বলেননি বলেও দাবি করেছেন লুৎফর, ‘ও ম্যাচের সময় নষ্ট করছিল। আমি শুধু বলেছি, ডিকেন্স, বেরিয়ে আয়। গালি দিইনি। আমার কাছে পুরো ঘটনা রেকর্ড করা আছে।’ তবে ফয়সালের অভিযোগ, ‘ওনার দলে খেলিনি। সেই ক্ষোভ থেকেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছেন। খেলার মাঠে কোনো ক্লাব কর্মকর্তার এমন আচরণ নজিরবিহীন।’ লুৎফর রহমানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি, ‘এটা মিথ্যা কথা। আমি কোনো টাকা নিইনি। নিলে ওল্ড ডিওএইচএসে খেলি কীভাবে?’
লিগের আগে ফয়সালকে নিয়ে খালেদ মাহমুদের সঙ্গেও বাদানুবাদ হয়েছে লুৎফর রহমানের। ‘ফয়সালের পক্ষ নিয়ে সুজন (মাহমুদ) আমাকে একদিন টেলিফোনে হুমকি দিয়েছে’, বলেছেন লুৎফর। তবে মাহমুদের পাল্টা অভিযোগ, ‘হুমকি দিতে চাইলে আমিই ফোন করতাম। কিন্তু ফোনটা করেছিলেন উনি। অনেক আজেবাজে কথা বলেছেন। আমার প্রাইম ব্যাংকের চাকরি নাকি খেয়ে ফেলবেন। আমি তখন বলেছি টাকার ক্ষমতা আমার সঙ্গে না দেখাতে।’
মাহমুদ-লুৎফর-ফয়সাল— ত্রিমুখী এই দ্বন্দ্বেরই পরিণতি শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের কালকের ঘটনা। তবে কাল সন্ধ্যায় আশরাফুল-তামিম দুজনই বলেছেন, তাঁরা ব্যাপারটা ভুলে গেছেন। খেলা শেষে হাত মিলিয়ে, জড়িয়ে ধরে আশরাফুলকে ‘সরি’ বলেছেন তামিম। তবে শাস্তি এড়ানো যায়নি। মাঠে অসদাচরণের দায়ে ম্যাচ রেফারি জিয়াউল ইসলাম এক ম্যাচ করে সাসপেন্ড করেছেন তামিম ও ভিক্টোরিয়ার কর্মকর্তা লুৎফর রহমানকে। আজ একই মাঠে গাজী ট্যাংকের বিপক্ষে ম্যাচে দলের ড্রেসিংরুমে তাঁদের প্রবেশাধিকার থাকবে না। তামিমকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এ ছাড়া ওল্ড ডিওএইচএসের আশরাফুল, ফয়সাল ও নাসির জামশেদকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী তামিমের অপরাধ লেভেল-২ পর্যায়ের এবং এর সর্বোচ্চ শাস্তি তিন ম্যাচের বহিষ্কারাদেশ ও সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা। তামিম দুঃখ প্রকাশ করায় এবং তার ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে দেওয়া হয়নি সর্বোচ্চ শাস্তি।

No comments

Powered by Blogger.