হাসপাতালের সিঁড়িঘরে পাওয়া গেল শিশুটির লাশ

মায়ের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিল আড়াই বছরের শিশু ইশরাত। তাকে দরজার বাইরে রেখে মা রোজিনা বেগম চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকলেন। ১০ মিনিট পর বেরিয়ে দেখেন, মেয়ে উধাও। এরপর পুরো হাসপাতাল খুঁজেও ইশরাতকে পাওয়া যায়নি। প্রায় চার ঘণ্টা পর শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় হাসপাতালের তৃতীয় তলার সিঁড়িঘর থেকে। রোজিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১০টার দিকে হাজারীবাগের বাসা থেকে তিনি ছোট্ট


মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন নিতে নিচতলায় চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকছিলেন। তখন তাঁকে নিরাপত্তাকর্মী পরিচয় দিয়ে এক নারী ও পুরুষ বাচ্চা নিয়ে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। তারা বলে, বাচ্চা ভেতরে নেওয়া যাবে না। অগত্যা তাদের কাছে ছোট্ট মেয়েটিকে রেখে তিনি চিকিৎসকের কক্ষে ঢোকেন। ১০ মিনিট পর বেরিয়ে এসে দেখেন, তাঁর মেয়ে ইশরাত নেই। নেই তো নেই। এমনকি কথিত ওই দুই নিরাপত্তাকর্মীও উধাও। তখন সেখানে কর্তব্যরত এক আয়া বলেন, ইশরাতকে বাবা পরিচয় দিয়ে কোট পরা এক ব্যক্তি নিয়ে গেছে।
এরপর রোজিনা পুরো হাসপাতাল ছুটে বেড়ান মেয়ের খোঁজে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে লোকমুখে শুনতে পান, তৃতীয় তলার সিঁড়িঘরে এক শিশুর লাশ পড়ে আছে। ছুটে গিয়ে দেখেন, সেটা তার মেয়ে ইশরাত।
খবর পেয়ে হাসপাতালে অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক মোজাম্মেল হক লাশ উদ্ধার করেন এবং শাহবাগ থানাকে জানান। পুলিশের ধারণা, শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। মৃতদেহের বিভিন্ন জায়গায় থেঁতলানো ও আঁচড়ের দাগ দেখা যায়।
হাসপাতালের পরিচালক শহীদুল হক মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে আজ তিনটি শিশু হারায়। দুটি শিশুকে খুঁজে পাই আমরা। দুপুরের দিকে আমাকে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগ থেকে জানানো হয়, সিঁড়িঘরে একটি শিশুর লাশ পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, শিশুটি যেখান থেকে হারিয়েছিল, সেখানে আনসার সদস্যরা ছিলেন, বিপুলসংখ্যক রোগী ও তাদের স্বজনেরা ছিলেন। কেউ কিছু দেখল না। পুরো বিষয়টি রহস্যজনক।
এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। শাহবাগ থানার অপারেশন কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এটি হত্যাকাণ্ড। তবে শিশুটির স্বজনেরা মামলা করতে আগ্রহী নন। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গতকাল বিকেল চারটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির বাবা প্লাস্টিক ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম পুলিশের কাছে বারবার অনুরোধ করছেন, যেন কাটাছেঁড়া করে মেয়েটিকে আর কষ্ট দেওয়া না হয়। মেয়েটি তখন এক স্বজনের কোলে। কাপড়ে ঢাকা শরীরটা মনে করিয়ে দেয়, সে মৃত। সেই কাপড়ের ফাঁক দিয়ে বারবার উঁকি দিচ্ছিল ছোট্ট সবুজ জামার অংশ।

No comments

Powered by Blogger.