শী ত পো শা ক-সোয়েটার
ফ্যাশনে শীতের ছোঁয়া লেগেছে বেশ আগেই। এখন শুধু চাদর কিংবা মাফলারে শীত ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রচণ্ড শীতে চাই উষ্ণতায় মোড়া সোয়েটার। পোশাকের সঙ্গে ফ্যাশনেবল সোয়েটার নিয়ে আসে বৈচিত্র্য। লিখেছেন আশরাফুল ইসলাম রানা বলতে গেলে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। ভোরের ঝিরি ঝিরি শিশির, মিঠে রোদ সব মিলিয়ে শীতকালটা আমাদের দেশে বেশ চমৎকারই! কিন্তু হিম ঠাণ্ডার এই সময়টা আরও উপভোগ্য হয়ে উঠবে যখন আপনার পোশাকটা হবে
শীতের উপযোগী। আরাম আর হাল ফ্যাশনকে গুরুত্ব দিয়ে শীতের পোশাকগুলোয় এখন আনা হয়েছে নানা বৈচিত্র্য। তবে আমাদের ফ্যাশন শিল্প বুটিকনির্ভর হলেও সোয়েটার বা এ জাতীয় শীতের অনুষঙ্গ গার্মেন্টনির্ভর। তাই এক্ষেত্রে দেশি ডিজাইন মোটিফের চেয়ে পাশ্চাত্য বা আন্তর্জাতিক ডিজাইন স্টেটমেন্টই বেশি প্রাধান্য পায়। সোয়েটার সংশ্লিষ্ট আদ্যোপান্ত নিয়েই এই ফিচার :
ডিজাইন ও প্যাটার্ন
নিট প্রডাক্টের শীতপোশাকের মধ্যে পোলক নিটের প্রচুর জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। তা ছাড়া কটন ফিলিস ফ্যাব্রিকে তৈরি জ্যাকেট, হেভি জার্সি, রিব বা লাইক্র্যায় তৈরি ফুলস্লিভ টি-শার্ট এখান থেকে বাইরে যাচ্ছে। তবে অনেক দিন সোয়েটারের ডিজাইনে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। ওয়ার্ল্ড মার্কেটে এখন হুডি জ্যাকেট ট্রেন্ডি। রফতানি হওয়া কিছু সোয়েটারেও হুডি আছে, তবে পরিমাণে কম। নিটের মধ্যে ফেরিস্টারি, টেরি ফ্যাব্রিকের ফ্যাশনেবল পোশাক বেশি তৈরি হয়। পুরুষদের জন্য তৈরি শীতের পোশাকে বেসিক ভি-নেক ও নেক ডিজাইন বেশি চলছে। কিছু সোয়েটারে অ্যাক্সেসরিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জিপার বা বাটন। স্লিভলেস বা হুডেড পুলওভার, রাউন্ড কিংবা স্ট্রাইপ ডিজাইনেরও চল রয়েছে। মেয়েদের জন্য তৈরি সোয়েটারে রাজত্ব করছে লং কার্ডিগান, লং পুলওভার, রোল নেক বা গাউন স্টাইল। বেশিরভাগ সোয়েটারে প্যাটার্নে ভেরিয়েশনের পাশাপাশি এমব্রয়ডারি, প্যাচওয়ার্ক, ফ্ল্যাট লক, ফার লাইনিং, শেরপা লাইনিং, জাকার্ড মেশিন দিয়ে তৈরি ডায়মন্ড শেপ ডিজাইন বা প্রিন্ট মোটিফ ব্যবহার হচ্ছে।
বিবর্তনের ইতিহাস
বহু বছর আগে ফ্যাশন দুনিয়ায় নিট গার্মেন্টে নিটেট ফ্যাব্রিকের উৎপত্তি; তবে উৎপত্তিস্থল ও সঠিক সময়টা আজও রয়ে গেছে রহস্যের আবর্তে। ইতিহাস থেকে আন্দাজ করা হয়, উত্তর আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্য নিটের উৎসভূমি। গোড়ার দিকে মূলত হাত-পায়ের আবরণ হিসেবে নিট গার্মেন্ট ব্যবহার হতো। কালের বিবর্তনে ভারী নিট বা এ জাতীয় পোশাকের আবির্ভাব ঘটে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে নিট গার্মেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলেও ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে তখনও ছিল ওভেন গার্মেন্টের আধিপত্য। তবে শীতের ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে সোয়েটার, কার্ডিগান বা কোটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে গত শতকের মাঝামাঝিতে। তখন থেকেই ডিজাইন নিয়ে শুরু হয় বিস্তর মাপজোখ।
ফ্যাশন স্টেটমেন্ট
ফ্যাশন গার্মেন্টে শাল, গাউন, কোট, কার্ডিগান ও সোয়েটার শীতপোশাক হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। পঞ্চাশের দশকে ফরমাল ও আলট্রা ফেমিনিন ডিজাইন হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। বাহারি রঙ ও লেস সংযুক্তির কারণে এ সময় জনপ্রিয়তা পায় এনগোরা সোয়েটার। তখন কিছু সোয়েটার বা জ্যাকেটে এমব্রয়ডারি, বাটনসহ জিপার ব্যবহৃত হতো। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে সেবাস্টিয়ান বা তার মতো প্রতিষ্ঠিত ডিজাইনাররা উলের ভারী বুননশৈলীর সোয়েটার প্রবর্তন করেন। এগুলো ছিল হিপ পর্যন্ত, সঙ্গে কনট্রাস্ট বাইন্ডিং স্টাইল। এই দশকেই লং বেল্টের ভারী উলের সোয়েটার তরুণ প্রজন্মের জন্য বাজারে আনেন মেক্সিকোর সোয়েটার নির্মাতারা। সত্তরের দশকে সোয়েটার কিংবা কোটের ফ্যাশনে আসে ইনফরমাল আবহ। এ সময় ডিজাইনার পিয়ের কাদে অ্যাক্রেলিক ইয়ার্ন দিয়ে কালারফুল সোয়েটার প্রচলন করেন। এই দশকের পোশাক হিসেবে সোয়েটারে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। কিছুটা বড় আকৃতি কিংবা স্ট্রাইপ ও বেল্ট সংবলিত সোয়েটার ছিল সবার পছন্দের। গ্গ্ন্যামার ও আভিজাত্যের সম্মিলনে নতুন আবহে সোয়েটার ফ্যাশন ট্রেন্ড স্থান পায় আশির দশকে, যা এখনও সংযোজন-বিয়োজন ও প্যাটার্নের বৈচিত্র্যের কারণে প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। তবে এখন তরুণ প্রজন্মের চাহিদা এবং ফ্যাশনেবল বৈশিষ্ট্যের কারণেই শীতের ফ্যাশনে গুরুত্বপূর্ণ পোশাক হিসেবে সোয়েটার বা কার্ডিগান আলাদা ও নিজস্ব একটা জায়গা করে নিয়েছে।
সোয়েটারের সুতো
সোয়েটারের মুল কলকাঠির উৎপত্তি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরির আঁতুড় ঘরে। নিটের ইয়ার্ন সোর্স হিসেবে হেভি নিট কটন বাংলাদেশে তৈরি হয়। কটনের বাইরে অ্যাক্রেলিক ইয়ার্ন বিদেশ থেকে এনে এখানে ডাই করে নেওয়া হয়। সাধারণত নিটিং সোয়েটার তৈরির ইয়ার্নগুলো টু প্লাইয়ের হয়। সোয়েটার গেজ হিসেবে ৩, ৫, ৭, ১০ ও ১২ মূলত ব্যবহৃত হয়। সোয়েটার তৈরিতে কটন, অ্যাক্রিলিক, উল, নাইলন, অ্যাক্রেলিক মিলান্স, কটন মিলান্স, ভিসকোজ, পপকর্ন, তামু ইত্যাদি ইয়ার্নের ব্যবহারই বেশি। তবে হেভি নিটের ইয়ার্ন এখনও পুরোপুরি আমদানি নির্ভর।
মেড ইন বাংলাদেশ
বাংলাদেশে মূলত নিটিং ও লিংকিন পদ্ধতিতে সোয়েটার বুনন হয়ে থাকে। বিদেশি বায়ার তাদের দেশীয় প্রতিনিধি (বায়িং হাউস) কিংবা নিজেরাই সরাসরি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে যোগাযোগ করে অর্ডার দেয়। দেশের প্রায় দু'হাজারের কাছাকাছি ফ্যাক্টরি এ কাজে নিয়োজিত। বিদেশি ব্র্যান্ড বা বায়ারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো_ জারা, পারাসুকো, বারি, পিএমই, রিভার আইল্যান্ড, রুহল, অ্যামব্রো, সিলেক্টড, জি স্টার, রো, ডিজেল, স্টোন আইল্যান্ড, এইচএনএম, ওয়ালমার্ট, টার্গেট, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, নো