পবিত্র কোরআনের আলো-বদরের যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ 'সত্যের জয় এবং মিথ্যার ক্ষয়'-এ সত্যকে প্রকাশ করেন
৪১. ওয়া'লামূ আন্নামা গানিমতুম্ মিন্ শাইয়িন ফাইন্না লিল্লা-হি খুমুছাহূ ওয়ালির্রাছূলি ওয়ালিযিল ক্বুরবা- ওয়ালইয়াতা-মা ওয়ালমাছা-কীনি ওয়াব্নিচ্ছাবীলি ইন কুনতুম আ-মানতুম বিল্লা-হি ওয়া মা আনযালনা আ'লা আ'বদিনা ইয়াওমাল ফুরক্বা-নি ইয়াওমাল্তাক্বাল্ জামআ'-নি; ওয়াল্লা-হু আ'-লা কুলি্ল শাইয়িন ক্বাদীর। ৪২. ইয আনতুম বিল উ'দওয়াতিদ্ দুনিয়া ওয়া হুম বিলউ'দওয়াতিল ক্বুসওয়া ওয়ার্রাকবু আছফালা মিনকুম; ওয়ালাও তাওয়া-আ'দ্তুম লাখ্তালাফ্তুম ফিল্
মীআ'-দ্; ওয়া লা-কিন লিইয়াক্বদ্বিইয়াল্লা-হু আমরান কা-না মাফ্ঊ'লা; লিইয়াহ্লিকা মান হালাকা আ'ম বাইয়্যিনাতিন ওয়া ইয়াহ্ইয়া মান্ হাইয়্যা আ'ম্ বায়্যিনাতিন ওয়া ইন্নাল্লা-হা লাছামীউ'ন আ'লীম। ৪৩. ইয্ ইউরীকাহুমুল্লা-হু ফী মানা-মিকা ক্বালীলান; ওয়া লাও আরা-কাহুম কাছীরাল লাফাশিলতুম ওয়ালাতানাযা'তুম ফিল আমরি ওয়ালা-কিন্নাল্লা-হা ছাল্লামা; ইন্নাহূ আ'লীমুম্ বিযা-তিচ্ছুদূর। [সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ৪১-৪৩]
অনুবাদ : ৪১. (হে মুসলিমরা!) জেনে রেখো, তোমরা যা কিছু গণিমত হিসেবে লাভ করো, এর পঞ্চমাংশ আল্লাহ, রাসুল, তাঁর আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের প্রাপ্য, যদি তোমরা ইমান রাখো আল্লাহর প্রতি, সেই বিষয়ের প্রতি, যা আমি আমার বান্দার ওপর ফয়সালা গ্রহণের দিন অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন অবতীর্ণ করেছি। সেদিন দুদল পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল। (তোমাদের জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ সব বিষয়ে (চূড়ান্ত) ক্ষমতাবান।
৪২. (সেই বদরের যুদ্ধ ক্ষেত্রে) তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকটপ্রান্তে, তারা ছিল দূরপ্রান্তে, আর (শত্রু) কাফেলা ছিল তোমাদের তুলনায় নিম্নভূমিতে। যদি তোমরা আগেই তাদের সঙ্গে কোনো ফয়সালা করতে চাইতে, তবে হয়তো এ ফয়সালা বাস্তবায়ন করতে তোমরা নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ করতে। কিন্তু আল্লাহ সেটাই ঘটাতে চেয়েছিলেন, যা ঘটানো উচিত ছিল। (এ জন্যই তিনি উভয় দলকে রণক্ষেত্রে সামনাসামনি করলেন যাতে) যে দলটি ধ্বংস হবে, সেটি যেন সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরই ধ্বংস হয়, আবার যে দলটি বেঁচে থাকবে, সেটিও যেন সত্যাসত্য প্রমাণের ভিত্তিতেই বেঁচে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন। ৪৩. (হে নবী!) সেই সময়কে স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে তাদের (শত্রুদের) সংখ্যা কম দেখাচ্ছিলেন। যদি তাদের সংখ্যা বেশি দেখানো হতো, তবে আপনারা সাহস হারাতেন এবং এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। কিন্তু আল্লাহ এ অবস্থা থেকে রক্ষা করলেন। নিশ্চয়ই তিনি অন্তরে লুকিয়ে থাকা সব কিছু জানেন।
ব্যাখ্যা : ৪১. নম্বর আয়াতে বদরের যুদ্ধের প্রসঙ্গ ধরেই গণিমতের মালের বণ্টনব্যবস্থা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। গণিমতের সম্পদ বলতে সেই সম্পদকে বোঝায়, যা জিহাদকালে শত্রুপক্ষের কাছ থেকে মুজাহিদদের হস্তগত হয়। বণ্টনের মূলনীতি এ রকম_জিহাদে প্রাপ্ত সম্পদ বা গণিমতের মাল প্রথমত পাঁচ ভাগ করতে হবে। এর চার ভাগ মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে এবং পঞ্চম ভাগ বায়তুল মালে জমা হবে। এই পঞ্চম ভাগকে 'খুমুস' বলা হয়। খুমুস বণ্টনের মূলনীতি হিসেবেই প্রথমেই বলা হয়েছে, এর প্রকৃত মালিক আল্লাহ তায়ালা। এরপর এর পাঁচ ধরনের প্রাপক উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ আল্লাহর রাসুলের এবং দ্বিতীয় ভাগ তাঁর আত্মীয়স্বজনের। এরপর তিনটি ভাগ এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের প্রাপ্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
৪২. নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে বদর যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং শেষাংশে বলা হয়েছে কেন এই যুদ্ধ অপরিহার্য ছিল। যুদ্ধটা সংঘটিত হওয়ার আগে যদি শত্রুপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হতো, তবে হয়তো তখন যুদ্ধটা হতো না; ফলে মুসলমানদের জন্য আরো ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি হতো। সে যুদ্ধটা ছিল অসম। মুসলমানদের জনবল ও অস্ত্রবল খুবই কম ছিল। এ কারণেই মুসলিম শিবিরে যুদ্ধ সম্পর্কে আতঙ্ক ছিল। কিন্তু আল্লাহ জানেন এ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানদের কল্যাণ হবে। মুসলমানরা দুর্বল অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও এই যুদ্ধের মাধ্যমে সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা গায়েবি মদদে দুনিয়ার বুকে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। আর এটাও ছিল মুসলমানদের জন্য এক কল্যাণকর ঘটনা যে আল্লাহ তায়ালা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেন, যার দরুন মক্কার কাফিরদের সঙ্গে মুসলমানদের প্রথম মোকাবিলাটা তখনই হয়ে যায়। ৪৩ নম্বর আয়াতে মহানবী (সা.)