সিয়াচেনে জৈব শোধনকারী টয়লেট!

হিমালয়ের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিয়াচেন হিমবাহে মোতায়েন সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য বায়োডাইজেস্টার বা জৈব শোধনকারী টয়লেট উদ্ভাবন করেছেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। দেশটির প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান (ডিআরডিও) এই টয়লেট তৈরি করেছে। এটি বিশেষভাবে তৈরি একটি ট্যাংক। এতে ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মানুষের মল মিশ্রিত হয়ে তা মিথেন গ্যাস ও পানিতে রূপান্তরিত হয়। পরিবেশদূষণরোধ করাই এর লক্ষ্য। কাশ্মীরের ছয় হাজার ৩০০


মিটার উঁচু সিয়াচেনে মোতায়েন করা সেনাদের কথা মাথায় রেখেই মূলত এই টয়লেট উদ্ভাবন করা হয়েছে। হিমশীতল সিয়াচেনের তাপমাত্রা অনেক সময় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (মাইনাস ৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্তও নেমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিয়াচেনের অতিশীতল অঞ্চলে ভারতের অন্তত পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। সেখানে বর্তমানে তুলনামূলকভাবে শান্তি বিরাজ করছে। বিশেষ করে ২০০৩ সালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে।
ডিআরডিওর ইউনিট ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্টের বিজ্ঞানী বিজয় ভিয়ার বলেন, এই টয়লেট উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া ১৫ বছর আগে শুরু হয়। সিয়াচেনে নিয়োজিত সেনারা মল ত্যাগ করে তা সাধারণত তুষার দিয়ে ঢেকে রাখেন। ফলে গ্রীষ্মকালে পর্বতের বরফ গলে গেলে ওই মলে নদীর পানি দূষিত হয়।
ভারতের বণিক সমিতি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) ও ডিআরডিও যৌথভাবে উঁচু পর্বতে ব্যবহারযোগ্য এ টয়লেট উদ্ভাবন করেছে। এ লক্ষ্যে গত অক্টোবরে দুই পক্ষের মধ্যে চার বছরের একটি চুক্তিও সই হয়।
এফআইসিসিআইয়ের সেন্টার ফর টেকনোলোজি কমার্শিয়ালাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক নিরঙ্কর সাক্সেনা বলেন, লাক্ষ্মাদ্বীপের বড় একটি আবাসন প্রকল্পের জন্য ১২ হাজার জৈব শোধনকারী টয়লেট চাওয়া হয়েছে। নিরঙ্কর সাক্সেনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই—এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে, যা সাধারণ মানুষের কাজে আসে।’
ডিআরডিও এরই মধ্যে ২০০ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনের জন্য তাপরোধক ঢাল, আলো নিয়ন্ত্রক জানালা, মশা তাড়ানোর যন্ত্র ও ডেঙ্গু নিরোধক যন্ত্র। এ ছাড়া এমন এক ধরনের স্প্রে বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা পোশাককে পোকামাকড়মুক্ত রাখবে। তাছাড়া আগুন নেভানোর যন্ত্র ও ছারপোকা দমনকারী ক্রিমও বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা চলছে। ডিআরডিও তাদের প্রযুক্তিগুলো এফআইসিসিআইয়ের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করছে। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.