জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন-১২৫ বছর পুরোনো প্রতিষ্ঠানটি অকার্যকর থাকবে? by তোফায়েল আহমেদ
জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের সংস্কার বিষয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিবন্ধের ধারাবাহিকতায় বলা যায়, অবিভক্ত ভারতে জেলা বোর্ড ও জেলা প্রশাসনে একধরনের প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ছিল। দুটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাই নিজ নিজ কর্মপরিধির বিস্তার ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ছিল অবহিত ও সচেতন। তা ছাড়া পরস্পরের কর্মক্ষেত্রের প্রতি তাদের একধরনের সম্ভ্রমবোধ এবং আচার-আচরণেও প্রতিপালিত হতো কঠোর শিষ্টাচার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা কতটুকু সংগত,
সে প্রশ্ন অবান্তর। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ব্রিটিশ আমলের ‘জেলা বোর্ড’ ব্যবস্থার নেতৃত্বকাঠামোয় পরিবর্তন আসে। জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনামলে ‘ডেপুটি কমিশনার’কে পদাধিকারবলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করা হয়। ধীরে ধীরে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে জন্মলাভ করতে থাকে নতুন নতুন বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর। জেলা পর্যায়ে বাড়তে থাকে সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি দপ্তরের সংখ্যা ও কর্মের বিস্তৃতি। জেলা পরিষদের অনেক কাজ কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন বিভাগের হাতে চলে যায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যে নবতর যাত্রা এবং প্রশাসনিক পুনর্গঠন, তাতে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের বিষয়টি কিছুটা চাপা পড়ে যায়। মূলত, আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ও মৌলিক গণতন্ত্রীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈরিতা সাময়িকভাবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা সম্পর্কেও একধরনের অনীহা সৃষ্টি করে। তা ছাড়া স্বাধীন দেশের উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয়, সচিবালয় এবং মাঠ প্রশাসনে পূর্বতন প্রশাসনিক কাঠামোকে প্রতিস্থাপনে যত বেশি উৎসাহী ছিলেন, সংবিধানের বিধান অনুসরণ করে জনপ্রতিনিধিত্বশীল কাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়টি বরাবরই সুকৌশলে এড়িয়ে যান। এভাবে বাংলাদেশে ৪০ বছরের ইতিহাসে ইউনিয়ন এবং নগর পর্যায় ছাড়া অন্যান্য স্তরে মূলত আমলাতান্ত্রিক একাধিপত্য রজায় রাখার স্বার্থে সংবিধানকে এড়িয়ে প্রজ্ঞাপন ও সার্কুলারের মাধ্যমে স্থানীয় শাসন ও উন্নয়নের আমলাতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাওয়া হয়।
১৯৯১ সালের পর যে রাজনৈতিক পরিবর্তন, তার পর থেকে আমলাতান্ত্রিকতা সার্বিকভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পদানত হয়ে তা গণমুখী প্রাতিষ্ঠানিকতার পরিবর্তে দলীয় স্বেচ্ছাচারের দিকে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তা এমন একটি রূপ পরিগ্রহ করেছে, যা খুবই ভয়ানক ও আশঙ্কার।
এখন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কার্যত কোনো আইনের শাসন নেই। প্রথমত, সরকারের নির্বাহী বিভাগের যে ‘চেইন অব কমান্ড’, তা ভেঙে পড়েছে। একজন ডেপুটি কমিশনারের জবাবদিহি তাঁর বিভাগীয় কমিশনারের প্রতি যতটুকু, তার চেয়ে একজন সাংসদ বা জেলার মন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতিই অধিক। অপর দিকে উপজেলা পর্যায়ের প্রধান কর্মকর্তাকে অযাচিতভাবে জাতীয় সাংসদের ‘এজেন্ট’ হয়ে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেপুটি কমিশনার তাঁকে সুরক্ষা ও সহায়তা কোনোটাই করতে পারেন না। জেলায় পুলিশ প্রশাসন পুরোপুরি স্বাধীন। পুলিশ শুধু পুলিশের কাছেই জবাবদিহি করবে। জেলায় এখন অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেখানে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। বিচারিক ও আধা বিচারিক কিংবা রেগুলেটরি ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। জেলায় সুনির্দিষ্ট কোনো সমন্বয় বা তদারকব্যবস্থা বা সমন্বয়ের কোনো কেন্দ্রবিন্দু নেই। এ রকম অবস্থায় এখানে সরকারি অর্থপ্রবাহ ও ব্যয়ের জেলাভিত্তিক তথ্য-পরিসংখ্যান এবং তার প্রভাব ও ফল নির্ণয় খুবই দুষ্কর। এখনো কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সে দায় কেউ নেয় না। আইনশৃঙ্খলার দায় পুলিশ নিতে পারে না। একাধিক সংস্থার মধ্যে রশি-টানাটানি চলে। সরকারি জমিজিরাত, খাল, নদী, ভবন বেদখল হলে জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তারা অসহায়ত্বে ভোগেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক-জনপথের বেহাল দশায়ও কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান নেই, যেখানে গেলে প্রতিকার পাওয়ার আশা থাকে। রাজনৈতিক দলের নেতা, জাতীয় সাংসদ, নির্বাচিত স্থানীয় পরিষদ, সরকারের জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষায়িত বিভাগ, বেসরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—এখানে কার কী দায়িত্ব ও ভূমিকা, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সীমারেখা কেউ মানছে না বা সময়ের ব্যাপ্ততায় ভূমিকা ও দায়িত্বের আইনি সীমারেখা বিলীন হয়ে এখানে নতুন একধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক ব্যক্তি ও দলনির্ভর নিয়ন্ত্রণকাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দুই.
জেলা পরিষদের আলোচনাতেই যদি ফিরে আসি তাহলে দেখতে পাব, এটি প্রায় ১২৫ বছরের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর সঠিক ভূমিকা ও কার্যক্রম কী হবে, তা অস্পষ্ট রেখে এটিকে বছরের পর বছর টেনে চলেছি। দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান রংপুর জেলা পরিষদের কথাই ধরা যাক। এটি সম্ভবত ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৭ সালে শতবর্ষ পূর্ণ করল। এ পরিষদে রয়েছে প্রায় তিন হাজার ৭০০ একর জমি, তিনটি মার্কেটে প্রায় ৪০০ দোকান, অত্যন্ত সুদৃশ্য মনোরম একটি ভবন এবং প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি শত বছরের ঐতিহ্য বহন করলেও বর্তমান সময়ে তার ভূমিকা কী? গত তিন বছরে ১৪ থেকে ১৮ কোটি টাকার বাজেট তারা বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু এই উন্নয়নকাজের ধরন খুবই হাস্যকর। গত অর্থবছরে রংপুর জেলা পরিষদ ৩০০টির মতো স্কিম বাস্তবায়ন করেছে। প্রতিটি স্কিমের অর্থমূল্য হয় এক লাখ, নয়তো ৫০ হাজার। এর বেশিও নয়, কমও নয়। এভাবে চার-পাঁচ কোটি টাকা খয়রাতি সাহায্য দেওয়ার মতো করে ব্যয় করা হয় দেশের প্রতিটি জেলা পরিষদে। স্থানীয় সাংসদ, যেকোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যক্তিগত তদবিরের মাধ্যমে প্রতিবছর জেলা পরিষদ থেকে অর্থ বরাদ্দ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। এই প্রতিষ্ঠানটি তার যা সম্পদ, তা দিয়ে স্বচ্ছ একটি পরিকল্পনা করে তা অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে ব্যয় করে না। এই ব্যবস্থা রংপুর জেলা পরিষদের বিচ্ছিন্ন ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত নয়। সারা দেশেই এভাবে জেলা পরিষদ নামে নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান চালু আছে।
এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের দিকে আমরা একবার তাকাতে পারি। উপমহাদেশের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের একই ধারাবাহিকতায় উভয় দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথা বিভাগীয় কমিশনার, কালেক্টর ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সাব-ডিভিশনাল অফিসার প্রভৃতি কর্মকর্তার পদ বহাল রয়েছে এবং তাঁরা তাঁদের ভূমিকা যথারীতি পেশাদারির সঙ্গে পালন করছেন। পাশাপাশি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা তালুক/তহশিল পঞ্চায়েত (আমাদের উপজেলা পর্যায়) এবং জেলা পরিষদগুলো অত্যন্ত কার্যকরভাবে কাজ করছে। উপরন্তু, স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝখানে রয়েছে তিন পর্যায়ের আইনসভার সদস্য। যথা—রাজ্যপর্যায়ে বিধানসভা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লোকসভা ও রাজ্যসভার বিধায়ক। এখানে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তথা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ প্রতিনিধি এবং ওপরের স্তরের বিধানসভা, লোকসভা ও রাজ্যসভার প্রতিনিধির মধ্যে কার্যগত ও ভূমিকাগত সীমারেখা ও বিভাজনে স্পষ্টতার কারণে অধিক্ষেত্র নিয়ে বড় ধরনের বিরোধ দেখা যায় না, এমনকি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হওয়ার পরও নয়। অপর দিকে প্রশাসনিক অধিকর্তা—জেলার কালেক্টর, পুলিশ সুপার বা একজন কৃষি কর্মকর্তা বা শিক্ষা কর্মকর্তা—সবাই নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে অত্যন্ত স্বাধীন ও নির্ভরতার সঙ্গে আইনানুগ কাজ যেমন করতে পারেন, তেমনি প্রতিটি প্রশাসনিক স্তরের স্থানীয় সরকারের সঙ্গেও তাঁরা সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন। বিধানসভা, লোকসভা ও রাজ্যসভার প্রতিনিধিরা পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে পদাধিকারবলে সদস্য হন (সর্বত্র না হলেও কোনো কোনো রাজ্য, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায়), কিন্তু তাঁরা ওই সব পরিষদে ভোট দেন না বা স্থায়ী কমিটির সদস্য বা সভাপতি হন না।
ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের পর থেকে প্রতিটি রাজ্যের ওপর স্থানীয় সরকারের কতিপয় বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সে বিষয়গুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নরূপ:
১. প্রতিটি রাজ্যে গ্রাম, ব্লক/তহশিল/তালুক এবং জেলা পর্যায়ে তিন স্তরের স্থানীয় সরকার তথা পঞ্চায়েতি রাজপ্রতিষ্ঠান সৃষ্টির লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক।
২. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ২৯টি বিষয় পর্যায়ক্রমে ১০ বছরের মধ্যে হস্তান্তর করতে হবে। তাই সেই লক্ষ্যে সংবিধানের বিশেষ একটি তফসিলে কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
৩. প্রতিটি রাজ্য সরকার ‘স্থানীয় সরকার অর্থ কমিশন’ গঠন করে স্থানীয় সরকার অর্থায়নে একটি নীতিমালা বা ফর্মুলার ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় সরকারকে অর্থায়ন করবে।
৪. প্রতিটি রাজ্যে বাধ্যতামূলকভাবে জেলাভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক বিকেন্দ্রীকৃত পরিকল্পনা পদ্ধতি গড়ে তুলবে। সে লক্ষ্যে জেলা পরিকল্পনা কাউন্সিল (ডিপিসি) গঠন করবে। সে কাউন্সিলের প্রধান হবেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর’। কোনো কোনো জেলায় তাঁরা আমাদের মতো ‘ডেপুটি কমিশনার’ হিসেবেও পরিচিত।
৫. জেলা পরিকল্পনায় গ্রাম, ব্লক, পৌরসভা, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলোর সমন্বয় করা হয়।
৬. জেলা পরিকল্পনা রাজ্য পরিকল্পনা কমিশন ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কমিশনের কৌশল ও লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়।
৭. রাজ্যের ‘স্থানীয় সরকার অর্থ কমিশন’ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ কমিশনের সঙ্গে তাদের সুপারিশমালা সমন্বয় করে থাকে।
৮. কোনো রাজ্য সরকার সংবিধানের এসব নির্দেশনা প্রতিপালন না করলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার লাভ করে না।
তিন.
বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার নেতারা নানামুখী দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত। তার সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে যুক্ত হয়েছে জাতীয় সংসদ নেতা ও স্থানীয় পরিষদ নেতাদের সংঘাত। জেলা পরিষদ এ সংঘাত থেকে মুক্ত থাকবে, স্বাভাবিকভাবে তা কল্পনা করা যায় না। তা ছাড়া অনির্বাচিত প্রশাসকের পক্ষে ক্ষমতার বৈধতা রক্ষাও প্রাথমিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। তবে এখানে জাতীয় সংসদ, স্থানীয় পরিষদ (ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা) এবং জেলা ও উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা ও কার্যক্রম নির্ধারণ করতে হবে। কর্মপরিধির দ্বৈততা, অস্পষ্টতা, একই কাজের দায়িত্ব একাধিক সংস্থার হাতে অস্বচ্ছ পন্থায় অর্পণ সমস্যা ও সংঘাত বাড়ায় এবং অর্থের অপচয় ঘটায়। জেলা পরিষদ পুনর্গঠিত হলে তিন স্তরে স্থানীয় সরকার গঠন সম্পন্ন হবে। গ্রামীণ ও নগরস্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা সমন্বয় সহজতর হবে এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনকেও নবতর কাঠামোয় সাজাতে হবে। পার্বত্য তিনটি জেলায় জেলা পরিষদ কার্যক্রমের কিছু বিষয় এ পর্যায়ে সমতলের ক্ষেত্রেও প্রয়োগের অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয় বিশেষত ভারতের তিন স্তরের স্থানীয় পরিষদ কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমরাও সতর্কভাবে এগোতে পারি। কারণ, এ ক্ষেত্রে এর চেয়ে আর কোনো উন্নত বিকল্প দেখা যায় না।
* গত লেখার এক স্থানে ছিল ১৭৯২ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে সৃষ্টি করেন বর্তমানের থানা ও ৪০০ দারোগার পদ। ভুলবশত ১৯৭২ সাল ছাপা হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সদস্য, স্থানীয় সরকার কমিশন।
ahmedt_dr@yahoo.com
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যে নবতর যাত্রা এবং প্রশাসনিক পুনর্গঠন, তাতে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের বিষয়টি কিছুটা চাপা পড়ে যায়। মূলত, আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ও মৌলিক গণতন্ত্রীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈরিতা সাময়িকভাবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা সম্পর্কেও একধরনের অনীহা সৃষ্টি করে। তা ছাড়া স্বাধীন দেশের উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয়, সচিবালয় এবং মাঠ প্রশাসনে পূর্বতন প্রশাসনিক কাঠামোকে প্রতিস্থাপনে যত বেশি উৎসাহী ছিলেন, সংবিধানের বিধান অনুসরণ করে জনপ্রতিনিধিত্বশীল কাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়টি বরাবরই সুকৌশলে এড়িয়ে যান। এভাবে বাংলাদেশে ৪০ বছরের ইতিহাসে ইউনিয়ন এবং নগর পর্যায় ছাড়া অন্যান্য স্তরে মূলত আমলাতান্ত্রিক একাধিপত্য রজায় রাখার স্বার্থে সংবিধানকে এড়িয়ে প্রজ্ঞাপন ও সার্কুলারের মাধ্যমে স্থানীয় শাসন ও উন্নয়নের আমলাতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাওয়া হয়।
১৯৯১ সালের পর যে রাজনৈতিক পরিবর্তন, তার পর থেকে আমলাতান্ত্রিকতা সার্বিকভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পদানত হয়ে তা গণমুখী প্রাতিষ্ঠানিকতার পরিবর্তে দলীয় স্বেচ্ছাচারের দিকে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তা এমন একটি রূপ পরিগ্রহ করেছে, যা খুবই ভয়ানক ও আশঙ্কার।
এখন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কার্যত কোনো আইনের শাসন নেই। প্রথমত, সরকারের নির্বাহী বিভাগের যে ‘চেইন অব কমান্ড’, তা ভেঙে পড়েছে। একজন ডেপুটি কমিশনারের জবাবদিহি তাঁর বিভাগীয় কমিশনারের প্রতি যতটুকু, তার চেয়ে একজন সাংসদ বা জেলার মন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতিই অধিক। অপর দিকে উপজেলা পর্যায়ের প্রধান কর্মকর্তাকে অযাচিতভাবে জাতীয় সাংসদের ‘এজেন্ট’ হয়ে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেপুটি কমিশনার তাঁকে সুরক্ষা ও সহায়তা কোনোটাই করতে পারেন না। জেলায় পুলিশ প্রশাসন পুরোপুরি স্বাধীন। পুলিশ শুধু পুলিশের কাছেই জবাবদিহি করবে। জেলায় এখন অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেখানে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। বিচারিক ও আধা বিচারিক কিংবা রেগুলেটরি ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। জেলায় সুনির্দিষ্ট কোনো সমন্বয় বা তদারকব্যবস্থা বা সমন্বয়ের কোনো কেন্দ্রবিন্দু নেই। এ রকম অবস্থায় এখানে সরকারি অর্থপ্রবাহ ও ব্যয়ের জেলাভিত্তিক তথ্য-পরিসংখ্যান এবং তার প্রভাব ও ফল নির্ণয় খুবই দুষ্কর। এখনো কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সে দায় কেউ নেয় না। আইনশৃঙ্খলার দায় পুলিশ নিতে পারে না। একাধিক সংস্থার মধ্যে রশি-টানাটানি চলে। সরকারি জমিজিরাত, খাল, নদী, ভবন বেদখল হলে জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তারা অসহায়ত্বে ভোগেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক-জনপথের বেহাল দশায়ও কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান নেই, যেখানে গেলে প্রতিকার পাওয়ার আশা থাকে। রাজনৈতিক দলের নেতা, জাতীয় সাংসদ, নির্বাচিত স্থানীয় পরিষদ, সরকারের জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষায়িত বিভাগ, বেসরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—এখানে কার কী দায়িত্ব ও ভূমিকা, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সীমারেখা কেউ মানছে না বা সময়ের ব্যাপ্ততায় ভূমিকা ও দায়িত্বের আইনি সীমারেখা বিলীন হয়ে এখানে নতুন একধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক ব্যক্তি ও দলনির্ভর নিয়ন্ত্রণকাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দুই.