অ্যাক্সেস, গ্যাপ, ম্যাঙ্গো, জেসিপেনি, লিপমার্ক, গোল্ডেন পেনি, টাটি ইন্টারন্যাশন ইত্যাদি। কিছু ব্র্যান্ডের বায়ার স্যাম্পল অ্যাপ্রুভ হলে অর্ডার দেয়। পাশাপাশি সিএম বায়াররা অর্ডার দেয় লোকাল বায়িং হাউসের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ থেকে রফতানিযোগ্য সোয়েটারের বড় একটি অংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয়। এর মধ্যে জার্মান হলো বড় ক্রেতা। তারপর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন। এ পাঁচ দেশই মূলত বাংলাদেশি নিটওয়্যার পণ্যের বড় ক্রেতা। আন্তর্জাতিক বাজারের নাম করা সব ব্র্যান্ডই এখান থেকে পোশাক তৈরি করিয়ে নিচ্ছে। একটি ব্র্যান্ড নিয়ে একক কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করে না। ঘুরে-ফিরে অনেক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিই কাজ করছে। ছোট ছোট কিছু ব্র্যান্ড আছে যারা সীমিত পরিসরে দামি পোশাক তৈরি করে। এসব ব্র্যান্ডের পোশাক স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়। বাংলাদেশ থেকে তারা পোশাক তৈরি করায় না। কিন্তু বড় ভলিউমে যেসব ব্র্যান্ড কাজ করে, তাদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয়। এটি বাংলাদেশের দু'দশকের অর্জন। এ সময়ে এখানকার পোশাকের গুণগত উৎকর্ষ বায়ারের কাছে প্রমাণ করতে হয়েছে। উৎপাদিত পোশাকের পারফরম্যান্সে দিনে দিনে তাদের আস্থা বেড়েছে। অবশ্য লো প্রাইসিংও এক্ষেত্রে পালন করেছে বিশেষ ভূমিকা।
দেশীয় ব্র্যান্ডে শীত পোশাক
আমাদের দেশে শীত অতটা বেশি পড়ে না। তাই টি-শার্ট ও শার্টের ওপর পরার জন্য হাতাকাটা সোয়েটার মানানসই। মধ্যে কুচি দেওয়া, চুড়িদার হাতা তরুণীদের পছন্দ। এবার সম্পূর্ণ আঁটসাঁট নয় বরং একটু ঘের দেওয়া, ঢোলা পোশাকের বেশ চল দেখা যাচ্ছে। নিট কাপড় দিয়েই মূলত তৈরি হচ্ছে এসব সোয়েটার। এ ছাড়া পশমী উলের, ক্রুশ কাজের সোয়েটারও পরছেন অনেকে জানালেন জেন্টাল পার্কের ডিজাইনার শাহাদৎ হোসেন বাবু। হাতায়-গলায় কুচি দেওয়া, ভাঁজ করা সোয়েটার চলছে। কোমরে বেল্ট রয়েছে এমন সোয়েটার কম বয়সী মেয়েরা কিনছেন। টি-শার্টের মতো সোয়েটার, ওভার কোট, ব্লেজারেরও চাহিদা রয়েছে। পাতলা কাপড়ের সোয়েটার চলছে বেশ। অল্প শীতে এ ধরনের পাতলা সোয়েটার বেশ আরামদায়ক। এসব সোয়েটার স্কিনি জিনস ছাড়াও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পরা যায়। শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য ব্লাউজকাটের সোয়েটারও পছন্দ করছেন কেউ কেউ এমনটিই বললেন এক্সট্যাসির প্রধান নির্বাহী ও ডিজাইনার তানজীম হক। হাফ হাতা সোয়েটার নিয়ে মেনজ ক্লাব, ক্যাটস আই, ইনফিনিটি, ডোরস এনেছে বিশেষ কিছু ডিজাইন। তবে বাংলাদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো মূলত বাইরের দেশের বায়ারদের ডিজাইনই বেশি অনুকরণ করে থাকে। এর মধ্যেও দেশি ব্র্যান্ড মেনজ ক্লাব, ক্যাটস আই, এক্সট্যাসি, জেন্টাল পার্ক, ইয়েলো বেশকিছু ইউনিক ডিজাইন ডেভেলপ করেছেন এই শীতে। পাশাপাশি হেভিওয়েট সোয়েটারের জন্য যেতে পারেন ঢাকার হকার্স মার্কেট, বঙ্গবাজার বা বসুন্ধরা সিটি শপিং সেন্টারে।