-এর স্বপ্ন দেখার ঘটনাসহ মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি ও যুদ্ধের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির যেসব ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ৪১. (হে মুসলিমরা!) জেনে রেখো, তোমরা যা কিছু গণিমত হিসেবে লাভ করো, এর পঞ্চমাংশ আল্লাহ, রাসুল, তাঁর আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের প্রাপ্য, যদি তোমরা ইমান রাখো আল্লাহর প্রতি, সেই বিষয়ের প্রতি, যা আমি আমার বান্দার ওপর ফয়সালা গ্রহণের দিন অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন অবতীর্ণ করেছি। সেদিন দুদল পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল। (তোমাদের জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ সব বিষয়ে (চূড়ান্ত) ক্ষমতাবান।
৪২. (সেই বদরের যুদ্ধ ক্ষেত্রে) তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকটপ্রান্তে, তারা ছিল দূরপ্রান্তে, আর (শত্রু) কাফেলা ছিল তোমাদের তুলনায় নিম্নভূমিতে। যদি তোমরা আগেই তাদের সঙ্গে কোনো ফয়সালা করতে চাইতে, তবে হয়তো এ ফয়সালা বাস্তবায়ন করতে তোমরা নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ করতে। কিন্তু আল্লাহ সেটাই ঘটাতে চেয়েছিলেন, যা ঘটানো উচিত ছিল। (এ জন্যই তিনি উভয় দলকে রণক্ষেত্রে সামনাসামনি করলেন যাতে) যে দলটি ধ্বংস হবে, সেটি যেন সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরই ধ্বংস হয়, আবার যে দলটি বেঁচে থাকবে, সেটিও যেন সত্যাসত্য প্রমাণের ভিত্তিতেই বেঁচে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন। ৪৩. (হে নবী!) সেই সময়কে স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে তাদের (শত্রুদের) সংখ্যা কম দেখাচ্ছিলেন। যদি তাদের সংখ্যা বেশি দেখানো হতো, তবে আপনারা সাহস হারাতেন এবং এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। কিন্তু আল্লাহ এ অবস্থা থেকে রক্ষা করলেন। নিশ্চয়ই তিনি অন্তরে লুকিয়ে থাকা সব কিছু জানেন।
ব্যাখ্যা : ৪১. নম্বর আয়াতে বদরের যুদ্ধের প্রসঙ্গ ধরেই গণিমতের মালের বণ্টনব্যবস্থা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। গণিমতের সম্পদ বলতে সেই সম্পদকে বোঝায়, যা জিহাদকালে শত্রুপক্ষের কাছ থেকে মুজাহিদদের হস্তগত হয়। বণ্টনের মূলনীতি এ রকম_জিহাদে প্রাপ্ত সম্পদ বা গণিমতের মাল প্রথমত পাঁচ ভাগ করতে হবে। এর চার ভাগ মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে এবং পঞ্চম ভাগ বায়তুল মালে জমা হবে। এই পঞ্চম ভাগকে 'খুমুস' বলা হয়। খুমুস বণ্টনের মূলনীতি হিসেবেই প্রথমেই বলা হয়েছে, এর প্রকৃত মালিক আল্লাহ তায়ালা। এরপর এর পাঁচ ধরনের প্রাপক উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ আল্লাহর রাসুলের এবং দ্বিতীয় ভাগ তাঁর আত্মীয়স্বজনের। এরপর তিনটি ভাগ এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের প্রাপ্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
৪২. নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে বদর যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং শেষাংশে বলা হয়েছে কেন এই যুদ্ধ অপরিহার্য ছিল। যুদ্ধটা সংঘটিত হওয়ার আগে যদি শত্রুপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হতো, তবে হয়তো তখন যুদ্ধটা হতো না; ফলে মুসলমানদের জন্য আরো ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি হতো। সে যুদ্ধটা ছিল অসম। মুসলমানদের জনবল ও অস্ত্রবল খুবই কম ছিল। এ কারণেই মুসলিম শিবিরে যুদ্ধ সম্পর্কে আতঙ্ক ছিল। কিন্তু আল্লাহ জানেন এ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানদের কল্যাণ হবে। মুসলমানরা দুর্বল অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও এই যুদ্ধের মাধ্যমে সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা গায়েবি মদদে দুনিয়ার বুকে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। আর এটাও ছিল মুসলমানদের জন্য এক কল্যাণকর ঘটনা যে আল্লাহ তায়ালা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেন, যার দরুন মক্কার কাফিরদের সঙ্গে মুসলমানদের প্রথম মোকাবিলাটা তখনই হয়ে যায়। ৪৩ নম্বর আয়াতে মহানবী (সা.)-এর স্বপ্ন দেখার ঘটনাসহ মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি ও যুদ্ধের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির যেসব ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments