মর্মান্তিক মৃত্যু

প্রাণ থাকলেই তার বিনাশ অনিবার্য। অর্থাৎ জন্মিলে মরিতে হবে_ এটা বিধিরই বিধান। এর কোনো ব্যত্যয় নেই। বিজ্ঞানীরা মৃত্যু রোধ করতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। আজও সফলতার মুখ দেখতে পাননি। ভবিষ্যতে পাবেন কি-না, তাও নিশ্চিত নয়। তাই মৃত্যুকে সবাই নিয়তি বলেই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সবাই চান স্বাভাবিক মৃত্যু। অপঘাতে, অকালে মৃত্যু কারও কাম্য নয়। তবু ঘটে যায়; কখনও কখনও কারও প্রচ্ছন্ন ইচ্ছায় আবার কখনও দৈব-দুর্বিপাকে।


যানবাহন দুর্ঘটনায় প্রতি বছর মারা যায় হাজার হাজার মানুষ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পসহ প্রকৃতির বৈরিতার কারণেও মারা যায় অসংখ্য মানুষ। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ মারা যায়, যা অনভিপ্রেত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনের পাতাল রেলস্টেশনে ঘটেছিল এমনই এক ঘটনা। ১৯৪৩ সালের ৩ মার্চ স্টেশনটির কাছাকাছি ফটাফট বোমা পড়তে থাকে। ভয়ে নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোর হুড়মুড় করে সাবওয়ে স্টেশনে ঢুকে পড়ে। হুড়োহুড়ি আর অধিক মানুষের চাপে দম বন্ধ হয়ে মাত্র পনেরো মিনিটে মারা যায় তিনশ' মানুষ! যুদ্ধের কারণে অন্যান্য খবরের চাপে এ খবরটি সেই সময় তেমন গুরুত্ব পায়নি। ১৯৯০, ৯৪, ২০০৪ ও ২০০৬ সালে এমনই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছিল সৌদি আরবের মক্কায়। হজ মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছুটে যান সৌদি আরবে। সেখানে নানা আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হজ সম্পন্ন করতে হয়। সুশৃঙ্খলভাবে লাখ লাখ মানুষের একই স্থানে গমন এবং কর্ম সম্পাদনকালে যে সামান্য হুড়োহুড়ি হয়, তাতেই উলি্লখিত সালগুলোতে মারা গেছেন অসংখ্য হাজি।
১৮৮৩ সালের ১৬ জুন ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ডে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া হলে কনসার্ট দেখতে গিয়ে মারা গিয়েছিল প্রায় হাজার খানেক মানুষ! টিকিট কেটে যারা ওই কনসার্ট দেখতে গিয়েছিল, তাদের জন্য ছিল বিশেষ পুরস্কার। বিপত্তি ঘটে এ সময়ই। ঘোষক একের পর এক পুরস্কার ঘোষণা করছেন, আর তা আনার জন্য মঞ্চের দিকে ছুটে যাচ্ছিল পুরস্কার জয়ীরা। লেগে যায় হৈ-হুল্লোড়। তাতে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারায় তারা। মৃতদের মধ্যে তিন থেকে চৌদ্দ বছরের শিশুর সংখ্যাই ছিল বেশি। ১৯৮৯ সালের ১৫ এপ্রিল ঘটেছিল সবচেয়ে ভয়াবহ মৃত্যুর ঘটনা। ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে অবস্থিত হিলসবোরোগ স্টেডিয়ামে এ দিন ছিল লিভারপুল ও নোটিংগ্রামের মধ্যে ফুটবল খেলা। উভয় দলের এত দর্শক সেদিন খেলা দেখতে এসেছিল যে, স্টেডিয়ামে ঢুকতে গিয়ে হুড়োহুড়ি লেগে যায় আর তাতেই পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় অসংখ্য মানুষ! আবেগটা একটু নিয়ন্ত্রণ করলেই এমন অনভিপ্রেত মৃত্যুর হাত থেকে সহজেই নিজেকে রক্ষা করা যায়।
আশরাফুল আলম মিলন

No comments

Powered by Blogger.