দামদর : এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন শপিংমল, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, বঙ্গবাজার ও বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যেতে পারেন আপনার পছন্দের শীতের পোশাকটি। সাধারণ উলের সোয়েটার পাবেন ২৫০-৬০০ টাকার মধ্যে। একটু জমকালো উলের সোয়েটার পাবেন ৮০০-১৫০০ টাকায়।
ডিজাইন ও প্যাটার্ন
নিট প্রডাক্টের শীতপোশাকের মধ্যে পোলক নিটের প্রচুর জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। তা ছাড়া কটন ফিলিস ফ্যাব্রিকে তৈরি জ্যাকেট, হেভি জার্সি, রিব বা লাইক্র্যায় তৈরি ফুলস্লিভ টি-শার্ট এখান থেকে বাইরে যাচ্ছে। তবে অনেক দিন সোয়েটারের ডিজাইনে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। ওয়ার্ল্ড মার্কেটে এখন হুডি জ্যাকেট ট্রেন্ডি। রফতানি হওয়া কিছু সোয়েটারেও হুডি আছে, তবে পরিমাণে কম। নিটের মধ্যে ফেরিস্টারি, টেরি ফ্যাব্রিকের ফ্যাশনেবল পোশাক বেশি তৈরি হয়। পুরুষদের জন্য তৈরি শীতের পোশাকে বেসিক ভি-নেক ও নেক ডিজাইন বেশি চলছে। কিছু সোয়েটারে অ্যাক্সেসরিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জিপার বা বাটন। স্লিভলেস বা হুডেড পুলওভার, রাউন্ড কিংবা স্ট্রাইপ ডিজাইনেরও চল রয়েছে। মেয়েদের জন্য তৈরি সোয়েটারে রাজত্ব করছে লং কার্ডিগান, লং পুলওভার, রোল নেক বা গাউন স্টাইল। বেশিরভাগ সোয়েটারে প্যাটার্নে ভেরিয়েশনের পাশাপাশি এমব্রয়ডারি, প্যাচওয়ার্ক, ফ্ল্যাট লক, ফার লাইনিং, শেরপা লাইনিং, জাকার্ড মেশিন দিয়ে তৈরি ডায়মন্ড শেপ ডিজাইন বা প্রিন্ট মোটিফ ব্যবহার হচ্ছে।
বিবর্তনের ইতিহাস
বহু বছর আগে ফ্যাশন দুনিয়ায় নিট গার্মেন্টে নিটেট ফ্যাব্রিকের উৎপত্তি; তবে উৎপত্তিস্থল ও সঠিক সময়টা আজও রয়ে গেছে রহস্যের আবর্তে। ইতিহাস থেকে আন্দাজ করা হয়, উত্তর আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্য নিটের উৎসভূমি। গোড়ার দিকে মূলত হাত-পায়ের আবরণ হিসেবে নিট গার্মেন্ট ব্যবহার হতো। কালের বিবর্তনে ভারী নিট বা এ জাতীয় পোশাকের আবির্ভাব ঘটে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে নিট গার্মেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলেও ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে তখনও ছিল ওভেন গার্মেন্টের আধিপত্য। তবে শীতের ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে সোয়েটার, কার্ডিগান বা কোটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে গত শতকের মাঝামাঝিতে। তখন থেকেই ডিজাইন নিয়ে শুরু হয় বিস্তর মাপজোখ।
ফ্যাশন স্টেটমেন্ট
ফ্যাশন গার্মেন্টে শাল, গাউন, কোট, কার্ডিগান ও সোয়েটার শীতপোশাক হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। পঞ্চাশের দশকে ফরমাল ও আলট্রা ফেমিনিন ডিজাইন হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। বাহারি রঙ ও লেস সংযুক্তির কারণে এ সময় জনপ্রিয়তা পায় এনগোরা সোয়েটার। তখন কিছু সোয়েটার বা জ্যাকেটে এমব্রয়ডারি, বাটনসহ জিপার ব্যবহৃত হতো। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে সেবাস্টিয়ান বা তার মতো প্রতিষ্ঠিত ডিজাইনাররা উলের ভারী বুননশৈলীর সোয়েটার প্রবর্তন করেন। এগুলো ছিল হিপ পর্যন্ত, সঙ্গে কনট্রাস্ট বাইন্ডিং স্টাইল। এই দশকেই লং বেল্টের ভারী উলের সোয়েটার তরুণ প্রজন্মের জন্য বাজারে আনেন মেক্সিকোর সোয়েটার নির্মাতারা। সত্তরের দশকে সোয়েটার কিংবা কোটের ফ্যাশনে আসে ইনফরমাল আবহ। এ সময় ডিজাইনার পিয়ের কাদে অ্যাক্রেলিক ইয়ার্ন দিয়ে কালারফুল সোয়েটার প্রচলন করেন। এই দশকের পোশাক হিসেবে সোয়েটারে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। কিছুটা বড় আকৃতি কিংবা স্ট্রাইপ ও বেল্ট সংবলিত সোয়েটার ছিল সবার পছন্দের। গ্গ্ন্যামার ও আভিজাত্যের সম্মিলনে নতুন আবহে সোয়েটার ফ্যাশন ট্রেন্ড স্থান পায় আশির দশকে, যা এখনও সংযোজন-বিয়োজন ও প্যাটার্নের বৈচিত্র্যের কারণে প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। তবে এখন তরুণ প্রজন্মের চাহিদা এবং ফ্যাশনেবল বৈশিষ্ট্যের কারণেই শীতের ফ্যাশনে গুরুত্বপূর্ণ পোশাক হিসেবে সোয়েটার বা কার্ডিগান আলাদা ও নিজস্ব একটা জায়গা করে নিয়েছে।
সোয়েটারের সুতো
সোয়েটারের মুল কলকাঠির উৎপত্তি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরির আঁতুড় ঘরে। নিটের ইয়ার্ন সোর্স হিসেবে হেভি নিট কটন বাংলাদেশে তৈরি হয়। কটনের বাইরে অ্যাক্রেলিক ইয়ার্ন বিদেশ থেকে এনে এখানে ডাই করে নেওয়া হয়। সাধারণত নিটিং সোয়েটার তৈরির ইয়ার্নগুলো টু প্লাইয়ের হয়। সোয়েটার গেজ হিসেবে ৩, ৫, ৭, ১০ ও ১২ মূলত ব্যবহৃত হয়। সোয়েটার তৈরিতে কটন, অ্যাক্রিলিক, উল, নাইলন, অ্যাক্রেলিক মিলান্স, কটন মিলান্স, ভিসকোজ, পপকর্ন, তামু ইত্যাদি ইয়ার্নের ব্যবহারই বেশি। তবে হেভি নিটের ইয়ার্ন এখনও পুরোপুরি আমদানি নির্ভর।
মেড ইন বাংলাদেশ
বাংলাদেশে মূলত নিটিং ও লিংকিন পদ্ধতিতে সোয়েটার বুনন হয়ে থাকে। বিদেশি বায়ার তাদের দেশীয় প্রতিনিধি (বায়িং হাউস) কিংবা নিজেরাই সরাসরি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে যোগাযোগ করে অর্ডার দেয়। দেশের প্রায় দু'হাজারের কাছাকাছি ফ্যাক্টরি এ কাজে নিয়োজিত। বিদেশি ব্র্যান্ড বা বায়ারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো_ জারা, পারাসুকো, বারি, পিএমই, রিভার আইল্যান্ড, রুহল, অ্যামব্রো, সিলেক্টড, জি স্টার, রো, ডিজেল, স্টোন আইল্যান্ড, এইচএনএম, ওয়ালমার্ট, টার্গেট, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, নো অ্যাক্সেস, গ্যাপ, ম্যাঙ্গো, জেসিপেনি, লিপমার্ক, গোল্ডেন পেনি, টাটি ইন্টারন্যাশন ইত্যাদি। কিছু ব্র্যান্ডের বায়ার স্যাম্পল অ্যাপ্রুভ হলে অর্ডার দেয়। পাশাপাশি সিএম বায়াররা অর্ডার দেয় লোকাল বায়িং হাউসের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ থেকে রফতানিযোগ্য সোয়েটারের বড় একটি অংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয়। এর মধ্যে জার্মান হলো বড় ক্রেতা। তারপর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন। এ পাঁচ দেশই মূলত বাংলাদেশি নিটওয়্যার পণ্যের বড় ক্রেতা। আন্তর্জাতিক বাজারের নাম করা সব ব্র্যান্ডই এখান থেকে পোশাক তৈরি করিয়ে নিচ্ছে। একটি ব্র্যান্ড নিয়ে একক কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করে না। ঘুরে-ফিরে অনেক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিই কাজ করছে। ছোট ছোট কিছু ব্র্যান্ড আছে যারা সীমিত পরিসরে দামি পোশাক তৈরি করে। এসব ব্র্যান্ডের পোশাক স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়। বাংলাদেশ থেকে তারা পোশাক তৈরি করায় না। কিন্তু বড় ভলিউমে যেসব ব্র্যান্ড কাজ করে, তাদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয়। এটি বাংলাদেশের দু'দশকের অর্জন। এ সময়ে এখানকার পোশাকের গুণগত উৎকর্ষ বায়ারের কাছে প্রমাণ করতে হয়েছে। উৎপাদিত পোশাকের পারফরম্যান্সে দিনে দিনে তাদের আস্থা বেড়েছে। অবশ্য লো প্রাইসিংও এক্ষেত্রে পালন করেছে বিশেষ ভূমিকা।
দেশীয় ব্র্যান্ডে শীত পোশাক
আমাদের দেশে শীত অতটা বেশি পড়ে না। তাই টি-শার্ট ও শার্টের ওপর পরার জন্য হাতাকাটা সোয়েটার মানানসই। মধ্যে কুচি দেওয়া, চুড়িদার হাতা তরুণীদের পছন্দ। এবার সম্পূর্ণ আঁটসাঁট নয় বরং একটু ঘের দেওয়া, ঢোলা পোশাকের বেশ চল দেখা যাচ্ছে। নিট কাপড় দিয়েই মূলত তৈরি হচ্ছে এসব সোয়েটার। এ ছাড়া পশমী উলের, ক্রুশ কাজের সোয়েটারও পরছেন অনেকে জানালেন জেন্টাল পার্কের ডিজাইনার শাহাদৎ হোসেন বাবু। হাতায়-গলায় কুচি দেওয়া, ভাঁজ করা সোয়েটার চলছে। কোমরে বেল্ট রয়েছে এমন সোয়েটার কম বয়সী মেয়েরা কিনছেন। টি-শার্টের মতো সোয়েটার, ওভার কোট, ব্লেজারেরও চাহিদা রয়েছে। পাতলা কাপড়ের সোয়েটার চলছে বেশ। অল্প শীতে এ ধরনের পাতলা সোয়েটার বেশ আরামদায়ক। এসব সোয়েটার স্কিনি জিনস ছাড়াও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পরা যায়। শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য ব্লাউজকাটের সোয়েটারও পছন্দ করছেন কেউ কেউ এমনটিই বললেন এক্সট্যাসির প্রধান নির্বাহী ও ডিজাইনার তানজীম হক। হাফ হাতা সোয়েটার নিয়ে মেনজ ক্লাব, ক্যাটস আই, ইনফিনিটি, ডোরস এনেছে বিশেষ কিছু ডিজাইন। তবে বাংলাদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো মূলত বাইরের দেশের বায়ারদের ডিজাইনই বেশি অনুকরণ করে থাকে। এর মধ্যেও দেশি ব্র্যান্ড মেনজ ক্লাব, ক্যাটস আই, এক্সট্যাসি, জেন্টাল পার্ক, ইয়েলো বেশকিছু ইউনিক ডিজাইন ডেভেলপ করেছেন এই শীতে। পাশাপাশি হেভিওয়েট সোয়েটারের জন্য যেতে পারেন ঢাকার হকার্স মার্কেট, বঙ্গবাজার বা বসুন্ধরা সিটি শপিং সেন্টারে।
দামদর : এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন শপিংমল, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, বঙ্গবাজার ও বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যেতে পারেন আপনার পছন্দের শীতের পোশাকটি। সাধারণ উলের সোয়েটার পাবেন ২৫০-৬০০ টাকার মধ্যে। একটু জমকালো উলের সোয়েটার পাবেন ৮০০-১৫০০ টাকায়।
No comments