মহাজোট সরকারের ৩ বছর-শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য-ব্যর্থতা by ড. নিয়াজ আহম্মেদ
শিক্ষা আমাদের দেশে মৌলিক মানবীয় অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি না পেয়ে বরং মৌলিক নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। শিক্ষা বিস্তার ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি সরকারই কমবেশি চেষ্টা করেছে এবং এখনো করছে। ফলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল সামলাতে না পারার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বেড়েছে, বেড়েছে ঝরে পড়ার হারও। তুলনামূলক বিচারে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি না পেলেও
সংখ্যাগত বিচারে বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির হার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এ সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন_এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা অচিরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে পেঁৗছে যাব বলে আশা রাখতে পারি। শিক্ষার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় বিবেচ্য। এক. শিক্ষার কাঠামোগত পরিবর্তন ও সংস্কার। দুই. শিক্ষা বিস্তার ও সম্প্র্রসারণ। এককথায় শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা। বর্তমান মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এ দুটি বিষয় মাথায় রেখে কাজ করে আসছে। সফল নেতৃত্ব, দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষায় ভাবনারত ব্যক্তিদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে আমরা সফলতার মুখ দেখছি। আমি এবং আমার মতো অনেকেরই ধারণা, শিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের এ প্রচেষ্টা অব্যহৃত থাকলে সরকারের মেয়াদকালে আমরা আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হব।
সরকারের কাঠামোগত সংস্কার বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সফল উদ্যোগ হিসেবে অতি স্বল্পসময়ের মধ্যে একটি অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল ধারার শিক্ষানীতি উপহার দেওয়া এবং তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশ থেকে বর্তমান শিক্ষানীতির প্রচণ্ড সমালোচনা খুব কম এসেছে। যদিও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে; কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এর বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে আমরা আশা করতে পারি। এমন সময় ছিল যখন বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরিয়েও পঞ্চম কিংবা অষ্টম শ্রেণীর সার্টিফিকেট পাওয়া দুষ্কর ছিল না। এখন আর তা সম্ভব নয়। সরকারের নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট ও জুনিয়র শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ দুটি পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে শুধু কোমলমতি শিশু-কিশোরদের সন্তুষ্টি অর্জিত হচ্ছে তা নয়, বরং তাদের সার্টিফিকেটগুলোর যথাযথ ও কার্যকর ব্যবহারের সুযোগ এবং পরবর্তী শিক্ষার ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণে তাদের ভাবনার দ্বার হবে উন্মুক্ত। এতে একদিকে যেমন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে দেশে এবং দেশের বাইরে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে সরকারের এ উদ্যোগ সুফল বয়ে আনবে। এ বিশ্বাস আমরা রাখতে পারি। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণ সরকারের একটি বড় সাফল্য। আগে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণ করা হতো। এখন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তা করাতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ যেমন বাড়ছে, তেমন ঝরে পড়ার হারও ক্রমান্বয়ে কমছে। খোদ এ বছর সরকার ২২ কোটি বই ছাপানোর কাজ শেষ করে এবং বছরের শুরুতেই বইগুলো বিতরণ করা হয়। সরকারি-বেসরকারি বিশেষ করে বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও এখন সরকার থেকে বই পাচ্ছে। আজও পাড়াগাঁয় থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি বস্তিতে এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোও এর আওতায় এসেছে।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা সর্বাগ্রে ছিল। প্রাথমিক থেকে পরবর্তী সব স্তরের শিক্ষায় ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার পাচ্ছে। দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি ল্যাপটপ দোয়েল এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শোভা পাচ্ছে। অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ এখন প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুশীলন করা হচ্ছে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা আর্থিক সাশ্রয় থেকে শুরু করে যাবতীয় হয়রানির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে। লেখাপড়াকে মানুষের কাছে আরো সহজে আনয়নের ক্ষেত্রে বর্তমানে বড় ভূমিকা পালন করছে ই-বুকিং। ইচ্ছা করলে এখন ইন্টারনেটে বই পড়া যায়। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে এমনটা হওয়া উচিত, যা সম্ভব হয়েছে বর্তমান মহাজোট সরকারের মাধ্যমে। শিক্ষার কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি বর্তমান সরকার শিক্ষাবিস্তার ও সম্প্রসারণের দিকে প্রচণ্ডভাবে দৃষ্টি দিয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ কাঠামোগত পরিবর্তনের মতো প্রাথমিক স্তর থেকে পরবর্তী সব স্তরে কমবেশি লক্ষ করা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়নের ফলে গ্রাম থেকে শহরের মানুষের স্থানান্তরের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা শহরে নতুন ১২টি সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি ও বিস্তারের আর এক যুগান্তকারী অধ্যায়। ঢাকা শহরের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডাবল শিফট চালুর উদ্যোগ এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ শিক্ষা সম্প্রসারণের সফল উদ্যোগেরই একটি অংশ। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের সন্তানরা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ পাবে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মতো উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও সরকারের উদ্যোগের কমতি নেই। নতুন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের মতো ঢাকা শহরে ছয়টি নতুন সরকারি কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ঢাকা শহরের সরকারি কলেজগুলোর ভর্তির চাপ কমানোর ক্ষেত্রে নতুন এ কলেজগুলো সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। সরকারি মাধ্যমিক ও সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার এ উদ্যোগ এগিয়ে চলছে এবং আমরা আশা করি বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে এগুলোর পরিপূর্ণ কার্যক্রম আমরা দেখব। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পর্যাপ্ত ডাক্তার ও অন্যান্য পেশার লোকদের তৈরি করতে পারছি না। আমাদের এখনো প্রায় ১৪ হাজার ডাক্তার প্রয়োজন। এ চাহিদা সামনে রেখে বর্তমান সরকার কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। দেশের সব মানুষের উচ্চশিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রতিটি জেলার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চিন্তাভাবনা সরকারের রয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করে। গোপালগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্থাপন করা হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। লেদার টেকনোলজি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরিত করা হয়। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনে সরকারের এসব উদ্যোগ আমাদের দেশে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি ও বিদেশি চাহিদা মোতাবেক নতুন নতুন বিষয়ে পাঠদান চলছে, যা আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ব্যর্থতা একেবারেই নেই। শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে সত্য; কিন্তু শিক্ষকদের উন্নয়ন হয়েছে নিতান্তই কম। বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের টাইমস্কেল একবার দিয়ে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল সরকারের অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা আর কতবার সরকারের কাজে এ দাবিগুলো নিয়ে হাজির হব। সরকারের তিন বছর পূর্তিতে আমরা অবশ্যই জোরালো দাবি জানাই অবিলম্বে আমাদের দিকে ফিরে তাকান, শিক্ষকদের মানসম্মত জীবনযাপনে সহায়তা করুন।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
neazahmed_2002@yahoo.com
সরকারের কাঠামোগত সংস্কার বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সফল উদ্যোগ হিসেবে অতি স্বল্পসময়ের মধ্যে একটি অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল ধারার শিক্ষানীতি উপহার দেওয়া এবং তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশ থেকে বর্তমান শিক্ষানীতির প্রচণ্ড সমালোচনা খুব কম এসেছে। যদিও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে; কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এর বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে আমরা আশা করতে পারি। এমন সময় ছিল যখন বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরিয়েও পঞ্চম কিংবা অষ্টম শ্রেণীর সার্টিফিকেট পাওয়া দুষ্কর ছিল না। এখন আর তা সম্ভব নয়। সরকারের নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট ও জুনিয়র শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ দুটি পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে শুধু কোমলমতি শিশু-কিশোরদের সন্তুষ্টি অর্জিত হচ্ছে তা নয়, বরং তাদের সার্টিফিকেটগুলোর যথাযথ ও কার্যকর ব্যবহারের সুযোগ এবং পরবর্তী শিক্ষার ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণে তাদের ভাবনার দ্বার হবে উন্মুক্ত। এতে একদিকে যেমন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে দেশে এবং দেশের বাইরে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে সরকারের এ উদ্যোগ সুফল বয়ে আনবে। এ বিশ্বাস আমরা রাখতে পারি। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণ সরকারের একটি বড় সাফল্য। আগে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণ করা হতো। এখন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তা করাতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ যেমন বাড়ছে, তেমন ঝরে পড়ার হারও ক্রমান্বয়ে কমছে। খোদ এ বছর সরকার ২২ কোটি বই ছাপানোর কাজ শেষ করে এবং বছরের শুরুতেই বইগুলো বিতরণ করা হয়। সরকারি-বেসরকারি বিশেষ করে বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও এখন সরকার থেকে বই পাচ্ছে। আজও পাড়াগাঁয় থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি বস্তিতে এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোও এর আওতায় এসেছে।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা সর্বাগ্রে ছিল। প্রাথমিক থেকে পরবর্তী সব স্তরের শিক্ষায় ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার পাচ্ছে। দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি ল্যাপটপ দোয়েল এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শোভা পাচ্ছে। অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ এখন প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুশীলন করা হচ্ছে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা আর্থিক সাশ্রয় থেকে শুরু করে যাবতীয় হয়রানির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে। লেখাপড়াকে মানুষের কাছে আরো সহজে আনয়নের ক্ষেত্রে বর্তমানে বড় ভূমিকা পালন করছে ই-বুকিং। ইচ্ছা করলে এখন ইন্টারনেটে বই পড়া যায়। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে এমনটা হওয়া উচিত, যা সম্ভব হয়েছে বর্তমান মহাজোট সরকারের মাধ্যমে। শিক্ষার কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি বর্তমান সরকার শিক্ষাবিস্তার ও সম্প্রসারণের দিকে প্রচণ্ডভাবে দৃষ্টি দিয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ কাঠামোগত পরিবর্তনের মতো প্রাথমিক স্তর থেকে পরবর্তী সব স্তরে কমবেশি লক্ষ করা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়নের ফলে গ্রাম থেকে শহরের মানুষের স্থানান্তরের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা শহরে নতুন ১২টি সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি ও বিস্তারের আর এক যুগান্তকারী অধ্যায়। ঢাকা শহরের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডাবল শিফট চালুর উদ্যোগ এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ শিক্ষা সম্প্রসারণের সফল উদ্যোগেরই একটি অংশ। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের সন্তানরা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ পাবে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মতো উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও সরকারের উদ্যোগের কমতি নেই। নতুন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের মতো ঢাকা শহরে ছয়টি নতুন সরকারি কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ঢাকা শহরের সরকারি কলেজগুলোর ভর্তির চাপ কমানোর ক্ষেত্রে নতুন এ কলেজগুলো সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। সরকারি মাধ্যমিক ও সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার এ উদ্যোগ এগিয়ে চলছে এবং আমরা আশা করি বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে এগুলোর পরিপূর্ণ কার্যক্রম আমরা দেখব। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পর্যাপ্ত ডাক্তার ও অন্যান্য পেশার লোকদের তৈরি করতে পারছি না। আমাদের এখনো প্রায় ১৪ হাজার ডাক্তার প্রয়োজন। এ চাহিদা সামনে রেখে বর্তমান সরকার কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। দেশের সব মানুষের উচ্চশিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রতিটি জেলার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চিন্তাভাবনা সরকারের রয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করে। গোপালগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্থাপন করা হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। লেদার টেকনোলজি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরিত করা হয়। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনে সরকারের এসব উদ্যোগ আমাদের দেশে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি ও বিদেশি চাহিদা মোতাবেক নতুন নতুন বিষয়ে পাঠদান চলছে, যা আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ব্যর্থতা একেবারেই নেই। শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে সত্য; কিন্তু শিক্ষকদের উন্নয়ন হয়েছে নিতান্তই কম। বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের টাইমস্কেল একবার দিয়ে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল সরকারের অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা আর কতবার সরকারের কাজে এ দাবিগুলো নিয়ে হাজির হব। সরকারের তিন বছর পূর্তিতে আমরা অবশ্যই জোরালো দাবি জানাই অবিলম্বে আমাদের দিকে ফিরে তাকান, শিক্ষকদের মানসম্মত জীবনযাপনে সহায়তা করুন।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
neazahmed_2002@yahoo.com
No comments