জেলা পরিষদের আলোচনাতেই যদি ফিরে আসি তাহলে দেখতে পাব, এটি প্রায় ১২৫ বছরের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর সঠিক ভূমিকা ও কার্যক্রম কী হবে, তা অস্পষ্ট রেখে এটিকে বছরের পর বছর টেনে চলেছি। দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান রংপুর জেলা পরিষদের কথাই ধরা যাক। এটি সম্ভবত ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৭ সালে শতবর্ষ পূর্ণ করল। এ পরিষদে রয়েছে প্রায় তিন হাজার ৭০০ একর জমি, তিনটি মার্কেটে প্রায় ৪০০ দোকান, অত্যন্ত সুদৃশ্য মনোরম একটি ভবন এবং প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি শত বছরের ঐতিহ্য বহন করলেও বর্তমান সময়ে তার ভূমিকা কী? গত তিন বছরে ১৪ থেকে ১৮ কোটি টাকার বাজেট তারা বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু এই উন্নয়নকাজের ধরন খুবই হাস্যকর। গত অর্থবছরে রংপুর জেলা পরিষদ ৩০০টির মতো স্কিম বাস্তবায়ন করেছে। প্রতিটি স্কিমের অর্থমূল্য হয় এক লাখ, নয়তো ৫০ হাজার। এর বেশিও নয়, কমও নয়। এভাবে চার-পাঁচ কোটি টাকা খয়রাতি সাহায্য দেওয়ার মতো করে ব্যয় করা হয় দেশের প্রতিটি জেলা পরিষদে। স্থানীয় সাংসদ, যেকোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যক্তিগত তদবিরের মাধ্যমে প্রতিবছর জেলা পরিষদ থেকে অর্থ বরাদ্দ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। এই প্রতিষ্ঠানটি তার যা সম্পদ, তা দিয়ে স্বচ্ছ একটি পরিকল্পনা করে তা অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে ব্যয় করে না। এই ব্যবস্থা রংপুর জেলা পরিষদের বিচ্ছিন্ন ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত নয়। সারা দেশেই এভাবে জেলা পরিষদ নামে নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান চালু আছে।
এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের দিকে আমরা একবার তাকাতে পারি। উপমহাদেশের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের একই ধারাবাহিকতায় উভয় দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথা বিভাগীয় কমিশনার, কালেক্টর ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সাব-ডিভিশনাল অফিসার প্রভৃতি কর্মকর্তার পদ বহাল রয়েছে এবং তাঁরা তাঁদের ভূমিকা যথারীতি পেশাদারির সঙ্গে পালন করছেন। পাশাপাশি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা তালুক/তহশিল পঞ্চায়েত (আমাদের উপজেলা পর্যায়) এবং জেলা পরিষদগুলো অত্যন্ত কার্যকরভাবে কাজ করছে। উপরন্তু, স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝখানে রয়েছে তিন পর্যায়ের আইনসভার সদস্য। যথা—রাজ্যপর্যায়ে বিধানসভা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লোকসভা ও রাজ্যসভার বিধায়ক। এখানে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তথা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ প্রতিনিধি এবং ওপরের স্তরের বিধানসভা, লোকসভা ও রাজ্যসভার প্রতিনিধির মধ্যে কার্যগত ও ভূমিকাগত সীমারেখা ও বিভাজনে স্পষ্টতার কারণে অধিক্ষেত্র নিয়ে বড় ধরনের বিরোধ দেখা যায় না, এমনকি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হওয়ার পরও নয়। অপর দিকে প্রশাসনিক অধিকর্তা—জেলার কালেক্টর, পুলিশ সুপার বা একজন কৃষি কর্মকর্তা বা শিক্ষা কর্মকর্তা—সবাই নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে অত্যন্ত স্বাধীন ও নির্ভরতার সঙ্গে আইনানুগ কাজ যেমন করতে পারেন, তেমনি প্রতিটি প্রশাসনিক স্তরের স্থানীয় সরকারের সঙ্গেও তাঁরা সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন। বিধানসভা, লোকসভা ও রাজ্যসভার প্রতিনিধিরা পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে পদাধিকারবলে সদস্য হন (সর্বত্র না হলেও কোনো কোনো রাজ্য, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায়), কিন্তু তাঁরা ওই সব পরিষদে ভোট দেন না বা স্থায়ী কমিটির সদস্য বা সভাপতি হন না।
ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের পর থেকে প্রতিটি রাজ্যের ওপর স্থানীয় সরকারের কতিপয় বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সে বিষয়গুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নরূপ:
১. প্রতিটি রাজ্যে গ্রাম, ব্লক/তহশিল/তালুক এবং জেলা পর্যায়ে তিন স্তরের স্থানীয় সরকার তথা পঞ্চায়েতি রাজপ্রতিষ্ঠান সৃষ্টির লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক।
২. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ২৯টি বিষয় পর্যায়ক্রমে ১০ বছরের মধ্যে হস্তান্তর করতে হবে। তাই সেই লক্ষ্যে সংবিধানের বিশেষ একটি তফসিলে কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
৩. প্রতিটি রাজ্য সরকার ‘স্থানীয় সরকার অর্থ কমিশন’ গঠন করে স্থানীয় সরকার অর্থায়নে একটি নীতিমালা বা ফর্মুলার ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় সরকারকে অর্থায়ন করবে।
৪. প্রতিটি রাজ্যে বাধ্যতামূলকভাবে জেলাভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক বিকেন্দ্রীকৃত পরিকল্পনা পদ্ধতি গড়ে তুলবে। সে লক্ষ্যে জেলা পরিকল্পনা কাউন্সিল (ডিপিসি) গঠন করবে। সে কাউন্সিলের প্রধান হবেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর’। কোনো কোনো জেলায় তাঁরা আমাদের মতো ‘ডেপুটি কমিশনার’ হিসেবেও পরিচিত।
৫. জেলা পরিকল্পনায় গ্রাম, ব্লক, পৌরসভা, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলোর সমন্বয় করা হয়।
৬. জেলা পরিকল্পনা রাজ্য পরিকল্পনা কমিশন ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কমিশনের কৌশল ও লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়।
৭. রাজ্যের ‘স্থানীয় সরকার অর্থ কমিশন’ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ কমিশনের সঙ্গে তাদের সুপারিশমালা সমন্বয় করে থাকে।
৮. কোনো রাজ্য সরকার সংবিধানের এসব নির্দেশনা প্রতিপালন না করলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার লাভ করে না।
তিন.
বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার নেতারা নানামুখী দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত। তার সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে যুক্ত হয়েছে জাতীয় সংসদ নেতা ও স্থানীয় পরিষদ নেতাদের সংঘাত। জেলা পরিষদ এ সংঘাত থেকে মুক্ত থাকবে, স্বাভাবিকভাবে তা কল্পনা করা যায় না। তা ছাড়া অনির্বাচিত প্রশাসকের পক্ষে ক্ষমতার বৈধতা রক্ষাও প্রাথমিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। তবে এখানে জাতীয় সংসদ, স্থানীয় পরিষদ (ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা) এবং জেলা ও উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা ও কার্যক্রম নির্ধারণ করতে হবে। কর্মপরিধির দ্বৈততা, অস্পষ্টতা, একই কাজের দায়িত্ব একাধিক সংস্থার হাতে অস্বচ্ছ পন্থায় অর্পণ সমস্যা ও সংঘাত বাড়ায় এবং অর্থের অপচয় ঘটায়। জেলা পরিষদ পুনর্গঠিত হলে তিন স্তরে স্থানীয় সরকার গঠন সম্পন্ন হবে। গ্রামীণ ও নগরস্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা সমন্বয় সহজতর হবে এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনকেও নবতর কাঠামোয় সাজাতে হবে। পার্বত্য তিনটি জেলায় জেলা পরিষদ কার্যক্রমের কিছু বিষয় এ পর্যায়ে সমতলের ক্ষেত্রেও প্রয়োগের অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয় বিশেষত ভারতের তিন স্তরের স্থানীয় পরিষদ কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমরাও সতর্কভাবে এগোতে পারি। কারণ, এ ক্ষেত্রে এর চেয়ে আর কোনো উন্নত বিকল্প দেখা যায় না।
* গত লেখার এক স্থানে ছিল ১৭৯২ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে সৃষ্টি করেন বর্তমানের থানা ও ৪০০ দারোগার পদ। ভুলবশত ১৯৭২ সাল ছাপা হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সদস্য, স্থানীয় সরকার কমিশন।
ahmedt_dr@yahoo.com
No comments